হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|১৮| #শার্লিন_হাসান

0
207

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|১৮|
#শার্লিন_হাসান

(প্রাপ্ত বয়স্ক মনস্কদের জন্য উন্মুক্ত)

নিবরাস হুট করে আনায়াকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটতে থাকে। আনায়া তার গলা জড়িয়ে ধরে বলে,

-অসভ্য লোক নিচে নামা তো।

-বউ আজকে আর ছাড়ছি না কিন্তু। একবারে বাবুর পাপা হওয়ার মতো অসভ্যতামী করেই ছাড়বো।

মেইন ডোরের সামনে আসতে আনায়া বলে,

-আমার গিফ্ট গুলো চোর নিয়ে যাবে।

-মনেই ছিলো না। আচ্ছা চলো গিফ্টগুলো নিয়ে আসি।

-আমাকে নিচে নামান।

-আরে তুমি যা চিকন আমি এরকম কোলে নিয়ে পুরোবাড়ী দশবার ঘুরলেও আমার কিছু হবে না।

নিবরাস আনায়াকে নিয়েই টেবিলের কাছে আসে। ফুল,গিফ্টগুলো আনায়া হাতে নিয়ে কেক আর ড্রিং দেখে খেতে মন চায় তার। নিবরাস তাকে কোল থেকে নামাতে আনায়া চেয়ারে বসে পড়ে। কেক খেয়ে কোল্ড ড্রিং এর বোতল নিয়েই বসে পড়ে আনায়া। নিবরাস তার দিকে তাকিয়ে বলে,

-এতো পেটুক তুমি?

-আরে আমার প্রিয় কেক আপনি জানেন?

-আচ্ছা খাও ভালো করে বাবুর মাম্মাম হবে না।

আনায়া মাঝপথে খাওয়া অফ করে দেয়। নিবরাস চোখ দিয়ে ইশারা করতে কেক খাওয়া আরম্ভ করে। আনায়া খাচ্ছে নিবরাস বসে,বসে তার খাওয়া দেখছে। তাঁদের খাওয়াদাওয়া শেষ হতে নিবরাস রেহিতকে মেসেজ দিয়ে বলে দেয় এদিকটা সামলে নিতে। ফোন পকেটে ঢুকিয়ে আনায়াকে পুনরায় কোলে নিয়েই বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করে।

করিডোর পেড়িয়ে যেতে তারিশা পেছন দিয়ে আসে। আনায়া নিবরাসকে দেখে আবারো রুমে চলে যায়।

রুমে এসে দরজা লক করে দেয় নিবরাস। আনায়া ফ্রেশ হয়ে শাড়ী চেন্জ করে নেয়। নিবরাস ও চেন্জ করে নেয়। অতঃপর দু’জন শুয়ে পড়ে। আনায়া ভাবছে আজকের মতো সে বেঁচে গেলো। কিন্তু নিবরাস তো নিবরাসই! আনায়াকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে আসে। কপালে অধর ঠেকিয়ে বলে,

-চলো বউ বাবা-মা হওয়ার কাজে নেমে পড়ি।

-আজকে আমি বেশী খেয়ে ফেলেছি। রিলেক্স করি!

-ডোন্ট এক্সকিউজ সোনা।

আনায়া আর কথা বাড়ায়নি। নিবরাস বুঝে চুপ থাকা সম্মতির লক্ষণ! সেও সময় ব্যায় করে না। আনায়ার তনুর আংশুক আবরণ ছাড়াতে উদ্বুদ্ধ হয়ে পড়ে। নিজের প্রেয়সীকে সবটা উজাড় করে ভালোবাসা। নিবরাসের ভালোবাসার পরশ নিশ্চুপে নিজের গায়ে মাখে আনায়া। প্রণয়ের ঢেউ থামাতে ব্যস্ত দু’টো তনু।

সকাল,সকাল শাওয়ার নিয়ে রুম গুছাচ্ছে আনায়া। নিবরাস শাওয়ার নিয়ে রুমে প্রবেশ করে। ড্রয়ার থেকে ঔষধ বের করে আনায়ার হাতে দেয় নিবরাস।

-খেয়ে নিও মনে করে। স্যরি হ্যাঁ রাতে কষ্ট দিতে চাইনি।

আনায়া মাথা নাড়িয়ে শাড়ী ভাজ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। রুমটা গুছিয়ে নিজের জমা ফ্লাওয়ার গুলো নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে নাড়াচাড়া করছে। নিবরাসের দেওয়া গিফ্টগুলো খুলে দেখে। হাতে একটা রিং পড়ে আর চেইনটা রাখে পড়ার জন্য। বাকীগুলো ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে রেখে দেয়। নিবরাস পান্জাবি পড়ে আয়নার সামনে এসে নিজের চুল ঠিক করছে। আনায়া তখন চেইন হাতে নেয় পড়ার জন্য। নিবরাস তাকে থামিয়ে দেয়। নিজ হাতে আনায়ার গলায় চেইন পড়িয়ে দেয়।

আয়নায় দু’জন দু’জনকে দেখে। তখন নিবরাস বলে,

-তুমি আগের থেকে বেশী সুন্দর হয়ে গেছো।

-আগে আমি অসুন্দর ছিলাম নাকী?

