দেওয়ানা_(আমার ভালোবাসা) #লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাল মায়া #পর্বঃ_০১

0
1732

🍂
চাপ এ পরে বিয়েটা করতে হয়েছে আমায়, কিন্তুু যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে তাকে আমি দেখেনি,,, অবশ্য সেও আমাকে দেখেনি, তার পরও আমাদের বিয়ে হয়ে গেল। কথাটা ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম আমি। তবে এই দীর্ঘশ্বাসটা দুঃখের নয়, সুখের! কেন জানিনা আমার এই দীর্ঘশ্বাস সুখ সুখ লাগে। মনে নেই কোনো হতাশ বিয়েটা নিয়ে। এমনটাও নয় যে, আমি আমার স্বামীকে ভালবাসি। তাকে পাওয়া জন্য আমার মনে, এই সুখ সুখটা লাগছে। উহুম! এমন কিছু ভাবাটাই ভুল। কারণ তাকে আমি ভালবাসি না। আর কখনো ভালোবাসতে পারবো। ভালোবাসা অর্থ আমি জানি না।কখনো! ভালবাসা কি তা নিয়ে চিন্তা করলে, আমার নিজের মাথা খালি হয়ে যায়। তাই খালি মাথা নিয়ে, আমি যাব অন্যকে ভালবাসতে? আমি কি পাগল নাকি হহু,,, ।

আমার বিয়ে হয়েছে আজ তিন মাস। উনার ফ্যামিলি সাথে থাকি আমি। উনার ফ্যামেলি বলতে আছেন, দাদা-দাদী, আমি আর উনি। উনার বাবা-মা কেউ নেই। ছোট কালেই মারা যায়। তারপর থেকে দাদা-দাদী সাথে থাকেন উনি। ওহ উনার পরিচয়টা দেয় আগে, উনার নাম আব্রাহাম রিদ খান।

উনি কি করেন? আমি নিজেও জানিনা। আসলে জানতে চাইনি কখনো। তাই হয়তো জানি না। তবে এতটা বলতে পারি যে, উনার নিজের বড় কোম্পানি আছে। ব্যবসা আছে। এক্ষন কয়টা আছে তা সঠিক বলতে পারবনা। অহ! আমার গুণধর স্বামীর আরও একটা পরিচয় আছে তোহ! বলা হয়নি আপনাদের । যেমন (মিঃ আক্ররু! আক্ষুটিয়া! রাগী বদমেজাজী! ভিলেন!) ইত্যাদি, ইত্যাদি, ইত্যাদি। কারণ তিনি সার্বক্ষণিক সবাইকে ঝাড়তে থাকেন। উইথ আউট রিজন। আর তাতে কেউ কোনো কিছু বলতে পারবে না, শুনা ছাড়া। আর কাজে তো ভুলেও ভুল করা যাবে না। যদিও কোনো মহোদয় ব্যক্তি, এই অসৎ সাহসটা ভুলে করে বসে তো? ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন! পড়তে হয় ঠিক তার পর মূহুর্তেই। তার চাকরি ডিসমিস। মানে শেষ তার চাকরি হা হা হা।

কিন্তুু মজার বিষয় কি জানেন? আমাদের বিয়ে তিন মাস পরেও উনার সামনে ভুল করেও যায়নি আমি। আর কেনই বা যাব? আমার ভয় লাগে উনাকে তাই যায়না। এই নিয়ে অবশ্য দাদা-দাদী আমাকে কিছুই বলে না। কারণটা হলো আমার গুনুধর স্বামী। তাঁর গুন্ডামীর জন্য সবাইকে ভয় দেখিয়ে রেখেছে।

যেদিন আমি এই বাড়িতে প্রথম এসেছিলাম। তখন উনি বাড়িতে ঢুকেই ড্রয়িংরুমের সোফায় টানটান হয়ে আরাম করে বসে। সার্ভেন্ড দিয়ে পানি আনিয়ে সেটা সঙ্গে সঙ্গে খেয়েই উঠে দাঁড়িয়ে দাদা-দাদি আর আমাকে উদ্দেশ্য করে নির্দ্বিধায় বলে উঠলো।

