হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|২৪| #শার্লিন_হাসান

0
222

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|২৪|
#শার্লিন_হাসান

তাহিয়া রিকশা থেকে এদিকওদিক তাকায়। তড়িঘড়ি মাস্কটা পড়ে নেয় সে। বাইরে বের হয়েছে অনেকদিন পরেই। কিন্তু মাস্ক পড়তে তার ভালো লাগে না। এই শহরের অলিগলিতে সে ঘুরে বেড়ায় এই শহরেই থাকে। অথচ তার একটা প্রিয় মানুষের সাথেও দেখা হয়না। খুব সাবধানতা অবলম্বন করে থাকে সে। পান থেকে চুন খসলে নিবরাসের কাছে খবর পৌঁছে যাবে। আর নিবরাস ও তাকে শহর ছাড়া করবে।

হাজারো চিন্তা ভাবনা শেষ হলো যখন সে তার বাড়ীর সামনে পৌঁছায়। রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে ভেতরে চলে যায়। বাড়ীটা পুরোনো বলা চলা। বাইরেটা দেওয়ালের রং পুরোনো হয়ে শেওলা পড়ে আছে। ভেতরে যেতে একজন মহিলা তাকে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়। মহিলাকে বৃদ্ধ বলা যাবেনা আবার বেশী শক্তপাক্তো ও বলা যাবে না। সোফায় বসে পানি পান করে তাহিয়া। তখন শিরিন বেগম বলেন,

-আর কতদিন পালিয়ে বেড়াবে?

-যতদিন না সে চায়। আমার বোন তো তাকে মে*রে ফেলার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।

-তোমার বোনের ভুল ধারনা ভেঙে দাও।

-হুম ভাঙবো। কিন্তু মিমি জানো কী? সে বিয়ে করে নিয়েছে আচ্ছা আমার কথা ও ভাবলো না একটিবার?

-সে তোমায় ভালোবাসে না।

-ইশশ! আমায় কেউ ভালোবাসে না।

-এসব বাদ দাও তাহিয়া। তোমার বাবা,বোন তো এখনো তোমায় মিস করে। এসব বাদ দিয়ে তাঁদের সামনে গিয়ে দাঁড়াও। আর তোমার ফুফির আসল মুখোশটা সামনে আনো।

-আনবো খুব শীঘ্রই। এই মহিলা আমায় মেরে ফেলতে চাইলো। সেদিন নিবরাস গিয়েছিলো সেখানে। শামিম সরদারের বলা কথাগুলো রেকর্ড করে নিয়েছে আর থ্রেট দিয়েছে এটা পুলিশের কাছে দিয়ে তাঁদের সব কালো পথের ব্যবসা বন্ধ করে দিবে। তবে শর্ত দিয়েছে একটা এখানে যা হবে বাইরের কাক পক্ষী ও টের পাবেনা। আমার কী মনে হয় জানো? নিবরাস জানতো আমায় ওরা কিডন্যাপ করবে নাহলে এতো সুন্দর ভাবে অল্প সময়ে কেউ সবটা প্লান মাফিক করতে পারে?

থেমে,

সেদিন আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। নিবরাসের কথা অনুযায়ী আরেকটা মেয়েকে আনা হয়। সম্ভবত কোন হসপিটাল থেকে আনা হয়। মেয়েটার পরিচয় বা পরিবার কারোর খোঁজ ছিলো না। জানা নেই আমার তবে আমাকে বাঁচানোর জন্য মেয়েটার সাথে অন্যায় করা হয়। মেয়েটাকে চেয়ারে বসিয়ে তার মুখে এসিড ঢেলে তার মুখটা বিকৃতি করে দেওয়া হয়। নিবরাসের কাজ হতে সে আমায় নিয়ে বেড়িয়ে আসে সেদিন। আমাদের গাড়ী চলে আসে সেখান থেকে। জঙ্গল আবৃত পল্লীগ্রাম থেকে কোলাহলময় নগরীতে চলে আসা হয়। সেখানে কী হয়েছিলো জানা নেই। তবে তখন আমার মনে হয়েছিলো নিবরাস আমায় ভালোবাসে হয়ত! নাহলে আমার প্রাণ কেনো বাঁচাবে? আজোও বিশ্বাস করি সেটা। কিন্তু কয়েকদিন হলো বিশ্বাস আর মনটা ভেঙে গেছে যখন শুনেছি নিবরাস বিয়ে করেছে। আসলে সে আমার ভাগ্যে নেই তবে শখের পুরুষ সে। আছ এবং থাকবে শখের হয়ে। আচ্ছা মিমি তুমি বলো সে তো চাইতো আমি তাকে বিরক্ত না করি। আমি মরে গেলেও তার কিছু যায় আসে না বরং তার শান্তি! কিন্তু সে আমায় বাঁচালো সেদিন। এসিডে পুড়ে এই রুপটা বিভৎস হওয়া থেকে। তাইপেনের বিষাক্ত বিষের ছোঁয়া থেকে। ইশশ সেদিন আমার মুখ পুড়তো সেই সাথে আমার শরীরের প্রত্যেকটা অংশ নীলচে বর্ণ ধারণ করে সব খুঁয়ে, খুঁয়ে পড়তো। ভেবেছো কতটা ভয়ং*কর মৃ*ত্যু আমার জন্য লেখা ছিলো।

