রাত্রীপ্রিয়া #পর্বঃ৬ লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী

0
320

#রাত্রীপ্রিয়া
#পর্বঃ৬
লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী

সায়মন, রাত্রীপ্রিয়া খাবার সামনে নিয়ে টেবিলে অপেক্ষা করছিলো, সানাম চৌধুরী’র। এরিমধ্যে, সানাম চৌধুরী আসলো। তার খেতে ইচ্ছে করছে না আজ। সে না খেলে রাত্রী সায়মনও কেউ খাবে না, তাই বাধ্য হয়ে বসলো সানাম। খেতে খেতে টুকটাক কথা বলছে, সায়মন। চুপচাপ শুনছে, সানাম ও রাত্রী। মাঝেমধ্যে হু-হা সংক্ষিপ্ত উওর দিচ্ছে। যা দেখে বিরক্ত, সায়মন। এক পর্যায় অধৈর্য হয়ে বললো,

“কিরে শা’লা! আজ মুখে কুলুপ এঁটেছিস না-কি? অসহ্য লা….”

তাকে থামিয়ে দিয়ে সানাম চৌধুরী গম্ভীর হয়ে শুধালো, “আমি তোর শা’লা নই, না তুই আমার দুলাভাই! ”

“তোর বোন যখন আছে, একটা চান্স আমার এখনো আছে। তুই শা লা হলে হতেও পারিস।”

“মন্ত্রী সানাম চৌধুরী, জেনেশুনে তোর মতো একটা লু’চু’র হাতে তার বোনকে তুলে দিবে, ভাবলি কি করে? এসব জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা বাদ দে সায়মইন্না !”

“তুই মন্ত্রী হলেও তোকে কারাগারে ব’ন্দি করার ক্ষমতা এই সায়মনে’র আছে, যা তোর মন্ত্রীগীরি’র মধ্যে প্রধানমন্ত্রীরও সে ক্ষমতা নেই। তুই তোর বোন’কে আমার হাতে তুলে না দিলেও, এতে আমার বিশেষ আপত্তি নেই! ভালোয় ভালোয় বলছি, শুনলি না।
এরপর ধরে নিয়ে, সোজা কাজী অফিসে ঢুকে যাবো। ফিরে আসবো, বাচ্চা কোলে নিয়া। তখন রাজি না হয়ে যাবি কোথায়, শুনি?”

ভাব নিয়ে বললো, সায়মন। চোখ গরম করে, তার দিকে তাকালো সানাম চৌধুরী। ততক্ষণাৎ খাবার প্লেটে রাখা গাজরের টুকরো ছুঁড়ে মা’র’লো সায়মনের দিকে। সায়মন গায়ে পড়ার আগেই ক্যাচ ধরে গাজরের টুকরো মুখে পু’ড়ে নিলো। পুনরায় আবারো দাঁত কেলিয়ে বললো,

“শোন, সানাম? তোকে আবারো বলছি, আমার মতো ছেলে হাত ছাড়া করিস না। দ্রুত তুলে নিয়ে, দুলাভাই বানিয়ে নে। এতে অবশ্য আমি কিছু মনে করবো না! কথা দিচ্ছি, তোর বোনকে রাজরানী করে রাখবো।
তোকে আরোও একটা কথা দিচ্ছি, প্রতিবছর নতুন নতুন মুখ থেকে মামা ডাক শুনাবো। গ্যারান্টি সহকারে বললাম, দরকার হলে লিখে রাখ!
বোনে’র জন্য এমন ছেলে কিন্তু তুই আর পাবি না! আবারো বলছি, সায়মন চৌধুরী এই এক পিসই। তাকে হারালে কাঁদতে হবে আড়ালে!”

