#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|১৪|
#শার্লিন_হাসান
-আচ্ছা শোনো কী বলি। তোমার বোন আহিয়ার বড় বোন তাহিয়া।
-মারা গেছে বছর হবে তো মনে হয়।
-মারা যায়নি মেরে ফেলা হয়েছে।
-আপনি মেরেছেন নাকী?
-চুপ মুখটা বেশী চলে তোমার।
আনায়া আর কথা বাড়ায়না। নিবরাস পুনরায় বলে,
-তুমি যাকে এতোদিন আমার বউ,বউ করে চিল্লাতে সে আসলে আমার বউ না। আমি এর আগে বিয়েও করিনি তুমি আমার প্রথম বউ। তাহিয়া আমার পেছনে ভার্সিটি লাইপ থেকে পড়েছিলো। প্রচুর জ্বালিয়েছে আমায়! যদিও কখনো ওর প্রপোজাল একসেপ্ট করিনি কারণ আমি জানি ওরা প্লান করে আমায় ফাঁসাতে চাইবে। এই তাহিয়াকে সেদিন আমি এসবের জন্য অনেক হুমকি-ধমকি দিয়েছিলাম। বাড়ীতে আসার একঘন্টা পর কল আসে তখন জানতে পারি ও মা*রা গেছে। অনেকে বলে সুইসাই’ড,অনেকে বলে মার্ডার আর দোষারোপ করে আমাকে। তবে প্রমাণ না থাকায় কেউ এগিয়ে আসতে পারেনি। সবচেয়ে বড় কথা আমার সাথে ওর কোন সম্পর্ক ছিলো না। এই আহিয়া চায় না আমায় তুমি ভালো জানো। ও তোমার মনে আমায় নিয়ে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিয়েছে। আর তুমিও!
-আহিয়ার এসব করে লাভ কী? পারলে নিজের বোনের খুনি*কে খুঁজে বের করে শাস্তি দিক।
-ও তো ভাবে ওর বোনকে আমি খু’ন করেছি।
-ওর ধারণা ভুল।
-আর ওকে শামিম সরদার ঘুরাচ্ছে।
-যা খুশি করুক আমি তো সত্যিটা জানতে পেরেছি।
নিবরাস হাসে। আনায়া চুপচাপ দেওয়ালের দিকে তাকায়। তাহিয়াকে নিয়ে মনের মাঝে হাজারো প্রশ্ন জড়ো হচ্ছে তার।
****
নাজিয়া বেলকনিতে বসে বই পড়ছিলো। তখন জায়ান আসে সেখানে। তারা ও রাজশাহী চলে এসেছে।বাইরের দিকে একনজর তাকিয়ে নাজিয়াকে প্রশ্ন করে,
-আচ্ছা আয়াত তোমার কেমন লাইপ পার্টনার পছন্দ?
জায়ানের মুখে এমন প্রশ্নে নাজিয়া বিরক্তবোধ করে।আজকাল জায়ানের বাড়াবাড়ি তার ভালো লাগে না।
উত্তর দেয়না নাজিয়া। জায়ান পুনরায় শুধায়,
-বললে না তো?
-আমার পছন্দ অপছন্দ দিয়ে তুমি কী করবে? ডিস্টার্ব করো না তো।
জায়ান বিরক্ত হয়। নাজিয়ার এতো ভাব তার অপছন্দ হয়ে যাচ্ছে। চুপচাপ প্রস্থান করে নাজিয়ার রুম থেকে।
জায়ান যেতে নাজিয়া বই রেখে রুমে চলে আসে। জায়ানকে বেশী পাত্তা দেওয়া যাবে না। আর না বিশ্বাস করে কিছু বলবে নাজিয়া। কিন্তু জায়ানকে নিয়ে ফ্যামিলির কাউকে কিছু বললেও বিশ্বাস করবে না তারা।
সন্ধ্যায় নুডলসের বাটি নিয়ে টিভির সামনে বসেছে নাজিয়া। জায়ান কলে কথা বলতে,বলতে নিচে আসছে। নাজিয়া আড়চোখে তাকে দেখছে। জায়ান সোফায় বসতে নাজিয়া বলে,
-ভাইয়া তোমার ফোনটা একটু দাও তো?
