রাত্রীপ্রিয়া #পর্বঃ১৬ লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী

0
300

#রাত্রীপ্রিয়া
#পর্বঃ১৬
লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী

সায়মন বাপকে মুখ বাঁকিয়ে বললো, “তুমি জগিং ফকিং করে তোমার গোপাল ভারের মতো ভুঁড়িটা কমিয়ে, সুগার ডেডি হয়ে যাও আব্বু। এরপর দেখো, বুড়ো বয়সে কোনো তিশার খোঁজ মিলে কি-না। আমার চিন্তা তোমাকে করতে হবে না। আমার শরীরে এখনো যে ফিটনেস আছে, এতেই মেয়েরা আমার পিছনে লাইন বাঁধে।
তুমি এখন যাও তো, আব্বু। ঘুমাতে দেও আমাকে। রাতে ভালো ঘুম হয়নি।”

ছেলের কথায় ফোঁস করে উঠলো, রায়হান চৌধুরী। ততক্ষণাৎ চোখ গরম করে বললো,

“হা’রা’ম’জা’দা! তোর আ’জা’ই’রা কথা আমি জুতা দিয়ে ছোটাচ্ছি। নিজের বাপকে কেউ এসব বলে? বেয়াদব ছেলে! এক্ষুনি উঠ তুই।”

“উঠবো না।”

“তুই উঠবি, সাথে তোর বাপও উঠবে। জাস্ট পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে আয়। দরকারী কথা আছে।”

সকাল সকাল এদের বাপ-ছেলের হুমকি-ধমকি শুনে ছুটে আসলো, রোকসানা চৌধুরী। উনি রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো,

“কি ব্যাপার? কি হয়েছে এখানে? সকাল সকাল দুই বাপ-ব্যাটা কি…..।”

তাকে থামিয়ে দিয়ে রায়হান চৌধুরী হঠাৎ করেই গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

“কার কি হয়েছে এসব না ভেবে তুমি তোমার চিন্তা করো, রোকসু। যেকোনো সময় যা হওয়ার তোমারই হয়ে যাবে। এই বয়সে, তোমার ছেলেতো তোমার জন্য সতীন আনতে চাইছে।”

“কিরে সায়মন? সকাল সকাল এসব কথা চলছে? দাঁড়া, তোদের তুই বাপ-বেটাকে আমি এক্ষুনি বাসা থেকে বের করছি।”

মায়ের হু’ম’কি শুনে সায়মন ততক্ষণাৎ উঠে বসলো।ইনোসেন্ট ফেস করে মা-কে বললো, “তোমার বুড়া বর এখন আমাকে ফাঁ’সা’চ্ছে আম্মু। উনিই তো সাত-সকালে এসে আমাকে ঘুম থেকে তুললো। এরপর, কি বললো জানো আম্মু?”

“কি বললো?”

আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলো, রোকসানা চৌধুরী। সায়মন বাবা’র দিকে একবার আড় চোখে তাকালো।এরপর বাঁকা হেসে বললো,

“বললো, সায়মন আমার জন্য একটা মোশতাকে’র তিশার মতো পাত্রী খোঁজ। বিয়ে করবো আমি। তোর আম্মু’কে দিয়ে হচ্ছে না! কেমন বুড়ো বুড়ো লাগে! আমি ইয়াং। আমার জন্য পারফেক্ট, তিশার মতো কচি গার্ল। তোর আম্মু তো বুড়ো হয়ে গেছে। চিন্তা করছো আম্মু? কতোটা দু’র্দা’ন্ত এই লোক! কি কপাল আমার! ছেলের বিয়ের বয়সে, আমার বাপ নিজের জন্য পাত্রী খুঁজছে।এজন্যই তো বলি, আমার বিয়েটা এখনো কেনো হচ্ছে না!”