এর কথা শুনে, বিষম খেলো রাত্রীপ্রিয়া। সানাম চৌধুরী, দ্রুত তার মুখে’র সামনে পানি ধরলো। রাত্রী ঢকঢক করে পানি পান করলো। এই লোক দু’টো ঠিক কোন ধাতু দিয়ে তৈরী, জানা নেই তার! রাত্রী আর খেলো না। এমনিতেই আজ তার খেতে ইচ্ছে করছিলো না। শুধুমাত্র স্বামী’র কাছে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। সে আজ যে ভয়ংকর সত্য শুনেছে, আপাতত সে খবর নিজের কাছেই গোপন রাখতে চাইছে। সময় এমনিতেই জানান দিবে। তাছাড়া, সে-ও তো এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত না।

তান্মধ্যে ততক্ষণাৎ, চেয়ার ছেড়ে উঠো দাঁড়ালো সানাম চৌধুরী। তেড়ে গেলো, সায়মনে’র দিকে। বললো,

“শা লা দাঁড়া তুই! আজ তোর কত ক্ষমতা দেখে নিবো আমি! তুই আমাকে থ্রে’ট দিচ্ছিস?”

সায়মন উঠে দাঁড়ালো। তার খাওয়া ও শেষ। হাত না ধুয়েই দ্রুত নিজের রুমের দিকে দৌড় দিলো। যা দেখে সানাম চৌধুরী হেসে ফেললো।

সায়মন নিজের রুমে গিয়ে হাত ধুয়ে, বেডে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো। উফ্, জান নিয়ে বাঁচা গেলো আজ!
এমন বজ্জাত একটা শা লা থাকলে, তার বিয়ে করার সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থাকবে, পূরণ হবে না কখনো। আজকে তার কথার মাঝে রসিকতা থাকলে-ও চাওয়ার মাঝে বিন্দুমাত্র মিথ্যে ছিলো না। সে খুব আগে থেকেই মনেমনে ভীষণ পছন্দ করে, পায়েলকে। সে খবর সরাসরি বললে কে কি রিয়াকশন নিবে, জানা নেই তার। নিজেদের মধ্যে যদি এ নিয়ে বনিবনা না হয়, চাচা যদি তাকে সরাসরি রিজেক্ট করে। এরপর একসাথে থেকেও মনে চিরকাল একটা দাগ থেকেই যাবে।
তাদের সুখী পরিবারে অশান্তি, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। এই ভয়ে নিজের একান্তই পছন্দের কথা কাউকে জানাতে পারছে না, ছেলেটা। তার হাবভাব আর কেউ না বুঝলেও সানাম চৌধুরী ঠিকই ধরে ফেলছে। যেহেতু সায়মন সরাসরি কিছু বলছে না তাই সানাম বুঝেও সবসময় এই প্রসঙ্গ এড়িয়ে যায়। সায়মন ইনিয়ে-বিনিয়ে কিছু বললেও, ফান ভেবে উড়িয়ে দেয়। মানে এমন একটা ভাব করছে, যাতে সে কিচ্ছুটি জানে না, বুঝতেও পারছে না।

পায়েলে’র কথা মনে পড়তেই শোয়া থেকে উঠে বসলো, সায়মন। তার ঠোঁটের কোণে সূক্ষ্ম হাসি ফুটেছে। ততক্ষণাৎ মোবাইলটা হাতে নিয়ে কল করলো পায়েল’কে। ঢাকা থেকে সিলেট বহুপথ একটানা জার্নি করে সবাই’ই ক্লান্ত। তারা পৌঁছে অল্পস্বল্প আড্ডা দিয়ে আজকের মতো খাওয়া পার্ট চুকিয়ে দ্রুতই যে যার নিদিষ্ট রুমে শুয়েছে। পায়েল, তানহা, শেফা-সেতু এক রুমেই শুয়েছে। তারা নিজেদের মতো শুয়ে শুয়ে গল্প করছিলো। এমন সময় সায়মনের কল পেয়ে কপালে ভাজ পড়লো, পায়েলে’র। কেননা, সচারাচর তাকে কল করে না সায়মন ভাই। হয়তো জরুরী ভেবে দ্রুত রিসিভ ফোন করলো পায়েল। উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললো,

“সায়মন ভাই, আমায় কল করলেন যে। কিছু বলবেন? কোনো প্রয়োজন?”

