#দেওয়ানা_(আমার ভালোবাসা)
#লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাল মায়া
#পর্বঃ_১৯
🍂
–“নানুমা, আমাকে মেরে ফেলো, আমি আর পারছি না। রোজ রোজ মরার চেয়ে তুমি আমাকে এক্ষুনি মেরে ফেলো নিজের হাতে। তবুও শান্তি পাবো আমি। কিন্তুু মায়াকে ছাড়া আর থাকতে পারছি না। চোখের সামনে থেকেও কথা বলতে পারছি না। তৃষ্ণা মেঠিয়ে দেখতে পারছি না। সবকিছু আমার অসহ্য লাগছে নানুমা। আমার এমন লাগছে যে সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে মায়াকে আমার কাছে নিয়ে আসতে। ওকে নিজের বাহু ডোরে আঁকলে রাখতে যাতে চাইলে ও তুমি বা মায়া নিজের ও আমার কাছ থেকে মুক্তি না পায়। নিজের চাওয়াটা দমিয়ে রাখতে পারছি না আমি নানুমা। আমার মায়াকে চাই-ই চাই at any cost। নানুমা আই লাভ হার ম্যাডলি। আমার সারা জীবনের জন্য ওকে চাই নিজের করে পেতে। প্লিজ নানুমা আমাকে ফিরিয়ে দিও না প্লিজ! আই কান্ড লিভ হার। আই কান্ড,,,,
অশ্রু সিক্ত চোখে আয়ন হেনা খানের সামনে হাটু গেড়ে বসে তার হাত দুটো আঁকড়ে ধরে কথা গুলো বললো,,,, মায়ার দূরত্বটা আয়নকে কুঁড়ে খাচ্ছে,, নিজের নিশ্বাসটা ও অসহ্য লাগছে,,, যেখানে মনটাই ভারী সেখানে শরীরটা ঠিক থাকলেও বা কি হবে? মায়ার দূরত্বটা যেন আয়নকে মায়ার আরও কাছে টেনে এনেছে আরও গভীর ভাবে ভালোবাসতে শিখিয়েছে,,, তাই তার মায়াকে চাই ই চাই। তাই অবশেষে আর নিজের মনে সাথে লড়াই করে উঠতে না পেরে নানুমার কাছে ঝুঁকে পরে,,, মায়াকে পাবার আশায়,,,
আয়ন এমন কথা থমকে যায় মিসেস হেনা খাঁন,,, মূহুর্তে চমকে উঠে আয়নের অশ্রু সিক্ত চোখের দিকে তাকিয়ে থাকল,,, প্রথমে আয়নের কথা গুলো গুরুত্ব না দিলেও শেষ কথা গুলো ছিল ভাবার বিষয়। তিনি আয়নকে মায়ার কাছ থেকে দূরে রেখেছে শুরু রিদের জন্য। কারণ আয়ন রিদের ভাই,,, আর ভাই ভাইয়ের মতোই হয়ে থাকে বলে মায়ার যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য আয়নকেও তিনি মায়ার কাছ থেকে দূরে থাকতে বলছিল। কিন্তু এখন তো মায়া না চাইতেও এদের দুই ভাইয়ের মাঝে ফেঁসে গেছে। এক ভাই বিয়ে করেও বউ হিসাবে মায়াকে মানতে চাই না। অন্য ভাই সেই মায়াকে মন দিয়ে বসল। এখন তিনি সবটা কিভাবে সামলাবে,, আর মায়া ও তো এখনো অবুঝ! সংসার, ভালোবাসা কি কিছুই বুঝে না,,, রিদ মায়াকে মেনে না নিলেও মায়ার কোনো আপত্তি ছিল না,, কারণ ও নিজের সময় চেয়েছে,,, কিন্তু এখন আয়নের ওকে চাই। সবটা কিভাবে সামাল দিবেন উনি? এমন সব চিন্তা ভাবনায় মাঝেই আবারও আয়নের ডাকে ধ্যান ভাঙ্গে হেনা খাঁনের। তিনি আর কিছু না ভাবেই আয়নকে সোজাসাপ্টা উত্তর দেয়,,,,
—” এটা কখনোই সম্ভব না আয়ন,, তুই মায়াকে ভুলে যা, এটা তোর আর মায়ার জন্য ভালো হবে। আমি আমার সোনামাকে নিয়ে কোনো রিক্স নিতে চাই না,,, তাছাড়া মায়া এখনো রিদের বউ এটা তুই কিভাবে ভুলে গেলি?
