হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|৮| #শার্লিন_হাসান

0
250

#হৃদয়_কোঠায়_চাঁদের_পূর্ণিমা|৮|
#শার্লিন_হাসান

-এভাবে বসে থাকবা? আমাকে সাইড দাও ঘুমাবো টায়ার্ড লাগছে।

নিবরাস কথাটা বলে আনায়াকে। আনায়া কোন রেসপন্স করে না। সে খাটের উপর বসে আছে। নিবরাস পুনরায় বলে,

-কথা কানে যাচ্ছে না তোমার?

আনায়া বালিশ নিয়ে নিবরাসের দিকে অগ্রসর করে।

-যান সোফায় গিয়ে ঘুমান।

-আমি সোফায় ঘুমাতে পারি না।

-সেটা জেনে আমার কাজ নেই।

-আচ্ছা আমি তারিশাকে আর কীভাবে বললে ওর লজ্জা হবে? এর আগে আমি ওকে যা কথা শুনিয়েছি ওর লজ্জা থাকলে আমার আশেপাশে ঘেঁষত না।

থেমে,

-ও হোস্টেলে যাওয়ার কয়েকদিন আগে। আমি বৈঠকঘরে বসে ফাইল দেখছিলাম তখন ও প্রবেশ লরে সেখানে। ইনিয়েবিনিয়ে বলছিলো,
-শুদ্ধ পুরুষ আপনাকে আমি ভালোবাসি।
তখন ওকে চ’ড় মেরেছিলাম। বলেছি,
-আমার থেকে একশ গজ দূরে থাকবি। বোন,বোনের মতো থাকবি এর থেকে বেশী বাড়াবাড়ি করলে এবার শুধু চ’ড় মেরেছি পরেরবার মুখটাই ভে’ঙে দেবো।

সাথে আরো কথা শুনিয়েছি। তারপর ও মেয়েটা বেহায়া! ওকে তেমন কিছু আমি বলতে পারবো না কারণ ওর বাবা-মা নেই। এখানে বড় হয়েছে আমাদের দায়িত্ব আছে ওর উপর। আর ওর সেন্স থাকলে এসব করতো না। আমার নিজেরই বিরক্ত লাগে ওকে। আচ্ছা তুমি বলে আমি তো এভয়েড করি ওকে।

-আজকে সারাদিন তে ওর চিপায় ছিলেন। এক সাথে গাড়ীতে করে এসেছেন, ওর হাতের বানানো শরবত খেয়েছেন, আবার ওর রান্না ও।

-তুমি নিজে অনুপস্থিত থাকো। তুমি জানো না আমি বাড়ী ফিরলে আমায় ঠান্ডা পানীয় দেওয়া লাগে।

-এসব আমাকে বলবেন না। আমাকে কেউ সুযোগ দেয়? তারিশাই তো আগে গ্লাস নিয়ে হাজির হয়।

-আমি আম্মুকে বলে দিবো।

-আর নাটক সাজাতে হবে না।

আনায়া নিবরাসের কোলে বালিশ ছুঁড়ে মারে। নিজে বালিশ ঠিক করে খাটের একপাশে শুয়ে পড়ে। নিবরাস সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে। আনায়া তাকে পাত্তা দিচ্ছে না।
বালিশ নিয়ে সোফায় বসে নিবরাস। হাত দিয়ে কপাল স্লাইড করছে। একটু পর পর আনায়ার দিকে তাকাচ্ছে নিবরাস। তারিশার প্রতি এতো বেশী রাগ হচ্ছে তার।

-আমি স্যরি আর এমন হবে না।

কানে হাত দিয়ে আনায়ার সামনে আসে নিবরাস। তাতেও আনায়া গলে না। মুখ ফিরিয়ে নেয় নিবরাসের থেকে।

-আচ্ছা তারিশা আমাদের মাঝে আসবে না। আমি নিজে ওকে বলে দিবো। প্লিজ পারমিশন দাও আমি সোফায় ঘুমাতে পারি না।