-এখন কী করবে তুমি ফোন দিয়ে?
-আইডি লগ ইন দেবো। একটা কথা মনে পড়েছে।
-পাঁচ মিনিট পর দেই?
-রাখো তোমার পাঁচ মিনিট। এই পাঁচ মিনিট প্রয়োজন আমার শিওর হতে।
-কী শিওর হতে?
-একটা মেসেজ আরকী একজনকে দিয়ে একটা কথা জিজ্ঞেস করে শিওর হবো।
জায়ান ফোনটা এগিয়ে দেয় নাজিয়ার দিকে। নাজিয়া উঠে দাঁড়ায়। জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
-আধঘন্টা পর ফোন পাইবা। এখন আমার কাছে থাকুক।
জায়ান মাথা নাড়ায়। নাজিয়া প্রস্থান করতে কপালে স্লাইড করতে থাকে। চিন্তা হচ্ছে আবার হচ্ছে না। নাজিয়া যদি কোনভাবে কোন ডকুমেন্টস দেখে নেয়? তিয়াশ খান তাকে লা’থি মেরে বাড়ী ছাড়া করবে। তার বাবা তাকে ত্যাজ্য করতে দুইবারও ভাববে না। তখন সুহাসিনী আসে। সীতারা আহমেদ ফোনে ব্যস্ত। জায়ানকে দেখে জিজ্ঞেস করে,
-তোমার শরীর খারাপ জায়ান?
-না এমনিতে মাথা ব্যথা করছে।
-চা/কফি কিছু করে দিতে বলবো?
-হ্যাঁ বলো কফি নিয়ে আমার রুমে আসতে।
জায়ান উঠে রুমে চলে যায়। কাজের মহিলা বন্যাকে সুহাসিনী বলে কফি নিয়ে জায়ানের রুমে যেতে। প্রথমে বন্যা কিছুটা ঘাবড়ে যায়। পরে ঠিক করে কফিটা নাজিয়াকে দিয়ে পাঠাবে।
নাজিয়া জায়ানের ফোনের কল রেকর্ডে ঢুকে। যে নাম্বার থেকে সবচেয়ে বেশী কল এসেছে সেটার রেকর্ড শোনা ট্রাই করে। এতো লম্বা কথার রেকর্ড তার শোনতে অসুবিধা হবে সেজন্য ফোনে জায়ানের মেমোরির বদলে নিজের মেমোরি ঢুকায়। সব রেকর্ডিং মেমোরিতে ট্রান্সফার করে।
কয়েক মিনিটের মধ্যে নাজিয়ার কাজ শেষ হতে আদার্স অ্যাপ ঘেঁটে দেখে। সেখান থেকে কিছু স্কিনশর্ট নিয়ে মেমোরিতে ট্রান্সফার করে। মেমোরি খুলে সব ঠিকঠাক করে নেয়। নিজের ফোনটা কাবাডে জামাকাপড়ের ভপতর লুকিয়ে রেখে দেয়। তখন বন্যা আসে কফির মগ হাতে।
নাজিয়া তাকে দেখে ব্রু কুঁচকে বলে,
-আমি তো কফি চাইনি আন্টি।
-জায়ান স্যার চেয়েছে।
-তো তাকে দিয়ে আসো আমায় কেন?
-আসলে ছোট ম্যাম আপনি একটু দিয়ে আসুন না?
-জায়ান ভাইয়া নিশ্চয়ই আমাকে বলেনি কফি দিতে তোমাকে বলেছে।
-আসলে আমার পিরিয়ড চলছে।
-এটার সাথে ওটার কী সম্পর্ক?
-এখন তো আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব না স্যার জোর করবে হয়ত বা। কিন্তু আমি অসুস্থ হয়ে পড়বো।
বন্যার কথায় নাজিয়ার মাথা হ্যাং হয়ে যায়। বন্যার কথার মানেটা সে বুঝে। বনঢ়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
-এর আগেও এমন করেছে আন্টি?
