হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|১৬| #শার্লিন_হাসান

0
220

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|১৬|
#শার্লিন_হাসান

নাজিয়ার সাথে কথা বলে ডকুমেন্টস নিয়ে নিবরাস বেড়িয়ে পড়ে। তবে তার হাতে নাজিয়ার আনা অনেকগুলো ফুল,চকলেট সাথে একটা পার্সেল। আনায়ার জন্য এনেছে নাজিয়া! নিবরাসের কাছে সেগুলো দিয়েছে। তাজা বেলী ফুলের দু’টো চুড়ি নিবরাস হাতে নেয়। দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগছে হাজারো বেলীর মাঝে দু’টো করে গোলাপ।

গাড়ীতে বসে গিফ্টগুলো সামনেই রাখে নিবরাস। শুধু হাতে বালা জোড়া। তার ইচ্ছে আনায়াকে নিজ হাতে পড়িয়ে দিবে। বালাজোড়া নিবরাস নাড়াচাড়া করছে তখন পরাগ বলে,

-ম্যাম তো রাগ করে আছে স্যার। রাগ ভাঙাবেন না?

-তুমি না বললে আমার মনেই ছিলো না। সন্ধ্যায় গার্ডেনের এককোণ সাজিয়ে রেখো। সাথে রাতের ডিনার,কেক,ড্রিং সব রেখো। আর হ্যাঁ কারেন্টের দিকে খেয়াল রেখো কেউ যাতে সুইচ অফ করে না দেয়।

-আচ্ছা আমি মেসেজ করে দিচ্ছি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আসতে।

-হুম দাও।

আনায়া মারিয়াকে বিদায় দিয়ে গাড়ীতে বসে পড়ে। তার মনে রাগ আছে প্রচুর তবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিবরাসকে এবার কিছু বলবে না। চুপ থাকবে সেও দেখবে নিবরাস কতটুকু যায়! তার ইচ্ছে করছে তার বাবাকে কল দিয়ে সব অভিযোগ বলতে নিবরাসকে নিয়ো। এতো নেতা তার লাগবে না। আর না এসব শত্রু, চলার পথে পা ফেলতে এতো ভাবনা। নেতাকে পেয়ে লাভ কী? তাকে চায় একের পর একজন। পিছু পড়ে আছে! পিছু ছাড়ছে না।

-আমার কপালটাই এমন। আমার সবকিছুতেই অন্যদের ভাগ থাকবে। অন্যদের পছন্দ হবেই।

মির্জা বাড়ীতে আসতে দেখে একটু আগে নিবরাসরা এসেছে। তারিশাও আছে নিবরাসের সাথে। আনায়া ড্রাইভারকে বিদায় দিয়ে নিবরাসকে এভয়েড করে ভেতরে ঢুকে যায়। নিবরাস পরাগকে দিয়ে গিফ্টগুলো ভেতরে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। শুধু বালা জোড়া নিজের হাতে রাখে। তখন তারিশা বলে ফেলে,

-বালাগুলো খুব সুন্দর তাও তাজা ফুলের। আমায় দাও না বালাগুলো। তুমি কী করবে এসব দিয়ে?

-তোমার বিয়ের জন্য এনেছি তারিশা। সেন্স বলতে কিছু তো নেই তোমার মাঝে আর না আছে লজ্জা। আমার বউ আছে তুমি ভুলে গেছো? সবসময় আমার পিছু লাগবে মা আমার বিরক্ত লাগে তোমাকে। আমি ম্যারিড আমার বউ আছে বুঝেছো?

-আনায়ার জন্য এনেছো আমি কী দোষ করলাম?

-আনায়ার তুমি কে? নিজের জায়হায় সীমাবদ্ধ থাকো বেহায়া মেয়ে। শুধু বাবার জন্য কিছু বলতে পারি না নাহলে তোমার মুখোশ টেনে ছিঁড়তে আমার সময় লাগবে না। একশুটে বৃন্দাবন দেখিয়ে দেবো। ডিজগাস্টিং।

নিবরাস চোখ-মুখ শক্ত করে ভেতরে চলে আসে। আর্জেন্ট কল আসাতে ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ত্রস্ত পায়ে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হয়। খাটের উপর গিফ্ট সাথে ফুলের তোড়াটা রাখা। আনায়া রুমে নেই হয়ত শাওয়ারে গেছে। নিবরাস সোফার উপর,পায়ের উপর পা তুলে বসে।