-এই নেতা কে আমি বুঝিনা মা। আসলে তার মাথায় কী ঘুরছে?

-জানা নেই!

দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায় তাহিয়া। বছর খানেক হলো বাড়ীটাতে আসা! থাকা। নিবরাসই ম্যানেজ করে দিয়েছিলো। সেদিন রোহিতের সাথে একটা বাংলোতে পাঠানো হয় তাহিয়াকে। সেখানে কয়েকদিন সুরক্ষিত ভাবেই থাকে সে। তার মৃ*ত্যুর রপশ কাটতে এই বাড়ীতে চলে আসে।

জানালার ধারে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে তাহিয়া। নিবরাস মির্জা নামটা মনে পড়লে বুকটা কেঁপে উঠে। খুব বি*শ্রী ভাবে তাকে হারালাম। ইশ! আমি এই নগরীতে থাকবো কীভাবে তাকে ছাড়া?

****

বাড়ীটা ভালো করে দেখে রাখে নাজিয়া। রিকশা ঘুরিয়ে তাহিয়ার পিছু নেয় সে। তাহিয়া এই বাড়ীতে থাকে অথচ এতোদিন ভাবতো সে মারা গেছে। আর কত কিছু লুকানো আর প্রকাশিত হবে? আনায়া নিবরাসের কথা মনে আসতে নাজিয়া চলে যায় গন্তব্যের দিকে।

তার আসতে কিছুটা লেট হয়ে যায়।আনায়া নিবরাস এতোক্ষণ একটা ক্যাফেতে বসে ওয়েট করেছিলো তার জন্য।

নাজিয়া যেতে আনায়া তাকে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে নেয়। নাজিয়াকে দেখে আনায়া মুচকি হাসে! মেয়েটা দেখতে আনায়ার কপি। চেহারায় এতো মিল! তার বোনটা অল্পবয়সী হলেও রুপে,গুণে,ম্যাচিউরিটিতে যেনো তাকে ছাড়িয়ে। নাজিয়া সামনের চেয়ারটায় বসতে আনায়া বলে,

-পাখি তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও?

-তোমার মতো একটা নেতার বউ।

নাজিয়ার কথায় আনায়া,নিবরাস দু’জনে হেঁসে দেয়। নাজিয়া সিরিয়াস মুখ করে বলে,

-অ্যাম সিরিয়াস ভাইয়াকে বলো তার মতো একটা নেতা আমায় খুঁজে দিতে। তারপর তোমার মতো আমিও নিজের নামের সাথে নেতার বউ ট্যাগটা লাগাবো।

– মেয়ে তোমার লজ্জা হওয়া দরকার। বড় বোনের থেকে জামাই খুঁজছ?

-ধুর এসব লজ্জা টজ্জা আমার কমই।

-একদম আমার জামাইয়ের মতো।

-আমি নাজিয়ার মতো এতো বেশী ঠোঁটকাটা না বউ। আমি তো তোমার লাজুক স্বামী! তোমার অনুমতি ছাড়া তোমায় একটা চুমুও খাইনি।

-হ্যাঁ,হ্যাঁ সে তো দেখি আপনি কেমন লাজুক।

নিবরাসের দিকে তাকিয়ে নাজিয়া একটু শব্দ করেই হেঁসে দেয়। আনায়া নিবরাসকে ভেংচি কাটে। তখন নাজিয়া বলে,

-বিশ্বাস করা বড্ড দায়! তুমি ভাই নিবরাস মির্জা একনাম্বারের ঠোঁট কাটা তোমার মুখে লাজুক শব্দটা একদম শোভা পায়না।

-দুই বোন মিলে আমায় পচাচ্ছে। আমি একজন নেতা একটু তো সন্মান আর ভদ্র ভাবে কথা বলো আমার সাথে।

