#দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা)
#লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_২৯
🍂
বিছানার উপর দুই পা ঝুলিয়ে কনফিউজড হয়ে বসে আছি আমি আর দু’হাতে জরিয়ে ধরে আছি আমার মুনিটাকে,,, মুনি হলো আমার বড় টেডিবিয়াটার নাম,,, যেটা আমার চেয়ে অনেকটা বড়,,, উনি (রিদ) যখন আমার পরিমা ভেঙেছিল তখন দাদাজান আমাকে এটা এনে দিয়েছিল তখন থেকেই এটাকে আদর করে মুনি ডাকি আমি,,, কিন্তুু এ মূহুর্তে দৃষ্টি আমার পাশে থাকা দুটো স্পট কাতান শাড়ির ওপর,,, একটা নীল, অন্যটা কালোর মধ্যে,,, শাড়ি দুটো কে আমার রুমে রেখে গেল জানি না তবে এ দুটো শাড়ি যে আমার জন্য তা বেশ বুঝতে পেরেছি আমি,,, কারণ শাড়ি সাথে একটা চিরকুট ছিল,, যেখানে কালো কালিতে ছোট করে লেখা ছিল,,,,, ” তোমার জন্য রিতপাখি,,,
আজ রাতে বাসায় একটা পার্টি আছে দাদাজানের বিজনেস পার্টি, তাই এখন সবাই অনেক ব্যস্ত দাদী ও ব্যস্ত,, তাই হয়তো দাদী শাড়ি রেখে গেছে আমার জন্য,,,
তাই এই শাড়ি নিয়ে আমার কোনো ভাবান্তর নেই, আর না আছে মাথার মধ্যে আমার কোনো চিন্তা ভাবনায়,,, আমার সকল চিন্তা ভাবনায় জলান জলি দিয়ে শান্ত শীষ্ট ভদ্র টাইপের মেয়ে হয়ে বসে আছি,,,, কারণ আমি শত চিন্তা ভাবনায় করেও শাড়ি ঠিক করতে পারবো না,,, তাই আমার সকল চিন্তা ভাবনায় দূরে ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লাম শাড়ি দুটো একহাতে ধরে আর অন্যহাতে আমার মুনিকে জরিয়ে রেখে নিয়ে উদ্দেশ্য দাদীর কাছে যাব,,,
.
নিচে নামতেই চোখে পড়লো জাঁকজমকপূর্ণ সাঝ,, সারা বাড়ি ডেকোরেশন করা হচ্ছে পার্টির জন্য,, আমি সেসব এ মন না দিয়ে দাদীকে খুঁজে চলছি একমনে,,,,
কিন্তুু সারাবাড়ি ঘুরঘুর করেও দাদীকে কোথাও খুঁজে না পেরে কান্ত হয়ে গাল ফুলিয়ে বসে পড়লাম সোফায় মুনিকে একহাতে জরিয়ে ধরে,,,, মুনি আমার থেকে বেশ বড় হওয়ায় আমার পাশের সোফায় বসিয়ে ওর কাদে মাথা রেখে গোল গোল চোখে সামনের সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছি,,, হাতে দুটো শাড়ি সামনের টেবিলে রেখে দিলাম,,,
—” কিরে অসহায় এর মতো চেয়ে আছিস কেন,,,?
কি দেখছিস হুম,,,
পাশ থেকে কারও কন্ঠ শুনে চমকে উঠলাম আমি,,, ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই চোখে পড়ল নিহা আপুকে আর তার পাশে দাড়িয়ে আছে ফিহা, দুজনই হাসি মুখে দাড়ানো আমার পাশে,, আমি তাদের একপলক দেখে আবার সামনে দিকে তাকায় আগের ন্যায়, পরে দুঃখ দুঃখ ভাব নিয়ে বলে উঠি,,,,,,,,,
—-” আমি তো অসহায়ই,, আর আমার অসহায়িন্ত এই বাড়ি সব জায়গায় ছড়াছড়ি, শুধু ঐ তোমার ভিলেন ভাইয়ের কাছে ছাড়া,,,
.