আনায়া শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে আসে। কোন কথা বলে না নিবরাসের সাথে। ব্যস্ত হাতে হেয়ার ড্রয়ার নিয়ে চুল শুকাতে থাকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে। তাঁদের রুমটা বিশাল। ঢুকার সময় ছোট্ট রুমের মতো যেটায় সোফা রাখা ভেতরে তাঁদের বেডরুম। সাথে এটাস্ট ওয়াশরুম আর একটা চেন্জিং রুম যেখানে কাবাড আর জামাকাপড় রাখা। তাদের বেডরুমে কাউচ,বেড,ড্রেসিং টেবিল সাথে বেডের দুই পাশে টেবিল।

আনায়া চুল শুকিয়ে তৈরি হয়ে বাইরের দিকে যায়। নিবরাসকে দেখেও না দেখার ভাণ করে। ড্রয়িং রুমে আসতে মরিয়ম নওয়াজ খাবার টেবিলে রাখছেন। আনায়া তাকে সাহায্য করার জন্য যায়। মরিয়ম নওয়াজ তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

-নিবরাস বাইরে থেকে এসেছে ওর জন্য শরবত নিয়ে যাও। আর বলো লান্স করতে আসার জন্য।

আনায়া শরবতের ট্রে টা নিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। করিডোর দিয়ে হাঁট ছিলো তখন কোথা থেকে তারিশা তড়িঘড়ি আসে। অল্পের জন্য ধাক্কা লেগে শরবতের গ্লাস নিচে পড়েনি। আনায়া সেসব পাত্তা দেয়নি সোজা রুমে চলে যায়। নিবরাস সোফায় বসে,বসে কপাল স্লাইড করছে। আনায়া টেবিলের উপর ট্রে টা রেখে ব্যস্ততা দেখিয়ে বলে,

-লান্স করার জন্য আসতে বলা হয়েছে।

-শোনো!

-সময় নেই।

নিবরাস উঠে দরজা লক করে দেয়। আনায়া বেডরুমে চলে আসে। নিবরাস শরবতের গ্লাস হাতে ভেতরের দিকে আসে।

-গিফ্ট গুলো তোমার জন্য।

-লাগবে না।

– তুমি যদি ভেবে থাকো আমি এনেছি আমার দেওয়া গিফ্ট ভেবে প্রত্যাখ্যান করবে তাহলে ভুল।আমি আনিনি তোমার জন্য এসব একজন পাঠিয়েছে।

-কে?

-নাজিয়া!

আনায়া অবাক হয়। নাজিয়া কে নিবরাস চেনে? আর গিফ্টগুলো নিবরাসকে দিয়ে পাঠিয়েছে। আনায়ার ভাবনার মাঝে নিবরাস গ্লাসটা সাইড টেবিলে রেখে পাশ থেকে ফুলের বালা দু’টো নিয়ে আনায়ার হাতে পড়িয়ে দেয়। আনায়া নিবরাসের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়।

-আপনি আসুন আমি গেলাম।

-এই তুমি রাগ করেছো?

-কই না তো!

-মিথ্যে বলবে না।

-আমার রাগের দাম আছে নাকী? আর যার কাছে আমার দাম নেই তার কাছে রাগ করা বোকামী ছাড়া আর কিছু না।

-আমি ওকে অপমান করেছি তো।

-আমি শুনতে চাইনি এসব ব্যপার। প্লিজ আপনি আপনার মতো থাকুন আমাকে আমার মতো থাকতে দিন। যদি এটাও সম্ভব না হয় তাহলে বলুন আমি ব্যাগ গুছিয়ে নিজের বাড়ী চলে যাচ্ছি।

-স্যরি।

আনায়া পাত্তা না দিয়ে বালা জোড়া খুলে খাটের উপর রাখে। দ্রুত প্রস্থান কর নেয়। নিবরাস পকেট থেকে ফোন বের করে খাটের উপর ছুঁড়ে মারে। তারিশাকে পারছে না বাড়ী থেকেই বের করে দিতে।

