#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|২৫|
#শার্লিন_হাসান
তারিশা রুম থেকে বের হতে দেখে মরিয়ম নওয়াজ দাঁড়িয়ে আছেন। তারিশার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছেন। তারিশা একটা ঢোক গিলে! আমতা আমতা করে বলে,
-তুমি এখানে মামনি?
-তুমি ওদের রুমে কী করো তারিশা?
-ওই এমনিতে এসেছিলাম আমি।
-আর মিথ্যে বলতে হবে না তোমার। আমি সব শুনেছি! বেয়াদব মেয়ে একটা। এই শিক্ষা দিয়েছি তোমায়? ওদের মাঝে বারনার ঢুকো কেন তুমি? আনায়া মির্জা বাড়ীর বউ এই কথাটা মাথায় রাখবে আর তুমি মেয়ে বিয়ে দিলে চলে যেতে হবে।
তারিশা কিছু বলছে না। মরিয়ম নওয়াজ হনহনিয়ে চলে আসেন সেখান থেকে। মূলত তাঁদের চিৎকার চেঁচামেচি তে এদিকটায় এসেছিলেন তিনি। তারিশার থেকে এসব একদম আশা করতে পারেনি তিনি।
আনায়া রেগে বসে আছে। নিবরাস আর কিছু বলেনি তাকে। কে জানে তার ত্যাড়া বউ আবার তার উপর রাগ ঝাড়ে কীনা। নিবরাস চুপচাপ শাওয়ারে ঢুকে যায়। আনায়া মেঝেতে তাকিয়ে আছে। পারছে না মুখের উপর সব বলে দিতে! কিন্তু বললে তারাই বিপদে পড়বে।
কী মনে হতে আনায়া সিদ্ধান্ত নেয় বাবার কাছে যাবে সে। সেখানে কয়েকমাস থাকবে। নিবরাস আসতে আনায়া বলে,
-আমি বাড়ী যাবো। কয়েকমাস সেখানেই থাকবো।
-তুমি কয়েকমাস বলতে কয়মাস বুঝাচ্ছো?
-এই দুই তিন মাস।
-তুমি কী করে ভাবলে এটা আনায়া? আমমি তোমাকে ছাড়া কীভাবে রাতে ঘুমাবো?
-যখন আমি ছিলাম না তখন কীভাবে ঘুমিয়েছেন?
-তখন তো কাজ করেই রাত কভার করে দিতাম। এখন তো বউ আছে রোমান্স করে রাত কভার করা দরকার। তবুও হিমশিম খাচ্ছি।
-অস*ভ্য লোক মুখটা বন্ধ রাখবেন?
-আরে কী বলো তুমি? দুই তিন মাস। এক দুই দিন হলে একটা কথা ছিলো।
-এতো বউ পাগল হতে হবে না।
-আচ্ছা যাও।
-দুই তিন মাস কথাটা মাথায় রাখবেন।
-হ্যাঁ,হ্যাঁ থাকবে।
দেখে কী কপাল! বিয়ের চারমাস না যেতে বউ তিনমাসের জন্য বাপের বাড়ী চলে যাচ্ছে। বউ ছাড়া থাকতে হবে।
-বেশী প্যাকপ্যাক না করে নিজের কাজে মন দিন তো।
আনায়া নিজের ব্যাগ গুছানোর কাজে উদ্যত হয়। নিবরাস কাউচে বসে ফোন স্ক্রোল করছে।
সন্ধ্যায় সবাই লিভিং রুমে বসে কথা বলছে। নিরব মির্জা সহ! আনায়া তাঁদের জন্য চা বানিয়ে আনে।
টুকটাক কথা বার্তা হতে নিরব মির্জা তারিশাকে বলেন,
-তোমার তো ভার্সিটি ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। হোস্টেল যাইবা নাকী বাড়ীতে থাকবা?
