তবে_ভালোবাসো_কী ২ #Mehek_Enayya(লেখিকা) পর্ব ১৩

0
331

#তবে_ভালোবাসো_কী ২
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
পর্ব ১৩

সময় রাত এগারোটা। ভারী বর্ষণে মোহিত প্রকৃতি। কিছুক্ষন পূর্বেই ঝড়য়া বাতাস দিয়ে শুরু হয়েছে বর্ষণ। এখনও থামার নাম নেই। বড় বড় গাছ গুলো ভয়ংকর ভাবে নড়ছে। কিছুক্ষন পর পর গগন কাঁপিয়ে চারপাশ আলোকিত হয়ে বজ্রপাত পরছে। শীতল আবহাওয়ায় কাঁথা গায়ে দিয়ে নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে মাহানুর। অহনা মাহানুরের রুমের বেলকনির দোলনায় বসে ফোন আলাপ পারছে। সন্ধ্যার সময় রিদ কল দিয়েছিলো। সে একটু রাগ দেখিয়ে কল রিসিভ করেনি। ডিনারের পর আবারও দিয়েছে। এবার রাগী মুখে কল রিসিভ করে অহনা। রিদ বেশ কিছুক্ষন ধরে অহনাকে মানানোর চেষ্টা করছে কিন্তু অহনা তো অহনাই।
-জান শুনো না বললাম তো সরি।
-এই এই আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড নই। ভুলেও আমাকে এইসব উদ্ভুত নামে ডাকবেন না বলে দিলাম।
-ওহ ইয়েস। তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড না বউ হও। ঠিক আছে না?
অজান্তেই লাজুক হাসি দিলো অহনা। রুক্ষ কণ্ঠে বলল,
-গোড়ার ডিম! এখন কল কেনো করেছেন সেটা বলুন?
-বাহ্ রে ভাই! কল দিলে তেড়াতেড়া কথা বলো আবার কয়দিন না যোগাযোগ না থাকলেই ডিপ্রেশনে চলে যাও। তুমিও আমাকে ভালোবেসে ফেলেছো জানেমান মুখে স্বীকার করলেই হয়।
-একদম না। আমি আপনাকে ভালোবাসি না।
-ওহ তাই?
-ঠিক তাই।
রিদ কুটিল হেসে বলল,
-তাহলে কী করলে মেডামের রাগ ভাঙবে আর মেডাম আমাকে ভালোবাসবে?
-আমি কী জানি! আর আমার রাগের কোনো মূল্য আছে আপনার কাছে মুলা কোথাকার।
রিদ আওয়াজ করে তপ্ত নিঃশাস ত্যাগ করলো। ক্লান্ত ভঙ্গিতে বলল,
-আচ্ছা মেডাম বলুন তো আমার কোন কোন জিনিস আপনার অপছন্দের?
অহনা খানিকটা ভাবুক হয়ে বলল,
-আপনি স্মো’কিং করেন যেটা আই ডোন্ট লাইক।
-ওকে আপনার জন্য স্মো’কিং করা ধীরে ধীরে ছেড়ে দেবো। তারপর?
-উম আপনি অনেক অপরিষ্কার।
-এখন থেকে তিনবেলা গোসল করবো তাও আবার বিদেশি সাবান দিয়ে। দরকার পরলে জামাকাপড় ধোয়ার ওয়াশিং মেশিনে ঢুকে নিজেকে পরিষ্কার করবো। তারপর?
অহনা খিলখিল করে হেসে উঠলো রিদের কথা শুনে। রিদ নিজেও নিচের ঠোঁট কামড়ে হাসছে। অহনা বলল,
-আমি অনেক প্রসেসিভ মানুষ। কিন্তু আপনার তো কাজিন আর মেয়ে ফ্রেন্ডের অভাব নেই।
-কাজিনদের সাথে বেশি কথাই বলবো না আর ফ্রেন্ড গো লাথি দিয়ে উড়িয়ে দেবো। খুশি?
-উড়াতে হবে না জাস্ট কম মিশলেই হবে।
-যথা আজ্ঞা মেডাম। আরো কিছু আছে?
-হ্যাঁ আছে। আপনি গুন্ডামি করেন যেটা আমার পছন্দ না। কোনো একটা ভালো জব বা বিজনেস করা ছেলে আমার পছন্দ।
-এরে মা!
