রাত্রীপ্রিয়া #পর্বঃ৮ লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী

0
330

#রাত্রীপ্রিয়া
#পর্বঃ৮
লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী

“যে ঠোঁট বউয়ের চুমুতে ভেজে সেই ঠোঁটে আপনি সিগারেট চাপিয়ে পুড়ছেন, সানাম চৌধুরী!
ছি, নেতা সাহেব ছি! আপনার থেকে এমনটা আশা করিনি আমি! আপনি আমার বোনের হক নষ্ট করছেন?

সায়মনের দিকে অগ্নি চোখে তাকালো, সানাম চৌধুরী। যা দেখে সায়মন পুনরায় দাঁত কেলিয়ে বললো,

“ওমন করে তাকিয়ে লাভ নেই গো, নেতাজী। আপনি নেতা হয়েছেন, তাই বলে কি আমি আপনাকে ভয় পাই ভাবছেন? উঁহু! সায়মন চৌধুরী আপনার মতো বড়বড় নেতা পকটে ঢুকিয়ে হাঁটে। আপনাকে হাজতে ভরা আমার বাঁ-হাতের খেল মাত্র! ভুলে যাবেন না, আপনার ক্ষমতা পাওয়ার পিছনে আমার একটা ভোটের অবদান রয়েছে।”

অধৈর্য হয়ে ততক্ষণাৎ দু’হাতে সায়মনের গলা চেপে ধরলো, সানাম চৌধুরী! এমনিতেই মেজাজ প্রচন্ড রকমের খারাপ। তারমধ্যে ছেলেটার অহেতুক বকবকানি, জাস্ট অসহ্য লাগছে! তান্মধ্যে সে দাঁত কিড়মিড় করে শুধালো,

“কি সমস্যা তোর? আমায় এভাবে বিরক্ত করছিস কেনো?”

সায়মন চট করে বুঝে গেলো, সানাম চৌধুরী কোনো কারণে রেগে আছেন। রাগ ছাড়া সচারাচর এহেন আচরণ করে না সে।
সায়মন নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো,

“কি হয়েছে, ব্রো? এতোটা রেগে আছিস কেনো?”

“কিছু হয়নি। তুই এখানে কেনো? আমার কাছে কি চাই তোর?”

“তোর কাছে তো একটাই চাওয়া, ভালোয় ভালোয় তোর বোনকে আমার হাতে তুলে দে।”

কথা গুলো খুব করে বলতে গিয়েও বলতে পারলো না, সায়মন। গলা অবধি এনে আবারও বাক্য গুলো খুব সূক্ষ্ম ভাবে ভিতরে রেখে দিলো। এমনিতেই সানাম চৌধুরী রেগে আছেন। তাকে আর রাগানো ঠিক হবে না। নিজেকে ধাতস্ত করে ছেলেটা বললো,

“আঙ্কেল তোকে ডাকছে। এক্ষুণি ওদের বিয়ে পড়ানো হবে। চল, ওখানে যাই আমরা।”

সানাম চৌধুরী প্রতুও্যর করলো না কোনো। নিজের পড়নে’র কালো রঙের ব্রান্ডের পাঞ্জাবি’টার খানিকটা হাতা গুঁটিয়ে টানটান সোজা হয়ে দাঁড়ালো সে।পরিপাটি চুল গুলোতে আরো একবার হাত চালিয়ে নিজেকে আলগোছে আরো একটু ফিটফাট করে নিলো। অতঃপর চঞ্চল পায়ে সামনে’র দিকে এগোল। তার পিছনে পিছনে সায়মন হাঁটছে। সায়মন আশেপাশে বার কয়েক তাকিয়ে খুঁজে চলছে খুব পরিচিত একজনকে। এরিমধ্যে একদল যুবতী মেয়ে’র খিলখিল করা হাসির স্বর শোনা গেলো। তাদের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত নারীটির মাতাল করা হাসি প্রেমিক পুরুষটির কানে, যেন বারংবার রিংটোনের শব্দের ন্যায় বেজে চলেছে!

সায়মন দাঁড়িয়ে গেলো। তৃষ্ণার্ত চোখে, এক পলক পায়েলকে দেখার লোভ জাগলো। চটজলদি কারণ হিসেবে, মিছেমিছি নিজের প্যান্টে’র পকেট থেকে ফোনটা বের করে কানে’র কাছে ধরলো। এমন ভাব করলো, যেন সে ফোনে কথা বলছে। তান্মধ্যে
সানামকে একবার ডেকে বললো,

” সানাম, ইমার্জেন্সি কল এসেছে আমার। তুই যা, আমি আসছি।”

“ওকে। তাড়াতাড়ি আসিস।”

