#এক_ফালি_প্রণয়|২০|
#শার্লিন_হাসান
ভাবতে,ভাবতে ফুলের দোকানে চলে আসে তূর্ণ। পূর্ণর বলা ফুল নিজে পছন্দ করে নেয় তূর্ণ। এক গাদা ফুল নিয়ে, দরকারি কাজ সেরে শিকদার বাড়ীর উদ্দেশ্য রওনা হয়।
তখন সিনথির মেসেজ আসে,
” পাত্তা দিচ্ছেন না আমি কে! আগামী কালকে বোঝাবো শিওর।”
“আগে ভদ্র হোন তারপর!”
“আমি যথেষ্ট ভদ্র!”
“সেজন্য ফুলসজ্জার কথা পাবলিক প্লেসে বলতে হয়। বুঝেছি কেমন আর ভদ্র হবেন।”
“আমি আপনার হবু বউ।”
“তো?”
“তো আগামী কালকে বলছি।”
কথাটা বলে সিনথি বেড়িয়ে যায় কাইন থেকে। তূর্ণ আর রিপ্লাই করে না। বাড়ীতে এসে ফুলগুলো পূর্ণর হাতে ধরিয়ে দেয় তূর্ণ। পূর্ণ সেগুলো নিয়ে রোদের রুমে যায়। সেখানে তিশা,মেহের,শিশা তারা সবাই আছে। পূর্ণ কে দেখে রোদ একগাল হাসে। পূর্ণ নিজেও হেঁসে রোদের হাতে ফুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে বলে, ” ফুলগুলো কিন্তু তাজা।”
“ধন্যবাদ পূর্ণ ভাইয়া।”
কথাটা বলে রোদ তিশাদের কাছে আসে। মেহের,তিশাকে দেয় গহনা বানাতে। ততক্ষণে পূর্ণ প্রস্থান করেছে। তখন শিশা বলে, ” তুমি ভালোই মনে করেছ আপু। আমার ও কাচা ফুলের গহনা ভীষণ পছন্দের কিন্তু মনে ছিলো না।”
“আরে এটা পূর্ণ ভাইয়ার আইডিয়া। আমার ও মাথায় ছিলো না।”
রোদের কথায় তিশা শুধায়, ” বললাম না পূর্ণ ভাইয়া এক কাঠি উপরে। সবকিছুর খেয়াল রাখতে পারে যদি তার মর্জি ভালো হয়।”
“তোর পূর্ণ ভাই আর পূর্ণ ভাইয়ের মর্জি নিয়ে গত দশবছরে শুনে আসছি। বেডার মর্জি কী এখনো ঠিক হয়নি?”
মেহেরের কথায় তিশা মুখ বাঁকিয়ে বলে, ” আমার ভাই তো ব্যস্ত মানুষ। কত কিছুই ফেস করছে,করতে হয়। আর ও এমনই ভাই।”
“যত্তসব ঢং!”
মেহের ও মুখ বাঁকিয়ে বলে। তাঁদের গহনা বানানো হতে রেডি হতে চলে যায়। শারোরার সাথে কাঁচা ফুলের গহনা। সবাই বেশ সুন্দর সেজেছে।
তূর্ণ রেডি হয়ে স্টেজে বসে। তার চারপাশে মানুষের গিজগিজ। পাভেলের সাথে টুকটাক কথা বলছে তূর্ণ।বেশ সুন্দর সময় কাটছে। এরই মাঝে রোদ আসে সেখানে। তূর্ণর দৃষ্টি যেতে তড়িঘড়ি সরিয়ে নেয়।
“ আমার হারিয়ে যাওয়া, একটা চাঁদের মাঝে শুভ্র ফুলের স্নিগ্ধতা! বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকার যে দৃষ্টিশক্তি নেই রোদপাখি।”
তখন আবার পূর্ণ আসে রোদের পেছন দিয়ে। মাইশার বর আর দেবর ও এসেছে। পাভেল তূর্ণর সাথে কথা বলছে। তবে রোদকে দেখে সে চলে আসে। রোদের সামনে গিয়ে শুধায়, “আরে সুন্দরী বেয়াই….
