#এক_ফালি_প্রণয়|২২|
#শার্লিন_হাসান
“আমার প্রাক্তন হলো কীভাবে? তার সাথে কী আমার ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো? উঁহু! তাকে আমি ভালোবেসেছি, ভালোবাসার সম্পর্ক গড়িনি।”
“যেই লাউ সেই কদু।”
“না বুঝলে কথা বলবি না।”
তেজী স্বরে বলে তূর্ণ। শূন্য আর কথা বাড়ায়না। সকালের নাস্তা শেষ করে রোদ,মেহের,তিশা তারা সিনথিকে নিয়ে তৈরী হতে চলে যায়। আজকে ওদের বৌভাতের অনুষ্ঠান।
সিনথি শাওয়ার নিয়ে বের হতে তূর্ণ রুমে প্রবেশ করে। তূর্ণর এমন আগমনে সিনথি অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। গায়ে তার ওরনা নেই। তূর্ণ দৃষ্টি নিচের দিকে স্থির করে শুধায়, “টেবিলের উপর আমার ফোনটা একটু যদি দিতেন।”
“আপনি করে বলছেন কেন? তুমি করে বললে ফোন পবেন নাহলে নাই।”
“আপনার দিতে হবে না আমি নিয়ে নিচ্ছি।”
“এখন বোনেরা চলে আসবে। দেখুন আমাদের এভাবে দেখলে ভাববে আপনি আদর করতে এসেছেন। ছিহ রাত পড়ে আছে আর আপনি দিনের বেলায়….
“মুখ সামলে কথা বলুন।”
কথাটা বলে তূর্ণ নিজেই ফোন নিয়ে বেরিয়ে যায়। সিনথি সোফায় বসে,বসে তূর্ণকে বকেই যাচ্ছে। তার বরটা এমন কেন? তাকে কেমন এড়িয়ে চলে?
কিছুক্ষণ পর মেহের আর তিশা আসে সিনথির কাছে। সিনথির গোমড়া মুখ দেখে তিশা জিজ্ঞেস করে, “ভাইয়ার সাথে ঝগড়া হয়েছে?”
“আরে না। এমনিতে!”
প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য সিনথি পুনরায় শুধায়, “চলো রেডি হবো।”
রোদ আসতে তারা তিনজন সিনথিকে শাড়ী পড়তে,সাজতে হেল্প করে। সিনথিকে রুমে বসিয়ে দিয়ে নিজেরাও তৈরী হতে চলে যায়।
পূর্ণ তূর্ণকে তৈরী হওয়ার জন্য পাঠিয়েছে। বাকীটা সে সামলে নিবে। রুমে প্রবেশ করতে দেখে সিনথি বসে আছে। তূর্ণ নিঃশব্দে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।
বাইরে দৃষ্টিপাত করছে সিনথি। তূর্ণ কেমন জেনো? আচ্ছা তূর্ণর কী কোন বিষয়ে প্রব্লেম আছে? মুখটা এমন করে রাখে জেনো তাকে জোর করে ধরে বেঁধে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। কথার মধ্যে এক্সট্রা তেজ তো থাকবেই।
রুমে কেউ কারোর সাথে কথা বলেনি। বাইরে আসার পরেও কেউ কারোর দিকে ফিরেও তাকায়নি। জেনো মূহুর্তে সাপে নেউলে সম্পর্ক তৈরী হয়ে গেছে। পাহাড় সমান ইগো নিয়ে তারা নিজেদের মতো করে সবার সাথে কথা বলছে। ভাগ্যিস বিয়ে দিয়েছে ইগো দেখালেও সমস্যা নেই। দিন শেষে একে অপরের জন্য থেকে যেতে হবে। যদি প্রেম হতো তাহলে দুই মিনিট ও টিকতো না।
সিনথিদের পরিবারের মেহমানদের সাথে তূর্ণ, পূর্ণ কথা বলছে। পাভেল তার বেয়াইনদের সাথে ফান করছে। ফটোশুট, খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ হতে সিনথির সাথে যাওয়ার জন্য তূর্ণকে বলা হয়। পূর্ণর মুখের উপর না করে দেয় তূর্ণ। সে যাবে না ওই ত্যাড়া, ঝগড়ুটে মেয়ের সাথে্। তখন পূর্ণ বলে, “না গেলে খারাপ দেখায়। দেখো আজীবন আবার না খোঁটা শোনতে হয়।”
“মা যে কী দেখে ওই ঝগড়ুটে মেয়েকে আমার বউ করার ইচ্ছে পোষণ করলো। ও আমার পিওর উল্টা। কেমনে কী ভাই?”
“চলো তো!”
