#এক_ফালি_প্রণয়|৫|
#শার্লিন_হাসান
পরের দিন সকালে তূর্ণর মামু আসে শিকদার বাড়ীতে। সাথে আসে তূর্ণর কাজিন মেহের। তূর্ণ সবে অফিসের জন্য রেডি হয়ে নিচে এসেছে। বাকীরাও নিজেদের গন্তব্য যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে এসেছে। মেহের তূর্ণকে দেখে সালাম দেয়। তূর্ণ সালামের জবাব দিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে। সাইখা ইসলাম মেহেরকে দেখে ভীষণ খুশি হোন। মেহেরের বড় বোন মাইশার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। সেটারই ইনভাইট দিতে এসেছে একমাত্র বোনের বাড়ীতে মাহতাব হোসাইন। শারমিন আঞ্জুম ভাইকে দেখে ভীষণ খুশি হোন। এক ভাই এক বোন তারা। সবাই মোটামুটি লিভিং রুমে উপস্থিত ছিলো। পূর্ণ,রোদ প্রায় সেম সময়ে লিভিং রুমে উপস্থিত হয়। তখন তূর্ণ পূর্ণর পিঠে চাপড় মেরে বলে, “দেখ আজকাল টাইমিং ও সেম হয়ে যাচ্ছে তোদের। যাই হোক বিহেভিয়ার টা ঠিক করে নিলেই হবে।”
“আরে ইয়ার এই সামান্য বিষয়টা ও দেখা লাগে?”
“তো কী আর করার?”
” পরের বউকে নিয়ে আমার ওতো মাথা ব্যথা নেই।”
তখন তূর্ণ শুধায়,
“রোদকে নিয়ে এতো মাথা ঘামাচ্ছি কেন আমরা?”
প্রতিত্তোরে পূর্ণ বলে,
“হয়ত মেয়েটা সুন্দরী।”
“কেন রে ভাই? আমরা কী সুন্দর বলে ওকে নিয়ে গসিপ করি?”
“ধুর দেখো মেহের এসেছে। আমাদের মামুর প্রিটি গার্ল।”
” আসলেই প্রিটি বাট আ’ম নট ইন্টারেস্টেড ইন হিম।”
“গুড।”
তাঁদের কথপোকথনের মাঝে নাস্তা খাওয়ার পাঠ চুকে যায়। সবাই সোফায় বসে আছে। শূন্যর বাবা শরীফ শিকদার ও উপস্থিত আছেন। পূর্ণ,তূর্ণর মাঝেই মেহের বসা। পাশে তিশাও আছে। তখন পূর্ণ বলে, “মাইশার বিয়েটা কবে?”
“এই আগামী কালকে ডেট ফিক্সড হবে।”
“তাহলে কী সবাইকে নিয়ে চলে যাবো?”
“তোমাদের সময় সুযোগ বুঝে। আমি তো চাই রোদ,তিশা,শিশা আজকেই চলে আসুক।”
“সে নাহয় যাবে।”
পূর্ণর কথায় কেউ আর কিছুই বলেনা। তূর্ণ,শূন্য তারা বিদায় নিয়ে অফিসের কাজে চলে যায়। পূর্ণ আজকে তেমন কাজ নেই সে বাড়িতেই থাকবে। মাহতাব হোসাইনের সাথে খোশগল্পে মেতে উঠে সাথে মেহের ও আছে। তার চাচ্চুও তূর্ণদের সাথে অফিসে চলে গেছে। তখন আবার সাইখা ইসলাম ফোন হাতে তাদের কাছে আসে৷ পূর্ণকে দেখে বলে, “আগামী মাসে তো বড় ভাইয়ার মৃ’ত্যু বার্ষিকী।”
মূহুর্তে পূর্ণর চেহারার রং পাল্টে যায়। আজকের মুড টা সুন্দর ছিলো। রোদের প্রতি একটু সফট কর্ণার কাজ করছিলো। কিন্তু এই মূহুর্তে রোদকে খু’ন করতে পারলে পূর্ণর শান্তি লাগতো। কথা ছিলো আজকে তার মামু বাড়ীতে তার বোনদের নিয়ে যাবে। কিন্তু এই মূহুর্তে সবটাই চেন্জ। রোদ যাবে এটার জন্য পূর্ণ বিয়েতেই এটেন্ড করবে না। তখন মাহতাব হোসাইন শুধায়, “হ্যাঁ আগামী মাসেই তো দুলা-ভাইয়ের মৃ’ত্যু বার্ষিকী। সমস্যা নেই বিয়েটা এর আগেই সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।”
“আচ্ছা তোমরা থাকো আমি আসছি।”
কথাটা বলে পূর্ণ উঠে চলে আসে। সাইখা ইসলাম বুঝেছে পূর্ণ কথাটা পছন্দ করেনি। কিন্তু এতে দোষের কী? দুইদিন পর হলেও কথাটা উঠতো তাদের মাঝে। পূর্ণকে বুঝেনা সাইখা ইসলাম। ছেলেটার মাথায় কী ঘুরে সেটাও ক্যাচ করতে পারে না।
মেহের,তিশা,রোদ মিলে খোশগল্পে মেতে উঠেছে তিশার রুমেই। মোটামুটি ভালোই আড্ডা দিচ্ছে তারা। তখন পূর্ণ তিশার রুমে প্রবেশ করে তিশাকে উদ্দেশ্য করে বলে, “আমার ব্লুটুথ কে নিয়েছে?”