-না আমার ভালোবাসা পেয়ে তোমার রুপ খুলে গেলো দেখছি।

-এহহ! সরুন তো! সবসময় ঢং করে নিজের থোতমা নিয়ে।

-তো করবোনা? নাহলে বউ আমায় গাধা,আনস্মার্ট ভেবে পাত্তা দিবে না।

-আপনার এতো ঢং কোথা থেকে আসে জানি না। সরুন তো আমার ভালো লাগছে না।

-বেশী খারাপ লাগছে?

-তো কী? যান আপনি পাষাণ।

-স্যরি!

আনায়া উঠে দাঁড়ায়। সোজা খাটের উপর গিয়ে শুয়ে পড়ে। নিবরাস হাত ঘড়ি পড়তে,পড়তে বলে,

-আমি নাস্তা নিয়ে আসছি। ঔষধ খেয়ে নিবে।

নিবরাস বেড়িয়ে পড়ে। আনায়া নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
কিছুক্ষণ পর নিবরাস ট্রে নিয়ে ভেতরে আসে। আনায়ার জন্য ব্রেড,জেলি, কফি এনেছে। খাটের পাশে ছোট্ট টেবিলটায় ট্রে রেখে নিবরাস বসে পড়ে। আনায়াকে ব্রেডে জেলি লাগিয়ে দেয়। নাস্তা শেষ হতে ঔষধ খাইয়ে নিবরাস উঠে দাঁড়ায়।

-আজকে রুমেই থাকো বের হতে হবে না।

-আপনি এখন চলে যাবেন?

-হ্যাঁ কিছু কাজ আছে। তবে তাড়াতাড়ি ফিরবো।

-আচ্ছা সাবধানে যাবেন আর নাস্তাটা করে যাবেন।

-আচ্ছা।

নিবরাস দরজার কাছে আসতে আনায়া ডাক দেয়। নিবরাস ফিরে তাকায়। আনায়া তাকে হাত দিয়ে ইশারা করতে নিবরাস আনায়ার সামনে বসে।

-আমার কপালে চুমু না দিয়ে চলে যাচ্ছেন? রুলস দেইনি মনে হয়? প্রতিদিন বাইরে বের হওয়ার সময় আমার কপালে চুমু খেয়ে যেতে হবে।

-তোমার মুখ থেকে এটা শোনার অপেক্ষায় ছিলাম বউ।

নিবরাসের কথায় আনায়া ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে যায়। নিবরাস হেঁসে বলে,

-ঠোঁট, কপাল দুটোতে আমি চুমু খেতে চাই। একটার পারমিশন পেয়েছি আরেকটা পারমিশন যদি দিতে খুব উপকৃত হতাম।

-যান বদলোক আপনার চুমু খেতে হবে না। বাঙালি মানুষ বসতে দিলে শুতেও চায়। অস*ভ্য!

-অসভ্যতামী একটু করাই যায় বউ।

নিবরাস জোর করে আনায়ার ঠোঁটে চুমু খায়। যাওয়ার সময় কপালে চুমু খেয়ে বেড়িয়ে যায়। আনায়া রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিবরাসের দিকে। সে পড়েছে মহাবিপদে। মনে,মনে ভাবছে,
-জামাই এতোটা রোমান্টিক না হলেও পারতো। ধুর! আমি ভেবেছিলাম নেতা মানুষ সারাদিন জনগনের চিন্তায় বউ আছে যে সেটাই ভুলে যাবে এখন দেখি ষোলো কলা পূর্ণ করছে।

******

তাসরিফ খান,তিয়াশ খান সহ সীতারা আহম্মেদ তারা নাস্তা করতে বসেছে। জায়ানও আছে তাঁদের সাথে। নাজিয়া চুপচাপ নিজের কফিতে চুমুক দিচ্ছে। তখন বন্যা বলে,

-বড় স্যার ম্যাডাম আমি আর আপনাদের বাড়ীতে চাকরীটা করবো না।

বন্যার এহম কথায় জায়ানের মুখশ্রী মূহুর্তে চেন্জ হয়ে যায়। নাজিয়া তাকায় জায়ানের দিকে। তখন তাসরিফ খান বলেন,

-হঠাত করে বন্ধ কেন? আর তোমার মায়ের তো ঔষধ লাগে প্রতিমাসে আবার তোমাদের চলতেও হিমশিম। চাকরী ছেড়ে দিলে কীভাবে কী হবে?