—” আমি তোমাদের জন্য এ বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি বিধায় আমাকে কেউ এই বিষয় নিয়ে কিছু বলতে পারবে না। আমি এই বিয়ে আর এই মেয়েকে বউ হিসেবে মানি না। আর না কখনো মানবো। শুধু এই মেয়েকে কেন? আমি দুনিয়ায় কোনো মেয়েকেই মানি না। মেয়েদের সঙ্গ পছন্দ নয় আমার। সেটা জেনে, তারপরও আমাকে বিয়ে করালে। এখন তোমার এই মেয়েকে নিয়ে কি করবে? সেটা তোমাদের ব্যাপার। আমার কিছু যায় আসে না। এই মেয়েটা নিজের মত করে সবকিছু করতে পরবে যা খুশি তাই। যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারবে। i Don’t care but? আমার আশেপাশে ও যাতে এই মেয়েকে না দেখি। it’s the clear?

গুনধর স্বামী প্রতিটা কথায় ছিল ভিষণ ক্ষেপ্ত। তাই সামনে থেকে উনার দাদা উদ্ধিগ্ন কন্ঠে ভেসে এসেছিল আমার কানে সেদিন। তিনি বলেছিলেন।

—” রিদ তুই কিন্তুু বেশি বেশি করছিস এবার। মেয়েটা মেয়েটা করছিস কেন? সে তোর বউ! আর তোর ওকে মানতে হবে। সবাই যে এক হয়না সেটা নিশ্চয়ই মানিস তুই? অতীত ঘেঁটে লাভ নেই। বতমান দেখা উচিত তোর। আর তোর বর্তমানই হচ্ছে এই মেয়েট। তোর তাকে…..

আর বলতে পারলো কই দাদাজান আমার। বাপরে, বাপ! হাতে থাকা গ্লাসটা সজোরে আছাড় মারে ফ্লোরে। বিকট শব্দে সবাই নিরব হয়ে গিয়েছিল। ততক্ষন আমি মাথাই লম্বা ঘোমটা দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম উনার কথা গুলো শুনছিলাম দাদা পাশে দাঁড়িয়ে মনোযোগ সহকারে। যখন বিকট শব্দ কানে আসে তখনই হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ঘোমটা টেনেই দৌড়ে লাগিয়ে দাদাজানের পিছনে লুকালাম প্রাণের ভয়ে। বলা তো যায় না মহাশয়কে বিয়ে করার দায়ে আমাকেই তুলে আছাড় মারলো। যাই হোক দাদাজানের পাঞ্জাবীর দুই সাইডের দুই হাত দিয়ে খামচি ধরলাম। আর মাথাটা পিঠের উপর রেখে দাঁড়িয়ে পড়লাম পিছনে। এতটা ভয়ে নিজের মধ্যে কাজ করছিল যে না তাকিয়ে বুঝতে পারছিলাম সবাই আমাকে দেখছে। আমি জড়সড় হয়ে কাঁপছিলাম গুনধর স্বামীর ভয়ে। মনে মনে আওড়াচ্ছিলাম আল্লাহ বাঁচাও! বাঁচাও!

খানিকটা সময় বাদেয়, আবারও উনার বেরস চিৎকার কানে আসে আমার। উনি দাদাজানকে বলছেন।

—” বউ মাই ফুট! আমি এই বিয়ে মানিনা। আর তোমরা আমাকে এই মেয়েটাকে নিয়ে যদি forces কর তো? আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাব সারা জীবনের জন্য। তখন তোমার এই মেয়েকে নিয়ে থেকো এই বাড়িতে। আমাকে পাবে না কোথাও। choice is your দাদাভাই। এতে আমার বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই।

বলেই বিরুক্তি নিয়ে এক পলক আমাকে দেখে নিয়ে আবারও দাদাজান কে বলেন,,,

—” এ নিয়ে আমি কোনো কথা শুনতে চাই না দাদাভাই। আমি তোমাদের কথা রেখেছি। এবার তোমরা আমার কথা রাখো। আমাকে আমার মতো থাকতে দাও। আর এই মেয়ে যা খুশি করতে পরবে। নিজের ইচ্ছা মতো চলতেও পারবে। শুধু আমার থেকে দূরে থাকবে ব্যাস। এতে আশা করি কারও কোনো রুপ সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তারপরও যদি আপত্তি থাকে তাহলে আমার জানিও। আমি অলওয়েজ ফ্রি তোমাদের এই কথা গুলো শুনার জন্য। নাউ আই এম ভেরি ট্রায়াট! সো গুড নাইট।