” রোদ চলো তূর্ণ ভাইয়ার কাছে।”
মাঝখানে পূর্ণ রোদের হাত ধরে কতাটা বলে। রোদ কিছু বলার আগে টেনে নিয়ে যায়। পাভেল রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে পূর্ণর দিকে। রেগে সে সাইডে গিয়ে বসে রয়। তখন আবার শূন্য কলে কারোর সাথে বেশ মিষ্টিসুরে আলাপ করছে। কথা গুলো কানে বাজতে পাভেলের রাগ হয় বেশী।
” এটা কী হলুদের অনুষ্ঠানে আসলাম নাকী কাপলের প্রেম দেখতে? ওইদিকে গেলাম তাও পাত্তা নাই। এদিক আসলাম কানের উপর প্রেমের আলাপ চলছে।”
তখন শূন্য কল কেটে পাভেলের পাশের চেয়ারটায় বসে। তখন পাভেল বলে,
” আচ্ছা এই রোদ তোমার কী হয় শূন্য?”
“আমার একমাত্র ফুফির একমাত্র মেয়ে।”
“তা তোমার ফুফি কই থাকে? মেয়েকে কী দেখে রাখে না। দেখে কীভাবে কাজিনদের সাথে ঢলাঢলি করছে।”
“মুখ সামলে কথা বলো পাভেল। গেস্ট বলে ভেবো না আমাদের রোদের নামে কিছু বলবা আর পার পেয়ে যাবা। ভাগ্য ভালো আমার সামনে বলেছো। পূর্ণ ভাই বা তূর্ণ ভাইয়ের সামনে এটা বললে এতোক্ষণ তোমার খবর করে দিতো।”
“কেন ওরা রোদকে নিয়ে এতো এলার্ট ক্যান?”
” ওটা ওদের দায়িত্ব।”
পাভেল কিছু বলেনি।
স্টেজে রোদ তূর্ণর পাশে বসে। গোলাপে হলুদ লাগিয়ে সেটা তূর্ণর হাতে ছোঁয়ায় রোদ। তূর্ণ রোদের কান্ড দেখছে। তার অপরপাশে পূর্ণ বসে ফোন স্ক্রোল করছে। কয়েকটা পিকচার ক্লিক হতে রোদ,পূর্ণ নেমে যায়। তিশা,শিশা,মেহের,মাইশা সহ তারা সবাই মিলে পিকচার তোলে।
রোদ ফাঁকা জায়গা দেখে একপাশে চেয়ার টেনে বসে। পাভেলের দৃষ্টি রোদের দিকে। সে তো সুযোগ খুঁজছে। পূর্ণ কেও খুজছে পাভেল। সে কলে কথা বলায় ব্যস্ত। পাভেল পূর্ণকে স্ক্রোল করে। বেশ হেঁসে, হেঁসে কথা বলছে। পাভেল আর দেরী করেনি। চটজলদি রোদের কাছে যায়। পাশের চেয়ারটা বসতে,বসতে বলে, ” ইউ লুকিং সো গর্জিয়াস!”
রোদ পাশে ফিরে তাকায়। পাভেলকে দেখে আর কিছু বলেনি। তখন পাভেল বলে,
” তুমি ভার্সিটিতে পড়ো?”
“জ্বী অনার্স সেকন্ড ইয়ার।”
” এখানেই থাকা হয়?”
