#দেওয়ানা ( আমার ভালবাসা)
#লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_০২
🍂
দুর্নিয়াতে যদি কাউকে পড়া চোর হিসাবে অ্যাওয়ার্ট দেওয়া হয়। তাহলে সেটা নাকি অনাহেষেই আমি পাব। এটা আমার মনোরম দাদীর ধারণা। আমার নয়। আমি বরাবরই বিদ্রুপ করি দাদীর এই ধারণাটি নিয়ে। করাটায় স্বাভাবিক! কারণ আমি সেটা মানি না তাই। প্রত্যেকে আলাদা বিশেষ কিছু গুন থাকে। সবাই সব দিক থেকে পারদর্শী হয় না। আর না সাবার মাঝে সব গুণ থাকে বিদ্যমান থাকে। তাছাড়া সবার মাঝে সব গুণ থাকতে হবে, এমনটা ও কোনো কথা নেই তাই না। অনেকের মাঝে কিছু ভিন্ন গুণ ও থাকতে পারে। যেমন আমার আছে! আমার পড়া ছাড়া সবই ভালো লাগে।শুধু আমার পড়তে ভালো লাগে না। বই এ নাম শুনতেই চোখে আমার রাজ্যের সব ঘুম ভর করে। শুধু হার্মি আসে মূহুর্তেই। তাই পড়াটা ঠিকঠাক পড়তে পারি না। মাঝে মধ্যে আমি এই গুনকে কাজে লাগায়। যেমন যখন আমি ঘুমের অভাবে বিছানা ছটফট করি তখন, আমি শুধু মনকে বলি এখন না ঘুমালে পড়তে বসাবো কিন্তু তোকে দেখিস। ব্যাস কাজ হয়ে যায় আমার। বাকিটা আমার ঘুমই কাজ করে দেয়। মুহূর্তেই হার্মি দিতে দিতে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যায়। তাই এটাকে আমার বিশেষ গুণ বলে মনে করি আমি। কিন্তুু দাদীর আমার মানতে নারাজ। সে আমাকে ধরেবেঁধে এইখানের একটা ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়েছেন। সেটা নাকি দাদাজানের ভার্সিটির। তাই আমার ভর্তি নিয়ে কোনো ঝামেলা করতে হয়নি। নয়তো আমাকে এতো বড় ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া তো দূর থাক। পাশেও বিরতে দিতো না আমার মনে হয়। যাহ রেজাল্ড আমার হা হা হা,,,,,
যাই হোক! এই মূহুর্তে দাদীর আমার ওপর অনেক বিরক্ত আর সেটা দাদীর সূধর চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। কারণটাও সিম্পল। আমি ভার্সিটিতে যেতে চাইছি না তাই। আর দাদী আমাকে ভার্সিটিতে পাঠাবেই। সেই কারণের রেশ টেনে এই মূহুর্তে দাঁড়িয়ে আছি খান বাড়ির বিশাল বড় ড্রয়িংরুমে আমি। আমার ঠিক বরাবর সামনে দাদী দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর পাশে বাকিরা, মানে কাজের লোকরা এক কোণে দাঁড়িয়ে আমাদেরকে দেখছে। আমি অসহায় ফেস বানিয়ে মাথা নিচু করে রেখেছি। দাদী আমাকে এটা সেটা খাজিবাজি বলেই যাচ্ছে থামাথামি নেই। পরিবেশ খানিকটা উত্তেজিত আমার জন্য। ঠিক তখনই কলিংবেলের আওয়াজ কানে আসল আমাদের। কিন্তু আমাদের দুজনের মধ্যে বিশেষ একটা পরিবর্তন দেখা গেলো না। একজন কাজে লোক দ্রুত এগিয়ে মেইজ দরজাটা খুলে দেয়। মাথা নিচু করে পাশে চলে গেলো কাজের লোকটা নিঃশব্দে। কোনো উত্তর করলো যে কে আসলো? দরজা ধরে এই সময়ে কে আসলো বাড়িতে? প্রশ্ন থাকলো মনে? কিন্তু আমি মাথা নিচু করে রেখেছিলাম তাই আমার তাকানোটা হয়ে উঠেনি। দাদীও বিশেষ একটা পাত্তা দিলনা যে কে এসেছে? সেটা নিয়ে। দাদী নিজের মতো করে আমাকে শাসিয়ে আবারও বলে উঠে,,,,
—” মায়া আমি তোকে এত কষ্ট করে শাড়ি পরিয়ে সাজালাম। আর তুই আমার কষ্টে কোনো মূল্য দিবি না। আর আজকে তো তোকে ভার্সিটিতে পড়তে যেতে হচ্ছে না। শুধু ভার্সিটির অনুষ্ঠানে যাবি। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানে যেতেও তোর সমস্যাটা কোথায় শুনি? তুই একা থাকবি না সেখানে। সবাই থাকবে! তাছাড়া আজকে ভার্সিটির নবীন বরণ অনুষ্টানে তোর দাদাজানও থাকবে চিপ গেস্ট হিসাবে। এখন তুই যদি না থাকিস তাহলে তোর দাদাজান কষ্ট পাবে এই নিয়ে। তুই কি চাস এখন তোর দাদাজান কষ্ট পাক তোকে নিয়ে হ্যাঁ?
