#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|২০|
#শার্লিন_হাসান
গাড়ীতে আনায়া গাল ফুলিয়ে বসে আছে তাকে শপিং করিয়ে দেয়নি বলে। নিবরাস রেগে বসে আছে তাকে দোকানদারের সামনে ইনডিরেক্টলি কিপ্টা প্রমাণিত করলো তার বউ। তারউপর তার চুজ করা ঘড়ি রিজেক্ট করে নিজের পছন্দের ঘড়ি নিলো।
দু’জনের মাঝে পূর্ণ নিরবতা বিরাজমান। মির্জা বাড়ীতে আসতে আনায়া চুপচাপ নাজিয়ার গিফ্ট নিয়ে ভেতরে চলে যায়। নিবরাস তার পেছন দিয়ে আসে। রুমে এসেও কেউ কারোর সাথে কথা বলে না। আনায়া শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে নিচে চলে যায় লান্সের জন্য! তার পেছন দিয়ে নিবরাস আসে। বাকীদের লান্স শেষ। আনায়া নিবরাস চুপচাপ বসে খাচ্ছে। কেউই কারোর সাথে কথা বলে না।
তখন আবার মিসবাহ আসে। তার মামু আর বউমনিকে এতো চুপচাপ দেখে বলেই ফেলে,
-মামু বউমনিকে বকা দিয়েছো?
-না শপিং করিয়ে দেইনি।
-টাকার অভাব তোমার?
-হুম! তোমার নানাভাইকে বলো মামুকে টাকা দিতে এইমাসে।
-দিবে না সে আরেক কিপ্টা।
-যাহ বাপ তোর বউমনির কাছেই যা। কিছু হলেই তোদের মুখে কিপ্টা ছাড়া কিছুই শুনি না। গাড়ত্যাড়া একটা আমার কপালে জুটেছে।
নিবরাসের কথায় আনায়া রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। নিবরাস সেসবে পাত্তা দেয়নি। চুপচাপ খেয়ে দু’জন রুমে চলে যায়। আনায়া অপেক্ষায় ছিলো নিবরাস কখন আসবে আর তাকে ধরবে।
নিবরাস চুপচাপ খাটে গা এলিয়ে দেয়। আনায়া তখন তার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
-আমি ঘাড়ত্যাড়া?
-আমাকে জিজ্ঞেস করছো?
আনায়া রেগে যায়। সে সিরিয়াস মুডে ঝগড়া করতে এসেছে অথচ তার বদলোকটা এমন ভাব করছে মনে হয় কিছুই হয়নি।
-সত্যি আপনার টাকা নেই?
-তোমার মতো আমি কোটিপতি না। সরকার যা দেয় সেখান থেকে আবার কতজনকে দান করতে হয়। চাঁদাবাজি করলে টাকার অভাব পড়তো না। অবশ্য এসব আমি করি না।
-আপনার বাবার কোম্পানি আছে না?
-আচ্ছা এতো কথা কেন? গতকাল রাত্রে তোমার রাগ ভাঙাতে কতগুলো টাকা খরচ হলো। সেই সাথে লাখ টাকার উপরে গিফ্ট কেনা হলো শুধু একরাতের জন্য। আজকেও পঞ্চাশ হাজারের বেশী গেলো। একটু হিসাব করো?
-বাবা এই কিপ্টে লোককে কোথা থেকে খুঁজে পেলো.
-শোনো আমাদের বেবি আসলে তখন…
-এই শুনুন আপনার এসব হিসাবের ভাষণ নিজে,নিজে দেন আমার সামনে না। যত্তসব! মানে কী একটা অবস্থা এটা আপনি? এতো হিসাবী?
-শোনো আমি ভাষণ দেই না। আমি সবার জন্য একসাথে শপিং করবো সেজন্য তোমায় একা করে দেইনি।
-সবাই কী আমার মতো আপনার বউ?
-না।
-বুঝেছি তারিশা রাগ করবে মেইন পয়েন্ট এটা। এতেসব বাহানা আমায় দিবেন না। যান আমার চোখের সামনে থেকে সরে যান। আর শপিংয়ের কথা তৃতীয়বারের মতো মুখে আনবেন না। এটার ম্যাটার এখানে ক্লোজ।
-তুমি রাগ করেছো?