মেকি হাসলো রিদ অহনার কথা শুনে। ভোঁতা মুখে বলল,
-কালকেই আমি আব্বার সাথে কথা বলছি। আর কিছু?
অহনা গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগলো আর কী আছে। সহসা কিছু মনে পরার ভঙ্গিতে বলল,
-ওহ হ্যাঁ আপনার গায়ের রঙ। এতো ফর্সা ছেলেদের আমার ভালো লাগে না।
রিদ নাক ফুলালো। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে,
-আচ্ছা বইন পুরা শরীরে পার্মানেন্ট কালো রঙ করে ফেলবো তারপরও আর রাগ করিস না।
অহনা হাসতে থাকলো রিদের কথা শুনে। দোলনায় গড়াগড়ি খেতে লাগলো। রিদ শ’য়তা’নি হাসি দিয়ে বলল,
-আর যাই হোক আমাদের ছেলেমেয়ে গুলো কিন্তু কিউট হবে।
অহনার মুখের হাসি মুছে গিয়ে লাজুকতায় রূপ নেয়। দুই গাল লাল হয়ে যায় তার। অপরপাশের রিদ অহনার অবস্থা বুঝে অট্টহাসিতে ফেটে পরলো। অহনা বিরক্ত আর সরম মিশ্রিত কণ্ঠে বলল,
-আর কিছু বলবেন নাকি কল কাটবো?
-আই লাভ ইউ।
আজ আর রিদকে খালি হাতে ফেরালো না অহনা। ধীর কণ্ঠে ত্বরিতগতিতে বলল,
-লাভ ইউ টু।
সাথে কল কেটে দেয় সে। বুকের সাথে ফোন লাগিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। ঐপাশের রিদ এখনও স্তব। ফোন কানে লাগিয়েই বিছানায় বসে আছে। সে যেনো বিশ্বাসই করতে পারছে না অহনা তাকে সত্যি লাভ ইউ বলেছে। কিছু সময় অতিবাহি হওয়ার পর নিজের মধ্যে ফিরে আসে রিদ। বিছানা থেকে নেমে উরাধুরা নাচতে থাকে। নাচতে নাচতে তার মনে পরে সে এখনও ডিনার করেনি। তাই গান গাইতে গাইতেই রুম থেকে বের হয়। সবাই যার যার রুমে ঘুমিয়ে আছে। সব জায়গার বাতি নিভানো। অন্ধকারের মধ্যেই কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে রিদ। কিচেনে এসে গুন গুন করে গান গাইছে “ও বেবি ডলাম শনি দি”। লাইট জ্বালিয়ে ভালোভাবে পরোক্ষ না করে ফ্রিজের দরজা খুলে। আইসক্রিমের বক্স নিয়ে ফ্রিজ লাগিয়ে পিছনে ফিরে। সামনে তাকাতেই বিকট শব্দে আর্তনাদ করে উঠলো রিদ।
-ওওও আম্মা গো ভুতত!
ছিটকে দূরে সরে গেলো রিদ। হাতের বক্স শব্দ করে মেঝেতে পরে গেলো। সামনের জন নিজেও ভয় পেয়ে গেলো রিদের আকস্মিক চিৎকারে। এতক্ষনে পুরো বাড়ি আলোকিত হয়ে উঠলো। দৌড়ে আসে রিদের আম্মা, মেজো ভাই, বড় ভাই আর আব্বা। তারা একবার ভীত রিদকে দেখছে তো একবার সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিকে। রিদের আম্মা নিজেও ভয় পেয়ে গেলো সামনের মানুষটিকে দেখে। অবাক কণ্ঠে বলল,
-মেজো বউ তুমি এইসব সাদা সাদা কী লাগিয়েছো মুখে?
-আম্মা এটাকে ফেসপ্যাক বলে। আপনার নাতনীর জন্য দুধ গরম করতে এসেছিলাম হটাৎ রিদ ভাইয়ের এইরকম চিৎকারে আমিই ভয় পেয়ে গেলাম।
রিদ কোনোরকম নিজেকে সামলে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। কোমরে দুইহাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পাংসুটে মুখে বলল,
-ছোট ভাবি তুমি আমাকে বিয়ের আগেই মেরে ফেলতে চাও? আরেকটু হলেই তো তোমার দেওরের প্রাণ পাখিটা উড়ে যেত!