বন্যা চোখের পানি ছেড়ে দেয়। নাজিয়া জেনো সব স্বপ্ন দেখছে। বন্যার হাত থেকে কফিটা নিয়ে তাকে খাটে বসায় নাজিয়া।
-একটু বোসো আমি কফিটা দিয়ে আসছি। আমি কিছু জিজ্ঞেস করবো তোমায়।
-আচ্ছা।
নাজিয়া কফির মগ নিয়ে ত্রস্ত পায়ে জায়ানের রুমে প্রবেশ করে। জায়ান ল্যাপটপে ধ্যান দিয়েছে কারোর উপস্থিতি টের পেতে বুঝে বন্যা এসেছে কফি নিয়ে। জায়ান ল্যাপটপে চোখ রেখে বলে,
-বন্যা ম্যাডাম এতো লেট হলো কেন?
ভয়েস অনেকটা চেন্জ হয়ে আসে জায়ানের। নাজিয়া চুপচাপ হেঁটে জায়ানের কাছাকাছি যেতে জায়ান মুচকি হেঁসে বলে,
-উহুম! আজকে রেডি তো?
-ভাইয়া তোমার কফিটা।
জায়ান থতমত খেয়ে যায়। নাজিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
-আয়াত পাখি তুমি? আগে বলবা না?
-আসলে আমি কিচেনে গিয়েছিলাম তারপর শুনি বন্যা আন্টি তোমার জন্যই কফিটা বানিয়েছে আমি তো ফোনটা দিতে আসতাম তাই ভাবলাম কফিটা আমিই নিয়ে আসি। বন্যা আন্টি রাতের খাবার রান্না করছেন।
-ওহ সেটাই বলো।
-হুম।
নাজিয়া কফির মগ আর ফোন দিয়ে বেড়িয়ে আসে। জায়ানের ভাবভঙ্গিতে বন্যার কথা বিশ্বাস করা যায়। তড়িঘড়ি নিজের রুমে প্রবেশ করে দরজা আটকে দেয় নাজিয়া। বন্যা তাকে দেখে কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলে,
-স্যার কিছু বলেনি তো?
-কী বলবে? সব ম্যানেজ করে দিয়েছি মিথ্যে বলে।
এবার তুমি বলো এসব কতদিন ধরে চলে?
-ছয়মাস ধরে।
-ছিঃ!
-প্লিজ ভুল বুঝো না। আমাকে বাধ্য করে এসব করে। আমি ভেবেছিলাম তোমার মাকে বলবো কিন্তু সাহস হয়না।
-কারণ সেও এসব কুকর্ম করেছে জীবনে। থাকুক সেসব কথা।
-তোমাকে আমার ভরসাযোগ্য মনে হলো। নিধির বিয়ের দিন তোমার তেজ দেখে তোমার প্রতি একটা ভরসা আমার আসে। আজকে গেলেও হয়ত বা আমায় ছাড়তো না জায়ান স্যার। নিজের চাহিদা মিটিয়ে টাকা ধরিয়ে দিতো।
নাজিয়া চুপ করে বসে যায়। বন্যার দিকে তাকিয়ে বলে,
-আমার বাবাকে বলতে? নাহয় বড় বাবাকে। জেম্মা ছিলো তাঁদের কাউকে বলতে?
-আমার সাহস হয়নি এসব বলার। কারণ বড়স্যার আমায় ভালো জানে। আর ওনার ছেলেকেও ভালো জানে। আর এসব কথা কাউকে বললে সে হয়ত জায়ান স্যারকে চাপ দিতো তখন আমায় মে*রে ফেলতো সে। সে বলেছে এসব যাতে বাইরে না যায়। নাহলে আমায় মে*রে ফেলবে।
-এসব বাইরে যাবে না আন্টি। তুমি ওর ডাকে সাড়া দিলে কেন?
-ও আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে নাজিয়া।
-ও তোমার সম্পর্কে সব জানে?
-শুধু আমার সম্পর্কে না। ক্লাবে যাওয়া আসা সেখানে একেকদিন একেক মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করা।
#চলবে
(ভুলত্রুটি ক্ষৃার দৃষ্টিতে দেখবেন।)