“হুম।”
পাভেল কিছুক্ষণ কথা বলে রোদের সাথে। রোদ ও বেশ শান্তশিষ্ট ভাবে উত্তর দেয়। পাভেল কথা বলে বুঝেছে মেয়েটা বেশ শান্তশিষ্ট এবং ভদ্র সূলভ। কোন উত্তেজনা নেই তার মাঝে। কী নিরব কন্ঠে কথাগুলোর জবাব দিলো।
মেহের,তিশা, শিশা ও আসে রোদের কাছে। শূন্য,পাভেল ও আছে। তারা সবাই বেশ মজা করে। মূহুর্তে পাভেল মিশে যায় ওদের সাথে। তার মনে পজিটিভ ধারণা আসে রোদকে নিয়ে। তারা সবাই বেশ মিশুক পাভেল বুঝে। এতদিন বুঝতো শুধু পূর্ণর জন্য সাইড পায়না সে।
তখন সিনথি রোদের ফোনে কল দেয়। রোদ রিসিভ করে কথা বলে। কিছুক্ষণ কথা বলে রোদ শুধায়, ” অনেক তো হলো আমাদের সাথে কথা। এবার আমাদের ভাইয়ের সাথে কথা বলো ভাবী।”
“না বলবো না রোদ আপু। তোমাদের ভাই আস্ত করলার জুশ। মানে আমি যে তার উডবি তার কাছে কোন প্রায়োরিটি নেই।”
“আরে কুল! আমাদের ভাই অনেক ভালো। হয়ত কোন কারণে সে ডিস্টার্ব। ঠিক হয়ে যাবে আস্তে,আস্তে।”
“ঠিক আছে।”
রোদ উঠে যায়। তূর্ণ র কাছে আসতে তূর্ণ জিজ্ঞেস করে, ” কিছু বলবা রোদ?”
“ভাবী কল দিয়েছে। কথা বলো?”
তূর্ণ রোদের থেকে ফোন নেয়। তবে অপরপাশে সিনথি কে দেখেনি। তার দুই জন কাজিন একসাথে বলে, “কী জিজু! ভেবেছেন আমাদের বোনকে ফ্রিতে হলুদের সাজে দেখে নিবেন? উঁহু! নতুন বউ দেখতে হলে মান দিতে হবে।”
“ইশশ! আমার বউ আমি দেখবো এতে মান দিবো কেন?”
” এখনো হয়নি। আগামী কালকে বিয়ে হওয়া অব্দি আমাদের অধিকারে। বিয়ে হয়ে গেলে আপনার বউ তখন যা খুশি তা। কিন্তু এখন আমাদের বোন সো আমরা যেভাবে বলবো সেভাবে।”
“ঠিক আছে তাহলে আগামী কালকে বিয়ের পর দেখা করবেন।”
“এমাহ্! আপনি বউকে দেখবেন না?”
“হ্যাঁ দেখবো তো!”
“এ্যাই নিরব বিকাশ নাম্বার সেন্ড কর জিজুর হোয়াটসঅ্যাপে। কলে থেকেই লারা কথাটা বলে। তূর্ণ মুচকি হাসে। শূন্যকে ডেকে এনে নাম্বার টা দেয় তূর্ণ। তখন তূর্ণ শুধায়, ” তা মান কী আমার ইচ্ছায় দেবো নাকী শালিকাদের দাবিতে?”
“দিন না হাজার দশ এক! একটা রেস্টুরেন্টে সৈন্যবাহিনী নিয়ে যেতে পারলেই হবে।”
তখন শূন্য শুধায়, ” বেয়াইন এই আইডিয়াটা আগে দিতে পারলেন না। তাহলে আমাদের ভাইকেও আমরা সেম ভাবে দেখাতাম।”
“আপনারা নতুন আইডিয়া খুঁজুন ভাইয়া।”
শূন্য টাকা পাঠায়। তখন সিনথিকে ব্যাক ক্যামেরায় দেখায় তার কাজিন কারা। তূর্ণ তাকায়। তেমন ভাবে খেয়াল করেনি মেয়েটাকে। তবে এখানেও তেমম স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। ওইভাবে কিছুক্ষণ সিনথিকে দেখে বিদায় নেয় তূর্ণ। রোদের হোয়াটসঅ্যাপে সিনথির পিক পাঠিয়েছে। তূর্ণ একনজর দেখে। পরক্ষণে শূন্যকে দিয়ে ফোন পাঠিয়ে দেয় রোদের কাছে।
***********
পরের দিন সবাই বেশ সময় নিয়েই রেডি হয়। নির্দিষ্ট সময়পর মধ্যেই তারা সবাই রওনা হয় সিনথিদের বাসার উদ্দেশ্যে।
শিকদার পরিবারকে সুন্দর ভাবে ফ্লাওয়ার দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। বিয়েটা আনুষ্ঠানিকতা থাকলেও অল্প মানুষের মধ্যেই। সিনথিদের ও তেমন আত্নীয় স্বজনের ভেজাল নেই। বেশ ছোট্ট পরিবারেই আত্নীয় করেছে তূর্ণর।
পুরো লিভিং রুমেই সুন্দর করে ডেকোরেশন করা হয়েছে। দু’টো সোফা রাখা হয় দুইপাশে। মাঝখানে তাজা ফুলের পর্দা টানানো হয়। সিনথিকে লাল টুকটুকে শাড়ী,দোপাট্টা দিয়ে বউ সাজিয়ে আনা হয়। মেয়েটাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। কিছুক্ষণ পর হুজুর বিয়ে পড়িয়ে দুই হাত এক করে দেন। অবশেষে তূর্ণ কবুল বলে হালাল ভাবে কাউকে গ্রহণ করলো। সবাই বেশ খুশিতে আছে। বর,বউ দুজনকে পাশাপাশি বসানো হয়। তূর্ণর শালিকাগন আয়না দেয়। সিনথি,তূর্ণ দু’জন দু’জনের সাথে তেমন ভাব জমেনি বা তেমন করে চেনা হয়নি। সিনথি আয়না তাকিয়ে তূর্ণর ফর্সা মুখটার দিকে তাকায়। তখন রোদ বলে, ” ভাবী আয়নায় কী দেখো?”