-হ্যাঁ চলে যাবো দু একের ভেতর।
-মাইশা ও চলে যাবে শোনলাম। আনায়াও চলে যাবে বাড়ী তো ফাঁকা হয়ে যাবে।
নিরব মির্জা বলেন। কেউই আর তেমন কথা বাড়ায়নি।
পরের দিন সকালে আনায়া নাস্তা করে চলে আসে তাঁদের বাড়ীতে। জিয়াউর রহমান আনায়াকে দেখে বেশ খুশি। কতদিন পর বাড়ীতে এসেছে তার কন্যা। আনায়া নিজপর রুমে গিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। কতগুলো দিন হয়ে গেলো প্রিয় রুমটায় আসা হয়না। একসময় এই রুমটা ছাড়া ভালোই লাগতো না। শখের রুমের মায়াও ত্যাগ করে দিতে হয়। এই নারীর জীবনটা বুঝি ত্যাগে,ত্যাগেই কাটলো।
বেলকনিতে যেতে দেখলো তার টবের গাছগুলোও মৃত প্রায় অবস্থা। শখ করে বিশাল বেলকনির এক কোণায় পছন্দের কয়েকটা ফুল গাছ লাগিয়েছিলো আনায়া। এখন যত্ন ও নেওয়া হয়না আগের মতো।
পুরো বাড়ীতে পদচারণ করলো আনায়া। সোফায় বসে তার বাবার সাথে খোশগল্পে মেতে উঠে। অনেকদিন পর আনায়া এসেছে তার পছন্দের খাবার রান্না করতে বলা হয় কাজের বুয়াকে।
*******
রাতের দিকে আনায়া বই হাতে বেলকনিতে বসে পড়ছে। একাডেমিক বই না সে সমরেশ মজুমদারের সাতকাহন পড়ছে। বইটা তার ভীষণ প্রিয়! রাত প্রায় সাড়ে দশটা। বেলকনিতে বসে চাঁদ দেখছে সাথে বইও পড়ছে আনায়া। আজকের চাঁদটা আলো ছড়াচ্ছে বেশ। কিন্তু আনায়ার ব্যক্তিগত চাঁদ তার কাছে নেই।
আনাদের বাড়ীর গেট ছাড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করে নিবরাস। অনেকটা চোরের মতো! তাঁদের গেটের দারোয়ান ঘুমিয়ে পড়েছিলো ভাগ্যিস! হয়ত কিছুক্ষণ পর জেগে যাবে। তাতে কী নিবরাস তো আজকের রাতটা এখানে থাকবে আবার ভোর হওয়ার সাথে,সাথে চলে যাবে। বউকে ছাড়া তার রুমে মন টিকে না। বিয়ের পর এই প্রথম নিবরাস শশুর বাড়ীতে পদচারণ করছে তাও চোরের মতো।
আনায়ার ফোনে মেসেজ দেয় নিবরাস। মেসেজের শব্দে ফোন হাতে নেয় আনায়া। মেসেজ দেখে নিচে তাকায়।নিবরাস তাকে হাত নাড়িয়ে হাই দিচ্ছে।
আনায়া রুম থেকে বেড়িয়ে মেইন গেটে আসে।নিবরাস তড়িঘড়ি ভেতরে ঢুকে পড়ে। লিভিং রুম জুড়ে অন্ধকার। লাইট অন করেনি আনায়া। নিবরাসকে আলতো হাতে ধাক্কা দিয়ে বলে,
-চোরের মতো আসলেন যে?
-তুমি কী চাচ্ছো আমি ডা*কাতের মতো আসি?
– আপনার মতলব টা কী? এই শশুর বাড়ীতে চুরি করতে আসলেন নাকী?
-না শশুরের থেকে চাঁদাবাজি করতে এসেছি। ভেবেছিলাম বাবুর পাপা হবো কিন্তু তুমি আমায় বাবুর পাপা বানানোর বদলে চো*র বানিয়ে দিচ্ছো।
-আরে…
নিবরাস আনায়ার মুখ চেপে ধরে তাকে নিয়ে ভেতরে চলে যায়। আনায়ার রুমে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দেয় নিবরাস। আনায়া দাঁড়িয়ে আছে। নিবরাস সেসবে পাত্তা না দিয়ে খাটের উপর গিয়ে বসে পড়ে।
-নতুন জামাই এসেছে তাকে আদর আপ্পায়ন করবে না?