তখন তিশা শুধায়,
“আমি এনেছিলাম ভাইয়া।”
“এখন আর লাগবে তোমার?”
“তূর্ণ ভাইয়ার কাছে তোমারটা।”
“তো এখন আমি কী করবো? তূর্ণ ভাই রোদের টা নিতো। আমার তো এটা দরকার।”
“তুমি তাহলে রোদেরটা নেও?”
“লাগবে না।”
তেজ দেখিয়ে বলে তূর্ণ। তখন রোদ বলে, “সমস্যা নেই নিতে পারো। আমি ধমকাবো না।”
রোদের কথায় পূর্ণ আঁড়চোখে তাকায়। খোঁচা টা তাকেই মা-রা হয়েছে। সেই তো কেউ কিছু ধরলেই ধমকা ধমকি শুরু করে দেয়। রোদ উঠে প্রস্থান করতে পূর্ণ ও রোদের পেছনে তার রুমে যায়। রুমে দাঁড়িয়ে রুমটা পর্যবেক্ষণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে পূর্ণ। আসে না এই রুমে ভুলেও। মানুষটাকেই তো সহ্য হয়না রুমটা সহ্য হওয়া তো পরের হিসাব। তখন রোদ ব্লুটুথ পূর্ণর সামনে ধরে বলে, ” মিস্টার তাহিয়ান শিকদার পূর্ণ ব্লুটুথ টা সাবধানে রাখবেন।”
“ওতো ধমকা ধমকি করে দিচ্ছো। লাগবে না তোমার ব্লুটুথ।”
“ওকে ফাইন।”
রোদ ড্রয়ার কাছে যেতে নিবে তখন পূর্ণ শুধায়, ” বলেছি বলে ওমনি নিয়ে রেখে দিতে হবে? যদি নাই নিতাম তাহলে কী তোমার রুমে আসতাম আমি? মাথা কী আছে তোমার? ব্রেইন তো নাই জানি।…..
“এ্যাই ব্লুটুথ নিতে এসেছেন ব্লুটুথ নিবেন। ওতো ঢং করে কী বুঝাতে চাইছেন?”
“তোমাকে ভালো লাগে এটাই বুঝাতে চাইছি। এছাড়া কোন কারণ নেই ঢং করার।”
তেজী স্বরে জবাব দেয় পূর্ণ। তখন রোদ অহংকারী সুরে বলে, ” এসব মেয়র এমপি,মন্ত্রীদের চামচা রোদের কাছে পাত্তা নেই।”
“এই আমি চামচা?”
“তাহলে কথাটা কী জ্বীনকে বলেছি?”
” আমার বয়ে গেছে তোমায় পছন্দ করতে।”
“সেটাই তো আমিও বুঝাচ্ছি। আসলে কী জানেন মেয়র সাহেব, ওই যে কলেজ, স্কুলে টিচার থাকে না? তাদের জন্য নিয়োগ প্রাপ্ত এসিস্ট্যান্ট ও থাকে। কথা হলো টিচারের থেকে তার এসিস্ট্যান্ট দের তেজ আর ভাব একটু বেশী থাকে। ঠিক একই অবস্থা তোমার ও। মন্ত্রী, এমপিদের থেকে তাঁদের চামচাদের তেজ,রাগ,ভাব একটু বেশী।”
ঠান্ডা মাথায় রোদ পূর্ণকে অপমান দিয়ে রুম থেকে প্রস্থান করে। মনে হয় রুমটা পূর্ণর। পূর্ণ ব্লুটুথের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। তার মিটিং ছিলো মিটিলয়ে জয়েন হবে। মুডের তেরোটা বাজিয়ে দিলো এই রোদ। পূর্ণ নিজের রুমে এসে এসির পয়েন্ট বাড়িয়ে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে। হিসাব মেলানোর চেষ্টা করছে কেনো সে রোদের রুমে গেলো? আচ্ছা ব্লুটুথের জন্যই গেলো। কথা কাটাকাটি কোন কথার জন্য হয়েছে? কোন কথার প্রসঙ্গে তাকে চামচা বলে অপমান দিলো? পরক্ষণে মনে পড়ে সে বলেছিলো রোদকে ভালো লাগে। এটা তো ডাহা মিথ্যে কথা। রোদের দেওয়া অপমানে এখনো শরীর বলছে পূর্ণর।
কোন রকম মিটিং শেষ করে ঠান্ডা পানির গ্লাস নিয়ে বসে পূর্ণ। মিটিংয়ে বসার সময় ঠান্ডা জুশ ও রেখেছিলো পাশে। এমনিতে মাথা গরম তারউপর রোদের দেওয়া অপমানে গা পিত্তি জ্বলছে পূর্ণর। আজকে শুধু তূর্ণ বাড়ী আসুক। তার কী টাকার অভাব পড়েছে? একদম না! তাহলে রোদের কাছে গেলো কেনো?