বলেই তিনি কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে গটগট শব্দ করে দাপদুপ পা ফেলে উপরে নিজের রুমে চলে যান।

উনি যেতেই দাদাজান উনার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন নীরবে। হাত টেনে আমাকে উনার পিছন থেকে বের করে সামনে এনে আমার হাত দুটো ধরে বলে উঠে,,,,

—” ভয় পেয়েছিস তুই? ভয় পাসনা আমরা সব ঠিক করে দিব। আমরা আছি তো তোর পাশে। রিদ একটু রাগী। কিন্তু কাউকে ভালোবাসলে সর্বোচ্চ দিয়ে তাঁকে আগলে রাখে। তুই দেখিন দ্রুত সবটা ঠিক হয়ে যাবে। তোকেও মেনে নিবে।

তারপর দাদাজান কাজে লোক দিয়ে আমাকে সহ আমার জিনিস পত্র উপরে একটা রুমে পাঠায়। বাকিরাও যে যার রুমে চলে যায় খানিক বাদেয়। আমাকে রুমে দিয়ে কাজের লোক গুলো বিদায় হতেই, সাথে সাথে ঘোমটা ফেলে, লাইট অফ করে কান্না করতে লাগলাম। উনি আমাকে বউ হিসেবে মানেন না এই নিয়ে কান্না করছি না। বরং কান্না করছি উনি আমাকে সবার সামনে এতটা অপমান করলেন তারজন। আমার দোষটা কি ছিল? আমি ইচ্ছা করে বিয়েটা করেনি! পরিস্থিতি শিকার হয়ে বিয়েটা করতে বাধ্য হয়েছি কেবল। তাই বলে আমাকে যা নয় তাই শুনিয়ে গেলেন লোকটা। কান্না বেগ বাড়লো আমার। একটা সময় কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে গেলাম খাটের এক কোণায়।

ওহ! আগে পরিচয়টা বলি। আমি রিক্তা ইসলাম মায়া। আমার পরিবারের সবাই আছে, বাবা, মা ,আমরা দুই বোন, একভাই। আমি সবার ছোট। বড় আপু বিয়ে হয়েছে ৫ বছর আগেই। ৩ বছর এর একটা ছেলে বেবি আছে,। ভাইয়া সবার বড়। নিজের পড়াশোনা কমপ্লিট করে নিজের ছোটহাট একটা ব্যবসা দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। আমি ইন্টার পার্স। এই বছর অনার্স ফাস্ট ইয়ারে উঠবো। পরীক্ষা পরপরই আমায় বিয়ের পীরিতে বসতে হয়েছে। যাই হোক বাকিটা নাহয় পড়ে বলার যাবে…
__

সকালে ঘুম থেকে উঠে পিটপিট করে তাকায়। ঘুমের রেশ কাটাতে না পেরে কোথাই আছি সেটা বুঝার চেষ্টা করতেই, ১মিনিট পর গরগর করে সবকিছু মনে পরলো আমার। মনে পড়তেই চট করে চারপাশটায় নিজের চোখ বুলিয়ে নিলাম ভালো করে। রাতে চিন্তায়, অন্যমনস্ক, অপমান বোধ, আর কান্নার জন্য নিজের রুমটা খেয়াল করা হয়ে উঠেনি। কিন্তু এখন করছি। রুমটা পযবেক্ষণ করতেই অটোমেটিকলি আমার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। এই ভেবে! যে এই আমি কোথায় আছি? এটা কি রুম নাকি অন্য কিছু? আল্লাহ! এতো সুন্দর কোনো রুম হতে পারে। এতটা বিলাশ বহুল জীবনের সাথে আমি পর্ব পরিচিত নয়। এই রুমের ভিতরের মধ্যে থাকা প্রতিটা আসবাবপত্র বিলাশত্ত। রুমে ভরপুর হয়ে আছে দামি ফার্নিচার। রুমের একপাশে ডিজাইনার সোফা তার বরাবর সামনে দেয়ালে ডেসিংটেবিল রাখা। তার পাশেই কবার্ড আর দেয়াল জুড়ে আছে নানান চার্চের প্রেন্টিন। সৌন্দর্য যেমন বেয়ে বেয়ে পরছে রুমটির। খুটিয়ে খুঁটিয়ে রুমটি দেখার পর উঠে বসলাম,,,,,

