#দেওয়ানা_(আমার ভালোবাসা)
#Writer_রিক্তা ইসলাল মায়া
#পূর্বঃ_১৮
🍂
—” মায়া একদম কোনো ছেলে সাথে কথা বলবি না,,, সে যে কেউ হোকনা কেন,, ক্লাসে যাবি আর আসবি কারও সাথে কথা বলার দরকার নেই,,, আর তোর যে কয়টা মেয়ে ফ্রেন্ড আছে তাদের ছাড়া আর কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড বানানোর দরকার নেই বুঝেছিস,,, শুন একদম পাগলামো করবি না ভার্সিটিতে গিয়ে,, বডিগার্ডদের সাথেই থাকবি কেমন। খবরদার যদি শুনেছি তুই আবারও বডিগার্ডদের ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছিস। তাহলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না বলে দিলাম,, ওদেরকে সাথে নিয়েই তোর ক্লাস করতে হবে বুঝেছিস,,,
আমার ব্যাগ গুছাতে গুছাতে হালকা রেগে কথা গুলো বললো দাদীর আমাকে,,,, আমি ঠোঁট উল্টিয়ে গাল ফুলিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে দাদীর কথা গুলো শুনছিলাম, এই কথা গুলো রোজ রোজ শুনতে শুনতে আমি চরম বিরক্ত, দাদী আমার সাথে এমন করে কেন বুঝিনা আমি,,, দাদী আমাকে কারো সাথে মিশতে দেয় না, এমনকি আয়ন ভাইয়াকেও আমার কাছেও আসতে দেয় না। কথা বলা তো দূর থাক। কি এমন করেছি আমি হুহহহ,, দাদী আমাকে না পারতে ভার্সিটিতে পাঠায় পড়তে হবে বলে, নয়তো তিনি আমাকে কখনোই ভার্সিটিতে ও পাঠাতো না,, আমাকে পারলে ঘর বন্দী করে রাখতো সারাজীবন। কিন্তু আমার ভার্সিটির আছে বলে তা করতে পারে না। তবে আমার বডিগার্ডদের সংখ্যা তিনি বাড়িয়ে দিয়েছেন,,, আশিকদের সাথে আরও তিন জনকে দিয়ে মোট পাঁচজন আমার বডিগার্ড এখন,,, সারাক্ষণ আমার সাথেই থাকে জোকের মতোন যদি ভার্সিটিতে যায় তো,,, এমনকি আমার ক্লাসে পাশে সোজা হয়ে দাড়িয়ে থাকে। এমন অত্যাচার কি মেনে নেওয়া যায়,, না যায় না নেহাত আমি ভালো মেয়ে বলে মেনে নিচ্ছি নয়তো কেউ বাতি লাগিয়েও আমার মতো ভালো মেয়ের খুঁজে পাবে না হুহহহ,,,
আমার এমন চিন্তা ভাবনায় দাদী আমার পাশে এসে বসে আমার দু গাল আঁকড়ে ধরে বলে উঠে,,,,
—” সোনামা কেন আমার কথা শুনতে চাইস না তুই বল,,, আমি তোকে নিয়ে কোনো রিক্স নিতে চাই না,,, যা একবার ঘটেছে আমি তা পুনরাবৃত্তি করতে চাইছি না,,, তোর কারও দরকার নেই, প্লিজ সোনামা আমার কথা আবাধ্য হুস না,,,, (চলচল চোখে দাদী)
আমি কিছুক্ষণ দাদীর দিকে তাকিয়ে থেকে দাদীকে শক্ত করে ঝাপটে ধরি,, একটু পর দাদী আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে কপালে চুমু একে দিতেই আমি বলে উঠি,,,
