রাত্রীপ্রিয়া #পর্বঃ৩ লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী

0
416

#রাত্রীপ্রিয়া
#পর্বঃ৩
লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী

বিলাপ করতে করতে রুমের ভিতরে প্রবেশ করলো, সানাম চৌধুরী। রাত্রীপ্রিয়া বিছানায় বসে ছিলো। নেতা সাহেবে’র অদ্ভুত বিলাপ শুনে স্বামীর দিকে গরম চোখে তাকালো। ততক্ষণাৎ দ্রুত পায় বিছনা ছেড়ে উঠো দাঁড়ালো। চটজলদি বরের মুখ চেপে ধরে শক্ত কণ্ঠে শুধালো,

“ছি!ছি! সানাম ভাই! আপনি এতো নির্লজ্জ? প্লিজ, চুপ করুন! আমার ভীষণ লজ্জা লাগছে।”

বউয়ের মুখে ভাই ডাক শুনে, এতক্ষণে’র হাস্যজ্জল মুখখানা ভোঁতা হয়ে গেলো সানাম চৌধুরী’র।
ততক্ষণাৎ বউয়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে, হাতে রাখা খাবারের প্লেট’টা বেডে’র উপর রাখলো। পুনরায় বউয়ের দিকে ঘুরে, বউয়ের মুখখানা দু’হাতে উঁচু করে ধরলো। টুপ করে বউয়ের গালে মৃদু একখানা কামড় বসিয়ে দিয়ে থমথম কণ্ঠে শুধালো,

“তুমি সানাম চৌধুরী’কে চরিএহীন তকমা লাগিয়ে দিতে চাইছো, মনোহরিণী! সম্পর্ক তুমি আমার বউ হও, বউ। কোথায় স্বামীকে, বাবু, জান, কলিজা, সোনা,ময়না ইত্যাদি ইত্যাদি বলে ইমপ্রেস করবে। তা না উল্টো সারাদিন কানের কাছে এসে ভাই ভাই ডেকে আমার রোমান্টিক মুডে’র দফারফা বানিয়ে দেও!
চিন্তা করে দেখ,আমাকে তুমি ভাই ডাকলে তুমি সম্পর্ক আমার বোন হও। আর আমি বোনের সাথে ওইসব করছি, ভাবছো? আস্তাগফিরুল্লা! সানাম চৌধুরী’র এতোটা দূঃর্দিন এখনো আসে নায়, বেগম সাহেবা।”

রাত্রীপ্রিয়া অধৈর্য হয়ে স্বামীর মুখ চেপে ধরে বললো,

“আল্লাহর ওয়াস্তে এবার আপনি একটু চুপ করুন! বহু বছরের পুরনো অভ্যাস, তাই হুটহাট সানাম ভাই হয়ে যায়। ক্ষমা করুন,আমার চৌধুরী সাহেব!”

“সে যাই বলো না কেন, রাত্রীপ্রিয়া। নেক্সট টাইম আমায় শুধু ভাই বলে দেখিও, আমি তোমার অবস্থা সেদিন খুব খারাপ করে ছাড়বো। খুউব বকবো তোমায়।”

নেতা সাহেবে’র হঠাৎ গুরুগম্ভীর কন্ঠে হু’ম’কি শুনে রাত্রীপ্রিয়া মৃদু হাসলো। পরমুহূর্তে, পা উঁচু করে স্বামীর খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি বিশিষ্ট গালে টুপ করে চুমু খেলো। ততক্ষণাৎ স্বামীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গলা জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী কণ্ঠে বললো,

“কিসের আবার ভাই! ভাই বলতে কোনো শব্দ হয় নাকি? যদি কোথাও থেকেই থাকে, আমি সেই শব্দ’কে বয়কট করলাম। আপনি আমার, নেতা সাহেব! আমার নেতা জান! আই প্রমিজ, ওমন ভুল আর আমার ইহজন্মে হবে না নেতা সাহেব! ”

