#দেওয়ানা_(আমার ভালোবাসা)
#লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাল মায়া
#পর্বঃ_০৮
.
🍂
রিদের বিরক্তি কারণটা যেন আরও একধাপ বাড়িয়ে দিল মায়া। সে তার অস্থিররতা কমাতে মায়াকে ডেকে আনা কিন্তু সেই মায়াই উল্টো তার বিরক্তি কারণ হয়ে গেল। আবার হুট করে অজ্ঞান হয়ে যেন বিরক্তি থেকে রাগ চেপে বসে তার শেষ প্রশ্নের উত্তর না পাওয়ায়। তারপরও মায়াকে আঘাত করল না আর। তবে বিরক্তি নিয়েই মায়াকে কোলে করে বাড়ি উদ্দেশ্য বের হয়। রিদের কেবিন থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অফিসের সকল স্টাফরা হা করে তাকিয়ে রইল তার দিকে। তাকিয়ে থাকাটাও স্বাভাবিক। কারণ এই প্রথম সবাই দেখছে আব্রহাম রিদ খানের কোলে কোনো অপরিচিত নারী। রিদ খান আর নারী সঙ্গ বিষয়টা যেন দিনের আকাশে মাঝে মধ্যে চাঁদ পাওয়ার নেয় হয়ে গেল সবার কাছে। তাদের বস রাগী বদমেজাজী মানুষ, এখন তার কাছে কোনো মেয়ে সেচ্ছায় ঘেঁষতে চাওয়া মানে নিজেদের বিপদ ডেকে আনা। মাঝে মধ্যে তো তারা অফিসের আগত মেয়ে ক্লায়েন্টদের রিদ খানের কাছে অপমানিত হয়ে ফিরতে দেখেছে। এখন সেই রিদ খান যদি কোলে করে নারী নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তাহলে তাঁরা কি চরম আশ্চর্য হবে না? অবশ্যই হবে! নারী বিদ্বেষীর রিদ খান কিভাবে নারী সঙ্গ পছন্দ করল তা জানা কৌতূহল তো সবার চোখেই আছে এই মূহুর্তে। রিদ মায়াকে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য বের হয়ে গেল। বাসার কলিংবেলের সুইচবোর্ডের টিপে বাজাতেই কাজের মহিলা (মালা) এসে দরজা খুলে সামনে তাকাতেই দেখল রিদের কোলে মায়াকে অজ্ঞানরত অবস্থায়। মায়ার জন্য খানিকটা বিচলিত হতে গিয়েও চুপ করে যায় রিদের গম্ভীরতার ভয়ে। তবে মালাকে যেটা সবচেয়ে বেশি আবাক করেছে সেটা হলো রিদের কোলে মায়াকে দেখাটা। রিদ মালাকে তার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বিরক্তি নিয়ে পাশ কেটে সোজা বসার ঘরে চলে যায়। ঝুকে মায়াকে সোফায় শুয়াতে নিলে কোথা থেকে হেনা খান দৌড়ে এসে মায়ার শিরধারা পাশে বসতে বসতে খানিকটা উত্তেজিত ভঙ্গিতে রিদকে প্রশ্ন করে বলল..