“আমার শাশুড়ীর বড় ছেলে এবং আমার আম্মুর একমাত্র মেয়ের বর’কে দেখি।”
তূর্ণ তাকিয়ে আছে আয়নায়। তখন লারা বলে, ” আমাদের জিজু আয়নায় কী দেখো? ”
“আকাশের চাঁদ কীভাবে মাটিতে নেমে আসলো।”
তূর্ণর থেকে এমনটা ধারণার বাইরে রেকেছিলো সিনথি। ভেবেছিলো বলবে, ঝগড়ুটে,বাচাল। কিন্তু না এই লোক ওতোটাও খারাপ না। তবে হয়ত হাসবেন্ড ম্যাটেরিয়াল!
গতকাল হলুদে তূর্ণর কথা আর আজকের তূর্ণর কথাগুলো শোনে সিনথির মনে হচ্ছে তূর্ণকে সে যতটা দেমাগী ভেবেছে বা মানুষকে দাম দেয়না এমন টাইপের ভেবেছে তার সম্পূর্ণ আলাদা। হয়ত! দায়িত্ব বান পুরুষেরা কী কখনো ওইরকম দেমাগী হতে পারে?
সবাই মাশাআল্লাহ বলে। শারমিন আঞ্জুম পুত্রবধুকে বেশ আদর সোহাগ করলেন। কপালে চুমু, হাতে চুমু খেয়ে বলেন, ” এই মিষ্টি,লক্ষী মেয়েটা আমার ছেলেটাকে একটু ভালোবেসে আগলে রেখো।”
“রাখবো আম্মু।”
শারমিন আঞ্জুমের হাতের উপর হাত রেখে কথাটা বলে সিনথি। তার ছোট শাশুড়ীর সাথেও কথাবার্তা বলে। সবাই মিলে পিকচার তোলে।
আফিয়া ইসলাম একমাত্র মেয়েকে বিদায় দিবেন ভাবতে জেনো তার সব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। সিনথির আর কোন ভাই বা বোন নেই। সেই একমাত্র মেয়ে। ভীষণ আদুরে! তবুও তো মেয়ে মানুষ যতই আদরের হোক পরের ঘরে যেতেই হবে। এটাই যে প্রকৃতির নিয়ম। তনে আফিয়া ইসলাম এটা ভেবে খুশি যে, শারমিন আঞ্জুম,সাইখা ইসলাম এমনকি তাদের মেয়েরাও বেশ মিশুক এবং ভদ্র। তার মেয়েকে ভুল কোথাও বিয়ে দেননি। তূর্ণ ও বেশী ভদ্র,নিরব শান্ত ছেলে।
#চলবে
আমার গ্রুপ লিংক,
https://facebook.com/groups/582123563029858/
আমার পার্সোনাল আইডির লিংক,
https://www.facebook.com/profile.php?id=100076559331822
গল্পের আগের সব পার্টের লিংক,
https://www.facebook.com/100077548442342/posts/451459694115642/?app=fbl