আমি সভ্যসুলভ মাথা নাড়ালাম যার অর্থ না ‘আমি চাই না। আমার মাথা নাড়াতে দেখে হয়তো সন্তুষ্ট হয়েছেন দাদী। সাথে সাথে নরম গলায় বললো…
–” বেশ! চল তোকে গাড়িতে দিয়ে আসি। ড্রাইবার অপেক্ষা করছে তোর।
দাদীর কথায় গাল ফুলালাম আমি। ভার্সিটির অনুষ্ঠান হোক আর পড়াশোনা জন্য হোক। আমাকে কোনো কালেই ভার্সিটিতে যেতে মন চাই না। তারপরও আমি কাউকে এই কথাটা বুঝাতে পারলাম যে আমি আর পড়তে চাই না। যেতে চাই না কোনো ভার্সিটিতে। তাদের কথা না পড়লে আমি মানুষ হবো না। এটা কোনো কথা হলো, আর কত মানুষ হবো আমি। গাছ ফেরে মানুষ হবো আমি। মানুষ হয়ে জম্ম নিয়েও মানুষ হতে পারলাম না আমি। এই চার অক্ষর পড়লেই মানুষ হয়ে যাবো এটা আমার মনশয়ী দাদীর ধারণা। আমি কষ্টে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আবারও বুঝানোর চেষ্টা করে বললাম…
—“দাদী আমার পড়ালেখা ভালো লাগে না তারপরও তোমরা আমাকে ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়েছ।
ভার্সিটিতে গেলে আমার ভয় করে সবাই কেমন কেমন করে তাকিয়ে থাকে যেন। এতো ভয় নিয়ে কি আর পড়াশোনা করা যায় বলো।
আমার কথায় মূহুর্তেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো দাদী। ক্ষেপ্ত বংগিতে বললো….
—” এই একদমই মিথ্যা বলবি না আমার সাথে পড়া চোর কোথাকার। তোকে না আমি বলছি যে ভার্সিটিতে গিয়ে নতুন মেয়ে ফ্রেন্ড বানাতে। বানালিনা কেন বল?
আমি সাথে সাথে বলে উঠি…
—” দাদী আমি মিথ্যা কখনোই বলি না,তুমি জানো। আর বিশ্বাস্য না হলে তুমি আমার সাথে চলো আমাদের ভার্সিটিতে। তাহলেই বুঝবা! আর আমি ফ্রেন্ডও বানিয়েছি তোহ দুইজন মেয়েকে। কিন্তুু ওরা …
আমাকে থামিয়ে দিয়ে দাদী বলে উঠে,,,,
—” এই বয়সে তুই আমাকে তোর সাথে ভার্সিটিতে যেতে বলছিস মায়া? তুই কি ঠিক করে রেখেছিস যে কখনোই বড় হবি না।
কথা গুলো বলেই দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে দাদী নিজেকে খানিকটা শান্ত করে আবারও বললো…
—“আচ্ছা শুন! ফ্রেন্ড বানিয়েছিস ভালো কথা। আরও কয়েকজন মেয়ে ফ্রেন্ড বানাবি আর এসে বলবি আমাকে কেমন। খবরদার! কোনো ছেলেদের সাথে কথা বলবি না। তাদের ফ্রেন্ডও বানাবি না। সব ছেলেরা ভালো হয় না। আর ক্ষিদে লাগলে কলেজের ক্যান্টিনে কিছু খেয়ে নিবি কেমন। সকালের নাস্তাটাও ঠিক মতো করিসনি তুই।
দাদী কথায় আমি মাথা উপর নিচ করলাম যার অর্থ হ্যাঁ। দাদী আমার একগাল আলতো হাতে ছুঁয়ে আবার বলে উঠে….