বউয়ের কথার বলার ভঙ্গি’মা দেখে ফি’ক করে হাসলো, সানাম চৌধুরী। অতঃপর বউকে পাঁজা কোলে উঠিয়ে নিলো। রাত্রীপ্রিয়া সাথে সাথে তার গলা জড়িয়ে ধরলো। সানাম চৌধুরী বউয়ের ঘাড়ে চুমু খেয়ে বললো,

“এভাবে হার্ট টাচিং নামে ডেকে ডেকে আমাকে আর ইমপ্রেস করে করে পাগল করতে হবে না, বেগম সাহেবা! আমি কোনো ইমপ্রেস ছাড়াই আপনাতে মাতোয়ারা। ”

এরপর দু’জনই এক সাথে হেসে উঠলো। সানাম চৌধুরী ধীরপায়ে হেঁটে গিয়ে খাটের উপর বসিয়ে দিলো তার মনোহরণী’কে। ততক্ষণাৎ খাবার প্লেট হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“তুমি না খেয়েই রুমে চলে আসলে কেনো, বউ?”

“মামা-মামিদের মাঝে বসে আপনারা দুই ভাই, কিসব বলছিলেন। আমার ভীষণ লজ্জা লাগছিলো।”

রাত্রীপিয়া শান্তশিষ্ট, লাজুক স্বভাবে’র মেয়ে। কিন্তু, তার পুরোপুরি উল্টো স্বভাবে’র পুরুষ হচ্ছে তার নেতা সাহেব। এই লোকটার নির্লজ্জহীন লাগামছাড়া কথাবার্তায় ক্ষণে ক্ষণে লজ্জায় নুয়ে যায় সে।

বউয়ের সরল উক্তি শুনে মৃদু হাসলো, সানাম চৌধুরী। ততক্ষণাৎ বউয়ের পাশে গা ঘেঁসে বসে বললো,

“আহা, আমার লাজুকলতা! হয়েছে এখন আর লজ্জা পেতে হবে না। এবার হা করো, আমি খাইয়ে দিচ্ছি তোমায়।”

বরের হাতের খাবার খাওয়ার সুযোগটা মিস করলো না, রাত্রীপ্রিয়া। ততক্ষণাৎ সুযোগটা লু’ফে নিলো সে। পরোটা আর ডিম মমলেট চিবোতে চিবোতে খাবার
প্লেটটা নিজের হাতে নিয়ে নিলো।
এক টুকরো সিদ্ধ ডিম, তাতে সালাদ মিশিয়ে তুলে দিলো তার নেতা সাহেবে’র মুখে। সানাম চৌধুরী মুচকি হেসে, বিনাবাক্যে সেটুকু মুখে নিলো। লোকটা হেলদি খাবার ছাড়া সচারাচর কিচ্ছুটি খায় না। খুব বাছবিচার করে চলে।

বউয়ের হাতের খাবার খেতে খেতে মন্ত্রী সাহেব গালে হাত দিয়ে ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তার মনোহরণী’র মুখপানে তাকিয়ে রইলো। তার দৃষ্টিতে উপচে পড়ছে একরাশ মুগ্ধতা, একরাশ স্নিগ্ধতা!

সাধারণ একটা মেয়ে’র মাঝে যেন অসাধারণ কিছু একটা লুকিয়ে রয়েছে। এই চোখে মুখে’র দিকে একবার তাকালে, গুরুগম্ভীর নেতা সাহেবে’র দৃষ্টিতে নেশা লেগে যায়।
শতশত মেয়ে উপেক্ষা করা সানাম চৌধুরী যতবার বউয়ের মুখপানে তাকায়, ততবার যেন অজানা দেশে হারিয়ে যায়। এই মেয়েটা এতো আদুরে কেনো, এতো মায়াবী কেনো? সত্যিই কি এতো মায়াবী বলতে কিছু আছে? নাকি সে ভালোবাসে বলেই এতো নজরকাঁড়া মায়াবী লাগে তাকে? এ উত্তর জানা নেই তার। উওর খোঁজার প্রয়োজন ও মনে করলো না।