কালকের শাড়িটি এখনো পরে আছি। তাই ব্যাগ থেকে সাদা কালারের চুরিদারি জামা বের করে গোসল করে নিলাম। রুমে এসে বসে বসলাম সোফার মধ্যে। খানিকটা সময় যেতেই আমার রুমে বাহির থেকে দাদা-দাদী নক করে বলেন,,,

—” মায়া আসবো ভিতরে।

আমি তাকাতেই উনারা ভিতরে চলে আসলো হাসি মুখে। আম্মুর শিখানো কথায় অনুযায়ী উঠে গিয়ে দাদা-দাদিকে সালাম করলাম। তারা আমাকে উঠি সোফায় বসিয়ে দুই জন দুই দিকে বসে পরলো। আমি জায়গায় পেলাম তাদের মধ্যস্হানে। অমায়িক হাসি মুখে দাদী আমাকে কতগুলো গহনা বক্স ধরিয়ে দিয়ে বলে উঠে,,,,,

—” এইগুলা আমরা রিদ এর বউ এ জন্য রেখেছিলাম। রিদের মায়ের গহনা এই গুলো। রিদের মা রেখেছিল তার ছেলের বউয়ের জন্য। রিদের মা নেই। তাই আমি দিচ্ছি। তুই এখন আমাদের রিদের বউ। সেই সূত্রে এখন এইগুলো তোর।

আমি কিছু বলবো তার আগেই, দাদী আবারও বলে উঠলো,,,

—” উহুম! না করা যাবে না। না শুনতে চাই না। এই গুলো তোর প্রাপ্য। তাই তোকে রাখতেই হবে।

আমি চুপচাপ বসে রইলাম। কি করবো বুঝতে পারছি না আপাতত। আমাকে চুপ থাকতে দেখে দাদাজান হালকা হেসে আমার মাথায় আদুরির একহাত বুলিয়ে দেয়। উনার হাতে থাকা আরও একটা ছোট বক্স এগিয়ে দেয় আমার দিকে। আমি গোল গোল চোখে তাকায় দাদাজানের মুখপানে। আমার এমন দৃষ্টি বুঝে নিজেই হাত বাড়িয়ে ছোট বক্সটি ওপেন করে আমার সামনে। বক্সটির ভিতর থেকে খুব সুন্দর একটা সাদা পাথরের আক্টি পরিয়ে দিয়ে আমাকে বললো…

–” রিংটা বংশগত ভাবে তোকে পড়ানো হয়েছে। খান্দানী রিং এটা। কখনো হাত থেকে খোলা যাবে। সবসময় এটা পড়ে রাখতে হবে।

দাদাজানে কথা অনুযায়ী আমি মাথা নাড়ালাম যার অর্থ হ্যাঁ খুলব না। পাশ থেকে এবার দাদী আমার মাথায় হাত রাখলেন। আদুরের হাতটা মাথায় বুলিয়ে আদর করে বলে উঠে,,,,,

—” শুন মায়া! রিদ যেমন অধিকার নিয়ে এই বাড়িতে আছে। তোরও ঠিক সমান অধিকার আছে এই বাড়িতে থাকার। বিয়ের পর মেয়েদের ঠিকানাই স্বামী ঘর হয়। তোর ঠিকানাও রিদের ঘর। এই বাড়ি। তুই তোর ভালোবাসা দিয়ে সবাইকে আগলে রাখবি। এই ঘর সংসারটা তোরও এখন। তাই ভালবাসা দিয়ে নিজের স্বামীর মনকে জয় করতে হবে। কাল রাতে রিদ যা বলেছে তার জন্য আমরা অনুতপ্ত। রিদ উগ্র মেজাজের। সহজে সবকিছু মেনে নিতে পারে না। তাই তোর ওকে বুঝাতে হবে বিয়েটা মানে কি? তারপরও আমরা রিদের সাথে কথা বললো তোকে নিয়ে। একটু সময় লাগবে কিন্তু দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে। আমাদের ওপর একটু ভরসা রাখ।