আবারো ফোন হাতে পরাগকে টেক্স দেয়,

-সুন্দর ভাবে ডেকোরেশন না করলে বুলেট কিন্তু মাথায় গেঁথে দেবো।

টেক্স পেয়ে পরাগ আর রিপ্লাই দেয় না। বুঝেছে নিবরাস রেগে আছে। হয়ত আনায়া তাকে কথা শুনিয়েছে।
পরাগের মতো ভালোই হয়েছে মাথা ফাটায়নি যে এটাই তাঁদের নেতার সাত কপালের ভাগ্য।

আনায়া চুপচাপ খাবার খেয়ে উঠে যায়। তারিশা সব বসেছে তার পেছন দিয়ে নিবরাস আসে। বাকীদেরও মোটামুটি খাওয়া শেষ।

তারিশা,নিবরাস একসাথে খাচ্ছে। তখন মরিয়ম নওয়াজ বলেন,

-তারিশার এতো লেট কেন?

-আসলে মামনি এসে শাওয়ার নিয়ে একটু রেস্ট নিয়েছি সেজন্য লেট হয়ে গেছে।

মরিয়ম নওয়াজ আর কিছু বলেন না। নিবরাস কোনরকম খেয়ে উঠে পড়ে। বারবার আনায়া যেখানে থাকার কথা সেখানে তারিশা চলে আসছে। নিবরাসের বিরক্ত লাগছে প্রচুর প্রকাশ করতে পারছে না।

ত্রস্ত পায়ে নিজের রুমে যায়। আনায়া কাউচের উপর বসে ফোন স্ক্রোল করছে। নিবরাস বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর,পর আনায়ার দিকে তাকাচ্ছে। আনায়া তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। নিবরাস নিরব থেকে আনায়াকে বলে,

-তোমার বোন গিফ্ট পাঠালো দেখলে না?

আনায়া জবাব দেয়না। নিবরাস ব্যর্থ হয়ে আবারো বলে,

-খাটে এসে বসো না?

আনায়া ফিরেও তাকায়নি নিবরাসের দিকে। সে তার মতো ফোনে ব্যস্ত। কিছুক্ষণ পর উঠে কুশন এনে কাউচে গা এলিয়ে দেয় আনায়া। নিবরাস খাটের উপর শুয়ে,শুয়ে আনায়ার কান্ড দেখছে। মনে,মনে নিজেকে বকা দিচ্ছে। আর কখনো তারিশাকে পাত্তা দেওয়া যাবে না। তারিশা কে তাকে নিবরাস চিনে না। আনায়া তাকে টর্চার করছে। জনগনের নেতা বউয়ের কাছে পাত্তা পাচ্ছে না।

*****

নাজিয়া পাঁচটার দিকে বাড়ী ফিরে। তার স্কুল থেকে কিছুটা দূরে একটা ক্যাফ ছিলো। সেখানে নিবরাসের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো নাজিয়া। গিফ্টগুলো আগে কিনে রেখেছে শুধু আসার সময় ফুলগুলো নিয়েছে। কী জানি আনায়া গিফ্টগুলো একসেপ্ট করেছে কীনা। ফুল দেখলে কেউ রাগ,অভিমান করতে পারে না আর না ফুল ফেলে দিতে পারে। ফুল মানে শুভ্র, শুদ্ধ।

তড়িঘড়ি শাওয়ার নিয়ে খাবার খেয়ে নেয় নাজিয়া। সাড়ে পাঁচটায় তার প্রাইভেট আছে টিচার আসবে। নিজেকে তৈরী করে স্টাডি রুমে চলে যায়। তার টিচার চলে এসেছে অলরেডি। বাড়ীতে তেমন কেউ নেই বললে চলে। তার মা জব করে অফিসে। আজকে হয়ত মিটিংয়ে আটকা পড়েছে সাথে তার বাবা,বড়বাবা ও। তার জেম্মা আড়ংয়ের জন্য বের হবে একটু পর। নাজিয়ার প্রাইভেট শেষ হলে দু’জন যাবে। তার ভাই জাফিন একটা আন্টির বাসায় নাজিয়ার আম্মুর পরিচিত। সে আসার সময় জাফিনকে নিয়ে আসবে।