রাত্রীপ্রিয়া প্রায়ই সময়ই দেখে আসছে, লোকটা তার দিকে সবসময়ই মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকায়। সে ভেবে পায় না, তার মধ্যে কি এমন অলৌকিক জিনিস রয়েছে যা সারাক্ষণ মুগ্ধ হয়ে দেখে তার, নেতা সাহেব!
এই যে খাবার সময়ে তার মুখে’র দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মানুষ’টা, এতে বেজায় অস্বস্তি হচ্ছে তার। মিনিট পাঁচেক সময় কেটে গেলো।
স্বামী’কে এভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সপ্তদশী মেয়েটা চট করে প্রশ্ন করলো,

“কি দেখছেন ওমন করে?”

“তোমাকে?”

“আশ্চর্য, এভাবে দেখার কি আছে? আমি কি নতুন না-কি। যেভাবে দেখছেন মনে হচ্ছে, আমাকে আর কখনো দেখেননি।”

সানাম চৌধুরী মৃদু হেসে বউয়ের কাঁধে মাথা রেখে মোলায়েম কণ্ঠে শুধালো,

“তুমি আমার কাছে নিত্য নতুন। তোমাকে দেখার অন্ত নেই।”

রাত্রীপ্রিয়া লাজুক কণ্ঠে শুধালো,

“যাহ্! আমি কোনো আহামরি সুন্দরী না-কি! আমাকে এভাবে দেখার কিছু নেই।”

“তোমায় দেখছি না তো, বউ।”

“তাহলে?”

“ডুবেছি।”

“কোথায়?”

“তোমার কাজল চোখের অনন্ত মায়া’য়! তোমার ছলাক ছলাক দৃষ্টি’র চাহনিতে। ম’র’ছি, পু’ড়’ছি, ওই দৃষ্টি’র চাহনিতে শতবার খু ন হয়েছি। ওখানেই তো আঁটকে আছে, সানাম চৌধুরী!”

লোকটার হৃদয় মাতানো কথায় বিপরীতে রাত্রীপ্রিয়া কি বলবে খুঁজে পেলো না। সে চুপচাপ অনুভব করছে, শুদ্ধ পুরুষে’র পবিত্র ভালোবাসা। সানাম চৌধুরী বউয়ের এলোমেলো চুলের ঘ্রাণ নিতে নিতে পুনরায় আবারো বললো,

“জানো, মনোহরণী!
শুদ্ধ পুরুষ তার শখের নারী’র রুপে আঁটকায় না। পুরুষ আঁটকায় মায়া’য়।
প্রেমিক পুরুষ কখনো পদ্মা, মেঘনা, যমুনা নদীর অথৈ জলে ডুবে না।
পুরুষ ডুবে ম’রে প্রেয়সীর এলোমেলো খোলা চুলে, প্রেয়সীর শাড়ী’র ভাঁজে ভাঁজে, তার লেপ্টে যাওয়া চোখের কাজলে, তার হুটহাট আ’ড় চোখে’র চাহনিতে।

আর যে পুরুষ ডুবে প্রেয়সীর শরীরে ভাঁজে, তার রুপের আ’গু’নে।
সে পুরুষ প্রেমিক নয়, সে পুরুষ বেস্ট হাসবেন্ড নয়। সে পুরুষ প্রেম কিংবা ভালোবাসতে আসেনি। সে প্রিয় রূপে এসে করে ছলনা, ভ’ন্ডা’মি আর জা’লি’য়া’তি!”