এতটুকু বলেই থামেন দাদী। আমি নড়েচড়ে বসি। কিছু বলতে চাই দাদা-দাদিকে। নিজস্ব মতামত দিতে চাই তাদের। তাই দাদী আবারও কিছু বলার আগেই আমি দাদীকে থামিয়ে দিয়ে, হাত বাড়িয়ে দাদা-দাদির দুই জনের দুটিহাত নিজের দুই হাতে মুঠোই নিয়ে আস্তে করে বলে উঠি আমি,,,

—” বিয়েটা কিভাবে হয়েছে? বা কেন হয়েছে? তা আমরা সবাই জানি। তাই সে নিয়ে আমার কোনো কথা নেই। কিন্তু ছোট একটা আপত্তি আছে। সেটা হলো আমাদের বিয়েটা হুট করেই হওয়ায়, উনি যেমন বিয়েটা মেনে নিতে পারছে না তেমন আমিও। আমাদের এই সম্পর্কটা, আপাতত আমরা কেউ বুঝে উঠতে পারছি না। তাই আমরা আমাদের সম্পর্কটা বুঝার জন্য আমাদের একটু সময় দাও প্লিজ। আমাদের দু’জনেই সময় দরকার।

আমার কথা শুনে দাদা-দাদি চেহারা অপরাধ বোধটা কিছুটা কমে যায়। আমাকে জরিয়ে ধরে কপালে চুমু খায় দাদী। খুশিতে উৎফুল্লতা সঙ্গে বলে উঠলো।

—” আচ্ছা তাই হবে। তোর কথায় রইল।

–” হুমমম।

—” আচ্ছা? আমরা তোকে তুই করে বললে, তোর কি কোনো আপত্তি আছে তাঁতে মায়া? দেখ! আমাদের কাছে রিদ যেমন, তুইও ঠিক তেমনটায় আপন। তুমি শব্দটাতে গভীরতা আসে না। কেমন একটা পর পর লাগে। তাই তুই করেই বলি তোকে কেমন।

আমি ধীরে মাথা নাড়িয়ে আবারও সম্মতি জানিয়ে বললো…

—“তুমি আমাকে যা খুশি ডাকতে পারো দাদী। আমার কোনো আপত্তি নেই,,,,

পাশ থেকে দাদাজান খানিকটা অভিযোগ সুরে বলে উঠে,,,

—” আমাকে কি কারও চোখে পড়ে না? নাকি দেখতে চাই না কেউ কোনটা?

দাদাজানের কথায় মূহুর্তেই ঠোঁট প্রসারিত হাসলাম আমি। দাদা-দাদীর সাথে আমার পূর্ব পরিচয় ছিল আগের থেকেই। আমাদের বাসায় প্রায় যাওয়া আসা করতো তাঁরা। সেই সুবাদে আমার সাথেও তাদের সক্ষতা ছিল বেশ। আমি সেই সূত্র ধরে এবার দাদাজানকে জরিয়ে ধবে বলি….

—” তুমি তো আমার দাদাজান। আর জানকে চোখে না পড়াটা ঘোর পাপ বুঝলে। আমি তোমাকে দাদাজান কেন বলি জানো? কারণ দাদা শব্দটা মাত্র ফর্মালিটি রক্ষা করার জন্য বলে থাকি। তুমি কিন্তু আসলে আমার জান হও। বুঝলে?

____
খাটের উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছি আমি। আমার দৃষ্টি সামনে দেয়ালের প্রেন্টিনর উপর। কিন্তুু মাথায় আমার অন্য চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। আমার চিন্তা কারণ হলো, আমার গুনুধর স্বামীকে নিয়ে। বিয়ে হয়েছে আজ এক সাপ্তাহ হয়েছে। কিন্তুু আমি তার সামনে যায়নি। উনার সামনে যাওয়ার আমার কোনো কারণ ছিল না তাই যাওয়া হয়নি। উনার সামনে যেতে আমার যথেষ্ট পরিমাণ কারণ লাগবে। নয়তো কারণ ছাড়া যাবো না। আর কেনই বা যাব? উনি আমাকে সবাই সামনে এতোটা অপমান করলেন। যাহ আমি কিছু ভুলিনি। অপমান থেকেই জেদ ধরে, ভুল করেও উনার সামনে যায়না আমি। উনি কখন বাসায় আসে! কখন যাই! কখন নাস্তা করে? কখন ডিনার করে? এই সময় গুলো মাথায় রেখে, তখন আমি ভুল করেও রুম থেকে বের হইনা। রাতে আমার গুনধর স্বামী বাসায় আসার আগে, আমি দাদা-দাদি সাথে আড্ডা দিয়ে নিজের রুমে চলে আসি। মোট কথা উনার সামনের আমি কিছুতেই পরতে চাই না হুহ্। বর্তমানে দাদা-দাদি আমাকে ছাড়া চোখ দেখে কিনা? সেটা নিয়েও আমার সন্দেহ আছে তীব্র। তাঁরা দু’জনই একদম চোখে হারায় আমাকে! এতটা ভালোবাসেন আমাকে।