মেয়েটার উদ্বিগ্নতায় জল ঢেলে সায়মন স্বাভাবিক ভাবেই বললো,

“হ্যাঁ পায়রা! তোকেই তো আমার প্রয়োজন! নিজের বিয়ের বয়সে অন্যের বিয়ে খেতে গেছিস তুই, তোর লজ্জা করছে না পায়রা? আমার কিন্তু বেশ লজ্জা লাগছে! এই পায়রা, কাজী অফিসে চলে আয় আমরাও বিয়েটা করে ফেলি।”

বিস্মিত! হতবাক, পায়রা! সে ভেবেছে কত জানি ইম্পরট্যান্ট কথা বলার জন্য সায়মন ভাই কল করেছে তাকে। এর কথা শুনে পুরোই হতাশ! ততক্ষণাৎ মৃদু রাগ দেখিয়ে বললো,

“আপনি এতো রাতে কল দিয়ে আমার সাথে ইয়ার্কি করছেন, সায়মন ভাই? এগুলো কোন ধরনের ফাজলামো, সায়মন ভাই? ভাবলাম, কত জানি সিরিয়াস কথা বলবেন আপনি।”

মেজাজটাই বিগড়ে গেলো, সায়মনের। বিয়ের মতো ইম্পরট্যান্ট একটা বিষয়ে কথা বললো সে, এটা কি সিরিয়াস কথা নয়? আর মেয়েটা কি-না বলছে, সে ইয়ার্কি, আনসিরিয়াস কথা বলছে!

মজা করতে করতে লাইফটা এমন একটা পর্যায় চলে গিয়েছে, তার সিরিয়াস কথাও সবাই মজা হিসেবে ধরে নেয়। এমন হলে তো তাকে সারাজীবন কৌমার্য পালন করতে হবে। এ জীবনে আর বিয়ে করে বাবা ডাক শোনা হবে না। আফসোস হলো তার!
ইডিয়ট মেয়ে একটা! কত আশা নিয়ে, প্রণয়ের আলাপ করতে গেলো মেয়েটার সাথে। আর সে কিনা ভাই ভাই করে চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে দিলো। একরাশ চাপা ক্রোধ নিয়ে ততক্ষণাৎ সায়মন দাঁতে দাঁত চিবিয়ে শুধালো,

“আমার ভুল হয়েছে, বোইন! ক্ষমা কর!”

বলেই কল কেটে দিলো। গাধা একটা! মুডটাই নষ্ট করে দিলো তার। পরমুহূর্তে, বারান্দায় গিয়ে সিগারেট ধরালো সায়মন।
পায়েলও এই আধ-পাগলাা লোকটার বলা কথা নিয়ে ঘাটাঘাটি করলো না, ভাবলো না কিচ্ছুটি! ফোন বালিশের পাশে রেখে, পুনরায় বোনদের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
.
.
খাবার টেবিলের সবকিছু গোছগাছ করে মাএই রুমে প্রবেশ করলো, রাত্রীপ্রিয়া। সানাম চৌধুরী আগেই এসেছে। রুমে এসে বিছনা ঠিকঠাক করে হাতে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে। রাত্রীপ্রিয়া এসেও চুপচাপ বসলো তার পাশে। সানাম চৌধুরী খেয়াল করলো, আজ আসার পর থেকেই কেমন অন্যমনষ্ক লাগছে তার মনোহরণী’কে।

সানাম চৌধুরী চটজলদি হাতের ল্যাপটপটা পাশের টি-টেবিলে রাখলো।
পরমুহূর্তে বউকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে কপালে আলতো চুমু খেয়ে মোলায়েম কণ্ঠে শুধালো,

“তুমি কি কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত, বউ? কি হয়েছে তোমার?”