–” সোনামা! পড়াশোনাটা তোকে করতেই হবে। তাই কোনো বাহানা না করে চল তোকে এগিয়ে দিয়ে আসি গেইট পযন্ত।
কথা গুলো বলেই আমার হাত ধরে নিয়ে দরজা দিকে এগোতে লাগলেন। আমি মাথা নিচু করে দাদী সাথে সাথে চললাম। দাদী আমাকে নিয়ে যাওয়ার সময়, দরজা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা দিকে, এক পলক তাকিয়ে পর মূহুর্তে ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো চলতে চলতে। আমি মাথা নিচু করেই হাঁটছিলাম দাদী সাথে। দাদী নিঃশব্দে আমাকে নিয়ে বেড়িয়ে গেল গাড়ির উদ্দেশ্য। আমি দুঃখ মনে চলতে লাগলাম। এখন আমার কি আর করার আছে? কিছু করার নেই! আমার কষ্ট কেউ বুঝে না। কেউ না।
রিদ এতক্ষণ দাঁড়িয়ে নিজের দাদীর আর মায়ার কথা গুলো শুনছিল। আসলে রিদ এই টাইমে বাড়িতে থাকে না। সে রোজকার মতো সকাল ৯ঃ০০ টায় বের হয়ে যায় অফিসের জন্য। আজকেও তাই করেছিল। কিন্তু হুট করে ওকে আসতে হয়েছে দাদাভাই এর সাথে তাঁকেও ভার্সিটিতে থাকতে হবে বলে। সেই জন্য তাঁর এই অসময়ে বাড়িতে আসা ফ্রেশ হওয়ার জন্য। সাথে নিজের কিছু প্রয়োজনীয় ফাইল নিবে। ভার্সিটিতে যাওয়ার অন্য একটা বিশেষ কারণ আছে রিদের। নয়তো এইসব ফালতু অনুষ্ঠানে সে কখনোই যায়না। এই মূহুর্তে কিছু রাজনৈতিক কারণের জন্য যেতে হবে বাধ্যতা মূলক।
কিন্তু ড্রয়িংরুমে আসতেই চারপাশটা থমথমে দেখে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকায় সামনের দিকে। কি হচ্ছে? এখানে বুঝার জন্য সবার দৃষ্টি অনুসরণ করে সে তাঁর দাদীর দিকে তাকায়। পরমূহুর্তে নিজের দাদীকে অনুসরণ করে তাঁর সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির দিকে চোখ পড়তেই, মূহুর্তে খানিকটা চমকে উঠে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেয়েটাকে লক্ষ করতে থাকে। নিরব চোখ বুলাই মায়ার মাথা থেকে নিচ পযন্ত। মেয়েটির পড়নে তাঁর ডিপ রেড শাড়ি পড়া। যার মধ্যে হালকা গোল্ডেন সুতা আর পাথরে কাজ করা। চুল গুলো সব ছাড়া যা হাঁটুর নিচ অবধি গিয়ে ঠেকেছে। দুই হাত ভরর্তি কাঁচের রেশমি চুড়ি। ব্যাস! এতটুকু দেখা যাচ্ছিল সাইড দিয়ে। কিন্তুু যখন হেনা খাঁন মায়ার হাত ধরে দরজা সামনে দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন রিদ মায়ার চেহারা দেখে মূহুর্তেই আবারও চমকে উঠে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মায়ার মুখপানে। গোল গোল চেহারা মধ্যে, বড় বড় চোখ জোড়া। আর সেই চোখে বড় বড় ঘন পাপড়ি বিশিষ্ট। হালকা চিকন ঠোঁটে গাঢ় ডিপ লাল লিপস্টিক দেওয়া। কঁপালে কালো টিপ। চোখের গাঢ় কাজল টানা। একটা কথায় পরীকেও হার মানাবে বলে এই মূহুর্তে রিদের মনে হচ্ছিল। মায়াকে দেখে যেন আটকে গেছে তার মনপাড়া….
