এক_ফালি_প্রণয়|২১| #শার্লিন_হাসান

0
340

#এক_ফালি_প্রণয়|২১|
#শার্লিন_হাসান

শিকদার বাড়ীতে নতুন অতিথির পদচারণের উৎসবমুখর পরিবেশ। সিনথিকে বরণ করে নেন শারমিন। অনেকেই নতুন বউ দেখার জন্য আসে। বাকীরা ফ্রেশ হয়ে হালকা চা-কফি খেয়ে নেয়। পূর্ণ তার রুমে অফিসের কাজে ব্যস্ত।

সিনথিকে নিয়ে তিশা,রোদ রোদের রুমে যায়। বাকীগুলোতে মেহমানদের আনাগোনা। বিয়ের শাড়ী পালটে একটা পার্পেল রঙয়ের জামদানী শাড়ীতে নিজের কায়া বেষ্টিত করে নেয় সিনথি। পার্পল রঙটা তার ফর্সা কায়ায় বেশ ফুটে উঠেছে।

নববঁধুকে হালকা খাবার দেওয়া হয় সন্ধ্যার। অতঃপর বোন,কাজিনরা মিলে আড্ডার আসর জমায়। মাইশা,পাভেল ও আছে। তবে মাইশার বরের আর্জেন্ট কাজ পড়ায় বিয়ের অনুষ্ঠান সেরে চলে গিয়েছে। তূর্ণকে ডেকে আনা হয়। সবাই উপস্থিত তবে পূর্ণ ব্যতীত। তিশা রোদকে ঠেলে পূর্ণকে নিয়ে আসার জন্য। তার বিশ্বাস রোদ গেলে পূর্ণ না করবে না। এদিকে তারা একটা গেম খেলার জন্য কাগজ ঠিক করছে।

রোদ ও আলতো হেঁসে পা বাড়ায় পূর্ণর রুমের দিকে। দরজায় নক করতে পূর্ণ ভেতরে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করে। রোদ ত্রস্ত পায়ে ভেতরে প্রবেশ করে। পূর্ণ নেত্রপল্লব স্থির করে রোদের পাণে। মিহিত কন্ঠে শুধায়, “কিছু বলবে?”

“তুমি বেশী ব্যস্ত?”
কন্ঠস্বরে খাদে নামিয়ে বলে রোদ। পূর্ণ এ
স্বল্প হেঁসে জবাব দেয়, ” তুমি বললে ব্যস্ততাকে ছুটি দিতে রাজী আমি।”

“হয়েছে ছন্দ বলে প্রেমিকের ভাণ ধরতে হবে না।”

“আজব! ভাণ ধরবো কেন? আমি তো কারোর না কারোর প্রেমিক পুরুষ তাই না?”

“কার প্রেমিকপুরুষ?”

“আছে…”

কথাটা শেষ হতে রোদ পূর্ণর দিকে তেজস্বিনী চাহনি দেয়। পূর্ণ হেঁসে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। আহত কন্ঠে রোদ শুধায়, “এরপর যাতে এই কথাটা বলতে না শুনি।”

“আচ্ছা বলো কী বলবে?”

“চলো আড্ডা দিবে।”

“আচ্ছদ চলো।”

পূর্ণ রোদের পেছন দিয়ে যায় রোদের রুমে। সবাই যেহেতু এসেছে একটা পাত্রে কয়েকটা কাগজের টুকরো রাখা আছে। একেকজন,একেকটা তুলে নিবে এবং যার কাগজে যে লেখাটা উঠবে সে, সেই লেখাটা নিয়ে দুই লাইন করে বলবে। প্রথমে তিশা একটা কাগজ উঠায়। তাতে লেখা, “ভালোবাসা” তখন তিশা হেঁসে শুধায়, “এটা সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। আমি ব্যচেলার মানুষ।”

তিশা স্কিপ করতে রোদের সিরিয়াল আসে। রোদ যে কাগজটা উঠায় তাতে লেখা, “ফাস্ট লাভ” তাকে ফাস্ট লাভ নিয়ে কিছু বলতে হবে। তখন রোদ বলে, “ফাস্ট লাভ! প্রথম ভালোবাসা যেই ভালোবাসা আমাদের কখনো সুখানুভূতি দেয় কখনো বা এক আকাশ দুঃখ উপহার দেয়। হয়ত আমাদের গল্পে প্রথম ভালোবাসা খুব একটা পূর্ণতা পায় না তবে আর যাই হোক প্রথম ভালোবাসার তুলনা হয়না। যতই বেটার কেউ জীবনে আসুক আমরা যাকে প্রথম ভালোবাসি, তার জায়গাটা কাউকে দিতে পারি না বা কেউ সহজে নিতে পারে না।”