থতমত খেয়ে গেলো, রাত্রীপ্রিয়া। কিছু একটা ভেবে চুপ করেই রইলো। যা দেখে পুনরায় আবারো বললো সানাম চৌধুরী,

“কি হলো, জান? বলো আমায়, কি ভাবছো তুমি?”

“নেতা সাহেব! আমি আপনাকে মিথ্যেও বলতে পারবো না, আবার সত্যিটা ও বলতে পারবো না। প্লিজ, আপনি এ বিষয়ে আমাকে কোনো প্রশ্ন করবেন! সময় হলে আমি নিজ ইচ্ছেতেই বলবো, আপনাকে।”

বউয়ের ঠান্ডা স্বরে’র কথা শুনে এ বিষয়ে একটাও প্রশ্ন করলো না, সানাম চৌধুরী। ততক্ষণাৎ শুয়ে পড়লো দু’জন। বউকে বুকের সাথে আগলে নিয়ে আশ্বাস দিয়ে বললো,

“তোমার এতো চিন্তা কিসের, মনোহরণী! চিন্তা করার জন্য তোমার নেতা সাহেব আছে না…ঘুমাও তুমি। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি, জান।”

রাত্রীপ্রিয়া আর কথা বাড়ালো না। আলতো হেসে আরো একটু চেপে বসলো, প্রিয় পুরুষের উষ্ণ বুকে।
______________

কেটে গেলো দু’টো দিন। আজ রাত্রীপ্রিয়া, সানাম চৌধুরী, সায়মন ও পরশ ফুপির বাড়িতে যাবে। খুব ভোরেই উঠেছে তারা। অনেকটা পথ জার্নি করে যেতে হবে। বিয়ে অনুষ্ঠানে দেরী হলে চলবেই না, ফুপি একদম মন খারাপ করবে। তাই খুব সকালেই রওয়ানা দিবে বলে জানিয়েছে, সানাম চৌধুরী।

এসব নিয়ে পরশে’র কোনো ইন্টারেস্ট নেই। মেয়েটা প্রয়োজন ছাড়া রুম থেকে বের হয় না, তেমন। কেউ ডাকলে বা কাছে এলেও সেরকম কথা বলে না। কেমন ঘরকুনো হয়ে গিয়েছে চঞ্চল মেয়েটা। চোখে-মুখে বিষন্নতা উপচে উপচে পড়ছে। রাত জেগে বিষাদে’র সাথে মস্ত বড়ো ভাব জমায় সে। টেনশনে ঘুম হয় না বহুরাত। হসপিটালে কিছু কাজ ছিলো তার। কিন্তু, ভাই তাকে বাহিরে বের হতে কড়া ভাবে নিষেধ করেছে। অগত্যা কোথাও যাওয়া হলো না।
আজ সাত-সকালে ঘুম থেকে উঠেছে সে। মুঠোফোন হাতে নিয়ে কল করছে বারংবার পরিচিত এক নাম্বারে। “মাই লাভ” নামে সেভ করা হয়েছে নামখানা। কিন্তু, কিন্তু মানুষটা তার ফোন তুলছে না, যোগাযোগ করছে না। সে কতশত কল করেছে, ওপাশের মানুষটি সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করেছে সেসব। কয়েকটা দিন দেখা হয় না প্রিয় মুখ। বাহিরে বের হলে বোধহয় খোঁজ নিয়ে একবার দেখা যেতো পরিচিত মুখটা। এলোমেলো-অগোছালো অবস্থায় বারান্দায় দাঁড়িয়েছে পরশ। একের পর এক কল করছে মুশফিক’কে। সে জানে, কল রিসিভ হবে না। তবুও দিচ্ছে। এখন ফোন বন্ধ বলছে। হয়তো বিরক্ত হতে হতে অফ করে দিয়েছে সিম।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঝাপসা চোখে হাসলো, পরশ। পরক্ষণেই আকাশের দিকে তাকিয়ে বিষন্ন স্বরে বলে উঠলো,

“ও আকাশ, তুমি বলতে পারো কি? আমাদের প্রিয় মানুষগুলো সবসময় পাষান্ড প্রকৃতির হয় কেনো? আমরাই কেন সবসময় বেছে-বেছে ভুল মানুষকেই ভালোবাসি!”