আমার কথা শুনে ফিহা ও নিহা আপুর আমার পাশের সোফায় বসে পরে,, পরে নিহা আপুর ভ্রু কুঁচকে আমাকে উদেশ্য করে বললো…..
.
—” তাই বুঝি, তা তোর এই অসহায়িত আমার ভিলেন ভাইয়ের কাছে যেতে পারে না কেন শুনি,,,,
আমি নিহা আপুর দিকে না তাকিয়ে বলে উঠি….
—-” তোমার ভিলেন ভাইয়ের ভয়ে,,, আমার অসহায়বোধটা তোমার ভিলেন ভাইয়ের কাছে গেলেই, উনি কামড়ে দিবে, তোমার ভিলেন ভাই শুধু কামড় আর কামড় খাই,,,,,
আমার এমন কথায় নিহা আপুর অবাক হয়ে বললো….
—” কি বলিস মায়া, রিদ ভাইয়া কি কামড়াকামড়ি করে নাকি,,, কই আমি তো দেখেনি কখনো,,,
—” হুম,,,, সত্যি রিদ ব্রো কামড়াকামড়ি করে (ফিহা আবাক হয়ে)
আমি নিহা আপুর আর ফিহা কথায় নিজের মাথা উপর নিচ করলাম যা অর্থ হ্যাঁ উনি কামড়াকামড়ি করে,,,
তারপর আপুর দিকে ফিরে বসে শতস্ফুত গলায় বলে উঠি,,,,,,
—” হুম কামটুস ভাই তোমার,,, তুমি জানো কিছুদিন আগে তোমার ভাই আমার ওপর ঝাপিয়ে পরে কামড় খেয়েছিল তাও, পর পর তিন তিনটা কামড়,,,, আমি একটুও কান্না করিনি শুধু চুপ করেছিলাম,,, তোমার কামটুস ভাই আমার ঘাড়ে কামড় খেয়েছিল রক্ত ও চলে এসেছিল হুহহ, আমি সত্যি বলছি হুহ,,
—” তাই বুঝি,,,, ঝাপিয়ে পরে কামড় খেয়ে ছিল তোমাকে,,,,?
পাশ থেকে আমাকে এমন প্রশ্ন করতেই আমি না তাকিয়ে ভাবলেসহীন ভাবে উওর দেয়,,,,
—-” হুমমম,,,
—” তা তোমার ঘাড়ের কামড়ে দাগগুলো কি আছে নাকি আবার করতে হবে,,,,?
এমন সব কথা শুনে আমি একটু নড়েচড়ে বসে আপুর দিকে তাকাতেই আপু আর ফিহার ভীতু ফেসটা চোখে পড়ল,, ওরা আমার দিকে ভয় ভয় নজর তাকিয়ে আছে,,,, আমি তাদের এমন ভয় ভয় নজর তাকিয়ে থাকা দেখে কৌতূহল চোখে তাকিয়ে বলে উঠি….
—” নেই তো শেষ হয়ে গেছে পরের দিনই,,, আর তুমিও কি তোমার ভাইয়ে মতো কামটুস পাটি নাকি হুম,,, আচ্ছা আপু আমি কি তোমার পেটে কথা গুলো শুনতে পাই,, দেখ তোমার ঠোঁট নড়ছে না কিন্তুু তোমার কথা গুলো ঠিক শুনতে পারছি আমি,,, আচ্ছা আপু আমি কি এখন মনোবিজ্ঞানী হয়ে গেছি আর সবা,,,,
আমার কথা শেষ করার আগেই আবারও পাশ থেকে কারও কন্ঠ পেয়ে চমকে উঠলাম আমি, আর সাথে সাথে ঘাড় ঘুরিয়ে কথা গুলো বলার ব্যাক্তিটাকে দেখে ভয়ে চুপ করে গেলাম,, কারণ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমার গুনধর স্বামী, তার একহাতে একটা কালো মোটা ফাইল, আর অন্যহাত পকেটে গুঁজানো,,, ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,,,, আর তার পাশে দাড়িয়ে আছে আমার দাদাজান, হয়তো তারা দুজনই বাহির থেকে ফিরেছে একসাথে,,, আর উনি যে আমার সব কথা শুনেছে তা স্পষ্ট তার কথায় বোঝা যাচ্ছে,,,,, এখন রাগ, দুঃখ, কষ্ট নিজের মাঝে চেপে রাখতে না পেরে উনার (রিদ) দিকে তাকিয়ে থেকে ভ্যা ভ্যা করে জোরে কান্না ছুড়ে দিলাম,,, পরে কান্না করতে করতে বলতে লাগলাম….