—” আমার সোনামার কি হয়েছে রিদ? তুই ওকে কোথায় পেয়েছিস? ওর এই অবস্থা কিভাবে হলো? (একনাগাড়ে প্রশ্নকরে)
রিদ চোখ আওড়িয়ে তাকাল নিজের দাদীর দিকে। বিগত কয়েক মাসে অসম্ভব ভালোবাসা জম্মিয়েছে এই মেয়েটার প্রতি তার দাদীর। সে লক্ষ অনেক আগেই করেছিল এই বিষয়টি। তার চোখে পরার কথাও। এই অল্প সময়ের মেয়েটা কেমন তার দাদা-দাদীর প্রাণ হয়ে উঠেছে। সারাদিন এই মেয়েটাকে নিয়ে তাদের দিন কাটে। দাদী যেমন তেমন না-হয় এই মেয়েটার সাথে বাসায় বসে সময় কাটায়। কিন্তু দাদাভাইও তো অফিস থেকে ফিরে এই মেয়েটাকে সময় দেয়। এবং ব্যস্ততার মাঝেও দেখা যায় অফিস বসে কল করে খোঁজ নেয় মেয়েটি খেয়েছে কিনা? কি করছে? ইত্যাদি সবকিছু! প্রথম প্রথম হয়তো তারা দ্বায়িত্ব থেকে এসব করতো কিন্তু আজকাল তারা ভালোবাসে মেয়েটির দ্বায়িত্ব পালন করছে সেটা তাদের ব্যবহারে প্রতিনিয়ত প্রকাশ পাচ্ছে। কথা বলে না অতি আদুরে তাতি নষ্ট। ঠিক এমনটাই হচ্ছে এই মেয়েটির বেলা। বেশি আদুরের ফলে বিস্ফোরণ হিসাবে মেয়েটির দিন দিন বাচ্চামো আরও বেড়েই চলছে, এবং তার সাথে বুদ্ধিও লোপ পাচ্ছে দ্বিগুণ। মাঝে মধ্যে তো দাদা-দাদীকে এমন এমন প্রশ্ন বা কাজ করবে যা একজন মানুষ তার পারসোনাল মানুষ ছাড়া কাউকে শেয়ার করতে পরে না। অথচ এই মেয়েটি নিরদ্বিধায় তাদের কাছে বলে ফেলতে পারে। আর দাদী ও হাসি মুখে মেনে নেয় প্রতিরোধ করে দেয় না মেয়েটি বিষয়টি। কেন এই বিষয়ে মেয়েটিকে বুঝায় না কে জানে। এসব ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে রিদ,,, তারপর মায়াকে সোফায় শুইয়ে দিয়ে কিছু না বলে আবার বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে।
~~
সকাল থেকে দাদী আমাকে বকে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই থামার নামই নিচ্ছে না,,, আচ্ছা আজ কি বকা খাওয়া দিন আমার জন্য কি বকা ডে, তাহলে তো আমাকে আজকের দিনটার তারিখ ডাইরির মধ্যে লিখে রাখা উচিত। কারণ ঘুম থেকে উঠা নিয়ে বকা, আবার খাবার খাওয়া নিয়ে বকা, কোন ড্রেস পড়ব তা নিয়েও বকা,, আর এখন আমার সাজুগুজু নিয়ে বকা, উফফ! এতো বকাবকি কেন? দাদী আমার হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে উদ্দশ্য এয়ারপোর্টে যাওয়া। সেজন্য আমাকে সকাল থেকে দাদী এত বকে বকে রেডি করিয়েছেন। আজকে ফুফিরা সবাই আসবে বাংলাদেশের নিহা আপুর বিয়ের জন্য তাই আমরা সবাই যাচ্ছি উনাদের এয়ারপোর্টে রিসিভ করতে। তিনটা গাড়ি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আমাদের সাথে একটাতে আমি আর দাদা-দাদি, ড্রাইবার চাচাকে সহ। দ্বিতীয়টাতে বডিগার্ড, তৃতীয়টা খালি, কারণ আসার সময় ফুপ্পিরা ঐ গাড়ি করে আসবে তাই। উনি(রিদ) আসেন নি আমাদের সাথে। দাদাজান ফোন করেছিল উনাকে উনি বলেছেন উনি নাকি ব্যস্ত, কাজ আছে আসতে পারবে না তাই দাদাজান কিছু বলেনি। গাড়িতে আমাকে মাঝে রেখে আমার দু পাশে দাদা-দাদী বসে আছেন,,
অবশেষে গাড়ি এসে থামে ঢাকা এয়ারপোর্টে সামনে,, আমরা গাড়ি থেকে বের হয়ে এয়ারপোর্টে চারপাশে চোখ বুলায়। এই প্রথম আমি এয়ারপোর্টে এসেছি তাই মনে মধ্যে কৌতূহল জেগেছে এয়ারপোর্ট ঘুরে দেখা জন্য কিন্তু দাদীর আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে যেন ছেড়ে দিলে আমি ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যাব এমনটা উনার ধারণা। অস্বাভাবিক কিছু না হয়তো হারিয়ে যেতে পারি আশেপাশে কিছুই চিনা জানা নেই সেজন্য। আমার অমনোযোগীর মধ্যে দিয়ে হঠাৎই কারও গলা আমার কানে আসল।