ছেলের এমন ষ’ড়’য’ন্ত্র’ম’য়ী কথায় ফেঁ’সে গেলো, রায়হান চৌধুরী। উনি অসহায় ফেস করে বারবার ফাঁকা ঢোক গিলছে। এক্ষুনি স্ত্রী’র দিক থেকে, ৫৪০° ডিগ্রি বেগে এক তু’ফা’ন ধেয়ে আসবে তার দিকে। সেই তুফান কা’ল’বৈ’শা’খী ঝড়ের মতো উড়িয়ে নিবে রায়হান চৌধুরী’র মতো অসহায় এক পুরুষকে। মীরজাফর ছেলে তার! কি সুন্দর করে ফাঁ’সি’য়ে দিলো নিজের বাপকে। এমন ছেলেকে জন্ম দিয়ে ফেঁ’সে গেছে, রায়হান চৌধুরী।
নিজের ভাবনার মধ্যেই ঝড়ের বেগে এগিয়ে আসলো, রোকসানা চৌধুরী। ফোঁস ফোঁস করে উনি বললো,

“ছি! ছি! বুড়া বয়সে তোমার এখন কচি মেয়ে চাই? বুইড়া! খুব বিয়ে করার শখ তোমার,তাই না? দাঁড়াও, তোমার বিয়ের স্বাদ আমি মিটাচ্ছি।”

“আরে, রোকসু? তোমার ওই বা’ন্দ’র ছেলের কথা বিশ্বাস করো তুমি? হা’র’ম’জা’দা মিথ্যে বলে আমাকে ফাঁ’সা’তে চাইছে। আমি আবার বুড়া বয়সে কোন দুঃখে আরেকটা বিয়ে করতে চাইবো?আস্তাগফিরুল্লা! যেখানে আমার ঘরে এখনো তোমার মতো আ’গু’ন সুন্দরী বউ আছে!”

পরমুহূর্তেই সায়মন লম্বা এক হাই তুলে ফোঁড়ন কেটে বললো,

“আম্মু, তুমি এই বুড়ার কথায় গলে যেও না। খবরদার! আমি কিন্তু সত্যি বলছি। সময় থাকতে তুমি তোমার বুড়ো বরকে সামলাও। এক কাজ করো, রুমে নিয়ে বুড়োকে কিছু বেলনা থেরাপি দিয়ে মাথা থেকে বিয়ের ভুত ছাড়িয়ে দেও।”

বলেই আটঘাট করে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করলো, সায়মন। বিরাট এক কে’লে’ঙ্কা’রি বাঁধিয়ে পুনরায় আবারো ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে,ছেলেটা। এদের মা-ছেলের মাঝখানে আসামীর ন্যায়, কাচুমাচু মুখে দাঁড়িয়ে আছে, রায়হান চৌধুরী। এখানে এখন থাকাও রিস্ক! তাই, উনি এক ফাঁকে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বেরিয়ে পড়লো রুম থেকে। এই বাঁদর ছেলেকে পড়ে দেখা যাবে, আগে বউয়ের হাত থেকে নিজের জানটা বাঁচানো উচিত। কিন্তু ঘটনা ঘটলো উল্টো। বউ তার পিছনে না ছুটে ঝাড়ু হাতে ছেলের দিকে তড়িৎ গতিতে এগিয়ে গেলো। ছেলের কান মলে দিয়ে রোকসানা চৌধুরী বললো,

“বাপকে নিয়ে এসব বলতে তোমার লজ্জা করে না, বাঁদর ছেলে? তুমি কি ভাবছো, তুমি যা বলবে তা’ই আমি বিশ্বাস করে নিবো? যে মানুষটাকে সাথে নিয়ে অনায়সে কাটিয়েছি কয়েক যুগ, তাকে এই বয়সে অবিশ্বাস করি কি করে? তুমি যে তোমার বাপ’কে ফাঁ’সা’তে চাইছো, তা কি আমি বুঝিনি ভাবছো? তোমার আব্বুকে আমি ভরসা করি, বিশ্বাস করি, ঠিক খোলা আকাশের মতো।”

সায়মন মায়ের হাত থেকে নিজের কান ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে বসলো। আলগোছে পিছন থেকে মা’কে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে বললো,

“আমি জাস্ট মজা করছি, আম্মু। তুমি রাগছো কেনো? আমার আব্বু সেরা! তার মতো সেরা বাবা পৃথিবীতে আমি আর দু’টো দেখিনি।”

“হয়েছে, এবার যাও ফ্রেশ হয়ে এসো সায়মন। আমি তোমার খাবার রেডি করছি।”