-নতুন আরেকটা চাকরী পেয়েছি। সেটা আমার বাড়ীর পাশেই। আপনাদের বাড়ী তো দূরে মাকে দেখতে যাওয়ার জন্য ছুটি ফেলেই যেতে হয়। আর সেখানে আমি কাজ শেষ করে রাতেই নিজের বাসায় চলে যেতে পারবো।

তখন জায়ান বলে,
-এই সমস্যার কথা আগে বললেই পারতা। প্রয়োজনে রাতে আমি তোমায় ড্রপ করে দিয়ে আসতাম তোমার বাসায়।

-তার মনে হয় আর প্রয়োজন নেই জায়ান ভাইয়া। আগে ভেবে বলতে বন্যা আন্টির প্রয়োজন অপ্রোয়জন। যেহেতু তাকে নিয়ে একটু বেশী ইন্টারেস্টেড তুমি।

নাজিয়া বলে। তখন জায়ান বলে,

-আয়াত পাখি ব্যপারটা এরকম না।

-আমি শুনতে চাইনি ব্যপারটা কেমন।

জায়ান চুপসে যায়। তখন সীতারা আহম্মেদ বলে,

-বেশী কষ্ট হয় নাকী বন্যা?

তখন তিয়াশ খান বলেন,
-কিসের কষ্ট সীতারা? ও তো বাড়ীর একজন সদস্য!

-হুম সেজন্যই তো বললাম। কাজ করে বেতন দেই বাড়ীতে থাকে সেই হিসাবে কিছু চাওয়া-পাওয়া তো পূরণ করতে হয়।

সীতারা আহম্মেদের কথার আগামাথা তারা দুই ভাই বুঝতে পারেনা। তবে নাজিয়া ঠিকই বুঝে। জায়ান সীতারা আহম্মেদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। নাজিয়ার মন চাচ্ছে এখনি তার মায়ের আর জায়ানের পর্দা ফাঁস করতে। কিন্তু তার মায়ের বিরুদ্ধে তেমন প্রমাণ জোগাড় হয়নি। বিশেষ করে তার অবৈধ বিজন্যাস যেটা জায়ান সহ করে সেটার প্রমাণ জায়ানেরটা মিললেও তার মায়েরটা মিলাতে পারেনি। এই মহিলা দূর্তবাজ। সবচেয়ে বেশী খারাপ লাগছে নাজিয়ার তার মা একজন নারী হয়ে কী করে আরেকজন নারীর ক্ষতি জেনেও কিছু বলেনি।

তখন বন্যা বলে,
-আজকে রান্না করে দিয়ে আমি চলে যাবো। আপনারা নতুন কাজের লোক খুঁজে নিবেন।

তিয়াশ খান গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
-ঠিক আছে।

সবাই যে যার মতো নাস্তা করে নিজেদের গন্তব্যের জন্য নেমে পড়ে। জায়ান,সীতারা আহমেদের এক অফিস তারা একই কারে করে যাবেন। তাশরিফ খান এবং তিয়াশ খান আরেক অফিস তারা এক কারে করে যায়। নাজিয়াকে ড্রপ করে দেয় বাড়ীর গাড়ী দিয়ে ড্রাইভার। সুহাসিনী একটা কিন্ডারগার্টেন সামলায় সেও তার কাজে চলে যায়। খান ভিলা ফাঁকা। বন্যা রান্না করে চলে যাবে গেটে তালা লাগিয়ে। চাবি দারোয়ানকে দিয়ে যাবে।

জায়ান গাড়ী ড্রাইভ করছে সীতারা আহমেদ পেছনে বসা। ফোন টা ব্যাগে ঢুকিয়ে সীতারা আহম্মেদ বলেন,
-মনে হয়না বন্যা তোমার জন্য চলে যাচ্ছে।

-হবে হয়ত! বাট কখনো কাউকে কিছু বললে ওকে মে*রে দেবো।

-উফফ এসব মারা মারি বাদ দাও! ওই তাহিয়ার কাছে আমার কিছু প্রমাণ ছিলো যা ফাঁস করলে আমি কেস খেতাম। জানি ভাইয়ের মেয়ে হলে কী হবে! একসময় না একসময় আমায় ফাঁসাত সেজন্য রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলাম।

-শুভ কাজটা প্লানিং করে করেছি আমি।

-মে*রেছি কিন্তু আমি।

-মাঝখানে জনগনের নেতা তোমার একমাত্র মেয়ের জামাই ফেঁসে গেছে।

-ধুর! ওরা জাহান্নামে যাক আমার কী?