-নতুন জামাই এভাবে চোরের মতো আসে না। বুঝলেন?
-তুমিও না বউ। আসো চুমু খাই তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
-অ’সভ্য লোক।
-এদিকে আসো আনায়া তোমার জন্য গিফ্ট এনেছি।
আনায়া খুশি হয়ে নিবরাসের সামনে গিয়ে বসে। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
-কী গিফ্ট? তাড়াতাড়ি দিন?
-ইশ কী শখ! টাকা নেই সেজন্য গিফ্ট আনিনি।
-লাগবে না গিফ্ট।
-চুমু লাগবে তাই না?
-আপনি আগে বলুন এভাবে আসলেন কেন? আমাকে বললেই তো হতো।
-ডিস্টার্ব করো কেন?
কথাটা বলে নিবরাস আনায়াকে কাছে টেনে নেয়। আনায়ার অধর জোড়ায় নিজের অধর মিশিয়ে দেয়।
কিছুক্ষণ পর নিবরাস আনায়ার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। আনায়া রেগে তাকিয়ে আছে।
-আজব এতে রাগার কী আছে? জামাই মানুষ আমি একটু আধটু আদর তো লাগেই।
-রাগবো না? আপনাকে আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি সেটার কোন পাত্তাই দিচ্ছেন না।
-কী জেনো জিজ্ঞেস করছো?
-আমার মাথা!
-একটু সন্মান দাও আমায়। নেতা আমি।
-আমাকেও একটু সন্মান দিন নেতার বউ হই আমি।
আনায়ার কথায় নিবরাস হেঁসে দেয়। আনায়া নিবরাসকে টেনে বেলকনিতে নিয়ে যায়। আকাশের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে,
-আজকের চাঁদটা বেশী সুন্দর তাইনা?
-উঁহু একদম সুন্দর না।
-কেন?
-আমার চাঁদের থেকে ওই আকাশের চাঁদ কিছুতেই সুন্দর হতে পারে না।
-আনায়া তোর জামাইটা কত রোমান্টিক দেখ।
-আনায়া কত ভাগ্য তোমার এমন একজনকে লাইফ পার্টনার হিসেবে পেয়েছো।
দু’জনে কিছুক্ষণ কথা বার্তা বলে রুমে চলে আসে। প্রতিদিনের মতো আনায়া নিবরাসের বুক দখল করে নেয়। গুটিশুটি মেরে নিবরাসের বুকে শুয়ে পড়ে আনায়া।
আহিয়ার মাথায় নতুন পরিকল্পনা ঘুরছে। কী ছাড়বে কী ধরবে বুঝতে পারছে না সে।
তাহিয়ার রুমে গিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করে রাত বিরাতে। পুরো রুম এলোমেলো করে ফেলে। তেমন কিছু পাচ্ছে না সে। তবে ড্রয়ার খুলে ডায়েরির পাতার ভাজ থেকে একটা মেমোরি কার্ড পায়। আহিয়া ভাবছে হথথয়ত পুরোনো ছবি সংরক্ষণ করা আছে এতে। বেশী ইন্টারেস্ট আসেনি বিষয়টার প্রতি। তার মাথায় তো একটাই চিন্তা কবে নিবরাসকে মা*রতে পারবে। শামিম সরদার কিছুই করছে না সেজন্য আহিয়া বেশ বিরক্ত হয়। তার মনে হচ্ছে তাকে কোন পরিকল্পনা করতে হবে। নাহলে নিবরাসকে দমন করা সম্ভব না।
#চলবে
(রেসপন্স করার অনুরোধ রইলো।❤️)