দাদা-দাদি কথা মাথায় আসতেই চট করে চলন্ত দেয়াল ঘুড়ির দিকে তাকালাম। দেখলাম রাত ৯ঃ১০ বাজে। তাই সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে রুমে থেকে বাহির হলাম। উদ্দেশ্য! দাদীর সাথে আড্ডা দিব। দাদীর রুমে। দাদীর রুমটা, আমার রুম থেকে দুই রুম পরের। সভ্যসুলব ভাবে দাদা-দাদির রুমের দিকে অগ্রসর হচ্ছি, রুমের সামনে বিশাল করিডোরে ধরে। তখনই আমার চোখে পরলো দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা বিস্তীর্ণ অতি সুন্দরী একটা পাথরের মূর্তি। আমি দাড়িয়ে পড়লাম। ভ্রুঁ কুঁচকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় সেদিকে। পযবেক্ষণ করতে লাগলাম পাথরের মূর্তিটিকে। যার হাত দুটো ভাজ করে উপরে তোলা মুড়িয়ে। মাথাটা উপরের মুড়ানো হাতের দিকে চেয়ে আছে। আর কমড়টাও বাকা করে রেখেছে একপাশ থেকে। আমি খানিকটা সময় নিয়ে দেখার মধ্যে দিয়েই, আমার মনে প্রর্বল ইচ্ছা জাগে আমিও এটা মতো করে দাড়াবো এখন। তাই দেরি না করে সাথে সাথে নিজের দুই হাত ভাজ করে উপরে তোলে দিলাম। কমড়টা বাঁকা করে। মাথাটা উপরের দিকে তুলতেই হঠাৎই কেউ একজন পিছন থেকে ভারি কন্ঠে বলে উঠলো,,

—” কি হচ্ছে এখানে?

আমার কোনো পরিবর্তন হল না। আমি আগের নেয় চেষ্টা করেই যাচ্ছি। আমার ধারণা ছিল আমার পিছনে ব্যক্তিটি ভালো কাকু হবে, মানে খান বাড়ির একটা সার্ভেন্ড আরকি? আমি উনাকে ভালো কাকু বলে সম্মোধন করি। তাই নিজের চেষ্টা চালিয়ে উল্টো বলে উঠি,,

—” ভালো কাকু! দেখত! আমি ঠিক করে দাড়াতে পারছি কিনা, এই প্রতিমার মতো হুম? সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা?

পিছন থেকে কারও সারা শব্দ এলো না কানে। তবে তার উপস্থিতটা টের পাচ্ছিলাম। কিছুটা সময় যেতেই হুট করে আবারও দ্বিতীয় শব্দ কানে আসে আমার। পিছন থেকে দ্বিতীয় জন্য বলে উঠে….