-কাম্মা আনায়াকে নিয়ে ভাবো না? মায়া লাগে না?

-তোমায় বলবো নাকী মায়া লাগে নাকী লাগে না।

-আরে বলো না?

-ও আমার সন্তান! তুমি জানো সন্তানদের প্রতি মায়ের ভালোবাসা অকৃত্রিম। সো…”

-এতো ভালোবাসো তো ছেড়ে আসলে কেন? ওইখানে কিন্তু জীবনটা গুছিয়ে নিতে পারতে।

-সেটা আমি জানি। আমার লাভ ছিলো তিয়াশ খান ওর জন্য আমি সব করতে পারি। ইউ নো হোয়াট এই সীতারা না আসলে খানদের এতো উন্নতি হতো না। লাইফে টাকা ইনকাম করা প্রচুর দরকার। এতো,এতো টাকা দরকার যাতে বুড়ো বয়সে আরাম আয়েশ করে কাটিয়ে দিতে পারি। টাকা যাতে শেষ না হয়! আমার ছেলের ভবিষ্যত ও যাতে চলে যায়।

-বুড়ো বয়স যদি জেলে বসে কাটাতে হয়?

-আমার টাকা আর লোকের অভাব নেই প্রয়োজনে পুলিশদের মা*র্ডার করে দিবে। আর সীতারাকে জব্দ করা ওতো সহজ না! শকূনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলতে পারি আমি।

-নিবরাস কিন্তু ঠান্ডা মাথার প্লেয়ার। ওর সাথে জীবনে কেউ টেক্কা দিতে পারে না।

-ওর ও গোপন টিম আছে। ইভেন আমাদেরও আছে। ও ইট ছুঁড়লে আমিও পাটকেল মারতে তৈরী।

-মেইন প্লেয়ার সীতারা আহম্মেদ আর সবাই ভাবে শামিম সরদার।

-ওরা ও আমাদের দলের লোক।

-সেদিন মনে হয় নেতার জানপ্রাণকে বাঁচিয়ে দেওয়া উচিত হয়নি।

-ও আমার মেয়ে ভুলে গেলে? ওর গায়ে একটা আঁচড় লাগলে তোমায় খু*ন করতে একবার ও ভাবতাম না আমি।

-স্যরি আমি কিছু করবো না ওর।

-হুম! আমার কথার থেকে এক চুল পরিমাণ নড়চড় হলে তোমায় জেলে ঢুকিয়ে যাবত জীবন কারাদন্ড দিতে আমার দুই সেকন্ড সময় ও লাগবে না।

-তুমিও ফাঁসবা কিন্তু!

-হাহা! আমি আমার বিজন্যাস নিয়ে কোন ইনফরমেশন বা কেস দিবো না। দিবো তো কাজের মেয়েকে রেপ করার কেস। তুমি জানো সব ভিডিও প্রমাণ আমার কাছেও আছে।

-তুমি আমার দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছো?

-তাছাড়া তোমায় জব্দ করার জন্যই আমি কিছু বলিনি। নাহলে আমায় তোমাদের এসিস্ট্যান্ট হতে হতো। মেইম পয়েন্টে আসি! মেইন পয়েন্ট এখন আমি তোমাদের বস আর তোমরা আমার কথা মতো সব করবা।

-সে তো করছি এখনো।

-ভাবতে পারিনি আমি টাকা, শো অফ,প্রাচুর্য আমায় এতোটা অন্ধ করে দিবে খারাপ পথে চলেই গেলাম। অবৈধ জিনিস পাচার করা দেশে আনা। কোটি,কোটি টাকা ইনকাম করা। সাথে দু একটা টিম রাখা। দু’একটা খু*ন ও নিজের হাতে করা।

-নিবরাস মনে হয় না এতো সহজে আমায় ছেড়ে দিবে।

-আমাদের কোন তথ্যই বাইরে পাচার হয়না। বাড়ীরটা বাড়ীতে,ফোনেরটা ফোনে আর অফিসেরটা অফিসেই থাকে।

#চলবে

পার্ট -১৭

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=363357432925869&id=100077548442342&mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here