—-” আমি তোমার সব কথা শুনি তো দাদী,,, একদম ভার্সিটিতে গিয়ে পাগলামি করিনা, তুমি জানো ঐ আশিক আছে না আমার বডিগার্ড! ওরা সবসময় তোমাকে আমার নামে মিথ্যা বলে সত্যি বলছি (মাথা হাত দিয়ে),,, কত বড় মিথ্যু তুমি জানো দাদী? জানো নাতো, দাঁড়াও আমি বলছি, ওরা সবসময় তোমার কান ভরে আমার নামে। তুমি তো জানো মিথ্যা বলার ঘোর পাপ তাইনা, কিন্তু আশিক এই পাপ কাজটা রীতিমতো করেই চলছে তো, করেই চলছে কোনো থামা থামি নাই,,,, এটা তো অন্যায় তাইনা দাদী। আর আমার কেন এই অনন্যায়কে মেনে নিব বল, তাই তুমি আশিকে তার পাপ কাজ থেকে মুক্তি করে দাও দাদী,,,, ওকে সহ বাকি সবাইকে বের করে দাও বডিগার্ড পদ থেকে, সব কয়টা মিথ্যাবাদী,,,, তুমি জানো তোমাকে পটপট করে মিথ্যা বলে দেয় আমাকে একটু বলার সুযোগ ও দেয় না,,, এটা তো ঘোর অন্যায়! তাই তুমি ওদের বের করে দাও দাদী হুহহহ,,,
আমার কথায় আহত হলেন দাদী তা ফেস দেখেই বুঝা যাচ্ছেন,,, কি এমন বললাম আমি,, এখন কি ভালো কথা ও বলা যাবে না হুহহহ,,, দাদী আমার দিকে রাগি ভাবে তাকিয়ে বললো,,,,
—-” তোর আর সত্যি বলা লাগবে না। শুনেছি তোর সত্য আমি। ওরা যতো পারুক আমাকে মিথ্যা বলে পাপ করুক। কিন্তু তবুও ওরাই তোর বডিগার্ড থাকবে বুঝেছিস,,, এখন নিচে চল নাস্তা করে ভার্সিটিতে যাবি,,,,
বলেই দাদী হনহন করে নিচে চলে যায়,,, আমি দাদীর চলে যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম নিশ্চুপে,,, আস্তে করে উঠে ধীর পায়ে ব্যালকুনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। এবং আকাশে দিকে তাকায় আমি। এখন সকাল ৮ঃ১৫ বাজে,,, আমি জানি দাদী এমন কেন করছে আমার সাথে,,, কেন আমাকে কারও সাথে মিশতে দিচ্ছে না,,, এমন কি আয়ন ভাইয়াকে ও,,, ভাইয়া শত চেষ্টা করেও আমার কাছে পৌঁছাতে পারছে না কারণ দাদী সে সুযোগটায় দিচ্ছেন না,,, দাদীর কেন আমাকে নিয়ে এত ভয় পাচ্ছেন সেটাও জানি আমি। দাদী মনে আমাকে নিয়ে অনেক ভয় কাজ করছে এই মূহুর্তে। যার জন্য তিনি আমাকে সবকিছুর থেকে আগলে রাখতে চাইছেন,,, হয়তো দাদীর ভয়টা উনি নিয়ে এজন্য। আমার আজও ঐ দিনের কথা মনে পড়লে ভয়ে আতঙ্কে উঠি। আমার কলিজা কেঁপে ওঠে,, মূহুর্তেই যেন নিস্তব্ধ হয়ে পরি,,,
উনি আমার সাথে কেন এমন করেছিলেন তা আমি জানি না কারণটা আমার এখনো অজানা,,,, তবে ঐ দিনের পর থেকে আমি আর উনাকে দেখেনি আজ দুইমাস হয়েছে,, উনাকে দেখতে চাই ও না,, আগে সামনে আসতে চাইনি ভয়ে কিন্তু এখন ভয়ে সাথে সাথে বড্ড অভিমান ও আত্ম সম্মান বোধে লেগেছে আমার। তাই মনে মনে প্রতিক্ষা করেছি উনার সামনে কখনো যাব না আমি, উনি (রিদ) কোথায় আমি সঠিক জানি না তবে আমি সুস্থ হওয়ার পর শুনে ছিলাম,,,,, উনি নাকি পাটির রাতেই দেশের বাহিরের নিজের বাড়িতে চলে গেছেন বিজনেস এর জন্য,,,, কবে আসবে দাদাজান জানে তাই সে অনুযায়ী নিহা আপুর বিয়ে ডেটটা ও ফিক্সড হবে ফুপ্পিরা আর ফয়সাল ভাইয়ারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ বাড়ির একমাত্র ছেলেকে রেখে তো আর বিয়ে দেওয়া যায়না তাই না,,, দাদা- দাদী ও অমত প্রকাশ করেন নি কারণ উনি (রিদ) ছাড়া দাদা-দাদীর বংশের আর কেউ নেই। একটু রাগী হলেও ভালোবাসে তো প্রচন্ড সবাই, তাছাড়া