ভার্সিটিতে বসে আছি আমি। সাথে আছে আমার দুই ফ্রেন্ড। একজন হিনা অন্যজন মনা। দুইজনই অনেক সুন্দরী। এতটা যা মূহুর্তেই যে কাউকে পাগল করতে পরবে। কিন্তুু তাদের দাবি আমি নাকি বেশি কিউট তাদের থেকে। একদম কিউট বাচ্চাদের মতো দেখতে লাগে। আমাকে দেখলে নাকি গাল টানতে ইচ্ছা হয় তাদের। কিন্তু আমার সেটা মনে হয়না। এবার কেন মনে হয় না, তাহ নিজেরও জানিনা। হিনা পরেছে কালো শাড়ি আর মনা নীল শাড়ি। দুইজনই আমার মতো করে সেঁজেছে। তবে তাদের দুইজনের চুল পিঠ পযন্ত এবং ব্রাউন কালার করা। কারণ তারা আধুনিকতায় বিশ্বাসী। আর আমি আধুনিক নয়। কথা ভাবতেই যেন এক দুঃখের দীর্ঘশ্বাস ছালাম,,,,
ওদের সাথে গল্প করতে করতে দাদাজানের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এখন বাজে ১১ঃ১০ আর ১০মিনিট পরে চীপ গেস্ট মানে দাদাজান চলে আসবে। তাই আমরা স্টেজের সামনে তিন সারীপর আমাদের সিট বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম দাদাজানের। আরও কিছুক্ষন পর আমাদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে, দাদাজান এলো তিনটা গাড়ি নিয়ে। দুটো সাদা একটা কালো। একটাতে গার্ডরা। অন্যটাতে দাদাজান ছিলেন। তৃতীয়টাতে একটা সুদশন ছেলে বের হ’য়ে আসে। আমি দূর থেকে দাদাজানকে দেখলাম। তিনি আর ছেলেটা সাবার সাথে হেন্ডশেখ করছিল। দাদাজান আবার কারো কারো সাথে কোলাকুলিও করছেন। কিন্তু ছেলেটা নয়। আমাদের ভার্সিটির সিনিয়র বড় ভাই-আপিরা তাদের ফুল দিয়ে স্বাগতম জানাচ্ছিলেন।
দাদাজান ফুল নিতে নিতে ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকায়। হয়তো কাউকে খুজছিলেন। সুদশন ছেলেটাকেও দেখলাম সেও ঘাড় ঘুরিয়ে সামনে দিকে তাকিয়েছেন। হয়তো সেও দাদাজানের মতো কাউকে খুঁজছেন। কথা বলতে বলতে একটা সময় দাদাজান প্রিন্সপাল স্যারকে ডেকে কানেকানে কিছু একটা বলে ইশারা করলেন আমাদের দিকে। প্রিন্সপাল স্যার আবার সাথে সাথেই অন্য একজনকে ইশারা করে কিছু একটা বললেন। ইশারা অনুযায়ী সে ব্যক্তি সেখান থেকে চলে যায়। তবে দাদাজানের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার চেহারার ঠিকঠাক দেখা যাচ্ছেনা আশেপাশে মানুষ জন্যের ভীড়ের জন্য। সেই সাথে আমরা অনেকটা দূরের অবস্থান করছি তাই। অতি কষ্ট করে ছেলেটিকে দেখার আর চেষ্টা করলাম না। চুপচাপ নিজের আসনে ঠিক করে বসলাম। আমার ঠিক হয়ে বসার মধ্যে দিয়েই পিছন থেকে কেউ একজন বলে উঠে….