লোকটা’র মনোমুগ্ধকর ভালোবাসা দেখে চোখে জল চলে আসলো, রাত্রীপ্রিয়া’র। সে কথা বলতে গিয়েও গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছে না। যা পর্যবেক্ষণ করে সানাম চৌধুরী বউয়ের চোখের জল মুছে দিয়ে কপালে গাঢ় চুমু খেলো। এরপর আলগোছে মেয়েটার মাথাটা বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“বুঝলে, বউ? আমাকে যদি পৃথিবীর হাজারো সুন্দরী নারীর সামনে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, এর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী কে? আমি নিরদ্বিধায় বলবো, এর চেয়েও আমার বউ বেস্ট।
আমি এটাও জানি,তুমি আহামরি সুন্দরী। তোমার থেকে-ও বেস্ট কেউ না কেউ রয়েছে।
তবুও হাজার রমণী’র ভীরে তুমি আমার চোখে’র দেখা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর রমণী।
এই সত্য কখনো নড়বড়ে হবে না। যেমনটা হয় না, আকাশ, বাতাস, পৃথিবী ও প্রকৃতির নিয়ম।”

রাত্রীপ্রিয়া আর সহ্য করতে পারলো না। আনন্দে ঝরঝর করে কেঁদে, স্বামী’র বুক ভাসালো। একটা মেয়ে’র কাছে এর চেয়ে বড় পাওয়া কি আর থাকতে পারে? পারে না তো! মেয়েটা অশ্রুসিক্ত নয়নে স্বামীর বুকে মুখ লুকিয়ে ভেজা কণ্ঠে আওড়াল,

“নেতা সাহেব, আপনি সবসময় বেস্ট! আপনি বেস্ট সন্তান, আপনি বেস্ট হাসবেন্ড, আপনি বেস্ট ভাই, আপনি বেস্ট, নেতা। আপনার মতো, কেউ না। কেউ হতে পারে না!
আমার দেখা পৃথিবীর সেরা পুরুষটি আপনি। এই সেরা পুরুষটিই আমার, অর্ধাঙ্গন। আমি ভীষণ লাকি, আমার ভাগ্যটা ভীষণ দামী! ”

সানাম চৌধুরী থেমে থেমে হাসলো। বউকে আরো একটু খানি শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। কানে’র কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

“ভালোবাসি, মনোহরণী!”
__________

ছাদের রেলিং ধরে খোলা আকাশের দিকে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এক সপ্তদশী মেয়ে, পরশ। চোখে মুখে তার বিষন্নতার ছাপ, বুক ভরা হা’হা’কা’র! আকাশে’র দিকে তাকিয়ে এতক্ষণে’র চেপে রাখা ভারী ভারী দীর্ঘশ্বাস গুলো ছাড়ছে।
এমন সময় পাশের দালানের ছাদ থেকে এক যুবক মৃদু আওয়াজ করে ডাকলো,

“ওই কঁচি? ওমন করে আকাশে’র দিকে তাকিয়ে কি খুঁজে চলছো, গো? দূরন্ত আকাশে’র দিকে তাকিয়ে লাভ হবে না গো, আকাশে দুঃখ ছাড়া আর কিছু খুঁজে পাবে না তুমি! জমিনে তাকাও, কঁচি! চোখ মেলে খুঁজে দেখো, জমিনেই লুকিয়ে রয়েছে অমূল্য রতন।”

চলবে……

[সবাই পেজে’র পোস্টে রেসপন্স করবেন। প্রতিদিন পর্বে এক হাজার করে রিয়েক্ট করে দিলে, প্রতিদিন গল্প পাবেন। #তোমাকে_চাই_নিরবধি গল্পের পাঠকরাও অপেক্ষা করুন, রাতে গল্প দিচ্ছি।]

রেসপন্স করবেন সবাই ❤️ ফলো দিয়ে রাখুন যাতে পর্ব মিস না হয় ।।

পেইজঃ Bindas Life ✅ ফলো করতে পারেন ।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here