-তাওবা তাওবা! এইসব কী বলছেন রিদ ভাই!
-এইরকমটাই মনে হচ্ছে আমার ভাবিজান।
রিদের আব্বা আর বড় ভাই সেখান থেকে কেটে পরলো। তারা জানে তাঁদের রিদ কেমন। উল্টাপাল্টা কথা শুনে নিজেকে সরমে ফেলতে চাননা তারা। রিদের আম্মা তার ছেলের বউকে বললেন,
-মেজো বউ এইসব দিয়ে আর রাত্রে বাইর হইও না। যে কেউ দেখলেই ভয় পেয়ে যাবে।
-আচ্ছা আম্মা।
-যাও যাও আমার নাতনীর কাছে যাও।
-ঠিক আছে।
রিদের ভাবি পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। সকলে চলে যেতেই রিদ মেজো ভাইয়ের কাঁধে হাত দিয়ে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,
-ছোট ভাই তুমি এখনও বেঁচে আছো কিভাবে আমি সেটা ভাবছি!
-প্রথমবার আমার অবস্থাও এমনই ছিল রে ভাই।
অনেকটা অসহায় কণ্ঠে বলে রিদের ভাই। রিদ দাঁত বের করে হেসে বলল,
-আরেকটা বিয়ে করিয়ে দেবো নাকি ভাই?
-সর সামনের থেকে। একটাই হ্যান্ডেল করতে পারি না আরেকটা!
বিড়বিড় করে বলতে বলতে রিদের ভাই চলে গেলো। রিদ একা একাই বকবক করতে করতে পুনরায় ফ্রিজ খুললো। কোনোরকম খাবার নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে।
____________________
সারারাত বর্ষণের পর এক উজ্জ্বল প্রভাত। জানালার ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো রুমে এসে পরছে। অহনা ঘুম থেকে উঠেছে সেই ভোর বেলায়। এখন বাজে দশটা। মাত্রই ঘুম থেকে উঠে কাঁথা জড়িয়ে গুটিসুটি হয়ে বিছানায় বসে আছে মাহানুর। অহনা আর সায়রিন শপিং ব্যাগ গুলো খুলে খুলে মাহানুরকে দেখাচ্ছে। ঘুম কাতুরে চোখে একটি লেহেঙ্গা ও জামা দেখে মাহানুর চমকিত নয়নে প্রশ্ন করলো,
-এই লেহেঙ্গা আর জামা তো আমি নেইনি!
-আমরা নিয়েছি তোর জন্য। এই এক ডিজাইনের লেহেঙ্গা আমি আর সায়রিন ভাবি মেহেদী ফাঙ্কশনের দিন পরবো তাই তোর জন্যও নিয়েছি। আর ওই গোল জামাটা সুনহেরা তোর সাথে মিলে সেম সেম পরবে তাই নিয়েছে।
জামা বের করতে করতে বলল অহনা। লেহেঙ্গাটা একটু বেশিই গর্জেস তাই মাহানুরের সেটা বেশি একটা পছন্দ হলো না কিন্তু জামাটা তার মনে ধরেছে। ব্ল্যাক এন্ড পার্পল কালার মিক্স একদম সিম্পল ডিজাইনের লং জামা। মাহানুর সেটা হাতে নিয়ে বলল,
-ওয়াও! আমি সবসময় ভাবতাম আমার নিজের পছন্দই বেস্ট বাট আজ সুনহেরা ভাবির চয়েস দেখে আমি স্তব্ধ!
