#দেওয়ানা_(আমার ভালোবাসা)
#লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাল মায়া
#পর্বঃ_২১
🍂
নতুন নতুন সবকিছু সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে একটু আরেকটু সমস্যা যেমন হয়,,, তেমন নতুন কিছু অনুভূতি সাথে পরিচয় ও হওয়ায় যায় যেমন আমি হচ্ছি এ মূহুর্তে,,,, নতুন বাসা নতুন নতুন সবকিছু তবে মানুষ গুলো পুড়নো,,,
আমি আমার নতুন রুমে ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে আছি,,,
চারপাশে বড় বড় বিল্ডিংয়ের ডাকা মুক্ত বাতাস বলতে দূলব,,, আমি একটা বার তলা বিল্ডিংয়ের চার নাম্বার ফ্ল্যাট এ আছি,,,, এটা দাদাজান এর ফ্ল্যাট,,, আমি এখানে কালকে শিপ্ট হয়েছি,,, আমি একা এখানে থাকছিনা আমার সাথে মালা, আর আশিক সহ বাকি বডিগার্ডরা রয়েছে,,,
আমি এখানে আসার কারণ হল উনি (রিদ),,, উনি নাকি দেশের ফিরবেন, কবে ফিরবেন জানিনা তবে কিছু দিনের মধ্যে হয়তো আসবেন তাই দাদী আমাকে এখানে রেখেছেন যাতে আমি উনার সামনে না পরি,,, আর উনিও আমার কোনো ক্ষতি করতে না পারে তাই,,, আমি হোস্টেলে থাকতে চেয়ে ছিলাম কিন্তুু দাদা-দাদি আমাকে নিয়ে কোনো রিক্স নিবেন না বলে আমাকে এখানে রাখা,,,,
আচ্ছা যদিও ভুলবশত উনার (রিদ) সামনে চলে আসি তাহলে কি উনি আবারও আমাকে মারবেন,,, আর উনি আমাকে এতটা ঘৃণা কেন করেন,,,? আর যদি আমি উনার কথা রাখতে না পারি তো যদি উনাকে দেখে নিজের ধরে রাখতে না পারি তখন কি হবে,,,, ?
নাহ,, অনেক হয়েছে আর না,,, আমি এতটাতো নিকৃষ্ট নয় যে উনার কাছে ধরা দিব,,, এবার আমিও নিজের সাথে প্রতিক্ষা বদ্ধ,,,, যাব না উনার সামনে আর,,, যাই কিছু হয়ে যাকনা কেন,,,,
দাদা-দাদী আর আয়ন ভাইয়া ওরা তিন জন এসে আমাকে এখানে রেখে যায়,,, দাদী আর আয়ন ভাইয়া দু মিনিট পর পর কল করে এটা সেটা বলছে আর দাদী তো কথা বলার মধ্যে কান্না করে ফেলে,,, আমাকে ছাড়া নাকি দাদীর একা থাকতে কষ্ট হচ্ছে,,,,
এসব কথা দাঁড়িয়ে আকাশে দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম একমনে ,,, তখনি করিং বেলের আওয়াজে ঘোর ভাঙে আমার, তাই বিরক্তি নিয়ে চারপাশে চোখ বুলায় আমি,, এত সকালে কে আসবে এখানে আর আমাকেই বা কে চিনে এখানে যে দেখা করতে আসবে,,, আবারও করিং বেল বাজতেই কপাল কুচকে এলো আমার কে হতে পারে দেখা জন্য পা বাড়ালাম ফ্ল্যাটে মেইন দরজার উদ্দেশ্য,,,, দরজা খুলতেই চোখে পড়লো আয়ন ভাইয়া হাসি মুখ,,,
উনার গায়ে বাসার পড়া লাল টি শাট আর কালো টাউজার,,, চোখ মুখ হালকা ফুলা মনে হচ্ছে ঘুম থেকে উঠে গাড়ি নিয়ে সোজা এখানে চলে এসেছে,,,
উনাকে দেখে বোকার মতো তাকিয়ে আছি আমি,,,