উনিও উনার ফ্যামেলিকে অনেক ভালোবাসে সেটাও সবাই জানা শুধু আমার বিষয়টাই উনি মেনে নিতে পারছেন না তাই হয়তো এমন করছেন,,, ঐ দিন রাতে নাকি উনার ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারে নি এমনকি দাদা-দাদি ও না,,, তবে আয়ন ভাইয়া নাকি কিছু বলতে চেয়ে ছিল কিন্তু উনার রাগের কারণে শেষে আয়ন ভাইয়াকেও দমে থাকতে হয়েছিল। উনার( রিদ) রাগ সম্পর্কে সবাই অবগত ছিলেন তাই। সেদিন নাকি দাদী শুধু হু হু করে কেঁদে ছিল আমার অবস্থা দেখে,,,,, কিন্তু উনার হয়তো দাদীর কান্নাটা পছন্দ হয়নি তাই সব ছেড়ে ঐ দিন রাতেই পারি জমায় দেশের বাহিরের,,,,
কথা গুলো ভেবে থাই গ্লাসের উপর মাথাটা খেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ঐ দিনের কথা মনে করতে লাগলাম,,,
ঐ দিনে রাতে পাটিতে অজ্ঞান হওয়ার পরে আমার কিছু মনে ছিল না,,, আমার হুস ফিরে পরদিন,, কিন্তুু আবারও দু মিনিট এর মাথায় জ্ঞান হারায়,,, পরে নাকি আমাকে ঘুম এর ইনজেকশন দিয়ে তিন দিন ঘুমে রেখে ছিল,,, প্রচন্ড ভয়ে মাথায় আঘাতে নাকি আমার মস্তিষ্ক পাট গুলো কাজ করা ছেড়ে দিয়েছিল,,,, তাই আমার শরীলটাও নৃত্যত দেহটা বিছানায় পরে ছিল,,,, তিন দিন পর আমি যখন হুস আসি তখন সবার আগেই দাদীর কান্না মাখা ফুলা চোখ মুখ চোখে পরে,,,, কিছু বুঝতে না পেরে পাশে তাকায় আমি দাদাজান ও আমার পাশে হাটে হেলান দিয়ে আদু শুয়ে আছে,,,, আমার হাতে চেলাইন এ র্ক্যান লাগানো,,, আমি নড়াচড়া করতে পারছি না বলে হালকা শব্দ করতেই দাদী উত্তেজিত কন্ঠে আমাকে ঝাপটে ধরে বললো,,,,
—” আমার সোনামা উঠে গেছে ডক্টর,,,, তোর কি বেশি ব্যাথা করছে,,, ডক্টর দেখোন না আমার সোনামাকে তাড়াতাড়ি প্লিজ,,,,
দাদী কথায় আমি কিছু বুঝতে পারছিলাম না তাই চোখ বুলিয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম একজন ডক্টর দুজন নার্স ও আছেন,,, আমি আবার দাদীর দিকে তাকিয়ে বললে উঠি আস্তে করে,,,
—-” দাদী আমার কি হয়েছে,,, আর ডক্টর কেন আমার রুমে হুম,,, আমার কি অসুখ হয়েছে দাদী,,,
আমার এমন কথায় দাদী আমাকে কিছু না বলে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলেন আমাকে একহাতে জরিয়ে ধরে সাথে সাথে দাদাজান ও আমাকে জরিয়ে ধরেন,,, আর দাদীকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন,,,,
🍁
আমি প্রায় এক সাপ্তাহ পর সুস্থ হয়ে উঠে ছিলাম,,, এ একসাপ্তাহ দাদা-দাদী আমার সাথে আমার রুমেই ছিলেন,,, দাদাজান নিজের কাজে দিন এ বাহিরে থাকলেও রাতে আমার রুমে থাকতেন দাদীর সাথে,,, দুজন আমার দুপাশে থেকে আমাকে মাঝে রাখতেন কখন কি প্রয়োজন হয় তার জন্য,,,,,,