সায়মন মায়ের কথায় সায় জানালো। রোকসানা চৌধুরী আর কিচ্ছুটি না বলে, মুচকি হেসে চলে গেলো কিচেনে। স্বামী-সন্তান নিয়ে বেশ সুখী পরিবার তার। এই মানুষ গুলো তার মানসিক প্রশান্তি দেয়। এদের কাছাকাছি থাকলে দুনিয়ার কোনো দুঃখ, ডিপ্রেশন তাকে ছুঁতে পারে না।
.
.
প্রতিদিনের ন্যায় সকাল দশটার মধ্যে চৌধুরী পরিবারের সকলো উপস্থিত হলো ডাইনিং টেবিলে। পরশ ও এসেছে। তাকে আজ খুব স্বাভাবিক লাগছে, যেনো কোথাও কিচ্ছুটি হয়নি। স্বাভাবিক লাগছে সানাম চৌধুরী ও রাত্রীপ্রিয়া’কে ও। গতকাল কতোবড় এক ঘটনার পরও সবকিছু আজ স্বাভাবিক। যদিও পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়, তবে তারা স্বাভাবিক থাকতে চাইছে। কিন্তু কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছে না, তানিয়া চৌধুরী। তার মুখো ভঙ্গিমা বেশ গম্ভীর। ছেলের উপর তার বড্ড চাপা রাগ ধরেছে।
উনি কথা বলছে না রাত্রীপ্রিয়ার সঙ্গেও। রাত্রীপ্রিয়াও আগ বাড়িয়ে কথা বলতে যায়নি। সকালে উঠে যতটুকু কাজ করার নিজ ইচ্ছেতেই করেছে।হাতের কাজ শেষে, চুপচাপ নিজের রুমে চলে গিয়েছে। এরপর একেবারে সানাম চৌধুরী’কে সঙ্গে নিয়ে এখানে এসেছে।

ডাইনিং টেবিলে এসেই সানাম চৌধুরী প্রতিদিনের ন্যায় মা’কে বললো,

“আম্মু, আমার খাবার রেডি করো।”

তানিয়া চৌধুরী মুখে কিচ্ছুটি না বলে, গম্ভীর মুখেই ছেলের খাবার এগিয়ে দিলো। সানাম চৌধুরী মা’কে একবার আলগোছে পর্যবেক্ষণ করে, আপাতত কিছু বললোনা। চুপ মে’রে গেলো সে।
অভ্যাস মতো, মায়ের দেওয়া খাবার খাওয়া শুরু করলো। আর যাই হোক, মায়ের হাতে তৈরী করা খাবার তার লাগবেই। বাকিরাও যে যার মতো খাবার খাচ্ছে। এরিমধ্যে খেতে খেতে তানহা তার চাচ্চুকে আহ্লাদী কণ্ঠে ডাকলো,

“বড়ো আব্বু?”

মেয়েটার অতিরিক্ত আহ্লাদ মানেই তার কিছু আবদার। চৌধুরী বাড়ির সবচেয়ে ছোট মেয়েটি,তানহা। চঞ্চল এক দুরন্ত কিশোরী। যার দুষ্টমি-খুনসুটিতে চৌধুরী বাড়িতে বয়ে যায় অজানা এক উৎসব। এবার নবম শ্রেণিতে পড়ছে মেয়েটা। দেখতেও ভারি মিষ্টি! বাড়ির সবার একটু বেশিই আদরের সে।
ভাতিজির আহ্লাদী কণ্ঠ শুনে সালাম চৌধুরী হেসে বললো,

“তোমার কিছু লাগবে, আম্মা?”

তানহা বড়ো আব্বুর মন বোঝা প্রশ্নে হেসে ফেললো। তার কোনো কিছু দরকার হলেই, সবার আগে বড়ো আব্বুর কাছে আবদার করে।আজও করলো।এই মানুষটা তাকে কখনো ফেরায় না। তাই তো সবার আগে তানহা খোঁজে বড়ো আব্বু’কে। তানহা একগাল হেসে বাচ্চা কণ্ঠে বললো,

“টাকা লগবে বড়ো আব্বু। ঘুরতে যাবো, বন্ধুদের সাথে।”

এরিমধ্যে তানহা’কে জোরেশোরে এক ধমক দিয়ে বসলো, সানাম চৌধুরী। শক্ত কণ্ঠে বললো,

“কাউকে কোনো প্রকার টাকা দেওয়া হবে না। স্কুল-কলেজ ছাড়া তোমাদের কারো কোথাও যাওয়া নিষেধ। মেয়েদের এতো বন্ধু-বান্ধব কিসের? কোনো প্রকার ঘোরাঘুরির চলবে না। এরপরও যদি কিচ্ছুটি শুনি আমি, একদম সবকটার পা ভে’ঙে গুঁ’ড়ো করে দিবো।”