-আসলেই জামাটা ভীষণ সুন্দর। তোমাকে মানাবে মাহানুর।
বলল সায়রিন। মাহানুর স্মিত হাসলো। জামাকাপড় দেখা শেষ হলে ফ্রেশ হয়ে আসে মাহানুর। নাস্তা করার সময় আয়াস মাহানুরকে বলল,
-মাহানুর আরহাম ভাই কল দিয়েছিলো মাত্রই। রিসোর্টে ডেকোরেশনের কাজ শুরু হয়েছে। দুইটা স্টেজ করা হবে। এখন আরহাম ভাই বলছিলো আমাদের বাসা থেকে একজনকে যেতে কিভাবে কী করবে সেটা দেখার জন্য।
-ওওও।
জুস খেতে খেতে বলল মাহানুর। আয়াস বলল,
-বাবা বলছিলো তোকে যেয়ে দেখে আসতে।
-কেনো? তুই যা।
-আমি একটু মেডিকেলে যাচ্ছি। তুই অহনা বা ভাবিকে নিয়ে চলে যা।
-অহনা আর ভাবি জুয়েলারির শপে যাবে এখন।
-তাহলে তুই একাই যা আম্মা। আরহাম নিতে আসবে।
হামজা খান বললেন। আয়াসও তার কথায় একমত। মাহানুর প্রতিউত্তরে কিছু বলতে যাবে এমন সময় ড্রইংরুম থেকে মানুষজনের কথার আওয়াজ আসে। মাথা ঘুরিয়ে পিছনে ফিরতে মাহানুর দেখতে পায় তার বড় ফুপ্পি এসেছে তার পুরো পরিবার নিয়ে। সকলে হাসি মুখে সেখানে চলে যায়। টেবিলে শুধু অহনা, আয়াস আর মাহানুরই বসে রইলো। আয়াস মেকি হেসে বলল,
-তোর আদরের বোন আর ফুপ্পি এসেছে মাহানুর।
-কু’ত্তা আমার না তোর আদরের বোনরা এসেছে। যা ওয়েলকাম করে আয়।
কটমট জবাব মাহানুরের। আয়াস হাসতে হাসতে বসা থেকে উঠে এগিয়ে যায় তাঁদের কাছে। না চাওয়ার সত্ত্বেও মাহানুরও যায়। মাহানুরের রিনা খান আয়াসকে দেখে বলল,
-কেমন আছিস আয়াস বাবা?
-ভালো আছি বড় ফুপ্পি। আপনি ভালো আছেন?
-এইতো আছি।
মাহানুরকে পিছনে আসতে দেখে মুখ বাকিয়ে বলল,
-মাহানুর দেখি দিনে দিনে সুন্দরী হয়ে যাচ্ছে!
-এখন আপনার নজর না লাগলেই হলো।
মনে মনে বলল মাহানুর কিন্তু বাহ্যিক দিয়ে শুধুই হাসলো। ইকরা ফোন নিয়ে সোফায় বসে আছে আর ইরা সকলের সাথে কথা বলছে। মাহানুর ইকরার পাশে যেয়ে বসলো। ইকরা মাহানুরকে দেখে অনেকটা নাটকীয় ভনিতায় বলল,
-মাহানুর যে, দিনকাল কেমন চলছে?
-একদম জোস্।
ইকরা আয়াসকে দেখে গদগদ করে বলে,
-আয়াস তোর বিয়ে নিয়ে আমি অনেক এক্সসাইটেড। কত বছর পর এই বাড়িতে কোনো বিয়ে হবে।
আয়াস স্মিত হাসলো। হটাৎ কিছু মাথায় আসতেই ত্বরিত বলল,
-মাহানুর তুই নাহয় ইকরাকে নিয়ে চলে যা।
-কোথায় যাবে?
রিনা খান প্রশ্ন করলেন। হামজা খান বললেন,
-রিসোর্টে যেতে হবে ডেকোরেশন দেখার জন্য।
-ওহ।
ইকরা প্রথমে একটু না না করলেও কিছু সময়ের মধ্যে রাজি হয়ে যায়। মাহানুর তৈরি হতে নিজের রুমে আসে। আকাশি রঙের বড় হাতাআলা লং ফ্রক পরে মাহানুর। হিজাব পরতে যেয়েও পরলো না। অহনা নিজ হাতে বেনুনী করে দিলো। চোখে কালো কাজল আর ঠোঁটে একটু লিপগ্লোস লাগিয়ে নেয়। আয়নার সামনে থেকে উঠে দাঁড়ায় মাহানুর। অহনা গালে হাত দিয়ে বলে,
-কত প্রিটি লাগছে তোকে। ওয়েট একটা জিনিসের কমতি।
-কী?