‘ মা কেমন আছো।
আমি চমকে উপরে তাকালাম। তার প্রায় সাথে সাথে চোখে পড়ল অতি সুন্দরী একজন মহিলার সাথে আরও একজন সুদশন পুরুষকে। তাদের সবার হাতেই একটা করে টলি ব্যাগ রয়েছে, আমার কাউকে চিনতে এতটুকুও দেরি হয়নি যে উনারা ফুপা-ফুপ্পি। কারণ সবার সাথেই আমার বহুবার ভিডিও কলে কথা হয়েছে।
উনারা এগিয়ে আসতেই দাদী আমাকে একহাতে ধরে রেখে অন্য হাতে ফুপ্পিকে জরিয়ে ধরে আর ফুপ্পাকে দাদাজান জড়িয়ে ধরে। আমি নিরব হয়ে তখনো দাঁড়িয়ে দেখছিলাম সবাইকে। বলার মতো আপাতত কিছু নেই। আমি গোল গোল চোখে সবাইকে পযবেক্ষন করছিলাম তখন আরও দুটো মেয়েকে চোখে পরতেই, তখন আমার চোখ দুটো অটোমেটিকলি বড় বড় হয়ে যায় খুশিতে। মেয়ে দুটো একজন হলো নিহা আপু। তিনি সাদা শার্টের উপর দিয়ে কোটটাও সাদা পরেছে কালো প্যান্ট দিয়ে ইন করে। আর আমার বয়সি মেয়েটা হলো ফিহা। সে পরেছে কালো পেন্ট, পিকং শার্ট,কালো জ্যাকেট। চুল গুলো সব সাধারণ জুটি করা, তাদের হাতে ও একটা করে টলি নেয়া আছে। তবে দেখতে দুজনই সাদা সুন্দর। আমি শুধু বোকার মত তাকিয়ে আছি তাদের দুজনের দিকে। ওরা দুজন দৌড়ে এসে দাদা-দাদিকে জরিয়ে ধরতেই দাদী তখন বলে ফিহাকে বলল।।।
—” কেমন আছিস নানুনী।
—” ভালো আছি ইয়াং লেডি (দাদীর গাল টেনে)
পাশ থেকে ফুপ্পি খানিকটা শাসহ সুরে বলে…
—” বিহেভ ইউর সেলফ ফিহা৷ এটা পাবলিক প্লেস।
–” সরি মম। কিন্তু তোমার টমেটো মাকে দেখলে আমার গাল টানতে ইচ্ছে করে কি করবো বলো?
ফুপ্পি চোখ রাঙ্গাতেই চুপ করে যায় ফিহা। হেঁসে উঠে দাদী। ফিহার মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে দিতেই
আমি পাশ থেকে নিরব স্রোতের মতন সব দেখছি। আমি সবাইকে চিনতে পারলেও এ মূহুর্তে কারও সঙ্গে আগবাড়িয়ে কথা বলছি না। প্রথম দেখায় কেমন একটা জড়তা কাজ করছে নিজের মাঝে তাই। এজন্য চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকাটা আমার কাছে উত্তম মনে হচ্ছে।
ফুপ্পি আবার বলে উঠে…
—” নিহা তোর ভাই কোথায়? ওকে দেখছি না কেন?
কপালে সূক্ষ্ম ভাজ ফেলে আশেপাশে তাকাল নিহা আপু।
–” ভাইয়া আমাদের সাথে ছিল আম্মু। কিন্তু হঠাৎ করে নিজের ফোন নিয়ে ঐপাশটায় গিয়েছে। ঐ যে ভাইয়া আসছে।
আমি নিহা আপু কথা শুনে চমকে উঠি একি ফুপ্পির ছেলেও আছে নাকি? কই আমিতো জানি না। আমাকে কেউ বলেনি কেন? এসব ভেবে ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকালাম। দেখলাম একজন যুবকে সামনে এগিয়ে আসতে। নিহা আপু তাকে ডাক দিতেই সে সামনে তাকিয়ে সাবাইকে উদ্দশ্য করে একটা হাত নাড়ল। ভাইয়াটা নিহা আপুদের মতো সাদা ফর্সা নয়। তিনি ফুপ্পার গায়ের রঙটা পেয়েছেন। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণে গায়ের রঙ তার। লম্বা ৬ফুট হবেই। সুস্বাস্থ্যের মানুষ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে জিম করে বডি বানিয়েছে। চেহারাটা দেখতে মাশাল্লাহ। সবমিলিয়ে ভাইয়াকে অসাধারণ একটা ব্যক্তি মনে হলো। তার পড়নে নীল সুট, প্যান্ট, ভিতরে সাদা শার্ট, ডান হাতে ঘড়ি, বাম হাতে নিজের টলি ব্যাগ, চুলগুলো স্পাইক করে উঁচু করে সেট করা। উনি সোজা আমাদের কাছে এসে দাদা-দাদী কে জরিয়ে ধরে কৌশল বিনিময় করতে লাগলে তখনই ফুপ্পি পুনরায় বলে উঠে,,,,
—”মা ওহ আমাদের রিদের বউ মায়া না?