মিসেস হেনা খাঁন কথায় আয়ন আরেকটু চেপে বসে উনার সাথে। হাত জোড়া আঁকড়ে ধরে কাতর কন্ঠে বললো,,,,
—” নানুমা প্লিজ! আমি মায়াকে ভুলে যাওয়া জন্য ভালোবাসি নি,,, আর রইলো রিদের কথা,,, রিদ মায়াকে বউ হিসেবে মানে না,, আর কখনো মানবেও না,,, তোমার কি মনে হয় আমি রিদের সাথে কথা বলিনি। বলেছি! রিদ নিজের স্বীকার করেছে সে মায়াকে ভালোবাসে না শুধু তোমাদের জন্য ওকে সহ্য করে। নানুমা আমি সবটা ভেবে চিন্তেই বলছি! সাথে তোমাকে প্রমিসও করছি নিজের শেষ নিশ্বাস পযন্ত মায়াকে আঁগলে রাখবো সবকিছু থেকে,,, তুমি শুধু একটা সুযোগ দাও আমার ভালোবাসাকে নানুমা,,, বিশ্বাস রাখো আমি তোমার ভরসা ভাঙ্গবো না।
মিসেস হেনা খাঁন নিজের কথায় অটল থেকে আবারও সোজাসাপটা ভাবে বললো,,,
—-” অসম্ভব,,, রিদ মায়াকে বউ হিসেবে মানুক আর না মানুক,,, আমার সোনামা আমার সাথেই থাকবে,,, আমি আমার সোনামাকে কাউকে দিতে পারবো না, ওহ আমার কাছেই থাকবে সারাজীবন,,,, ওর কারো প্রয়োজন নেই বুঝেছিস তুই,,,, এভার যা এখান থেকে,,,
আয়ন তার নানুমা মনে অবস্থা বুঝতে পেরে একটু উচু হয়ে মিসেস হেনা খাঁনের দুগাল নিজের হাতে আবদ্ধ করে বিনিময় সুরে বললো,,,,,
—-” তোমার সোনামা তোমার কাছেই থাকবে সারাজীবন নানুমা,,, ওকে আমি বা অন্য কেউ তোমার কাছ থেকে কোথাও নিয়ে যাবে না,,, আমি আমার বাহিরে কোম্পানির একটা শাখা বাংলাদেশেরও খুলবো। আমি বাংলাদেশ থাকবো মায়াকে নিয়ে। শুধু প্রয়োজনীয় কাজে শুধু বাহিরের যাব। কিন্তুু ঐখানে আর থাকছি না,,, মায়াকে বিয়ে করে তোমাদের সাথেই থাকবো তোমার কাছে আর মায়াও কোথাও যাচ্ছে না,,, বিশ্বাস করো আমায়,, আমি মায়া জন্য সব করতে পারব,,
আয়নের কথায় নড়েচড়ে বসে মিসেস হেনা খাঁন,,, কিছুটা নরম হয়ার কন্ঠে বললো,,,,
—-” কিন্তুু মায়ার ফ্যামেলি,,, ওরা কি বলবে,,, ওরা তো কিছু জানে না,,, মায়া না হয় কিছু বলবে না কারণ আমি যা বলবো মায়া তাই শুনবে ওর কোনো আপত্তি থাকবে না,,, তাই বলে যে ওর ফ্যামেলি মেনে নিবে এমন তো কিছু না,,, ওরা তো,,,
মিসেস হেনা খাঁনকে থামিয়ে আয়ন বলে উঠে,,,,
—” আমার উপর বিশ্বাস রাখো নানুমা আমি সবটা সামলে নিব,,, তুমি শুধু মায়াকে আমার কাছ থেকে দূরে রেখো না তাহলেই হবে,,,, মায়ার ফ্যামেলিকে আমরা সবাই বুঝিয়ে বললে ওরা সবটা বুঝবে,,, আর রইলো রিদের কথা,,, রিদ কাজ শেষ করে বাহির থেকে আসলে তুমি আর নানাভাই ওকে বলবে মায়া সাথে ওর ডিভোর্সের বিষয়টা,,,, আমি আর কোনো দেরি চাইছি না, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওদের ডিভোর্স হওয়া চাই আমার,,,
আয়ন নিজের কথা শেষ করে হেনা খানের কাছ থেকে হাসি মুখে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যায় মায়ার ভার্সিটির উদ্দেশ্য,, আজ অনেক দিন পর নিজের মনে মানুষটি সাথে প্রাণ খুলে কথা বলবে,, তাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবে, তৃষ্ণার্ত চোখ মেটিয়ে দেখবে,,, এখন আর কোনো বাধা নেই,,,,, এবার তার সব চাই,, ভালোবাসা, বিয়ে, বউ, সবটা চাই তার,,,, হুট করেই গুছাল ইচ্ছা গুলো যেন তার মাথায় চেপে বসেছে,,,
আয়নের কথায় মিসেস হেনা খাঁন সায় জানায় কারণ আয়ন যা বলেছে সব সত্যি,,, মায়া তো আর সারা জীবন ভালোবাসা ছাড়া থাকতে পারবে না,,, এখন ভালোবাসা, সংসার না বুঝলেও একটা সময় তো ঠিকই বুঝবে,, তখন মায়া নিজেই সংসার, ভালোবাসা খুঁজবে,,, তখন যদি সংসার করার জন্য ভালোবাসার মানুষটিকে না পায় তাহলে কি করে কাটাবে ভালোবাসা বিহীন সারাটি জীবন। চিরদিন তো তিনি বেঁচে থাকবে না মায়ার পাশে। এসব চিন্তা ভাবনায় উনার আর আপত্তি রইল না আয়নের প্রতি। উনার সোনামা যারই বউ হোকনা কেন, উনার চোখের সামনে থাকবে এটাই জন্য অনেক,,,,
চলবে………..