পূর্ণ তূর্ণকে টেনে নিয়ে যায়। সিনথি দাঁড়িয়ে, দাঁড়িয়ে তূর্ণর মনোভাব বোঝার চেষ্টা করছে। ভুলবশত তূর্ণ, সিনথির চোখাচোখি হতে সিনথি মুখ বাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। তূর্ণর মাথায় জেনো দপ করে আগুন ধরে যায়। ভাগ্যিস কেউ দেখেনি মুখ বাকানোর সীন।
তূর্ণ, সিনথি এবং মেহমানদের বিদায় দিয়ে বাড়ীতে আসে সবাই। মাইশা,পাভেল তারা সবাই চলে যাবে সন্ধ্যায়। এদিকটা অবসর হতে বাকীরা মিলে আড্ডা দিতে বসেছে। তখন শূন্য বলে, “আজকে সিনথি ভাবী তূর্ণ ভাইকে যে মুখ বাঁকিয়েছে। তোমরা কেউ দেখলে হাতে,হাসতে সেখানে লুটিয়ে পড়তে।”
“কীভাবে মুখ বাকিয়েছে শূন্য ভাই?”
মেহেরের কথায় শূন্য সিনথিকে কপি করে মুখ বাকায়। তাতে একবার হাসির রোল পড়ে যায়। তখন পূর্ণ বলে, “তোমার অভিনয় হয়নি। সিনথি ভাবী একরকম ভাবে মুখ বাকায়। তারটা নোবেল প্রাপ্ত!”
★★★★
সিনথিরা বাসায় এসেছে সন্ধ্যা নাগাদ। আফিয়া ইসলাম মেয়ের জামাইকে আপ্পায়ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সিনথি রুমে এসে চেন্জ করে থ্রি-পিস কায়ায় জড়িয়ে নেয়। তূর্ণ বসে আছে। তার সাথে তার শালিকারা ফান করেছে। কিন্তু তূর্ণর এসবে মনোযোগ নেই। তূর্ণকে আনমনা দেখে লারা শুধায়, “জিজু দেখি আমাদের বোনকে দেখার জন্য ব্যকুল। রিসিপশনে দেখেননি বউকে?”
“ওকে দেখার জন্য না। আমার একটা কল করতে হবে।”
“তাহলে সিনথির রুমে চলে যান।”
কথাটা বলে লারা রুম দেখিয়ে দেয়। তূর্ণ উঠে সিনথির রুমের দিকে যায়। দরজার দিয়ে ঢুকার সময় সিনথি অপরপাশ থেকে তাড়াহুড়ো আসছিলো, যার ফলস্বরূপ দুজনের জোরে ধাক্কা লাগে। ধাক্কা খেয়ে রুমে প্রবেশ করে দরজা লক করে দেয় তূর্ণ। সিনথি নিজের কাঁধ ঢলছে।
“দেখেশুনে চলতে পারেন না? নাকী এখনোও দোষটা আমাকেই দিবেন যে আমার জন্য ধাক্কা খেয়েছেন?”
“আপনাকে কে বলেছে দৌড় দিতে?”
“আপনাকে কে বলেছে এই মূহুর্তে প্রবেশ করতে। আমি বের হলে তারপর নাহয় রুমে প্রবেশ করতেন। ঝগড়া ও হতো না, আপনিও শান্তিতে থাকতে পারতেন।”
তূর্ণ জবাব দেয়না। সে ফোন হাতে সোজা বেলকনিতে চলে যায়। সিনথি কন্ঠে দ্বিগুণ তেজ নিয়ে বলে, “এমন জামাইয়ের ভাত আমি খাবো না। ডিভোর্স দিয়ে দিবো।”
তূর্ণ কথাটা শেষ করে রুমে প্রবেশ করে। সিনথি খাটের উপর বসে আছে মুখ গোমড়া করে। তখন তূর্ণ তার সামনে একটা টুল এনে বসে। সিনথির এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে শীতল কন্ঠে বলে, “দেখুন সিনথি মাত্র তো বিয়েটা হয়েছে। আমাকে একটু সময় দিন সব ঠিক করে নেওয়ার জন্য। আই প্রমিস আমার সব ঠিক হলে আপনায় আর ইগনোর করবো না।”
“আপনার কী হয়েছে?”
“কিছু হয়নি! যদি থেকে যান তাহলে একসময় হলেও সব বলবো আপনায়।”
“ঠিক আছে।”
“আচ্ছা স্যরি।”
“ইট’স ওকে।”
তূর্ণ উঠে দাঁড়ায়। ফোনটা খাটের উপর রেখেই সে চেঞ্জ করতে চলে যায়। সিনথি লিভিং রুমে এসেছে। তখন তার এক কাজিন, লিয়ানা বলে, “কীই জিজু কেমন ভালোবাসা দিলো? এমাহ সে কী তাড়া তার বউকে দেখার জন্য।”
“লজ্জা করেনা আমার মতো ছোট মেয়েকে এসব বলতে।”
“এ্যাই ছোট মেয়ে হলে বিয়ে দিলো কেন তোকে?”