—” আমি তো কথা গুলো এমনি এমনি বলেছি,, সত্যি বলছি,, আর আমি তো আপুকে বলছিলাম কথা গুলো, আপনি কেন শুনলেন শুনেছেন,,,, (নাক টেনে টেনে)
আমার এমন আকস্মিক কান্না উপস্থিত সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে,,, উনি শান্ত ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে,,, আর দাদাজান দৌড়ে এসে আমার পাশে বসে আমাকে একহাতে জরিয়ে ধরে চোখে পানি মুছতে মুছতে বললো,,,
—” রিদ তোর কথা আর শুনবে না সোনামা,,, তুই আর কান্না করিস না,,, (আদুরি গলায়)
দাদাজানের কথায় আমার কোনো পরিবর্তন হলো না আমি কান্না করতে করতে বলতে লাগি,,,
—” শুনে নিয়েছে তো,,, আমার সাথে সবসময় এমন করে তুমি জানো,,, আমার ক….
কান্না করতে করতে কথা গুলো দাদাজানকে বলছিলাম আর উনার দিকে তাকাচ্ছিলাম,,, কিন্তুু হঠাৎ করেই মাঝ পথে আমার কথা ও কান্না দুটোই অফ হয়ে যায় আর চোখ দুটো বড় বড় হয়ে আসে সামনে দৃশ্য দেখে,,,
আমার সাথে সাথে বাকি সবাই ও চোখ বড় বড় করে হা হয়ে সামনে তাকিয়ে আছে,,, কারণ এ মূহুর্তে এমন কিছু কেউ আশা করেনি মোটেও,,,
কারণ উনাকে (রিদ) অতি অত্যাধুনিক সুন্দরী রমণী আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে,,, উনি আমার দিকে তাকিয়ে ছিল এমন সময় হঠাৎ করেই মেয়েটি উনাকে জরিয়ে ধরে,,, উনি কিছু বুঝে উঠার আগেই এমন ঘটনা ঘটে,,,, এতে সবার চোখে ঘোর আপত্তি জানালেও আমার চোখে রয়েছে বেশ কৌতুহল,,,
উনি বিষয়টা বুঝতে পেরে প্রচন্ড রেগে মেয়েটি বাহু শক্ত চেপে ধরে নিজের বুক থেকে উঠিয়ে জোরে ধাক্কা মারে,,, আর সাথে সাথে মেয়েটি ছিটকে পরে কিছুটা দূরে,,, মূহুর্তের উনার চোখ দুটো রক্তের মতো লাল হয়ে আসে, চোখ মুখ শক্ত করে মেয়েটি দিকে তেড়ে যেতেই আমি গিয়ে সামনে দাঁড়ায় উনি আমার পিছনে আর মেয়েটি আমার সামনে,,,, উনার রাগ উপেক্ষা করে কৌতূহলি হয়ে আমার সামনে থাকা মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে শতস্ফুত গলায় বলি……
—-” একি আপু, তোমার বাকি কাপড় গুলো কোথায়,, তুমি একটা কাপড় কেন পড়েছো, তোমার বাকি তিন কাপড় কোথায়,,, তুমি কি বাকি তিন কাপড় পড়তে ভুলে গেছো,,,( ভ্রু কুঁচকে)
আমার এমন কথায় সবাই ছোট ছোট চোখ করে আমার দিকে তাকায়,, আর নিহা আপুর আর ফিহা দৌড়ে আমার কাছে আসে,, নিহা আপুর একহাতে আমার হাত চেপে ধরে হাসা চেষ্টা করে সামনে মেয়েটি দিকে তাকিয়ে,,,,
সামনে থাকা মেয়েটি উনার ধাক্কা হওয়ার নিজেকে সামলাতে সামলাতে আমি গিয়ে হাজির হয়,, হয়তো আমার এমন সব কথা জন্য মোটেও প্রস্তুুত ছিল না, তাই আমার কথা শুনে প্রচন্ড রেগে চিৎকার করে বললো…..