রোদ আর বেশী কিছু বলে না। এমনিতে এসবে সে প্রচুর কাঁচা। তখন তূর্ণ একটা কাগজ উঠায়। সেটায় লেখা “প্রেম”। তূর্ণ বলে, ” প্রেম মানেই পাপ। প্রেম ফাঁসি নিয়ে অনেক প্রেমিক পাগ’ল হয়ে, বুক পকেটে প্রেমিকার একটা প্রতিচ্ছবি নিয়ে আজো নেত্রপল্লবে অঝোর ধারায় বর্ষণ নামায়। প্রেম সবাই করে কিন্তু সত্যিকারের প্রেমিকপুরুষ সবাই হতে পারে না।”
তবে আমি কখনো প্রেম নামক পাপের অন্তভূক্ত হইনি তাই তেমন জানিও না।”

“যতটুকু বলেছে বেশ বলেছো তূর্ণ ভাই।”

শূন্যের কথায় তিশা বলে, “এবার শূন্য ভাই একটা তুলবে।”

শূন্য পাত্র থেকে একটা কাগজ নেয়। সেটাতে লেখা, “অনুভব”

“অনুভব কী? জোরদমে ভালোবাসা অতঃপর ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে ভাবনায় বিভোর হওয়া। তারপর! হৃদয় কোঠায় স্বযত্নে আগলে রাখা মানুষটাকে পাওয়ার তৃষ্ণা জাগিয়ে তাকে অনুভব করা।”

থেমে,
হয়ত আরেকটু গোছানো হতো। যাই হোক প্রেম বিষায়ক আমি ওতো কিছু জানি না।”

এবার পূর্ণ একটা কাগজ তোলে। তাতে লেখা “ভালোবাসা”
“ভালোবাসা হলো পবিত্র, স্নিগ্ধ, সুন্দর ব্যপার। ভালোলাগার মানুষ হাজারটা হয় তবে ভালোবাসার মানুষ একজনই হয়। ভালোবাসা কারোর জন্য স্বার্থ হীন অনুভূতি।”

তাদের খেলা বেশীক্ষণ কন্টিনিউ হয়নি। তূর্ণর রুম দখল করে নেয় বাকীরা। পূর্ণ পাভেলকে একটু বেশী নজরে,নজরে রাখছে।

তূর্ণর রুম সাজিয়ে সেটা লক করে চাবি নিয়ে রাতের ডিনারে বসে শিকদার বাড়ীর ছেলেমেয়েরা। তাঁদের খাওয়াদাওয়া শেষ সাড়ে বারোটার দিকে রুমের সামনে জড়ো হয় সবাই। সিনথিকে একটু আগে রুমে বসিয়ো দেওয়া হয়েছে। বাইরে থেকে দরজা লক করে দিয়েছে মেহের। তূর্ণ বেশী ক্যাচাল করেনি। যা চেয়েছে তাই দিয়ে দিয়েছে। এদের সাথে কখনো তর্কে জিততে পারবে না ভালো করেই জানে।

দরজা খোলার শব্দে সিনথি পুষ্পসজ্জিত বিছানা থেকে নেত্রপল্লব স্থির করে তার বরের দিকে। তূর্ণ ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে আসে। তূর্ণকে দেখে সিনথি কিছুটা নড়েচড়ে বসে।

“চলুন নামাজ পড়তে হবে।”
নরম কন্ঠ শোনে সিনথি উঠে দাঁড়িয়ে মাথা থেকে শাড়ীর আঁচল টা ফেলে জোর দমে শ্বাস নেয়। তূর্ণ সিনথির কান্ড দেখে বলে, “আপনি ঠিক আছেন?”

“আর বলবেন না। শাড়ী পড়ে দম নিতে পারি না। তারউপর গোমটা একটা টেনে রাখা লাগে।”

“ওহ্ শাড়ী পড়ার অভ্যাস নেই।”

“চলুন নামাজ পড়বো।”

সিনথি অযু করে আসতে তূর্ণ ও অযু করে নেয়। দু’জনে নামাজ আদায় করে খাটে এসে বসে। তূর্ণ পকেট থেকে একটা বক্স বের করে সিনথির সামনে ধরে। সিনথি তাকায়। একটা ডায়মন্ডের লকেট আর এক জোড়া গোল্ডের চুড়ি। সিনথি হাত এগিয়ে দিতে তূর্ণ চুড়ি দুটে হাতে পড়িয়ে দেয়। আয়নার সামনে এসে গলায় লকেটটা পড়িয়ে দেয়। সিনথি আয়নায় চোখ রাখে। ব্লাক কালার পাঞ্জাবি পড়া তূর্ণ। ফর্সা গায়ে বেশ মানিয়েছে তাকে। সিনথি তূর্ণর দিকে তাকিয়ে বলে, “আমাদের মানিয়েছে তাই না?”