-আরে আমরা আমরাই তো।

ঠাস করে থাপ্পড় দিয়ে কথাটা বলে আনায়া। নিনরাস গালে হাত দিয়ে বসে আছে। আনায়া কথার মাঝে খেয়াল করেনি চড়ের ব্যপারটা। কথা বলার সময় এমন হাত পা চলেই তার। তবে কয়েকমাস একটু বদ্রতার ট্যাগ বসাতে চেয়েছে কিন্তু তার মতো তার চঞ্চল বোনকে পেয়ে চঞ্চলতা জেনো বেড়ে গেছে। নিবরাস আনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

-কথা বললে হাত পা নিজের কাছে গুটিয়ে রেখে কথা বলবে। হুটহাট পাশের জনকে থাপ্পড় দিয়ে কথা বলার ফিল নেওয়া কোন ধরনের ভদ্রতা?

-আমি আপনায় থাপ্পড় দিয়েছি?

-না আদর দিয়েছো।

-স্যরি! রিয়েলি স্যরি! আমি বুঝতে পারিনি। দেখি কোথায় থাপ্পড় দিয়েছিলাম?

-গালে!

-থাক বাড়ীতে গেলে গালটা দিও একটু মালিশ করে দেবো।

-লাগবে না।

তখন নাজিয়া বলে,

-একটা কথা ছিলো খুবই ইমফরটেন্ট।

-কী কথা?

নিবরাস বলে। তখন নাজিয়া বলে,

-তাহিয়া আপুকে দেখলাম।

-দেখে ফেলেছো? ওয়াও! ভাবতে পারিনি তুমি দেখে ফেলবে। যাই হোক কয়েকদিন গেলে আমিও বলতাম তোমায়।

-তাহিয়া বেঁচে আছে? একবছর আগে না শুনলাম ও মারা গেছে।

-মরেনি ওকে বাঁচিয়ে দিয়েছি। তোমার মায়ের কুকীর্তি ফাঁস করার জন্য এমন কাউকে আমার চাই। সেজন্য ওকে বাঁচিয়ে নিয়েছি সেদিন। এছাড়া কোন ইচ্ছে ছিলো না। প্রচুর জ্বালিয়েছে আমায়।

-ও আমার কাজিন ভুলে গেলেন?

-তো কী? দেখো তোমার কাজিনের জন্য এই হ্যান্ডসাম নেতাকে হারাতে তুমি। ভাগ্যিস পটে যাইনি।

-এই শুনুন সবসময় নিজেকে এতো বড় ভাববেন না। যত্তসব!

তখন নাজিয়া বলে,
-আরে ভাই কথাটা তুললাম আমি। কাহিনীর সারাংশ বলবা তা না দু’জনে ঝগড়া করেই যাচ্ছে।

-আরে আয়াত তোমার কাজিন এটা ভার্সিটি লাইপ থেকে আমার পিছু পড়ে ছিলো। আঠার মতো! কোথাও শান্তি পেতাম না এটার জন্য। সব জায়গায় একে দেখা যেতো। কী জানি কীভাবে তোমাদের বিজন্যাসের বাইরের আরেকটা বিজন্যাসের কথা ও জানে। তোমার মাকে ফাঁসাতে চেয়েছে। জানি না কী শত্রুতা ওদের মাঝে। তোমার মা কোন ভাবে জানে আর ওকে রাস্তা থেকে সরানের জন্য সব পরিকল্পনা করে নেয়। আমি তার পরিকল্পনা সম্পর্কে আগে থেকে অবগত ছিলাম। তারপর আরকী! ওকে বাচিয়ে দেই সেদিন।

-এখন তো ওর বোন আপনায় ওর খু*নি ভেবে পেছনে পড়ে আছে। শুধু তাইনা শামিম সরদারের সাথে পরিকল্পনা করছে আপনায় মারার জন্য।

-করতে থাকুক! দেখি কবে আমায় মারে।

-আরে বাজে কথা ছাড়ুন না।
তেজ দেখিয়ে বলে আনায়া। নিবরাস আর এই নিয়ে কথা বাড়ায়নি। তারা তাঁদের মতো কথাবার্তা বলে কোল্ড ড্রিং খেয়ে উঠে। তেমন একটা ঘুরাঘুরি করেনি আর! নাজিয়াকে তার গিফ্ট গুলো আনায়া দিয়ে দেয়।

নাজিয়া গিফ্ট নিয়ে আনায়া, নিবরাসকে বিদায় জানিয়ে রওনা দেয় হোস্টেলের উদ্দেশ্য।