হঠাৎ করে সানাম চৌধুরী’র এতো রিয়েক্ট দেখে অবাক হলো, সালাম চৌধুরী সহো সকলে। ধমক খেয়ে তানহা ভয়ে মুখ কাচুমাচু করে বসলো। তার চোখে পানি টলমল করছে। পরশ সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেললো। তার মন বলছে, ভাই তার উপরে করা রাগ অন্যের উপর ঝাড়ছে। এরিমধ্যে সালাম চৌধুরী ছেলেকে বললো,

“কি হয়েছে, সানাম? মেয়েটাকে এভাবে ধমকাচ্ছিস কেনো?”

“এতটুকু আগে থেকেই করা উচিৎ ছিলো। বাবা তুমি আর ওদের’কে আহ্লাদ করো না। আমি যা বলছি মাথায় রেখো সকলে।”

বলতে বলতে অর্ধ খাওয়া প্লেটটা রেখে উঠে দাঁড়ালো, সানাম চৌধুরী। এরপর রাত্রীপ্রিয়া’কে বললো,

“রাত্রীপ্রিয়া? খাবার শেষ করে আমার জুসটা রুমে দিয়ে যেও।”

রাত্রীপ্রিয়া মাথা নাড়লো। সানাম চৌধুরী খুব রেগে আছেন। হঠাৎ তার এই রাগের কারণ ধরতে পারলো না কেউ। কাউকে আর কিচ্ছুটি বলতে না দিয়ে ওখান থেকে নিজের রুমে চলে গেলো, সানাম চৌধুরী। ভাই যেতেই শব্দ করে কেঁদে উঠলো, তানহা। ততক্ষণাৎ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো বড়ো আব্বু। এরপর ফিসফিস করে বললো,

“কাঁদে না আম্মা। বড়ো আব্বু আছে না। ভাই বললেই হলো না-কি, আমি তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবো।”

যা শুনে ততক্ষণাৎ আনন্দের সহিত হাসলো, তানহা। বাচ্চা – বাচ্চা খিলখিল করা হাসি। ওর হাসি দেখে পায়েল বললো,

“মাত্র না তুই কাঁদলি? এখন আবার দাঁত বের করে হাসছিস কেনো?”

তানহা মুখ বাঁকিয়ে বললো, “তা তোমাকে বলবো কেনো?”

পায়েল আর প্রত্যুত্তর করলো না। বড়রা ও আর কথা বাড়ালো না। হাত চালিয়ে যে যার খাওয়াটুকু শেষ করলো। এরপর সবাই নিজ নিজ কাজে চলে গেলো।
.
.
নিজের ক্লাবে এসে অস্হির হয়ে পায়চারী করছে, সানাম চৌধুরী। ক্রোধে তার শরীর কাঁপছে, চোখ দু’টো হয়েছে র’ক্তি’ম বর্ণ। তাকে পর্যবেক্ষণ করলো, আশিক। সানাম চৌধুরী’র দলের লোক সে। এই ছেলেটা সারাক্ষণ সানাম চৌধুরী’র সাথে থাকে। তার দরকারি কাজ-কর্ম করে দেয়। বড় ভাই হিসেবে খুব সম্মান করে সানাম চৌধুরী’কে। আজ রা’গা’ন্বি’ত নেতা সানাম চৌধুরী’কে দেখে তার বুক কাঁপছে। এই সানাম চৌধুরী’কে বড় ভয়ংকর লাগছে। তার সাথে কথা বলতেও সাহস পাচ্ছে না, আশিক ছেলেটা।
তবুও ভয়ে ভয়ে একবার বললো,

“ভাই, শান্ত হোন আপনি।”

“কি করে শান্ত হবো, আশিক? এখন অবধি ছেলেটার কোনো ডিটেইলস জানাতে পারলি না তোরা। কে ওই ছেলেটা? কার এতো বড় স্পর্দা? জেনে-বুঝে সানাম চৌধুরী’র বোনের দিকে হাত বাড়িছে? তার হাত কতোবড় লম্বা আমি দেখতে চাই।”

চলবে……..

[গল্প কেমন লাগছে আপনাদের? সবাই পেজে রেসপন্স করবেন। আপনারা ঠিক মতো রেসপন্স করলে, আমিও গল্প প্রতিদিন দেওয়ার চেষ্টা করবো। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here