“আমার শখ বিয়ে করার, তাই শখ পূরণ করতে বিয়ে দিয়েছে।”
“জামাই ভালো তো সখি?”
লারার কথায় সিনথি মেঝেতে দৃষ্টি স্থির করে। কন্ঠে জড়তা নিয়ে বলে, ” সে ভালো! আমার জামাইকে দেখলে কী খারাপ মনে হয়?”
“সেটা না! কেমন জেনো অন্যমনস্ক উনি। তোর সাথেও কী সেম?”
“কোথায় অন্য মনস্ক ভাই? পরনারীতে ওনার আবার এলার্জি আছে নাহলে আমার সাথে সব ঠিকঠাকই আছে।”
কথাটা শেষ করে সিনথি চলে যায় কিচেনে।
★★★
রোদের আজকাল কারোর সঙ্গে নিজেকে হাসিখুশি মনে হয়। ওই সঙ্গটা পূর্ণর সঙ্গ! আজব! পূর্ণর সাথে এতো তাড়াতাড়ি ভাব জমাটা উচিত হয়নি বোধহয়। এখন অব্দি পূর্ণর মনোভাব কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি রোদ। কিন্তু মনটা যে বড়ই অবাধ্য। রোদ নিজেকে ধাতস্থ করে। মনকে কঠিন ভাবে শাসায়। “রোদ পূর্ণ হয়ত তোর ভালো চায় না। আর ভালো চাইলেও তোকে চায় না। ওকে ভালোবাসার কোন মানে হয়না! ওর প্রতি নিজের অনুভূতি আনার ও কোন মানে হয়না।”
তখন তিশা আসে রোদের রুমে। তাকে নিয়ে ছাঁদের দিকে যায়। দু’জনে কথা বলছে এরই মাঝে আগমন ঘটে পূর্ণর। তিশা ফোনে ব্যস্ত হতে, রোদ পূর্ণর কথা শুরু হয়ে যায়। কথার কথা পূর্ণ বলে বসে, “আচ্ছা রোদ কখনো যদি শোন তোমার ইন্ডাস্ট্রি বাঁচানোর জন্য কিংবা তোমাকে বাঁচানোর জন্য কেউ তোমায় ঠকালো তাহলে কী তুমি তাঁকে ভুল বুঝবে?”
“এমাহ্! এটা কেমন কথা? আমাকে বাঁচানোর জন্য আমায় ঠকাবে কীভাবে?”
“সে তুমি বুঝবে না। তবে হ্যাঁ তুমি ভীষণ ভালো এবং লয়্যাল একজন মেয়ে। সহজে তোমার প্রেমে পড়াই যায় তবে তোমাকে বলবো ভুল কাউকে মনে স্থান দিও না। ভালো থাকতে পারবে না।”
“রোদ ছোট না সব বুঝে।”
“বুঝেশুনে আবার আগুনে পা দিও না। ঝলসে যাবে পা, সহ্য করতে পারবে না। তখন তোমার পুড়ে যাওয়া পায়ের ক্ষতটা দেখতে আসার মতো পরিস্থিতি হয়ত আমার থাকবে না।”
পূর্ণর কথাগুলো রোদ আমলে নেয়নি। সে ভালো করেই চিনে পূর্ণকে। মানুষকে কনফিউজড করে নিজেকে রহস্যমানব করে রাখতে তার ভালো লাগে। রোদ হাসে! পূর্ণ রোদের হাসিতে দৃষ্টি স্থির করে। পূর্ণর কল আসতে সাইডে চলে আসে সে।
রোদ তিশাকে নিয়ে ছাঁদ ত্যাগ করে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে,নামতে তিশা বলে, ” রোদ প্রেমে পড়লি নাকী?”
“কার প্রেমে?”
“আমার ভাইয়ের।”
“আরে না!”
“শোন, প্রেম কখন কার প্রতি হয়,কার সাথে হয় বলা যায় না। এটার কন্ট্রোল করার ক্ষমতা হয়ত সৃষ্টিকর্তা আমাদের দেয়নি। যে কোন মূহুর্তে যে কাউকে ভালো লাগতে পারে। এমনকি তাকে মনে স্থান দিতে তখন ওতো ভাবা লাগে না কারণ আমরা তার প্রেমে পড়েছি তো!”
“ওই রকম কিছু না।”
“তুই চেঞ্জড রোদ। শুধু তুই না পূর্ণ ভাই,তূর্ণ ভাই ও চেঞ্জড।”
#চলবে
(দ্রঃ আর কয়েকটা পার্ট অপেক্ষা করুন তারপর কাহিনী পুরো বুঝবেন। তবে আমায় কেউ গা’লি দিবে না প্লিজ।)
আগের পার্টের লিংক,
https://www.facebook.com/100077548442342/posts/455278373733774/?app=fbl
আমার আইডির লিংক,
https://www.facebook.com/profile.php?id=100076559331822