“অযোগ্য মানুষকে যদি তুমি উজাড় করে সবকিছু বিলিয়ে দেও, সে-তো তোমার সরলতা নিয়ে খেলবেই! এ আর নতুন কি!”

হঠাৎ করে পিছন থেকে রাত্রীপ্রিয়া’র কণ্ঠ স্বর শুনে হতচকিত উঠলো, পরশ। তার মুখপানে একবার তাকিয়ে দৃষ্টি নত করলো। প্রত্যুওর করলো না। যা দেখে রাত্রীপ্রিয়া মৃদু হেসে বললো,

“তোকে ডাকতে এসেছিলাম। রেডি হয়ে নিচে আয় জলদি, তোর ভাই ডাকছে। আমরা এক্ষুণি বেরবো।”

“আসছি।”

ছোট্ট করে জবাব দিয়ে রুমে প্রবেশ করলো, পরশ। রাত্রীপ্রিয়াও আর দাঁড়ালো না সেখানে।
.
.
রঙিন আলোকসজ্জায় সজ্জিত বিয়ে বাড়ি। চারপাশে কোলাহল, লোকসমাগম! আনাচে-কানাচে
আনন্দের ছড়াছড়ি।
হবেই তো! জেলা সচিব মনিরুল ইসলামে’র বড় কন্যার বিয়ে। বিশাল আয়োজন করছে সে। কনে পক্ষ হিসেবে বড়সড় কর্মকর্তারা এসেছে। বর পক্ষ এখনো এসেনি। বেলা এগারোটা। সবাইকে নিয়ে মাএই ফুপির বাড়িতে পৌঁছে’ছে সানাম চৌধুরী। ওদের দেখে গেইটে’র কাছে পরিচিত’রা সবাই এগিয়ে আসলো। ননাস’রা এসে জড়িয়ে ধরলো, ভাবিকে।

সবাই’কে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলো ওরা। লোকজন জড়ো হয়েছে, মন্ত্রী সানাম চৌধুরী ও তার অর্ধাঙ্গিনী’কে সরাসরি দেখার জন্য সবার ভিতরে কৌতুহল। কেউ ছবি তুলছে, কেউ বা ভিডিও করছে, কেউ একসাথে একটা সেলফি উঠাতে চাইছে। এদিকটা পুলিশ ও স্পেশাল সিকিউরিটি গার্ড’রা সামলাচ্ছে। ভীর ঠেলেই ভিতরে প্রবেশ করলো সবাই। সানজিদা খানম রাত্রীপ্রিয়া’র একমাত্র খালা আবার ফুপু শ্বাশুড়ি। আজ এসেছে সে ফুপু শ্বাশুড়ি’র পরিচয়ে। এই নতুন পরিচয়ে আজ এটাই এই বাড়িতে প্রথম যাত্রা রাত্রীপ্রিয়া’র। যদিও ছোট বেলায় মায়ের সাথে বহুবার আসা হয়েছে। কিন্তু, এখন থেকে নতুন পরিচয়ে পরিচিত হতে হবে। এটা তানিয়া চৌধুরী’র আদেশ।

সানজিদা খানমও সেভাবে আদর- আপ্যায়নে ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন। হরেকরকমের নাস্তা দিচ্ছেন সামনে। পারলে তাকে মাথায় তুলে নিতেন। গেস্ট রুমে’র সোফায় বসেছে, ওরা। ওদের পাশে পায়েল, পরশ, তানহা, সেতু, তানিয়া চৌধুরী সহ পরিচিতরা আরো কয়েকজন।