বিকেলে তূর্ণ আসতে তাকে ঠান্ডা জুশ দেয় রোদ। শুধু তূর্ণ না শূন্যকে সাথে তার ছোট মামুকেও জুশ দেয় রোদ। একটু পর তারা মেহেরের সাথে যাবে। মাহতাব হোসাইন আরো আগে চলে গেছেন তার কাজ আছে। বাকীরা মিলে শেস বিকেলে সন্ধ্যার শুরুতে রওনা হবে। তূর্ণ রুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে রেডি হতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে কয়েকদিনের। বাকী কাজ বাড়ীতে বসেও করা যাবে।
সবাই রেডি হয়ে নিচে আসলেও পূর্ণ বা তূর্ণ এখনো আসেনি। তিশা তাড়া দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে তূর্ণ আসে। কিন্তু পূর্ণর খবর ও নেই। সবাই টায়ার্ড হয়ে বসে আছে। পাশে রোদ ফোন স্ক্রোল করছে। কেউই যাওয়ার সাহস করতে পারছে না। সকাল থেকে পূর্ণর চেহারা দেখে বুঝেছে কিছু নিয়ে রেগে আছে৷ শেষমেশ বেচারী রোদকেই পাঠানো হলো। আর যাই হোক সবার বিশ্বাস রোদকে বকা-ঝকা ধমক দিবে না। কারণ রোদের প্রতি পূর্নর অনীহা। কিছু বলার মতো অধিকার বা সাহস নেই। কিন্তু তারা তো জানে না আজ-কাল রোদ, পূর্ণ বেশ ঝগড়া করে৷ চিন্তা ভাবনা দূর করে পূর্নর দরজায় নক করে রোদ। একগাদা রাগ নিয়ে দরজা খোলতে রোদকে দেখে পূর্ণ। বেশী পরিপাটি কিন্তু পূর্ণ তেমন পরিপাটি না। রোদ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে, ” তোমার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে। এটা বলার ছিলো বলেছি। তুমি আসলে আসবা, না আসলে নাই। ভেবো না আবার এসে বলবো। আর এসে তেল মাখতে পারবো না।”
“এই মেয়ে সমস্যা কী তোমার? ”
“কোন সমস্যা নেই তবে তোমার মাথায় সমস্যা আছে এটা আমি বুঝেছি।”
“ত..তুমি বাড়াবাড়ি করছো রোদ।”
“আসলে আসবেন না আসলে নাই।”
কথাটা বলে রোদ চলে আসে। পূর্ণ সেভাবে দাঁড়িয়ে রয়। তখন আবার তূর্ণ বিরক্তি নিয়ে আসে। পূর্ণ কে ধমক দিয়ে বলে, ” কমন সেন্সের অভাব তোর? মানে তুই কী বেডি মানুষ নাকী এতো তেল মাখতে হয় কেন তোকে? মেয়েরা ও কথায়,কথায় এতো রাগ করে না তুই ছেলে হয়ে যত রাগ করছিস।”
“সব রোদের দোষ।”
বিড়বিড় করে বলে পূর্ণ। পুনরায় শুধায়, “আমি তো রেডি। গাড়ীতে বসো পাঁচ মিনিটে আসছি।”
তূর্ণ চলে আসে। বাকীদের নিয়ে গাড়ীতে বসে। ড্রাইভ পূর্ণ করবে। তূর্ণর এনার্জি নেই ওতো। কিছুক্ষণের মধ্যে পূর্ণ আসে। গাড়ী স্টার্ট দিতে,দিতে বলে, ” সবার তো মুখ আছে ঝগড়া করতে পারে তো আমি এতো কষ্ট করে ড্রাইভ করে নিয়ে যাবো আমায় টাকা দিতে হবে।”
তখন রোদ শুধায়, ” চাঁদাবাজি, এলাকার উন্নয়নের টাকা বুঝি ধান্দা বাজি করা হচ্ছে না তাই টাকার টান পড়েছে বুঝি?”
দু’জনেই দু’জনকে খোঁচাটা মারে। পূর্ণ পাশে বসাত তূর্ণর দিকে তাকাতে সে শুধায়, “ভুল কিছু বলেনি। বল’দের মতো কথা বললে এমনই ফিডব্যাক পাবি।”
#চলবে
গ্রুপ লিংক,
https://facebook.com/groups/582123563029858/
আমার পার্সোনাল আইডির লিংক,
https://www.facebook.com/profile.php?id=100076559331822