উনি এ সময়ে এখানে কেন তা জানার জন্য প্রশ্ন করার আগেই আয়ন ভাইয়া আমার হাত টেনে ধরে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে উঠে,,,,,
—-” মায়াপাখিকে ছাড়া কোনো কিছু ভালো যায় না আমার,, তাই মায়াপাখির সন্ধান চলে এসেছি মায়ানগরে,,,, চলো একসাথে নাস্তা করি,,, পরে তোমাকে আবার ভার্সিটিতে ডপ করে দিব,,,
বলেই আয়ন ভাইয়া আমার হাত ধরে ডাইনিং এ বসিয়ে দেয় পরে মালাকে নাস্তা দিতে বলে, আমার পাশের চেয়ারটা টেনে নিজের ও বসে পরে,,,
আমার প্লেট এ নাস্তা দিতে দিতে স্বাভাবিক ভাবেই আবারও বললো,,,,
—-” মায়াপাখি তোমার সাথে যা হয়েছে, আমি তা পূণরায় রিপিট করতে দিব না এবার,,, তাই তুমি রিদকে নিয়ে কোনো ভয় পেয়েও না ও তোমার কিছু করবে না,, এবার আমি ওর সাথে কথা বলবো,,, তোমাকে কিছু দিন রিদ থেকে দুরে থাকতে হবে কারণ রিদের রাগটা বরাবরই একটু বেশি,,, আর আমরা কেউ চাই না তুমি ওর রাগে বস্বতী হও,,, তাই তোমাকে এখানে রাখা,,,,
আর তোমাকে আমি রোজ রোজ ভার্সিটিতে ডপ করে আসবো যদিও তোমার সাথে বডিগার্ড থাকবে তারপর ও আমি রোজ তোমার সাথে যাব,,,, তাই এখন চুপচাপ বাধ্য মেয়ে মতো নাস্তা করে রেডি হয়ে আসো কেমন,,,
আয়ন ভাইয়া কথা গুলো শুনে নিরবে নিভৃতে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম,,,
🍁
প্রফেশর ক্লাস করিয়ে চলছে কিন্তুু আমি ক্লাসে মনোযোগ হতে পারছি না কিন্তুু কেন পারছি না কারণটা আমার অজানা,,, আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে,,, আর মনে মাঝে এক অস্থিরতা কাজ করছে,,, মনে হচ্ছে কিছু একটা হতে চলছে আমার সাথে,,, খুব আপন কেউ আসবে আমার কাছে ধরা দিতে,,, আমাকে সাজাতে,,, কিন্তুু কে আসবে,,,, আর কেইবা আছে আমার আপন বলতে,,,, কে ধরা দিতে চাই আমার কাছে,,, আমার এমন অস্থিরতা কেন হচ্ছে,,,?
আমাদের ক্লাস শেষ হতেই একজন পিএ এসে আমাকে বললো যে দাদাজান এর অফিস রুমে যেতে,,, স্যার এসেছে উনার সাথে দেখা করতে ডেকে পাঠিয়েছেন আমায়,,, আমিও কোনো কথা না বাড়িয়ে চললাম দাদাজান এর উদ্দেশ্য,,, কারণ আমি জানি এ সময় দাদাজান আসবে আমার সাথে দেখা করতে,,, আজ চার দিন ধরে উনাদের থেকে দূরে থাকছি আমি,, তাই দেখা করতে এসেছে আমার সাথে কথা গুলো ভেবেই হাসি মুখে অফিস রুমে দরজা টেলে ভিতরে ঢুকে চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলাম রুমে কেউ নেই,,,, তাই কৌতূহল চোখে আবারও আশেপাশে ভালো করে চোখ বুলায় তখনি চোখে পরে,, একটা লোক অফিস ড্রেস এ দাঁড়িয়ে আছে জানালার দিকে মূখ করে দৃষ্টি তার বাহিরের দিকে স্থির আর পকেটে দু হাত গুঁজানো,, গায়ের কোটটা পাশের চেয়ারটার ওপর রাখা,,,