— ” হোয়াট,,,! হোয়াট ইউ ছেহ,,, এন্ড হু আর ইউ,,,?
(দাঁতে দাঁত চেপে)
পাশ থেকে নিহা আপুর কিছু বলবে, তখনি আমি আপুকে কিছু বলতে না দিয়ে সাথে সাথে বলে উঠি,,,,
—” রিদ ভাইয়া, মামার মেয়ে মানে মামাতো বোন আমি উনার,,, রিদ ভাইয়া কাজিন হয় আমি,,,, তুমি কে আপু,,,
আমার কথা শুনে নিহা আপুর আর ফিহা সাথে সাথে কাশতে শুরু করে আমি তাদের এমন ব্যবহারে চরম বিরক্তি হঠাৎ করেই যক্ষা আক্রান্ত হওয়ার মানে কি,,, তখনি নিহা আপু উনার দিকে এক পলক তাকিয়ে সামনে থাকা মেয়েটি দিকে তাকায় পরে কিছুটা হেসে আমাকে উদেশ্য করে বললো,,,,,
—-” মায়া বেবি, এনি হলো ডলি র্মীজা,,, রিদ ভাইয়ার একমাত্র মামা একমাত্র মেয়ে,,,, (হেঁসে চোখ বাকা করে ইশারা করে)
,
ডলি নামে মেয়েটি ভ্রু কুঁচকে বললো…..
,
—-” নিহা, কে ওহ,,, হু ইজ সি….?
,
তখনি আমি হাসি মুখে স্বাভাবিক ভাবেই বলে উঠি,,,
.
—“তাহলে উনি কি আমার পাতানো বোন, আমিও তো রিদ ভাইয়ার মামাতো বোন ফুপি বলেছে,,, সেই সুবাদে তো আমি আর উনি বোন বোন তাই না,,,, আচ্ছা ডলি আপু তুমি কি বাকি কাপড় গুলো পড়তে ভুলে গেছো নাকি,,, আর তোমার একটা কাপড়ের বাকি অংশ গুলো কোথায়,,, তুমি কি ছোট বাচ্চা কাপড় পড়ে ফেলেছো ভুল করে,,,, দেখ আমি কিন্তুু চার কাপড় পড়েছি, নিহা আপুর তুমি কই কাপড় পড়েছো,,,? আর ফিহা তুইও কই কাপড় পড়েছিস বল ডলি আপুকে,,, দাদাজান আর রিদ ভাইয়া আপনি………
.
বাকি কথা গুলো বলার আগেই উনার হাতে থাকা ফাইলটা ফ্লোরে ছুড়ে মারে,,, পরে রক্ত লাল চোখ নিক্ষেপ করে পাশে থাকা ডেকোরেশনের চেয়ারটা নিয়ে ফ্লোরে সজোরে আবারও আচার মারে,,, সাথে সাথে ভয়ে আমি সহ সবাই কেঁপে ওঠি,,, ফ্লোর থেকে ভাঙ্গা চেয়ারটা একটা বড় অংশ নিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসতে লাগল,,, আর আমি ভয়ে টাই দাঁড়িয়ে রইলাম জায়গায়…………….
চলবে……