-আসলে কী! কিছু মানুষ রাগিয়ে দেওয়ার পর যখন জিজ্ঞেস করে রাগ করেছো তখন তাদের মন চায়..
-কী?
আনায়ার কথার মাঝে পোড়ন কেটে বলে নিবরাস। তখন আনায়া বলে,
-মুখটা ভেঙে দিতে। অসহ্য লাগে এদের।
-স্যরি।
নিবরাসের স্যরি আনায়া পাত্তা দেয়না।
*****
বিকেলের দিকে আনিসুল হক বসে কফি খাচ্ছেন। আহিয়া ও তার সাথে বসে নিজের কাপে কফি বানাচ্ছে। তখন আনিসুল হক বলেন,
-তোমার ফুফির সাথে কথা হয়?
-হুম হয় তো!
-আগামী কালকে খান বাড়ীতে যাবো। তোমার ফুফির ছুটির দিন সাথে খান বাড়ীর সবাই অবসর! তাঁদের সাথে কালকের দিনটা কাটাবো।
-ওহ! যাবো তবে।
-তাহিয়াটাকে না খুব মনে পড়ছে। একটা পাগল ছিলো আমার। চঞ্চল মেয়েটা একবারে সারাজীবনের মতো নিরব হয়ে গেলো।
-ওই নিবরাস!!
-ওদের ক্ষমতা আছে সেজন্য কিছু বলতে পারছি না। তবে এর পতন হলে অবশ্যই এই কেসটা সামনে আনবো একে এমন ভাবে ফাঁসাবো যাতে যাবত জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়।
-ওটা তো তোমার ভাগ্নির জামাই।
-আনায়ার কথা মনেই ছিলো না। বাদ দাও ওর বাবার সাথে তেমন ভালো সম্পর্ক নেই আমাদের আপাতত যা আছে মন কষাকষি!
আহিয়া কফির মগ হাতে নিজের রুমে চলে আসে। তাহিয়ার একটা ফটোফ্রেম বের করে তাতে হাত বুলায়। মিষ্টি হাসি দেওয়া মেয়ে। চোখ দু’টো ভীষণ মায়াবী ছিলো। চঞ্চল একটা মেয়ে ছিলো। হ্যাঁ নিবরাসকে পা’গলের মতো ভালোবাসতো তাহিয়া। ভার্সিটিতে তার সাথে নিবরাসের প্রথম দেখাটা হয় নবীন বরণে। সেখানে নিবরাসকে কালো পান্জাবিতে দেখে ক্রাশ খায় তাহিয়া। খবর নেওয়ার পর জানে ছাত্রলীগের সভাপতি। পলিটিক্স নিয়ে দিনরাত কাটায়। বলা যায় ভবিষ্যত নেতা। নিবরাসে হাঁটা, চলা, কথার ভাব ভঙ্গি সবই তাহিয়াকে ভীষণভাবে মুগ্ধ করে। যখন শুনতে পায় নিবরাস মেয়েদের থেকে দূরে থাকে। কাউকে পাত্তা দেয়না অনেকে প্রপোজাল দিয়ে রিজেক্ট হয়! তখন প্রপোজাল দেওয়ার কথা মাথা থেকে উড়ে যায় তাহিয়ার। নিবরাসকে বেশীরভাগ সময় ফলো করতো সে। একদিন তো হাতেনাতে ধরাও খায় তার দলের একজনের কাছে। অবশ্য তেমন কিছু বলতে পারেনি লোকটা নিবরাসের জন্য সেদিন বেঁচে যায়। নিবরাস জিজ্ঞেস করেছিলো কেনো প্রতিদিন পিছু নেয়। তখন তাহিয়া উত্তর দেয়, ‘তার বাড়ী সামনের রাস্তায় সেজন্য এই পথে আসা যাওয়া হয়।’
ধীরে,ধীরে নিবরাসের প্রতি না চাইতে একটু বেশী আসক্ত হয়ে পড়ে তাহিয়া। সে জানতো না এই আসক্তি কতটা ভয়বহ! এলকোহলের আসক্তি তো ধীরে,ধীরে একটা মানুষকে মৃত্যুর সর্য্যায় নিয়ে যায় তবে এই নিবরাসের প্রতি অনুভূতুর আসক্তি তাকে ধীরে,ধীরে না একজটকায় মৃত্যুর দুয়ারে নিয়ে যায়।