—” রিদ বাবা আপনার কফি।

সার্ভেন্ডের ডাক যেন রিদের কানে অবধি পৌঁছাল না। দৃষ্টি তাঁর অচেনা মেয়েটির উপর। খানিকটা কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে কৌতূহল বশত। মেয়েটির কর্মকান্ড বুঝার চেষ্টা করছে সে। পিছন থেকে মেয়েটিকে এক পলক চোখ বুলিয়ে নেয় রিদ।
মেয়েটির পড়নে গাঢ় নীল রঙ্গের চুরিদারি জামা জড়ানো। দুই হাত ভরতি নীল কাঁচের চুড়ি। চুল গুলো সব খোপা করা। তার মাঝে ঝুলন্ত কাঠি দিয়ে বাধা। আর সেই কাঠি মাঝে অনেক গুলো ছোট ছোট ঝুমকো আছে। যাহ মায়ার মাথা নাড়াবার সাথে সাথে ঝনঝন শব্দ করছে। গায়ে রংটাও বেশ মন মাতানো। কাঁচা হলদেটে যাহ খুব কম মানুষের থাকে এই রংটা, সবার থেকে আলাদা। রিদ আবারও চোখ আওড়ায় মেয়েটির মুখ দেখা যাচ্ছে না। এতে সে বিরক্ত। কিন্তুু মেয়েটি কে? খান বাড়িতে অচেনা মেয়ের আগমনটা কৌতূহল সৃষ্টি করলো রিদের মনে। রিদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, আবারও পিছন থেকে বৃদ্ধ সার্ভেন্ডটি মৃদু গলায় রিদকে উদ্দেশ্য করে বললো….

—” রিদ বাবা আপনার কফিটা।

পরপর ডাকে বিরুক্তি নিয়ে তাকায় সেদিকে। রিদকে বিরক্তিতে থাকাতে দেখে থমথমে খেয়ে যায় বৃদ্ধা সার্ভেন্ডটি। জড়সড় হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে জায়গায়। রিদ বিরক্তি নিয়ে লোকটিকে এক পলক দেখে নিয়ে আবারও চোখ ঘুরিয়ে তাকায় সামনে।

রিদ নামটি শুনতেই চমকে উঠলাম আমি। আমার গুনধর স্বামী এই মূহুর্তে ঠিক আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। আর আমি তাঁর সামনে। বিষয়টি আমার জন্য খুবই ভয়ানক থেকে ভয়াবহ টাইপের কিছু। মোট কথা হলো উনি এই সময়ে বাড়িতে কি করছেন? এই সময় তোহ বাড়িতে আসার কথা না! তাহলে কেন এসেছেন? আর এসেছেন ভালো কথা! আমাকেই বা কেন উনার সামনে পড়তে হলো? ভয়ে বুক কাঁপছিল আমার। হাত পা জমে উঠছিল। তাই দ্রুত নিজেকে ঠিক করে দাঁড়িয়ে পড়লাম। ভয়ে আমার হাত-পা মৃদু কাঁপছে। কিন্তু মুখে কোনো কথা বলছি না আমি। ভয়ে জড়সড় হয়ে হুট করেই পালানোর চিন্তা ভাবনাটা ঠিক করলাম চট করে। তাই দ্বিতীয় কোনো চিন্তা ভাবনা না করে দৌড় দেওয়ার জন্য এক পা বাড়াতেই পিছন থেকে উনি গাল খাঁকিয়ে বলে উঠে,,,,,,,,

রিদঃ- stop here! don’t go! who are you?

ভয়ে আতংকে উঠলাম আমি। পা দুটো থেমে গেলো মূহুর্তেই। শুকনো একটা ঢুক গিলে চারপাশে ভীতু চোখ বুলালাম। আমি কি করবো? কিছু ভেবে পাচ্ছিলাম না। এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুজছিলাম। যে আমাকে এখান থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তুু আফসোস! এই মূহুর্তে কাউকে দেখতে পারছি না আমি। হতাশতায় আষ্টশ হয়ে আসছিল আমার গলা।তাই উপায় না পেয়ে দাদীকে চিৎকার করে ডাকতে লাগলাম গলা ফাটিয়ে।

—” দাদী গো! আমাকে বাঁচাও। দাদী গো! আমাকে বাঁচাও। দাদী! দাদী!

ব্যাস! দাদী আমার হাজির হলো। নিজের রুম থেকে ধুর ফুরিয়ে ছুটে বের হয়ে আসলো আমার সামনে। রুম থেকে বের হতেই সামনে পেলো আমাদের। দাদীকে চোখের সামনে দেখে, যেন জান ফিরে ফেলাম আমি। তাই আমি আর পিছন ফিরে না তাকিয়ে সামনে দিকে দৌড়ে গিয়ে দাদীকে জরিয়ে ধরে বললাম,,

—“দাদী প্লিজ আমাকে এবারে মতো বাচিয়ে দাও। প্রমিস করছি, আর কোনো দিন তোমার নাতির সামনে পরবো না। প্লিজ দাদী! আমাকে বাচিয়ে দাও।