-সারারাত বললেও পারমিশন দেবো না। আর আমায় ডিস্টার্ব করবেন না প্লিজ।

নিবরাস ডান হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নেয়। বা হাত দিয়ে চুল স্লাইড করে মাথার পেছনে হাত রাখে। আনায়ার দিকে একনজর তাকিয়ে সোফায় এসে বসে পড়ে। কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর গা এলিয়ে দিতে সক্ষম হয়। তার হাইটের থেকে সোফা ছোট সেজন্য পা আটে না।

-দয়ামায়াহীন বউ! জনগণের নেতাকে এই ছোট্ট সোফায় ঘুমোতে দিচ্ছে। আমার রুম, আমার বাড়ী অথচ খাটে জায়গা হলো না।

বিড়বিড় করতে,করতে ঘুমিয়ে পড়ে নিবরাস।

******

সীতারা আহমেদ কিচেনে নাস্তা বানাচ্ছেন। নাজিয়া উঠেই প্রথমে কিচেনে যায়৷ বাড়ীর বাকীরা এখনো ঘুমাচ্ছে। মেয়েকে দেখে সীতারা আহমেদ প্র্শ্ন করেন,

-এতো সকালে তুমি?

-এখন তো কেউ নেই।

-কিছু বলবা?

-হ্যাঁ বলবো। আনায়া আপুর কথা!

-তোমাকে এই নাম কে বললো শুনি?

-সেসব ছাড়ো! ও তো তোমার সন্তান, কীভাবে এতোগুলো বছর দেখা না করে আছো?

-সেসব তোমায় বুঝতে হবে না। আমার ব্যক্তিগত মতামত,ব্যক্তগত বিষয়ে তুমি খোঁচাবে না। যাও ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে আসো

-ওর ও তো ইচ্ছে করে মাকে কাছে পেতে। মায়ের আদর,যত্ন, ভালোবাসা পেতে।

-দেখো নাজিয়া আমাকে ইমোশনাল বানিয়ো না। তুমি যাও তো এখান থেকে।

নাজিয়া আর কথা বাড়ায়না চলে আসে। সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে জায়ানের মুখোমুখি হয়। নাজিয়াকে দেখে জায়ান হাসিমুখে বলে,

-গুড মর্নিং আয়াত পাখি।

নাজিয়া মুখ ঘুরিয়ে চলে আসে। কথা বলে না জায়ানের সাথে। নাজিয়া যেতে জায়ান দাঁড়ায়। হয়ত কেউ কিছু বলেছে নাজিয়াকে। নিচে আসতে তার কাকীমা কে দেখে জিজ্ঞেস করে,

-কাকীমা আয়াত পাখিকে কিছু বলেছো?

-না তেমন কিছু বলিনি। কেন?

-হয়ত আমার সাথে রাগ করে আছে।
বিড়বিড় করে বলে জায়ান।

****
ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় করে খাটে শুয়ে পড়ে নিবরাস। আনায়া নিচে চলে গেছে সেজন্য আর কথা কাটা কাটি হয়নি তাদের মাঝে।

আনায়া কাজের বুয়াদের সাথে নাস্তা রেডি করে টেবিলে সাজায়। চায়ের কেটলি ট্রেতে রাখে কাপ নিয়ে সোফার ট্রি টেবিলে উপর রাখে। নিরব মির্জা, পরাগ,রোহিত নিচে আসে তখন। তাদেরকে চায়ের কাপ দিয়ে উপরের দিকে পা বাড়ায় আনায়া। করিডোরে আসতে দেখে তারিশা তাঁদের রুমের দিকেই যাচ্ছে। আনায়ার বেশ রাগ হয়। চুপচাপ নিঃশব্দে পেছনে হাঁটে।