ফুপু শ্বাশুড়িকে এতো ছোটাছুটি করতে দেখে রাত্রী ভদ্রতা সূচক হেসে বললো,

“আপনাকে এতো ব্যস্ত হতে হবে না, আন্টি। আপনি বসুন। আমরা তো আর চলে যাচ্ছি না এখন।”

“ও-মা তা হয় না-কি বউমা! তুমি আমাদের বাড়িতে এই প্রথম এসেছো, তোমার একটা সম্মান আছে না! কত ঝামেলার মধ্যে আসলে, সেভাবে কিছু করতে পারিনি, মা। বললাম কয়েকদিন আগে আসো, আসলে না।”

মন খারাপ করে বললো, সানজিদা খানম। আবারও নিজ কর্মে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। একেক ধরনের নাস্তার বাটি রাত্রী’কে এগিয়ে দিয়ে দিয়ে বলছে,

“বউমা এটা খাও, বউমা ওটা খেয়ে দেখো আমি নিজ হাতে বানিয়েছি। বলতো, টেষ্ট কেমন! ইত্যাদি, ইত্যাদি।”

ওপাশের সোফায় সানাম, সায়মন যে দু’টো প্রাণী বসে রয়েছে তা যেন কেউ দেখছেই না!
যা দেখে সানাম চৌধুরী গাল ফুলিয়ে ফুপির নিকট অভিযোগ করে বললো,

“বউমা কে পেয়ে আমাদের তো পাত্তাই দিচ্ছো না, ছোট ফুপি। আমাদের সাথে এমন আচরণ করছো মন হচ্ছে, আমরা দু’ভাই নিমন্ত্রণ ছাড়াই তোমাদের বাড়িতে দাওয়াত খেতে ঢুকে পড়েছি। তোমার আদর ভাগ হবে জানলে এখানে বউ নিয়ে আসতাম না।”

ভাইয়ের সাথে দুঃখী দুঃখী মুখ করে তা’ল মেলালো, সায়মন। বললো,

“হ্যাঁ তাই তো! ফুপি? আমাদের মতো অসহায় দু’টো পুরুষ’কে এভাবে অবহেলা না করলেও পারতে। সব আদর-যত্ন রাত্রী’কে না করে আমাদেরও একটু আদর-টাদর করো! গরীব মিসকিনদের দিকেও একটু তাকাও!”

ফুপি ততক্ষণাৎ গম্ভীর হওয়ার ভান করে বললো,

“তোরা কি বউমা কে হিংসা করছিস সানাম, সায়মন? তোরা চাইছিস, আমি বউমা কে অযত্নে-অবহেলায় বসিয়ে রাখি।
দেখলে বউমা, তোমার স্বামী জেলাস! ওরা তোমায় হিংসা করছে।”

ফুপি তাদের এভাবে ফাঁ’সা’চ্ছে। একেই বলে ঘরে শ’ত্রু বিভীষণ! ফেঁ’সে গিয়ে আমতা আমতা করছে, সানাম। মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,

“তা কখন বললাম। ”

সানাম চৌধুরী’র কার্যে উপস্থিত সবাই একসাথে হেসে উঠলো। হাসলো রাত্রীপ্রিয়াও।

চলবে……..

[ পার্সোনাল কিছু কাজে আটকে গিয়ে ছিলাম, তাই লেট হলো এই পর্ব দিতে। তার, জন্য দুঃখিত! আজ বিশাল বড় পর্ব দিলাম, সবাই পেজে রেসপন্স করবেন। কেমন লাগছে গল্প, বেশি বেশি মন্তব্য করুন। ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিন।]

কেমন কিন্তু রেসপন্স করছে না 💔 সবার সাড়া পেলে পরবর্তী পর্ব দিতে উৎসাহ পাই ।।

পেইজঃ Bindas Life ✅ ফলো করতে পারেন ।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here