এক পলক পিছনে তাকিয়ে কথাখানা বলে নিজের গন্তব্য চলে গেলো, সানাম চৌধুরী। সায়মন চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে কাঙ্ক্ষিত নারীটি’র দিকে খানিকটা এগিয়ে গেলো। বিয়ে বাড়ির এক কর্ণারে দাঁড়িয়ে আছে, পায়েল, পরশ, সেতু, তানহা আরো কিছু মেয়ে। মেয়ে গুলো নিজেদের মতো কথা বলছে আর হাসছে। এদের মধ্যে শুধু পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে, পরশ। তার মধ্যে কোনো আনন্দ উল্লাস নেই। শুধুমাত্র নিজেকে স্বাভাবিক দেখাতে এদের সাথে থাকছে, হাঁটছে। প্রয়োজনীয় টুকটাক কথা বলছে।
সায়মন সেদিকে গেলো না। এতোগুলা মেয়েদের মাঝে যেতে তার অস্বস্তি লাগছে। খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে কল করলো, পায়লকে। ফোন হাতেই অথচ মেয়েটা সেসব দেখছে না। হয়তো ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছে। ইডিয়েট একটা! এরিমধ্যে তাকে লক্ষ্য করলো পরশ। সায়মন ভাই’কে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাতের ইশারায় সে জিজ্ঞেস করলো,

“কিছু বলবেন সায়মন ভাই, কিছু দরকার?”

সায়মন দ্রুত পরশের নাম্বারে একটা টেক্সট করলো,

“তোর আপুকে এদিকে একটু পাঠিয়ে দে তো, ছোট্ট সোনা। বল আমি ডাকছি। ইমার্জেন্সি! তবে, সাথে যেন কেউ না আসে। একটু ম্যানেজ করে দে,বোন।”

পরশ টেক্সটা পড়ে অল্প একটু মুচকি হাসলো। ততক্ষণাৎ বোনের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,

“আপু তোকে ডাকছে, সায়মন ভাই। দরকারী কিছু বলবে, বোধহয়। তুই যা শুনে আয়। আমরা এখানে আছি।”

পায়েল আশেপাশে একবার চেয়ে লক্ষ্য করলো, সায়মন ভাই কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তাই নিজেও নিঃশব্দে সেদিকে এগিয়ে গেলো। হয়তো দরকারী কিছু বলবে।
সায়মন হাসলো। আজ মেরুন রঙের শাড়ি পড়েছে পায়েল। শ্যাম বর্ণের গায়ের রঙ, মাঝারি গড়নের মেয়েটাকা হালকা সাজে ভীষণ স্নিগ্ধ লাগছে! সায়মনের চক্ষু জোড়া জুড়িয়ে যাচ্ছে। এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে বক্ষ!

মনে চাচ্ছে, মেয়েটাকে একবার বুকের মাঝে আগলে নিতে। একবার গাল ছুঁয়ে বলতে ইচ্ছে হয়,

“ভালোবাসি শ্যামময়ী!”

সুদর্শন যুবকটি’র কতশত ভাবনার মাঝে তার মুখোমুখি দাঁড়ালো পায়েল। সাধারণত নম্র কণ্ঠে শুধালো,

“সায়মন ভাই? বলুন, এখানে কিসের জন্য ডাকলেন?”

সায়মন হেয়ালি করে বললো,

“কেন, তোকে ডাকা বারণ বুঝি? এমন করে বলছিস, মনে হচ্ছে তোকে ডেকে আমি বড় কোনো অপরাধ করে ফেলছি।”

“আশ্চর্য! তা কখন বললাম।”

“তাহলে, তোর এতো তাড়া কিসের? ডেকেছি যখন কিছু তো বলবোই।”

অসহ্য তো! সে আবার কখন তাড়া দেখালো? শুধু জিজ্ঞেস করলো, কেন ডেকেছেন। লোকটার বারাবাড়ি রকমের বিরক্তিকর কথা শুনে, বিরক্ত হলো পায়েল। নাক মুখ কুঁচকে বললো,

“আচ্ছা, বলুন এবার।”

“বলছি, তবে এখানে না। চল একটু সামনে যাই।”

“সামনে যেতে হবে?”

“হবে।”

পায়েল আর কথা বাড়ালো না। পাশাপাশি হেঁটে খানিকটা খোলা জায়গায় দাঁড়ালো দু’জন। এখানে লোকজন খুব একটা নেই। দু’জনার মাঝে নিরবতা বিরাজমান। নিরবতা ভেঙে পায়েল বললো,

“কি হলো, সায়মন ভাই? চুপ করে আছেন কেনো? এবার তো বলুন।”

সায়মন আলতো হাসলো। পূর্ণ দৃষ্টি স্থির করলো, মেয়েটার মুখপানে। লোকটার এহেন চাহনিতে পায়েলের ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে। সে সাথে-সাথে মাথা নিচু করে ফেললো। আরো মিনিট খানিক সময় নিয়ে সায়মন মৃদু কণ্ঠে বলে উঠলো ,

“শাড়িতে তোকে ভীষণ সুন্দর লাগছে, পায়রা!”