—” মায়া তোমারকে প্রিন্সিপাল স্যার ডাকছেন। চলো আমার সাথে।
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় পিছনে। চোখে পড়লো আমাদের ডিপার্টমেন্টের রাষ্ট্রবিজ্ঞান স্যারকে। আমি স্যারের কথায় বিনা বাক্য বয়ে সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালাম। বাধ্য মেয়ে মতো স্যারের পিছনে যেতে লাগলাম। স্যার আমাকে একটা রুমে ভিতরে নিয়ে আসলেন। আমি ভিতরে ঢুকতেই চোখ দুটো অটোমেটিকলি বড় বড় হয়ে যায়। ভয়ে চুপসে যায়। কারণ এখানে সব সিনিয়র বড় আপি আর ভাইয়ারা, আছে। সাথে বেশ কিছু স্যার ম্যামরাও আছে। হুট করে রুমের ভিতর আমি আর স্যার ঢুকাতে সবার দৃষ্টি পড়ে আমাদের উপর। সবাই স্যারকে পূব থেকেই চিনতো তাই খুব সহজেই আমি সবার দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে গেলাম। সবার নজর আমার পড়লো। আমি ভয়ে আরও খানিকটা জড়সড় হলাম। গিয়ে দাঁড়ালাম সিনিয়র আপিদের পাশে। তখনই পাশ থেকে প্রিন্সপাল স্যার বলেন..
—“মায়া আসো আমার কাছে তোমাকে আরাফাত খানকে ( দাদাজান ) স্টেজ গিয়ে ফুল দিয়ে বরণ করতে হবে তোমার সিনিয়র ভাই আপুদের সাথে। নাও এই ফুল গুলো। যাও ওদের সাথে তুমি। আর সাব্বির (সিনিয়র ভাই দলে লিডার) তুমি মায়া খেয়াল রাখবে যাতে ওর কোনো সমস্যা না হয়। সেটা তোমার দ্বায়িত্ব দিলাম।
সাব্বির ভাই আমার সামনে এসে দাড়ায়। নিরব চোখে পযবেক্ষণ করে আমাকে। মিষ্টি হাসলো নিজের মাঝে। পর মূহুর্তে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় প্রিন্সিপালের দিকে। সভ্যস্বরুপ মিষ্টি হেসে স্যারকে উদ্দেশ্য করে বলে…
—” কোনো সমস্যা হবে না স্যার। ঠিকঠাক দ্বায়িত্ব পালন করবো।
—” ঠিক আছে যাও তোমরা সবাই।
—” জ্বিই স্যার।
পর মূহুর্তে ঘাড় ঘুরিয়ে আমাকে বলে উঠে…
—” তুমি আমার সাথে। আর বাকিরা তোরা সবাই ও আয় আমার সাথে।
সিনিয়র ভাইয়ের কথায় আমি মাথা নাড়িয়ে পিছন পিছন যেতে লাগলাম উনার। কিন্তু নিজের ভিতরে প্রচন্ড ভয় জেঁকে বসেছিল আমার। বড়দের মাঝে আমি একা ছোট। বিষয়টি আনকম্ফোর্টেবল ছিল আমার জন্য। যাই হোক স্টেজে একপাশে সাব্বির নামক ভাইয়াটার পাশে দাঁড়ায় আমি। স্যার আমাদের সবাই হাতে ফুল দিচ্ছেন। আমি সেই ফুলের মালাটা নিতে চোখ পড়ল সাব্বির ভাইয়ার দিকে তিনি অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। উনার তাকানোতে আমি সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলাম। আমার চোখ নামানোতে উনার অস্পষ্ট স্বর কানে আসলো আমার। কিছু একটা বিরবির করে বলছিল নিজের মাঝে। বিষয়টি আমার কাছে স্পষ্ট নয়।
স্টেজ থেকে আমাদের সরাসরি সবাইকে দেখা যাচ্ছে প্রথমে আমাকে বরণ করতে হবে দাদাজানকে তাই সামনে এগোতে লাগলেন আমি। সবাই নিরব বর্রণ পূব চলছে তাই। আমার কেমন জানি অস্তির লাগছে কারণ আমার পায়ে মধ্যে যে পাঁয়েল আছে সেগুলো ঝনঝন শব্দ করছে খুব। তাই নিজের মাঝে অস্বস্তি ও বিরক্তি লাগছে খুব। নিজেকে মনে মনে শাসালাম এই বলে, আজকে এই গুলা না পড়ে আসলে কি এমন হতো। উফ! ভিষণ অস্থিরতা নিয়ে সামনে মানুষটার দিকে তাকিয়ে একটা ক্লোজআপ হাসি উপহার দিলাম দাদাজানকে। কিন্তুু আমার এই হাসি কারো একজনের পছন্দ হয়নি। তাই আমার এই হাসিটা পরিবর্তীত আমার বাঁশে রুপান্তরিত হয়েছিল হা হা হা,,,,,,,
আমি সামনে যেতেই দাদাজান হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আমার হাত থেকে মালাটা পরে নিলেন। আমি পাশে তাকাবার প্রয়োজন বোধ মনে করিনি তাই দাদাজানের সাথে কথা বলছিলাম। তিনি মালাটা পরতে পরতে আস্তে করে বলেন….