“হু!”

“ঠিক আছে এবার স্যরি বলে দিন। আমি ঘুমোতে যাবো।’

” কিসের স্যরি?”

“ওই যে গাড়ী দিয়ে ধাক্কা দিলেন?”

“ওটা তো চলে গেছে।”

“দিন আর সময় চলে গেছে কিন্তু আমার মাথা থেকে ব্যপারটা যায়নি।”

“পড়াশোনা মনে থাকে তো?”

“ওতো না।”

“ঠিক আছে মিস আনাহিতা রাহমান সিনথি আপনায় স্যরি।”

“এবার আসুন!”

“কোথায়?”

“আমার সামনে।”

তূর্ণ বোঝেনি ব্যপারটা। সিনথির মুখোমুখি দাঁড়াতে সিনথি পা উঁচু করে নিজের মুখ তূর্ণর মুখের সমান করে। তখন তূর্ণ হেঁসে বলে, ” আগে বড় হোন তারপর অন্য কিছু।”

“চুপ থাকুন না।”

কথাটা বলে তূর্ণর কপালে নিজের অধর ঠেকায়। গলা জড়িয়ে ধরে বলে, ” জামাই আমায় ভালোবাসবেন তো?”

“আপনি তো ভারী নির্লজ্জ।”

“আমি এমনই। পরপুরুষকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাইনি। খেয়েছি আমার বরকে যার উপর আমার হক আছে।”

“ঠিক আছে মিস সিনথি।”

“আর সিনথি বলবেন না। বলবেন মিসেস আহিয়ান শিকদার তূর্ণ। বুঝলেন?”

“বুঝলাম।”

সিনথি তূর্ণকে ছেড়ে খাটের উপর বসে। তূর্ণ বসতে সিনথি আবদার করে, ” শুনুন?”

“বলো?”

“আমায় আপনার বুকে স্থান দিবেন?”

“আপনি না বললেন আপনার হক। তাহলে অনুমতি কেনো নিচ্ছেন? ”

” হক বুঝলাম তাও আপনি ডিস্টার্ব হলে।”

“পাগ’ল মেয়ে একটা।”

“এই আমায় পাগ’ল বলবেন না।”

“ঠিক আছে মিস সিনথি।”

“আবার?”

তূর্ণ জবাব দেয়না। উঠে লাইট অফ করে নিজের জায়গায় গা এলিয়ে দেয়। তূর্ণর বুকে মুখ লুকাতে সিনথিও আর দেরী করেনি। তূর্ণ স্বযত্নে তার অর্ধাঙ্গিনীকে আগলে নেয় বুকের মধ্যখানে।

★★★

পরের দিন সকালে লিভিং রুমে বসে ছিলো সবাই। রোদ সবার জন্য চায়ের ক্যাটলি নিয়ে আসে। মেহের চায়ের কাপ নেয়। দুজন মিলে সবাইকে চা পরিবেশন করে। সিনথি পূর্ণ পাশাপাশি সোফায় বসা। দু’জনে কথা বলছে। তখন আবার তূর্ণ আসে। মেহেরের থেকে চায়ের কাপ নিয়ে তূর্ণ বসে পড়ে। তার পাশে শূন্য বসা। তূর্ণ কে খুঁচিয়ে বলে, ” উহুম কেমন কাটলো বাসর? স্যরি বলেছো তো? নাকী দু’জন মিলে ঝগড়াই করেছো? ”

“এই মেয়েটা কী যে ঝগড়ুটে। যাই হোক কীভাবে জানি অধিকার আদায় করে নেয়।”

“এটাই ভালো। প্রাক্তনকে ভুলতে পারবে সহজে।”

“প্রাক্তন কে?”

“যে এখন চা পরিবেশন করছে।”

“সে আমার প্রাক্তন হলো কীভাবে? তার সাথে কী আমার ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো? উঁহু! তাকে আমি ভালোবেসেছি, ভালোবাসার সম্পর্ক গড়িনি।”

“যেই লাউ সেই কদু।”

“না বুঝলে কথা বলবি না।”

তেজী স্বরে বলে তূর্ণ।

#চলবে

আগের পার্টের লিংক,
https://www.facebook.com/share/p/2ufvn6yKkdEFNXW3/?mibextid=oFDknk

আমার গ্রুপ লিংক,
https://www.facebook.com/groups/582123563029858/?ref=share_group_link

শার্লিনের আইডির লিংক,
https://www.facebook.com/profile.php?id=100076559331822&mibextid=ZbWKwL

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here