মিষ্টি হেঁসে সম্মতি দিলেন দাদী। তার প্রায় সাথে সাথে ফুপ্পি পুনরায় বলল…
—” আরে বাহ মিষ্টি দেখতে তো। ভিডিও কলে থেকে বাস্তবে আরও সুন্দর দেখতে একদম গুলোমুলু পুতুলের মত। এদিকে ফুপ্পি কাছে আয় তো।
ফুপ্পির কথায় সবাই স্বাভাবিক থাকলেও আমার কাছে বেশ অস্তিত্ববোধ হলো। কেমন একটা জড়তা কাজ করল নিজের মাঝে। তারপরও এগিয়ে গেলাম ফুপ্পি কাছে। তখনো চোখে পড়লো ফুপ্পির ছেলেকে, উনি মনে হয় চমকে উঠলেন আমাকে রিদের বউ বলায়। হয়তো জানতে না উনার ভাই বিয়ে করেছেন সেটা। তাই আমার দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে দাদীকে প্রশ্ন করল…
—” নানুমা রিদ বিয়ে করেছে কবে? আমাকে কেউ কিছু বলনি কেন?
ফুপি আমাকে উনার কাছে টেনে নিতে নিতে বলে উঠেন…
—” তুই কখনো শুনতে চেয়েছিস যে বলব, তোর কাছে আমাদের জন্য কখনো সময় হয় নাকি সবসময় ব্যস্ততায় থাকি। তাছাড়া রিদের বিয়ের সময় তুই দেশে ছিলি না। থাইল্যান্ড গিয়েছিলি ব্যবসায়িক কাজে।
নিহা আপু তখন বলে উঠে,,,
—” মা তুমি একা কথা বলবে নাকি আমরাও কথা বলার সুযোগ পাবো? দেখি মায়া এদিকে আয়। এভাবে চুপ করে আছিস কেন তুই? তুই তো চুপ থাকার ব্যক্তি না। সারাক্ষণ ফোন করে তো আমাদের কানের পোঁকা বের করে দেওয়া হতো তো এখন চুপ কেন শুনি,,,,,,
ওদের কথা শুনে আমি অসহায় ফেস করে দাদী দিকে তাকায়। দাদী আমার ফেস দেখে বুঝতে পারেন আমার মনে কথা গুলো তাই মুচকি হেসে তিনি ফুপ্পিদের উদ্দেশ্য করে বলে,,,
—” লজ্জা পাচ্ছে ওহ। ওকে একটু সময় দে দেখবি রাতের মধ্যে সবঠিক হয়ে যাবে। তখন কথার ফুলঝুরি নিয়ে বসবে তোদের সাথে দেখিস।
সবাই হাসল। দাদী আমাকে পাশে দাঁড় করিয়ে ফুপ্পিদের উদ্দেশ্য বলল…
—” যাহ এবার সবাই গিয়ে গাড়িতে উঠে বস। মায়া আয় আমার সাথে।
সাবাই গাড়িতে এসে বসেছি, যে গাড়িটা খালি এসেছিল সেটার মধ্যে পিছনে বসেছে, ফুপ্পি, নিহা আপু, ফিহা, আর সামনে ডাইভারের সাথে বসেছে ফুপ্পা,,, দ্বিতীয় গাড়িটায় বরাবরই বডিগার্ডে ভরপুর ছিল। তাই ফুপ্পির ছেলে আমাদের গাড়িতে এসে ডাইভার চাচা সাথে বসল। সামনে বসতে বসতে একবার পিছনে ফিরে আমাদের দিকে তাকায়। দাদা-দাদি মাঝে আমাকে বসতে দেখে অল্প কপাল কুঁচকায় তবে কিছু বলল না।গাড়ি চলছে আপন গতিতে আমি গাড়ি মধ্যে ঘুমে ঝিমুচ্ছি দেখে দাদী আমাকে টেনে নিজের বুকে নিয়ে একহাতে ধরে রাখে। আমি ঘুমের চোখ তুলে তার দিকে তাকায়। পাশ থেকে দাদাজান হেসে উঠে একহাত দিয়ে আমার মাথায় বুলিয়ে দিচ্ছে। আমি তখনো পুরপুরি ঘুমায়নি তাদের কথা আমার কানে আসছিল। ফুপ্পির ছেলেকে সামনে থেকে কপাল কুঁচকে পিছনে তাকিয়ে থাকতে দেখে দাদী একসময় হেসে উঠে বলে…
–” এটা আমাদের কলিজা নানুভাই তাই কলিজার যত্ন নিচ্ছি আমরা। তোর কিছু লাগবে আয়ন?