তারিশা নিবরাসের রুমে প্রবেশ করে। নিবরাস কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে। গুটিগুটি পায়ে নিবরাসের সোজাসুজি গিয়ে দাঁড়ায়। নিবরাসের ঘুমন্ত চেহারার দিকে একবার তাকিয়ে হাসে।
বিড়বিড় করে বলে,

-শখের পুরুষ।

হাত বাড়িয়ে কপাল স্পর্শ করতে যাবে তখন আনায়া তড়িঘড়ি শব্দ করে রুমে প্রবেশ করে। তারিশা তাকে দেখে থতমত খেয়ে যায়।

আনায়া চুলগুলো সামনে ভাজ করে আনতে,আনতে বলে,

-সমস্যা কী তোমার? আমার বরকে স্পর্শ করছো লুকিয়ে? লেসবিয়ান নাকী?

-আমার ভাইকে আমি স্পর্শ করছি তাতে কার কী?

-কিসের ভাই হ্যাঁ? আর কখনো আমাদের রুমে চোরের মতো ঢুকবে না অবশ্যই পারমিশন নিবে। আর আমার নিবরাসকে আগ বাড়িয়ে শরবত,তোমার রান্না করা খাবার ওর প্লেটে দিবা না। দূরত্ব বজায় রাখবা! আগের সময়টা নেই যে তুমি যা খুশি তা করবা। এখন ওর অর্ধাঙ্গিনী আছে ওর দেখভাল করার জন্য।

চিৎকার, চেঁচামেচি তে নিবরাস উঠে বসে। আনায়ার দিকে তাকাতে দেখে রেগে আছে সে। পাশে তারিশা সেও রেগে আছে।

-তারিশা এখানে কী করছে?

-আমার অনুপস্থিতিতে আপনায় স্পর্শ করতে চাইছে। কতবড় নিলজ্জ হলে হতে পারে।

নিবরাস তারিশার দিকে রেগে তাকায়। কঠোর গলায় বলে,

-নেক্সট টাইম আমার রুমে পারমিশন ছাড়া আসবি না। আর আমার সব দরকার, প্রয়োজন দেখার জন্য আমার বউ আছে। একদম গায়ে পড়তে আসবি না আমার এসব পছন্দ না। দ্বিতীয় বারের মতো ওয়ার্নিং দিলাম। এরপর চড় পাঁচ ছয়টা বসবে আমি ওতো দয়ালু না। এখন গেট লস্ট!

তারিশা চলে আসে। আনায়া নিবরাসের দিকে একবার তাকায়। পরক্ষণে বাইরে চলে যায়।

নিবরাস উঠে বেলকনির দিকে যায়। একে তো তারিশার জন্য গত কালকে খাটে ঘুমাতে পারেনি। আজকে যদি কিছু হতো তাহলে তো রুমেই জায়গা হতো না তার।

রুমে এসে রেডি হয়ে নেয় নিবরাস। সাদা পান্জাবি গায়ে জড়িয়ে নেয়।
নিচে এসে সবার সাথে বসে নাস্তা করে নেয়। সৌরভ আসতে তাদেরকে বাজারে পাঠায় নিবরাস। আজকে চারজন মহিলা আসবে তাঁদের জন্য সেলাইয়ের মেশিন কিনে আনতে। আর্থিক অস্বচ্ছলতার জন্য সেলাইয়ের মেশিন দিবে নিবরাস। এগারোটার দিকে তারা চারজন মির্জা বাড়ীতে আসবে।

নিরব মির্জার সাথে কথা বলেনি নিবরাস। মূলত অফিসে তাঁদের মাঝে এক দফা কথা কাটাকাটি হয়েছিলো করের বিষয় নিয়ে।

নিরব মির্জা অফিসে চলে যান। মরিয়ম নওয়াজ তাকে বলে দিয়েছে আজকে সন্ধ্যায় তারা চট্টগ্রাম যাবে।
আনায়া রান্নার বিষয়টা দেখে। তারিশা নিবরাসের থেকে দূরত্ব বজায় রাখছে তবে নজর তো যায়ই।