—” সোনামা আমি চাইছিলাম তুই আমাকে বরণ কর। তাই তোর হাতেই মালাটা পড়ে নিলাম। কিন্তু আজকে আমার সোনামাকে কিন্তু লাল শাড়িতে, লালপুরি লাগছে দেখতে। ভারী মিষ্টি লাগছে।
দাদাজান কথায় আমি আবার একটা ক্লোজআপ হাসি দিলাম। কারণ উনার জন্য আমাকে এখানে আসতে হয়েছে সিনিয়দের মাঝে। তিনি আমাকে কতটা ভালোবাসলে স্যারকে বলে আমার হাতে বর্রণ হলেন।
দাদাজানের ভালোবাসায় বরাবরই আমি মুগ্ধ। তাই আমিও লুকোচুরি ভাবে নিজের একটা হাতের ইশারায় মিহি হাসি দিয়ে বুঝায় 👌
–“তোমাকেও খুব সুন্দর লাগছে জানসাহেব।।।
দাদাজান হাসি মুখে সবার সামনে আমার মাথায় হাত দিয়ে আদর করে দিলেন। আমি চলে আসলাম সিনিয়রদের মাঝে, সাব্বির ভাই এগিয়ে ছেলেটাকে বরণ করতেই আমি একবার চোখ তুলে তাকালাম সামনে। সাথে সাথে চোখাচোখি হলো দুজনের। আমি দ্রুত চোখ নামিয়ে নিলাম। কিন্তু আমি না তাকিয়ে বুঝতে পারছি ছেলেটা আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। সময় নিয়ে এক এক করে বরণ পর্ব শেষ হতেই সবাই একসাথে জড়ো হয় সিনিয়র ভাই আপিরা। আমি ছোট থাকাই সেই ভিড়ে মধ্যে পড়ে গেলাম বের হতে পাড়ছিনা। হঠাৎ কেউ আমাকে ভিড় থেকে টেনে বের করে হাত ধরে, বাহিরে এনে হাত ছেড়ে দিতেই আমি ভয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি সাব্বির ভাইয়া হাসি মুখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। বিষয়টি বুঝতে পারলাম আমি যে উনি আমাকে হেল্প করেছে ভিড় থেকে বের হওয়ার জন্য। তাই কৃতজ্ঞতা স্বরুপ আস্তে উনাকে thanks জানালাম। তিনিও আমাকে স্বাভাবিক করার জন্য হেসে এটা সেটা বলতে লাগলেন। আমি ইতস্ততার মাঝেও ঠোঁট প্রসারিত করে ফেললাম খানিকটা। উনি আমার হাসিতে আবারও আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে ছিল। পরে আমি নিজের করা কাজে জন্য ইতস্তত বোধ করলাম তাই কিছু না বলে চলে আসলাম সেখান থেকে,,,
হেনা মনা সাথে বসেছিলাম আমি। টুকটাক কথা বলছিলাম নিজেরা নিজেরা। এমন সময় মনা বলে উঠে..
—” আচ্ছা দোস্ত? তুইকি রিদ খানকে চিনছ?
মনার কথায় চমকে উঠলাম আমি। হঠাৎ মনা মুখে আমার গুণধর স্বামীর নাম শুনে হালকা ভয়ভীতিও হলাম। মনে মনে ভাবলাম মনা কিভাবে চিনে আমার স্বামীকে? প্রশ্ন জাগলো তীব্র মনে। তাই নিজের কৌতূহল এড়াতে না পেরে পাল্টা প্রশ্ন করলাম মনাকে…
—“কোন রিদ?
আমার কথায় যেন আকাশ থেকে পড়ল মনা। বিরক্তি চোখে তাকালো আমার দিকে। হালকা রাগী ভরাট গলায় বললো….