কিন্তুু আমি ঠিক হতে পারছিলাম না,,,,, শুধু ঐ রাতে ঘটনাটা বার বার আমার চোখে সামনে বেসে উঠত তখনি আমি হু হু করে কান্না করে দিতাম ভয়ে আর নিজেকে গুটিয়ে নিতাম আমার এমন পাগলামো দেখে দাদীও কান্না করে দিত আমাকে জরিয়ে ধরে,,,,, আর আমাকে বুঝাত যে উনি আমার কিছু করবে না উনি এখানে নেই,,, উনি নাকি দূরের চলে গেছেন,,,, আমাকে কিছু করবে না,,,, দাদী আমার পাশে আছে তো,,,, এমন সব কথা বলে আমাকে আগলে রাখতো,,,,
আমি প্রচন্ড মানুষিক ডিপ্রেশনে ভুগেছিলাম,,,,, আমি সম্পূর্ণ ডিপ্রেশন থেকে বের হতে আরও পনেরো দিন লেগেছিল আমার,,,,,
আয়ন ভাইয়া আমার হুস ফিরতেই আমার কাছে আসেন দেখা করতে,,, তাকে দেখে আমি আতৎকে উঠে ছিলাম কেমন চোখ মুখ ফুলা ফুলা ছিল,,, আর বড্ড অগোছালো ছিল,,, উনি আমার পাশে এসে হাটের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আমার একটা হাত নিজের দুহাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে কাতর কন্ঠে কিছু বলবে তখনি দাদী চিৎকার করে বললো,,,
—” আয়ন তোকে আমি কতবার বলেছি যে মায়ার কাছে আসবি না,,,,, আমি তোদের দুই ভাই এর কাউকে মায়ার সাথে দেখতে চাই না,,,,, আমি মায়ার কাছে কোনো ছেলেকেই দেখতে চাই না,,,, মায়া আজ থেকে তোদের কারও সামনে যাবেও না,,, আর না কোনো ছেলের সঙ্গে কথা বলবে,,,, ওর কারো দরকার নেই,,, বুঝেছিস তুই,,, ওর জন্য আমরা আছি,,,, যা বের হহহ আর আসবি না ওর কাছে,,,,,
আয়ন ভাইয়া করুন ভাবে দাদীর দিকে তাকিয়ে চলচল চোখে বললো,,,,
—-” নানুমা আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে,,,, আমি আর পারছি না নিজেকে আটকে রাখতে,,,, প্লিজ আমার দোষটা কোথায় বলবে তুমি,,,, আমাকে কেন এত ভয়ানক শাস্তি দিচ্ছো,,,, আমি আর পারছি না,,,, প্লিজ নানুমা বল,,,,(আয়ন)
দাদী আয়ন ভাইয়া হাত আমার হাত থেকে ছাড়িয়ে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললো,,,,,
—-” তোর দোষ তুই রিদ এ ভাই,,,,, আর রিদ মানেই ভয়ানক,,, তাই তুইও ভয়ানক মায়া জন্য,,,, আর আমি আমার সোনামা কাছে কোনো ভয়ানক কিছু ঘেষতে দিব না তাই তুইও না,,,,,
বলেই আয়ন ভাইয়া রুম থেকে বের করে দরজা লাগিয়ে দেন,,,, উনাকে কিছু বলার সুযোগ ও দেননি ঐ দিনের পর আয়ন ভাইয়া কোনো ভাবেই বাড়িতে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি,,, কিন্তুু ভার্সিটিতে গিয়ে ছিল কয়েক বার,,, কিন্তুু বডিগার্ডদের কাছ থেকে জানার পরে দাদী কসম দিয়েছেন যাতে আমার কাছে না আসে তাই উনার সাথে ও আমার কোনো কথা নেই,,,, কিন্তুু যখন আমার সামনে পরে যায় তখন কেমন যেন কাতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চলে যায় নিজের রুমে,,,,,,
দাদীর আওয়াজে ভাবনায় জগত থেকে বের হয়ে নিচে যাওয়ার জন্য প্রস্হান করলাম,,,, আর মনে মনে একটা কথায় ঠিক করে রেখেছি,,,,
অনেক হয়েছে বুঝাপড়া,,,,, এখন হবে বাস্তবতা,,,, সে যা চাই তাই হবে,,,,, আমিও এর শেষ দেখতে চাই,,,, মরে যাব তবোও উনার সামনে যাব না,,,,, এটা নিজের সাথে নিজের প্রতিক্ষা,,,,,,
চলবে,,,,,,,,