সুহাসিনী রেডি হয়ে অপেক্ষা করে নাজিয়ার। আজকে নাজিয়াকে নিয়ে টুকটাক শপিং করবে। নাজিয়ার কী লাগবে না লাগবে আজকে কিনবে সাথে নিজের জন্যও। তাশরিফ খানের এটিএম কার্ড রেখে দিয়েছিলেন সকালে।

নাজিয়া সহ সুহাসিনী আড়ংয়ে আসে। নাজিয়ার ফোন ব্যতীত অন্য যা পছন্দ তাই নিতে পারবে। ফোনটা তার মায়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে চালাতে পারে না। তবে তার নিজের টাকায় কেনা ফোন আছে যেটা লুকিয়ে চালায় সে। তার রুমে তেমন কেউ আসে না। আর সে সারাদিন স্কুলে,পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকে। সামনে তার এক্সাম বেশীদিন নেই আর তিনমাস পর ফেব্রুয়ারিতে এক্সাম। আগামী মাসে হোস্টেলে উঠে যাবে ভালো গাইডলাইনের জন্য। এই একসপ্তাহের মতো আছে বাড়ীতে।

সুহাসিনী নাজিয়ার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সাথে নিজের জন্যও শপিং করে টুকটাক। নাজিয়া সহ তাঁদের পরিবারের চারজনের জন্য মেচিং পান্জাবি নেয় সুহাসিনী। তাদের দুই জা এর জন্য মেচিং শাড়ী। তবে নাজিয়া তাদের সাথে মেচিং করেনি। সে তার পছন্দের টপস,জিন্স,জামা নেয়। সুহাসিনী অনেক বলেও নেওয়াতে পারেনি। নাজিয়ার মতিগতি বুঝতে পারে না সুহাসিনী। সীতারা আহমেদকে বললে তার এক ধমকে সব ঠিক হয়ে যাবে। সেজন্য নাজিয়ার জন্য মেচিং করে নিয়ে নেয় সে।

তাঁদের শপিং শেষ হতে আইসক্রিমের দোকানে ঢুকে দু’জন। নাজিয়া আইসক্রিম খাচ্ছে আশেপাশে তাকাচ্ছে। কয়েক টেবিল পর চোখ যায় তার। জায়ান কারোর সাথে হেঁসে, হেঁসে আইসক্রিম খাচ্ছে আর কথা বলছে। সুহাসিনী দেখেনি সে তাঁদের উল্টোমুখী হয়ে বসেছে। নাজিয়া আফসোস করছে ফোন থাকলে কয়েকটা পিক তুলে রাখা যেতো।

তখন সুহাসিনীকে বলে,

-জায়ান ভাইয়া অফিসে তো?

-আজকে মিটিং আছে ওদের।

-আম্মুর ও?

-হুম।

-বড় বাবা আর বাবা ওরা মেবি কাজে আটকা পড়েছে ওদের মিটিং নেই।

-না ওদের কোম্পানিতে আজকে মিটিং নেই।

-হুম!

নাজিয়া ভাবছে জায়ান এখানে তো সীতারা আহমেদ কোথায়? নিশ্চয়ই ওদের গোপন বিজন্যাসের মিটিংয়ে আটকা পড়েছে। নিবরাস ভুল কিছু বলেনি! সীতারা আহমেদ জায়ানের সাথে মানুষ। যে সবসময় নিজেকে আড়াল করে রাখে। নাজিয়া সুহাসিনীর দিকে তাকিয়ে আফসোসের স্বরে বলে,

-ইশ মায়ের মেয়ে হয়েও মায়ের মতো হতে পারলাম না।

-হয়ে যাও বারণ করলো কে? ট্যালেন্টেড!

-এমন ট্যালেন্ট আমার দরকার নেই।

-একটা কথা আছে কী নাজিয়া জানো? হুজুরের সন্তান জালিম হয় আবার জালিমের সন্তান হুজুর হয়।

-তুমি ইনডিরেক্টলি আমার মাকে জালিম বললা নাকী?

-আরে না! ও তো খুব ভালো। ওকে এসব বলার সাধ্য আছে নালী আমার ?

-কারোর সাধ্য নেই তাকে কিছু বলার তাই না?

#চলবে

(গল্পের রিচ কমে গেলো।🙂💔 আপনাদের কী ভালো লাগছে না গল্পটা?🙂 রেসপন্স করার অনুরোধ রইলো।🤍)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here