খান বাড়ীতলও মাঝেমধ্যে আসা যাওয়া হতো তাহিয়ার। তখন শামিম সরদারের সাথে জায়ানের গলায়,গলায় ভাব ছিলো। যাওয়া আসা হতো খান বাড়ীতে! শামিম সরদারের পেছন দিয়ে একদিন তাহিয়া ও যায়। জায়ান আর শামিম সরদারের কিছু কথোপকথন যা নিবরাসের বিরুদ্ধে ছিলো সেই সাথে তার ফুফির আর জায়ানের গোপন অবৈধ ব্যবসা সবই নিজ কানে শুনে তাহিয়া। তার পরে ছিলো নির্বাচন। শামিম সরদার প্রার্থী হবে নিবরাসের সাথে। এমপি নির্বাচিত হলে জায়ানের বিজন্যাসের জন্য লাভ সেই সাথে শামিম সরদারকে শেয়ার দিবে।
তখন তাহিয়া সীতারা আহম্মেদের পেছনে লাগে। তার বিরুদ্ধে কিছু প্রমাণ জোগাড় ও করে। তার ইচ্ছে ছিলো নিবরাসকে সবটা বলে দেওয়ার। সেই সাথে প্রমাণ ও দিয়ে দেওয়ার। তখন তাদের নির্বাচন ছিলো এটা,ওটার ভেজাল ছিলো। কোন ভাবে সীতারা আহম্মেদ ও টের পায় তাহিয়া তার বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করে আর সে নিবরাসের পক্ষে। নিবরাসের ভালো চায়! কিন্তু নিবরাস তাকে এভয়েড করে।
তাহিয়ার উপর কড়া নজরদারি করা হয়। নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করার পর নিবরাস এমপি মনোনয়ন পায়। তার কয়েকমাস পর তাহিয়া পুনরায় নিবরাসকে ফলো করতো। একটু কথা বলার সুযোগ খুজতো, এক্সিডেন্টলি তাঁদের দেখাও হতো। নিবরাস কিছুতেই তাকে পাত্তা দিতো না। তবে তাহিয়া হাল ছাড়েনি। চেয়েছিলো নিবরাসের মন জয় করতে।
এসবের ভীড়ে সীতারা আহম্মেদের কথা তার মাথা থেকে উড়ে যায়। নিবরাসের নাম্বার জোগাড় করে কল দিয়েও তাকে বিরক্ত করা শুরু করে তাহিয়া। কিছুতেই নিবরাসের মনে স্থান করে নিতে পারেনি। একসময় তার কাছে তার অনুভূতি তুচ্ছ মনে হয়। খুব রাগ,অভিমান জমে নিবরাসের প্রতি! এই একটা অভিমান নিয়েই দুনিয়া ছাড়তে হয় তাকে। আজো জানা নেই তাহিয়া নামক মেয়েটি নিবরাসের মনে স্থান করতে পেরেছিলো কীনা। হয়ত না! নিবরাসের এসবে ইন্টারেস্ট কোন কালে ছিলো না। সে চায়না তার রাজনীতির মঞ্চে কোন কালো দাগ! সে চায় না তার নামের পাশে নারীর নামের কোন ঘটনা চক্রের ট্যাগ বসুক। শুধু তাহিয়া না তাহিয়ার মতো অনেককে নিবরাস এভয়েড করতো।
তাহিয়ার জীবনের শেষ দিন ছিলো। দিনটা ছিলো বৃহস্পতিবার। একটা ক্লাস শেষ করেই তাহিয়া বেড়িয়ে পড়ে নিবরাসের খোঁজে।
#চলবে
(বাকীটা আগামী পার্টে ক্লিয়ার করে দেবো। ছোট্ট পার্ট একটু মানিয়ে নিন আমি ভীষণ ব্যস্ত লেখার মতো সময় নেই। তবুও আপনাদের কথা ভেবে লিখতে বসেছি সাড়ে নয়টায়।🙂)