গার্ডেনে বসে আছে নিবরাস। তার সাথে রোহিত আছে,পরাগ আছে।

ঘন্টাখানেক পর সৌরভ আসে৷ সাথে তাঁদের দলের কয়েকজন ও আছে।
সেলাইয়ের মেশিন এনে বিশাল লিভিং রুমে রাখা হয়। যথাসময়ে মহিলা চারজন আসে। নিবরাস তাঁদেরকে মেশিন বুঝিয়ে দেয়। তাঁদের বাড়ী অব্দি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়।

সন্ধ্যায় তারা রওনা হবে চট্টগ্রাম এর উদ্দেশ্য।
রান্নাবান্না শেষ হতে আনায়া রুমে চলে আসে। নিবরাস লোকদের বিদায় দিয়ে রুমে আসে। আনায়া নিজের ব্যাগ গুছায়। নিবরাস তাকে দেখে বলে,

-আমার ব্যাগটাও গুছিয়ে দাও।

-নিজের কাজ নিজে করা বেটার।

-কী বউ তুমি? শ্বশুর মশাইকে জিজ্ঞেস করবো জন্মের পর তোমায় মধু খাইয়েছে কীনা।

-করলা আমার প্রিয়।

-দেখতে মিষ্টি মেয়ের মতো কিন্তু কথাবার্তা এতো জঘন্য তেতো কেন?

কিছু বলেনা আনায়া। চুপচাপ নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিবরাসের ব্যাগটাও গুছিয়ে দেয়। আনায়াকে চুপচাপ দেখে নিবরাস নিজে আগ বাড়িয়ে বলে,

-আচ্ছা আমি কী তোমায় কোন ব্যপারে হার্ট করেছি?

মাথা নাড়ায় আনায়া। নিবরাস তাকে কাছে ডেকে নেয়। আনায়া চুপচাপ বসে আছে নিবরাসের সামনে। আনায়াকে এমন চুপচাপ দেখে নিবরাস বলে,

-এতো চুপচাপ থাকো কেন পাখি?

-এমনিতে মন চায়।

-আমি শুনেছি তুমি চঞ্চল তাহলে এখন নিশ্চুপ কেন?

জবাব দেয়না আনায়া। নিবরাস ব্যর্থ হয়। আনায়াকে পুনরায় জিজ্ঞেস করে,

-মাকে মনে পড়ে?

-একদম না। আমার এখন চুপচাপ থাকতে ভালো লাগে। আচ্ছা আপনি বলুন আমাকে ম্যাচিউর হতে হবে না? ইমম্যাচিউর পিচ্চি থাকতাম? নেতার বউ না আমি?

-আচ্ছা তুমি ম্যচিউর হও আর যা খুশি হও আমার সামনে ইমম্যাচিউর থাকবা। ওতো বুঝদার বউ আমার দরকার নেই আমি আমার বউয়ের পাগলামী দেখতে চাই।

-বিরক্ত হয়ে যাবেন।

-সময় বলে দিবে।

হাসে আনায়া। নিবরাস তার হাসির দিকে তাকিয়ে আছে।

-আচ্ছা পাখি তোমার আদরযত্ন ঠিকঠাক হচ্ছে তো?

ব্রু কুঁচকে তাকায় আনায়া। নিবরাস হাসছে আনায়া মুখ ঘুরিয়ে নেয়।

-চলো চুমু খাবো তোমায়।

কথাটা বলে আনায়ার ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয় নিবরাস।

এরই মাঝে দরজায় কেউ নক করে। নিবরাস কিছুটা সরে যায়। আনায়া দরজা খুলতে তারিশাকে দেখে। নিবরাস বেশ বিরক্ত হয়। আনায়া তারিশাকে জিজ্ঞেস করে,

-কোন দরকার আছে?

তারিশা নিবরাসের দিকে একবার তাকায়। পরক্ষণে বলে,

-হ্যাঁ মামনি ডাকছে।

-তুমি যাও আমরা আসছি।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here