তাহলে কি দাদাজান না এসে আয়ন ভাইয়া আমার সাথে দেখা করতে এসেছে কিন্তুু কেন উনিতো সকালেই আমাকে ডপ করে গেল তাহলে,,, হয়তো কোনো কাজে এসেছে,, তাই আমার সাথে দেখা করে চলে যাবে,,,
আমি আর অতশত চিন্তা ভাবনায় না করে উনার পিছনে চেয়ারটা টেনে বসে পরি আর উনাকে উদ্দশ্য করে বলে উঠি,,,
—-” আয়ন ভাইয়া তুমি আমাকে এ সময়ে এখানে ডাকলে কেন,,? আর দাদাজান কোথায়,, আমার সাথে দেখা করতে আসে না কেন,,,
নিজের একহাত গালে রেখে আর অন্য হাত দিয়ে টেবিলে আঁকি ঝুকি করতে করতে কথা গুলো বললাম,,
কিন্তুু তখনও তিনি উল্টো দিকেই ফিরে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন,,,,, উনি নিশ্চুপ থাকাতে আমি একপলক উনার দিকে তাকিয়ে আবার সামনে দিকে টেবিলে তাকায় সাথে সাথে আমার চোখে পড়ে ভিন্ন রকমে চকলেট বক্স রয়েছে যা খুবই এক্সক্লুসিভ দামি হবে, বাংলাদেশের হবে বলে মনে হচ্ছে না,,, হয়তো দাদাজান বাহিরের গিয়েছিল তাই আমার জন্য নিয়ে এসেছে,,,,
আমি আর কোনো কিছু চিন্তা না করেই সব চকলেট বক্স গুলো একসাথে নিজের কাছে নিয়ে,,, দাদাজান এর টেবিলের ওপর উঠে বসে মনোযোগ সহকারে চকলেট বের করে করতে করতে বললাম,,,,,
—” আয়ন ভাইয়া এ সব গুলা চকলেট বক্স কি আমার,,,, তুমি এনেছো আমার জন্য,,,
বলেই নিজের মতো করে একটা একটা করে চকলেট খেতে লাগলাম,,, চকলেট গুলোর স্বাদ অন্য রকম ছিল বিধায় আমার খেতে কোনো সমস্যা হচ্ছিল না উল্টো আরও মজা পাচ্ছিলাম,,, কিন্তুু আয়ন ভাইয়া কোনো ভাবান্তর না দেখে আমি আবারও বলে উঠি,,,,
—-” ভাইয়া তুমি কথা বলছো না কেন,,, আর আমার দিকেও ফিরছো না,,,,
আবারও উনার কোনো পরিবর্তন না দেখে আমি বিরক্তি নিয়ে একবার উনার দিকে তাকিয়ে আবার বক্স থেকে চকলেট বের করতে করতে বলে উঠি,,,,
—-” আয়ন ভাইয়া এ রুমটা থেকে কেমন একটা চেনা চেনা গন্ধ আসছে আমার নাকে,,, নাকি তোমার থেকে আসছে এ চেনা গন্ধটা,,, কোথায় যেন এ গন্ধটা পেতাম আমি আমার মনে পড়ছে না,,,, তুমি বলো তো কোথায় পেতাম আমি এ গন্ধটা,,,,( চিন্তা সুরে)
—- রিদ থেকে,,,,
পরিচিত কন্ঠে আমার মূখে থাকা অবশিষ্ট চকলেট অংশটুকু পরে যায় টেবিলে ওপর,,, মূহুর্তে আমি ঘামতে থাকি আর ভয়ে কান্না আসছে হৃদয় ভেঙে,,, হার কাঁপানো দৃশ্যটা ভেসে ওঠছে মূহুর্তে চোখে সামনে,,,, আমার এতক্ষণ যে অস্থিরতার কাজ করছিল,,, সেটা কি তাহলে এ পরিচিত কন্ঠে জন্য,,,, উনি কি তাহলে ফিরে এসেছেন,,,, এখন কি উনি আবার আমাকে পুড়াতে চাইবেন,,,, আমি তো ইচ্ছা করে উনার সামনে আসিনি আর উনি তো এখনো আমার চেহারা দেখেনি,,,,, আমার চেহারা দেখলে উনি আমায় পুড়িয়ে ফেলবে,,,, আমি কি করবো এখন,, কে বাঁচাবে উনার থেকে আমাকে,,,,,
আমি কি আজ আর বাঁচতে পারবো না উনার (রিদ) থেকে,,,,,
.
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,