প্রচন্ড ভয়ে সাথে কথা গুলো বলে, দাদীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে, আবারও দৌড় লাগালাম দাদীর রুমে। এক দৌড়ে চলে আসলাম দাদীর রুমে। বুকে হাত দিয়ে লম্বা শ্বাস ছাড়লাম আহা! কি শান্তি! বাকিটা দাদী নিজেই সামলে নিবেন উনার সাথে।

এইদিকে
মায়া এমন কান্ডের খানিকটা বোকা বোনে যায় রিদ। কি থেকে? কি হয়েছে? কিছুই বুঝতে পারছেনা রিদ। রিদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মায়ার যাওয়া দিকে। রিদের দাদী হেনা খান মূহুর্তেই শক্ত গলায় বলে উঠে…

—” রিদ তুই কি? মেয়েটাকে শান্তি মতো থাকতেও দিবি না বাড়িতে? মেয়েটা কি তোকে জ্বালায়? যে তুই ওকে ভয় দেখাচ্ছিস হ্যাঁ?

হেনা খানের ধারণা রিদ এতক্ষণ ধরে মায়াকে হয়তো অপরাধ করছিল। বা ভয় দেখাচ্ছিল। যার কারণে মায়া ভয়ে চিৎকার করছিল বাঁচা জন্য। দাদীর কথা কানে আসতেই চোখ তুলে তাকাই রিদ। এখানে রিদ কতটা অপরাধী বুঝার চেষ্টা করে। কাকে ভয় দেখাচ্ছি সেটাও জানার প্রয়াশ চালায়। কিন্তু বোধগম্য হচ্ছে না। তাই নিজের দাদীর কথায় চোখ তুলে তাকিয়ে থেকে একটা ভ্রুঁ কুঁচকে প্রশ্ন করে,,,

—” কাকে ভয় দেখাচ্ছিলাম আমি? আর মেয়েটা কে??

রিদের কথায় তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে হেনা খান। এতক্ষণ ধরে ভয় দেখিয়ে বলছে কাকে ভয় দেখাচ্ছে সে। চিনেও বলছে মেয়েটি কে?

—” ওহ মায়া! যাকে তুই এতক্ষণ ধরে ভয় দেখাচ্ছিলি!

দাদীর কথায় খানিকটা কপাল কুঁচকে আসে রিদের। মায়া নামে কাউকে চিনে কিনা মনে করার চেষ্টা করে। কি বিফল হয়। তাই খানিকটা কনফিউজড হয়ে আবার প্রশ্ন করে…

—‘ মায়া কে?

এবার সত্যি সত্যি রেগে যাচ্ছেন হেনা খান। রাগী ফেঁসে বিরক্তি নিয়ে বলে…

—‘ তোর বউ! কেন? যখন ভয় দেখাচ্ছিলি, তখন মনে ছিলনা মেয়েটা কে হয়? এখন বলছিস আমায় যে মেয়েটা কে?

খানিকটা থেমে আবারও সাথে সাথে বললো হেনা খান..

—” আর হ্যাঁ! তুই মায়া থেকে দূরে থাকবি। একদমই ভয় দেখাবি না ওকে। আর যদি ভয় দেখানোর চেষ্টা করিস তোহ আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবেনা না। বলে দিলাম।

কথা গুলো গরগর করে বলেই, তিনি হনহনিয়ে চলে যান নিজের রুমে। আর পিছন থেকে রিদ হা করে তাকিয়ে থাকে হেনা খানের যাওয়ার দিকে। তাঁর সাথে কি হল? কিছুই বুঝতে পারছে না। এ মেয়েটা তাঁর বউ এতটুকু বুঝতে পারছে। কিন্তু যে বউকে, সে নিজের থেকে দূরে থাকার জন্য সবাইকে বলে এসেছে। আজ সবাই তাঁকে সেই মেয়েটার থেকে দূরে থাকতে বলছে।

চলবে,,,,,,,,,,,,,

#দেওয়ানা_(আমার ভালোবাসা)
#লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাল মায়া
#পর্বঃ_০১

অপেক্ষা করুন আগামী পর্বের জন্য, আর পেজে লাইক ফলো দিয়ে কমেন্ট করে রাখেন বাকি পর্ব পোস্ট করেই কমেন্ট বক্সে দিয়ে দেবো লিংক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here