আয়ন অল্প মাথা নাড়িয়ে না বুঝায়। সামনে দিকে ঘুরে বসতে বসতে তার মাথায় অন্য চিন্তা ভর করলো। রিদ বিয়ে করল অথচ সে জানে না। কিন্তু কেন? রিদের সাথে তো তার কথা হয় প্রায়ই তাহলে কেন জানাল না রিদ সে বিয়ে করেছে? অদ্ভুত ব্যাপারতো! আচ্ছা এমন কিছু কি হয়েছে যেটার জন্য রিদ কাউকে তার বিয়ের বিষয়টা জানাতে চায় না। রিদের মেয়ে সঙ্গ পছন্দ না সেই ছেলে হুট করে বিয়ে নামক বিষয়ে জড়িয়ে পরেছে সেটা সত্যিই তাকে ভাবাচ্ছে।
গাড়ি এসে থামে খাঁন বাড়িতে। সবাই যার যার মতোন ব্যাগ নামাতে ব্যস্ত কিন্তু আরাফা খাঁন মায়া কে কোলে করে বাহিরে বের হয় মিসেস হেনা খাঁন আদেশে। তিনি যথেষ্ট ফিট ও ইয়াং থাকায় মায়াকে কোলে নিতে তার কোনো সমস্যা হয়নি। তবে এই বিষয়টা আয়নকে বেশ চমকে দেয়। সে অনেকটা হা হয়ে তাকিয়ে আছে সেদিকে। এই অল্প সময়ের সে এতোটা বুঝে গেছে এই মেয়েটাকে ঘিরে তার নানা-নানুর নতুন দুনিয়া। সামান্য ঘুম ভাঙবে বলে তাকে কোলে নিয়ে নিল তা নানাভাই সেখানে কতটা ভালোবাসা থাকতে পারে তাদের মধ্যে তা বুঝতে বাকি নেই তার।
ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে যে যার মতো রেস্ট নিচ্ছে,, তাদের উদ্দেশ্য হেনা খাঁন বলে উঠে,,,
—” ফিহা তুই উপরে মায়ার পাশে রুমটাতে থাকবি, আর নিহা তুই ফিহার পাশেটা রুমটাতে আর নাজমা (ফুপ্পির নাম) তোরা নিচে ডানপাশের রুমটাতে থাকবি। আয়ন তুই রিদের একরুম পরে যে রুমটা আছে ঐটাতে থাকবি। এখন সবাই যার যার মতো করে রেস্ট নাও। যাও!
~~
মিটমিট করে তাকিয়ে চারপাশে চোখ বুলিয়ে বুঝার চেষ্টা করলাম কোথায় আছি আমি। নিজেকে নিজের রুমে পেয়ে চমকে উঠলাম আমি তো গাড়িতে ছিলাম তাহলে এখানে কেন? পরে মনে হয় হয়তো দাদাজান আমাকে নিয়ে এসেছে তাই এই বিষয়ে আর মাথা না ঘামিয়ে উঠে বসলাম। দেয়াল ঘড়িতে টাইমটা দেখে নিলাম ৪ঃ১২ বাজে। দেরি না করে দ্রুত গোসল করার জন্য চলে যায়,,, গোসল করে পিকং কালারের স্কাট পরে নিলাম। উপরে হাফ হাতার কুর্তি দিয়ে। গলায় ওড়না নিতেই দাদী রুমে প্রবেশ করেন আর আমাকে বলে,,
—” গোসল করেছিস তাহলে? ভালো করেছিস এবার আয় নিচে আয়। দুপুরে কিছু খাসনি। কিছু খেয়ে পড়তে বসবি আয়।
কথা বলে দাদী আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে টেনে নিজের সাথে নিয়ে যেতে লাগলে আমি অসহায় মতোন দাদীর পিছনে যেতে লাগলাম। নিচে মেনে দেখি সবাই বসে আছে ড্রয়িরুমে যার যার মতো,, আমাদের দেখে সবাই একটা হাসি দিলেও ফুপ্পির ছেলে আয়ন ভাইয়া তিনি তখনো গম্ভীর মুখে ছাড়া নিজের ফোন টিপছেন,,,,,,