অহনা নিজের ব্যাগ খুলে একটি টিপের প্যাকেট বের করে। মাহানুর ভড়কে গিয়ে বলল,
-আমি তো টিপ দেই না।
-প্লিস আজকে দে। এই লুকের সাথে টিপ একটু বেশিই মানাবে।
-দূর। বস্তি দেখাবে।
-হোপ।
অহনা একপ্রকার জোর করে মাহানুরকে টিপ পরিয়ে দেয়। সাইড ব্যাগ নিয়ে মাহানুর দ্রুত বের হয়। ইকরাও তৈরি ছিল তাই দুইজন বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত নেয়। হাজেরা মাহানুরকে দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলো। তার মাহানুর ইকরার মতো মর্ডান ড্রেস পরেনি, ইকরার মতো অতিরিক্ত মেকআপ করেনি তবুও কত বেশি সুন্দর লাগছে। মনে মনে বলল “কারো নজর না লাগুক আমার মেয়ের ওপর।” ইকরা হোয়াইট কালার লেডিস শার্ট পরেছে যেটা ততো একটা বড় না আর ব্ল্যাক পেন্ট পরেছে। মাহানুর ইকরার ড্রেস নিয়ে ততটা মাথা ঘামালো না কিন্তু একটা ওড়না বা স্ক্যাফ পরা উচিত ছিল। এতো রোদ দেখে বিচলিত হয়ে ইকরা বলল,
-উফফ কী রোদ! আমি তো একদম ব্ল্যাক হয়ে যাবো।
-বেশি হাঁটতে হবে না ভাবির ভাই আসবে আমাদের নিতে।
-আয়াসের উড বি ওয়াইফের ব্রাদার আছে নাকি?
-হুম বড় ভাই আছে।
তাঁদের কথার মাঝেই কালো রঙের একটি প্রাইভেট কার এসে থামে সামনে। গাড়ির জানালা দিয়ে মাথা বের করে রিদ। মাহানুরকে দেখে বড় একটি হাসি দিয়ে বলে,
-শালীসাহেবা চলে আসো।
মাহানুর জানতো না রিদও থাকবে। মনে মনে খুশি হলো আবার আপসোস ও হলো অহনার জন্য। ইকরা কোমর দুলিয়ে হেঁটে যায়। দুইজন গাড়ির পিছনের সিটে বসে পরলো। ইকরা ক্লান্ত ভঙ্গিতে নিঃশাস ত্যাগ করলো। মাহানুর জামা ঠিক করতে করতে বলল,
-রিদ ভাই আপনিও যে থাকবেন আমাকে আগে বলতে পারতেন। আপনার বেগম তো অন্য জায়গায় যাচ্ছে।
রিদ খানিকটা দুঃখী স্বরে বলল,
-থাক কষ্ট নাই তুমি তো আছোই শালীসাহেবা। আগামীকালই আমার বেগমের সাথে দেখা হচ্ছে।
-আমি কিন্তু ভীষণ খুশি হয়েছি আপনাকে দেখে।
ইকরা স্তব্ধ হয়ে ড্রাইভিং সিটের দিকে তাকিয়ে আছে। তার অনেক সুদর্শন, উজ্জ্বল বর্ণের পুরুষদের সাথে সম্পর্ক হয়েছে তবে এইরকম বলিষ্ঠ দেহের পুরুষ যেনো সে কমই দেখেছে! নিস্পলক তাকিয়ে থাকলো শুধু। রিদ পাশ ফিরে আরহামের পানে তাকায়। আরহাম যেনো বরফের মতো জমে গিয়েছে। গাড়ির মিররে তাকিয়ে আছে বিমোহিত দৃষ্টিতে। রিদ কণ্ঠস্বর খাঁদে ফেলে বলে উঠলো,
-আরহাম ড্রাইভ স্টার্ট কর বেটা।
রিদের কথায় আরহাম নিজের মধ্যে ফিরে আসে। আঁখিজোড়া বন্ধ করে বড় বড় নিঃশাস ত্যাগ করে। কোনোরকম নিজের অবচেতন চিত্তকে শান্ত করে গাড়ি স্টার্ট দেয়। জামা ঠিক করে ভালোভাবে বসে সামনে তাকাতেই মিররে দৃষ্টিমিলন ঘটে যায় আরহাম মাহানুরের। ডাগর ডাগর নেত্র দিয়ে মাহানুর তাকিয়ে থাকে আরহামের ঘোলাটে চোখের দিকে। আরহাম পারলো না নিজের বেহায়া চোখকে সামলাতে। তার তেষ্টান্ত চিত্ত বলে উঠলো,
-ঐ কাজল কালো আঁখিজোড়া যেনো বিশাল এক কল্লোল! সেই কল্লোলে হয়তো হারিয়ে ফেলবো নিজেকে নয়তো নিজের অস্তিত্বকে! ঐ নয়নের অধিকারী মনমোহিনীকে সর্বকালের জন্য আমার নামে লিখিত করে দিও।

কিছু মুহূর্ত ব্যয় হতেই মাহানুর নজর সরিয়ে ফেলে। আরহাম মুচকি হেসে শুধু দেখতেই থাকে। রিদ এতক্ষনে ইকরাকে খেয়াল করে। প্রশ্ন করে,
-উনি কে শালীসাহেবা?