—” লাইক সিরিয়াসলি মায়া? রিদ খানকে চিনিস না তুই? এই কলেজের ফাউন্ডার আর প্রতিষ্ঠাতার নাতিকে কে তুই চিনছ না? এখন সেটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে তাই তো? আর তুই যদি না চিনতি তাহলে রিদ খানকে কেন তোকে সারাক্ষণ গিলে খাওয়া টাইপে ড্যাবড্যাব করে দেখলো বল?
—” আমি কি জানি।
কথাটা বলেই আমি অপরাধী মত দাঁড়িয়ে গেলাম অসহায় ফেসে। মনার দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। মনার এমন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছে, এই মূহুর্তে আমার রিদ নামক ব্যক্তিকে চিনাটা অতি জরুরি ছিল আমার জন্য। তাহলে হয়তো মনা আমার উপর এতটা রাগান্বিত হতো না। ছোট করে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে নিজের স্থির করলাম। বিষয়টি বুঝে উঠার জন্য পুনরায় মনাকে প্রশ্ন করে বললাম,,
—” তুই কার কথা বলছিস সেটা আমি বুঝতে পারছিনা।এই শহরে আমি নতুন তাই ঠিকঠাক কাউকে চিনি না।এখন রিদ খান নামক তো অনেকেই থাকতে পারে আমাদের আশেপাশে তাই না। তাই না দেখে কিভাবে বলবো যে আমি তাঁকে চিনি কিনা বল?
–” দাঁড়া আমি তোকে দেখাচ্ছি।
উত্তেজিত বংগিতে দ্রুত হাত নেড়ে আমাকে সামনে ইশারা করে মনা। আমি মনার হাতের ইশারা অনুযায়ী সামনে তাকায়। মনা আমাকে দাদাজানের পাশে বসে থাকা ছেলেটার দিকে ইশারা করে দেখালো। আমি চোখ আওড়ায় ছেলেটির দিকে। দূর থেকে দেখলাম ছেলেটি একজন গার্ডকে কি যেন বলছে পাশের তাকিয়ে। আমি ছেলেটির সম্পূর্ণ চেহারা দেখতে পারলাম না। শুধু একপাশটা চোখে পড়লো আমার।আমি চোখ ঘুরিয়ে মনার দিকে তাকায় সাথে সাথেই। স্বাভাবিক বংগিতে বললাম….
—“দোস্ত চিনলাম নাতো এই ছেলেকে। কখনো দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না।
আমার কথা গুলো হয়তো বিশ্বাস হলো না মনার। তাই গাঢ় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। কিন্তু কিছু বললো না। আমিও আর এই বিষয়ে মাথা ঘামাইনি। আমাদের মধ্যে কথা চলছিল টুকটাক স্বাভাবিক কথাবার্তা। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই হাজির হলো একজন শক্তপোক্ত কালো টাইপের বডিগার্ড আমাদের সামনে। বডিগার্ডটি কোনো রকম বনিতা না করেই এসে আমাকে উদেশ্য করে বলে উঠে…
—” ম্যাম! স্যার আপনাকে যেতে বলেছে স্যারের অফিস রুমে। আমার সাথে আসুন ম্যাম প্লিজ।
দাদাজানের বডিগার্ডকে আমি চিনতে পেরে উঠে দাঁড়ায় সাথে সাথে। হেনা, মনা থেকে বিদায় নিয়ে গার্ডের পিছনে চললাম নিভয়ে। মিনিট দুই মধ্যে আসলাম অফিস রুমের কক্ষে। বডিগার্ডটি লোকটি আমাকে রেখে চলে যায় বাহির। যাওয়া সময় বলে গেল, স্যার নাকি আসছে উনার। আামকে অপেক্ষা করতে বললো,,,
অফিস রুমে সোফায় বসে ছিলাম চুপচাপ। হঠাৎ বিদুৎ চলে যাওয়ায় আমি ভয়ে উঠে দাঁড়িয়ে দরজা খুজতে লাগলাম। হাতরাতে হাতরাতে দরজা খুঁজে পেয়ে খুলার জন্য হাত বাড়াতেই কেউ একজন ঝড়ের গতিতে রুমে ঢুকে আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে সাথে সাথে। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ন্যায় হিচকে। তখন কানে আসলো সামনের ব্যাক্তিটির রাগান্বিত কন্ঠ…
—” আমাকে জ্বালাবি তো তুই নিজেও জ্বলবি তাই আমাকে জ্বালানো বন্ধ কর। আমাকে শান্তি মতো থাকতে দিবি তো তুই নিজেও শান্তি পাবি। আমাকে আগুনের দহনে পুড়াবি, তো আমি সেই আগুনের দহনে তোকেও পুড়াবো। যখন থেকে আমার সামনে এসেছিস তখন থেকে রোজ আমাকে পুড়িয়ে মারছিস। আমি কোনো কিছুতে শান্তি পাচ্ছি না। শান্তি চাই আমার,,, আমাকে আমার শান্তি ফিরে দে নয়তো তোকেও আমি শান্তিতে থাকতে দিব না। বিগত মাস গুলোতে আমি যা করি নাই এখন থেকে সেই সব করব তোর সাথে, যেটা আমার মন সায় দিবে সেটা। বুঝেছিস তুই?