চট করে মাথা তুলে তাকালো, পায়েল। মানে, সিরিয়াসলি! তাকে এতো ঘটা করে এতোদূর ডেকে এনে, অহেতুক কথা বলছে সায়মন ভাই। চরম বিরক্ত হলো, পায়েল। খানিকটা বিস্মিত কণ্ঠে বললো,

“এটা আপনার জরুরী কথা হলো, সায়মন ভাই ? এইটুকু বলতে আপনি আমাকে এতদূর নিয়ে আসলেন?”

“হ্যাঁ!”

সায়মনের গা-জ্বালানো জবাব শুনে চোখ গরম করে তাকালো, পায়েল। স্বভাবত সে ভদ্র মেয়ে বলেই লোকটাকে কিছু কড়া কথা বলতে গিয়েও বলতে পারলো না মেয়েটা। পরক্ষণেই রাগ নিয়ে গজগজ করতে করতে চলে যেতে উদ্যাত হলো, পায়েল। এরিমধ্যে সায়মন মৃদু হেসে বললো,

“এই পায়রা, দাঁড়া। শোন, আর একটা কথা?”

পায়েল শুনেও শুনলো না, ফিরেও তাকালো না। পা চালালো সামনে। মুহুর্তেই তার পিছনে পিছনে ছুটে আসলো, সায়মন। চটজলদি পাঞ্জাবি’র পকট থেকে একটা বেলীফুলের মালা বের করলো। চলন্ত পায়েই পায়েলের খোপা করা চুলে জড়িয়ে দিলো, মালাটা। আসার সময় সবার অগোচরে ফুটপাতের দোকান থেকে কেনা, মালাটা। প্রিয় নারীটির নামে মনে করেই কিনেছিলো সে। তাকে এভাবে দেওয়া হবে সে ভাবনা ছিলো না তার। তবুও, কিনেছিলো।

নিজ কার্য শেষ করে, সড়ে দাঁড়ালো সায়মন। জমে গেলো পায়েল। তার চঞ্চল পা থেমে গেলো।
ঘটনাটি এতো দ্রুত ঘটলো যে, বেগ পেতে কয়েক মিনিট সময় লাগলো মেয়েটার। পরমুহূর্তেই মাথায় হাত দিয়ে ফুলের মালাটা অনুভব করলো সে। যা ছিলো তার জন্য অকল্পনীয় কিছু! সায়মন ভাইয়ের আচার-আচরণে বিস্মিত পায়েল! ততক্ষণাৎ খানিকটা অবাক হয়ে তাকালো, সায়মনের দিকে। যা দেখে সায়মন বোকা বোকা হেসে বললো,

“আসার সময় রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছি, মালটা। তোর তো আবার বেলীফুল পছন্দ! তাই ভাবলাম তোকে দিয়ে দেই। ওখানে তোরা অনেকজন ছিলি, একটা মালা নিয়ে কাড়াকাড়ি হতো। তাই এখানে ডেকে আনা। যা এবার।”

সত্যিই কি তাই? উঁহু, মেয়েটাকে তীব্র অস্বস্তির হাত থেকে বাঁচানো’র জন্যই এই মিথ্যা। শুধুমাত্র ছোট্ট একটা বাহানায় তার পায়ের সাথে পা মিলিয়ে কিছুটা পথ এক সাথে চলা। এইতো এতটুকুতেই প্রেমিক পুরুষের মন হিমশীতল হয়ে গেলো। পায়েল আর কিচ্ছুটি বললো না। খানিকটা লাজুক হেসে পুনরায় সামনে পা চালালো। সে কি বিশ্বাস করলো তার মিথ্যে অযুহাত না-কি বুঝে গিয়েছে আসল কারণ? তার মুখো ভঙ্গিমায় সেসব কিচ্ছুটি প্রকাশ পেলো না যেন!
সায়মন প্রশান্তিময় চোখে তার শ্যামময়ী’র যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। অতঃপর উদাস কণ্ঠে শুধালো,

“শ্যামময়ী!
তুমি আমার দূরে থাকা, ভীষণ কাছের কেউ!
তোমাকে পাওয়ার ইচ্ছেটা তীব্র, কিন্তু তাতে বাঁধা সাত সমুদ্রের ঢেউ!”

চলবে…….

[সবাই পেজে রেসপন্স করবেন। রিচ অনেকটা কমে গিয়েছে, যারা পড়েন বেশি বেশি মন্তব্য করুন।কেমন লাগছে গল্প? যারা আমার পেজটি ফলো করেননি, দ্রুত ফলো করুন। এতে গল্প পোস্ট করার সাথে সাথে আপনার টাইমলাইনে পৌঁছে যাবে। হ্যাপি রিডিং!]

পেইজঃ Bindas Life ✅

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here