-আমার ফুফাতো বোন ইকরা। আর ইকরা উনি হলেন সুনহেরা ভাবি ভাই আর ইনি তার ফ্রেন্ড আর আমার বেস্টফ্রেন্ডের বিএফ।
ইকরা পরিচিত হওয়ার জন্য বলল,
-হ্যালো। ভালো আছেন আপনারা।
-একদম ফাইন। আপনি ভালো আছেন বিয়াইন?
-হ্যাঁ।
আরহামকে কিছু বলতে না দেখে ইকরার নিজেকে ছোট মনে হলো। এতো এটিটিউড! তাকে ইগনোর করে! মনে মনে ভাবলো ইকরা। রিসোর্টে এসে গাড়ি থামায় আরহাম। রিদ, ইকরা আগে আগে নেমে পরে। মাহানুর এতো ঘেরওলা ফ্রক পরায় একটু বিরক্ত। বের হওয়ার সময় গাড়ির দরজায় জামা আটকে যায় তার। আরহাম বের হয়ে মাহানুরকে ড্রেস নিয়ে টানাটানি করতে দেখে হালকা হাসে। খুব যত্ন করে নিজেই মাহানুরের ড্রেস বের করে আনে। মাহানুর শুকনো ঢোক গিলে বলল,
-কেমন গাড়ি ড্রেস আটকে রাখে? আপনার মতোই দেখছি আপনার গাড়ি!
-একদম ঠিক বলছো! আমার গাড়ি অসুন্দর মেয়েদের ড্রেস ধরে রাখতে পছন্দ করে।
মাহানুর তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। কপাল কুঁচকে চোখ ছোট ছোট করে বলল,
-চোখে চশমা পরুন আরহাম চৌধুরী। আমি যথেষ্ট সুন্দর। অসুন্দর আপনি আর আপনার ফিউচার ওয়াইফ, বাচ্চারা। যতসব।
-বাহ্! তোমার নাম মাহানুর না রেখে সবজান্তা রাখা উচিত ছিল।
-ঐ মিয়া খামোখা আমার ভালো মেজাজটা গরম করিয়েন নাতো। আপনাকে দেখলেই আমার শুধু রাগ উঠে।
আরহাম পেন্টের পকেটে দুইহাত গুঁজে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। কিছুটা ঝুঁকে মাহানুরের দিকে। মাহানুর হকচকিয়ে গেলেও এক কদমও নড়লো না। আরহাম সেটা দেখে বাঁকা হেসে বলল,
-তুমি যদি চাও রাগ না উঠিয়ে ভালোবাসাও উঠাতে পারো আমি একটুও মাইন্ড করবো না মিসস।
-হোয়াট! আপনি দেখছি আসলেই অসভ্য। এমন মুক্কা দেবো না একদম একশো হাত দূরে যেয়ে পরবেন।
-তুমি চাইলে কিছুদিন আমার সাথে থাকতে পারো। ঘাড়তেড়া মানুষদের আমি আবার খুব ভালো করে, যত্ন করে ঠিক করতে পারি।
-ব্লাডি বি****।
ক্রোধে চাপা স্বরে বিড়বিড় করে বলে চলে গেলো মাহানুর। আরহাম মাহানুরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে কপালের ঘাম মুছে ফেললো। আনমনে হাসতে লাগলো সে।

>>>>চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here