দাদী আমাকে অন্য পাশে সোফায় বসিয়ে দিতেই দাদাজান বলে উঠে,
—“একি সোনামা তুই এত অবেলায় গোসল করলি কেন, তোর তো রাতে জ্বর উঠবে মনে হয়।
—” শরীর খারাপ লাগছিল বলে অবেলায় গোসল করে ফেলেছি দাদাজান। গোসল করাতে এখন ঠিক লাগছে। দাদী খাবার দাও। অনেক খিদা পেয়েছে, সকালে খেয়েছিলাম। আর বলতে হয়নি এতেই কাজ হয়ে গেছে আমার কারণ দাদী আমার জন্য মালাকে (কাজে মহিলা) দিয়ে খাবার আনতে পাঠায়।
মায়ার কথায় আয়ন চোখ তুলে তাকায়। এতক্ষণ সে ফোনে একটা কাজ করছিল তাই মায়ার উপস্থিতটা বুঝতে পারেনি। এয়ারপোর্টে মায়াকে ঠিক ভাবে দেখা হয়নি যখন শুনল যে রিদের বউ তখন টেনশনে টেনশনে লক্ষ্য করে নি এই ভেবে যে রিদ হঠাৎ করে কিভাবে বিয়ে করে নিল। কিন্তু যখন দেখল মায়া সবার সাথে ভাব জমিয়ে আছে তখনই বিষয়টি তার চোখে পড়ল। তার বোন দু’টো সাথেও অনেক ভাব মায়ার। আয়ন চোখ ঘুরাল মায়া চেহারায়। মূহুর্তে যেন চোখ আটকে গেল তার। মায়ার ভেজা দ্বিগুণ কালো চুল, সিগ্ধ চেহারা, টাগর টাগর চোখ, চিকন গোলাপি ঠোঁট, চেহারা অসম্ভব মায়া,,, যেমন মায়ার তার মায়ায় মৌখরিত হয়ে জড়িয়ে যাচ্ছে,,,,
আয়ন খানিকটা সময় মায়ার চেহার দিকে তাকিয়ে হুট করেই আপন মনে হেঁসে উঠে মনেমনে ভাবল, এজন্যই তো বুলি কাউকে না জানিয়ে রিদ শালা বিয়ে করল কিভাবে? তখনই কানে আসে ফিহার কথা।
—” নানুমা মায়া রিদ ভাইয়া সাথে এক রুমে থাকে না কেন? ওরা আলাদা রুমে কেন থাকে?
ভ্রু কুঁচকায়! স্বামী স্ত্রী আলাদা ঘরে থাকে এটা কেমন কথা? তাই হেনা খানের আগে সে ফের প্রশ্ন করে বলে…
—” ওরা আলাদা রুমে থাকে নানুমা?
হেনা খান মায়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে আয়ন কে উদ্দশ্য করে বলে,,
—” রিদ বিয়েটা এখনো মানতে চায় না তাই ওরা যে যার মতো থাকছে।
—” মানে? এটা কেমন কথা? বিয়ে না মানলে বিয়ে করতে গেল কেন তাহলে রিদ? তাছাড়া বিয়েটা কি ছেলেখেলা নানুমা?
—” ছেলেখেলা নয়। তবে এখানে আমরা যারা আছি তারা ছাড়া অন্য কেউ মায়া আর রিদের বিয়ে সম্পর্কে জানে না কিছু। আপাতত সবাই জানে মায়া রিদের কাজিন হয়,,, আয়ন তোর বাকিসব প্রশ্ন উত্তর রাতে পাবি আশা করি এখন কোনো প্রশ্ন আমাকে করবি না তুই।
আমি অসহায়ের মতো সবাই কে দেখছি সবাই কেমন গম্ভীর মুখ করে বসে আছে আর আয়ন ভাইয়া কেমন অদ্ভুত নজরে দেখছে আমায়। হয়তো আমার বিয়ের বিষয়টা তার ঠিকঠাক হজম হচ্ছে না। কিন্তু এতে আমি কি করবো? আমার এখানে কিছুই বলার নেই।
চলবে,,,,,,,,,,,,,