বাড়ীতে আসতে,আসতে বিকেল গড়ায়। আনায়া ব্যস্ত পায়ে উপরে উঠে। নিবরাস নিচে কথা বলছে রোহিত,সৌরভের সাথে।

তারিশা বেশ নজর রাখছে আনায়া,নিবরাসের উপর। কোন কথা না বলে সোজা নিবরাসের রুমে ঢুকে যায় সে। তারিশাকে দেখে আনায়া বলে,

– কারোর রুমে ঢুকতে হলে পারমিশন যে নিতে হয় সেই শিক্ষা মনে হয় এখনো পাওনি তুমি।

-পারমিশন নেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না। এই তুমি না আসলে তোমার জায়গায় আমিই থাকতাম।

-ব্রাহ্মণ্ হয়ে চাঁদ ধরার স্বপ্ন। বেশ ভালো তো! স্বপ্ন দেখা ভালো তবে সাধ্যের বাইরের কিছুকে নিয়ে নয়। এতে করে শুধু কষ্ট আর অপূর্ণতা পাওয়া যায় কখনো পূর্ণতার ছোঁয়া না।

-আজকাল বেশ বাইরে বের হও দেখছি। মির্জা বাড়ীর বউ এতো বাইরে কী?

-আমি তো আমার পার্টনারকে নিয়ে বের হই। আমায় প্রটেক্ট করার জন্য সে আছে। তুমিও আজকাল একা,একা বের হও দেখি। শুনেছি তুমি নাকী মির্জা বাড়ীর মেয়ে। আর আমি কোথায় যাবো না যাবো সেসব আমার হাজবেন্ড দেখবে বুঝবে। তোমার এসবে কাজ নেই।

-অবশ্যই কাজ আছে! অনেক কাজ আছে আমার।

-মনে হয় কারোর দু চার টাকার চাকরগিরি করো।

-মুখ সামলে!

-তুমি নিজের মুখ সামলাও! দিনদিন সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছো। আমাদের পার্সোনাল মেটারে ঢুকো কেন?

-নিবরাস আমার হতো! শুধু তুমি তাকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছো।

তখন আবার রুমে উপস্থিত হয় নিবরাস। তারিশার কথায় তার মেজাজ বিগড়ে যায়। মেয়েটার লাজ লজ্জা বলতে কিছু নেই। এসব বাড়াবাড়ির জন্য চ*ড় পর্যন্ত খেয়েছিলো একসময়। তখন আনায়া আসেনি নিবরাসের জীবনে। তাহিয়াকে সরানোর পর তারিশা জামেলা শুরু করে। ঘরে একজন বাইরে তো তাহিয়া ছিলোই। এখন বিয়ে করেও শান্তি নেই তার।

আনায়া রেগে তাকিয়ে আছে তারিশার দিকে। নিবরাস রুমে আসতে আনায়ার রাগ আরো বেড়ে যায়। তারিশা তাকে এতো কথা শোনাবে কেন? নিবরাস কিছু বলছে না কেন?

তখন নিবরাস তারিশাকে বলে,

-সমস্যা কী তোমার তারিশা?

-আমার সমস্যা এই আনায়া। তুমি জানো ভাইয়া আমি তোমাকে ভালোবাসী।

ঠাস করে চ*ড় পরে যায় গালে। নিবরাস রেগে চেঁচিয়ে বলে উঠে,

-দিনদিন সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছো তুমি। আমি বলেছি আনায়ার থেকে দূরে থাকবে এমনকি আমার থেকেও। সমস্যা কী তোমার? বেশী সুখ কপালে সইছে না তাই না? তোমার মুখোশ টেনে ছিঁড়ে তোমায় বাইরে ছুঁড়ে ফেলতে আমার দু’মিনিট ও সময় লাগবে না। সো বি কেয়ার ফুল। ওয়ার্নিং দিয়ে দিলাম। নেক্সট টাইম আমার রুমে আসবে না তো আমায় নিয়ে আনায়ার সাথে ঝগড়া করবে। গেট লস্ট! আর লজ্জা-শরম কিছু রেখো। ব্যক্তিত্ব তো নেই তারউপর যা তা অবস্থা! ছ্যচড়ার উপর কোন নোবেল থাকলে সেটা তোমাকেই আমি দিতাম।

#চলবে

(তারিশার রাজত্ব আজকের পর্বেই শেষ।🫣 ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। নাজিয়ার জন্য কেমন ছেলে দেবো?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here