লোকটার পরপর ধমক স্বরের কথায় কেঁপে উঠলাম আমি। কে আমাকে এতটা শাসাচ্ছে কিছু জানি না আমি। শুধু চোখ বন্ধ করে নীরবে শুনে যাচ্ছিলাম পাগল লোকটার কথায়। ভয়ে চিৎকার করার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি আমি। তাই ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে চলছি লোকটার সামনে। মনে ভাবছিলাম ‘কোন বাজে লোকের পাল্লায় পরলাম আল্লাহ জানে। তখনই আবারও লোকটার কথা কানে আসলো…
—“তুই আজ এত সাজলি কেন হ্যাঁ? কাকে দেখাতে চাস এই সাজ?
আমি ফুপিয়ে কেঁদে উঠে কোনো রকম কাঁপা কাঁপা স্বরে বলি..
—” দাদী সাজিয়েছে আমাকে। আমি সাজতে চাই নি তো।
লোকটা আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে একটা ভেজা কাঁপড়ের টুকরো চেপে ধরে আমার মুখের। জোরে আমার মুখ মুছতে মুছতে বলে উঠে,,,
—” তোর কপালে শুনি লেগে গেছে। শুকুনের নজর পড়ছে তোর ওপর। আজ থেকে আমি যা বলব তাই-ই হবে তোর সাথে। আমার কথা না শুনলে তোর সাথে কি হবে তা আমি নিজেও জানিনা। তাই আমার কথার অবাধ্য হওয়ার চেষ্টাও করিসনা তুই। এখন শুধু জানিয়ে রাখলাম এরপর থেকে অ্যার্কশন করবো। দেখিস তুই।
আর তোর আমাকে দেখার সময় থাকে না। আমার সামনে আসতে চাস না। কিন্তুু অন্য ছেলেদের সাথে ঠিকই হেসে কথা বলতে পারিস। তখন তোর ভয় লাগে না। তাই না যত ভয় শুধু আমার জন্য তোর।
কথা গুলো বলেই শক্ত হাত দিয়ে আমরা গাল চেপে ধরে। ব্যাথায় আমি কুঁকড়িয়ে উঠলাম কিন্তুু তারপরও লোকটার কোনো ভাবান্তর হলো না। লোকটা পুনরায় আমাকে ধরে বলে….
—” শুন! এখান থেকে সোজা বাসায় যাবি তুই। বাহিরে ডাইভার অপেক্ষা করছে তোর জন্য। এখন যদি তুই আমার কথা নড়েচড় করে না যাস বাসায়? তাহলে আমি তোর কি করব? তা আমি নিজের ও জানিনা।
কথাটা বলেই লোকটা আমাকে ধাক্কা ছেড়ে দিলেন। আমি ছিটকে গিয়ে পড়লাম খানিকটা দূরে। আমার হাত ছাড়া পরে আমার হাত থেকে কাঁচের চুড়ি নিচের ভেঙ্গে পড়লো ঝনঝন শব্দ করে। লোকটা হাত চেপে ধরা কারণে ভেঙ্গেছি। চুড়ি ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে হাত থেকে রক্ত বের হতে লাগল মূহুর্তেই। কিন্তু আমি সেই সবে লক্ষ না করে লোকটা থেকে ছাড়া পেয়ে কোনো দিক না তাকিয়ে ভয়ে দৌড়ে দিয়ে বাহিরে চলে আসলাম। গিয়ে বসলাম সোজা গাড়িতে….
চলবে,,,,,,,,,,,