হিয়ার_মাঝে ৩৮. #মেঘা_সুবাশ্রী ®️

0
580

#হিয়ার_মাঝে ৩৮.
#মেঘা_সুবাশ্রী ®️

গোধূলির লালচে আলোকছটায় আচ্ছন্ন গগনবক্ষ। সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ঘন কুয়াশার মাত্রা। পৌষের ঈষৎ হিমেল হাওয়া বইছে প্রকৃতিতে। কিন্তু যান্ত্রিক শহরে সেই হিম ভাব নেই বললেই চলে। উষ্কখুষ্ক খোলা চুল, পরনে ধুলাবালি মাখানো আধা পুরানো শাড়ি, হাঁটু গেড়ে ছাদের কার্ণিশে বসে আছে সোনিয়া। অযত্নে গৌরবর্ণা গায়ের রঙ ফিকে হয়ে গেছে। মুখ জুড়ে মেছতার কালচে দাগ। অসহায় চাউনি। তার চিমু নেই? তার চিমু কালরাত বাড়ি ফিরেনি। সেই থেকেই পাগল প্রায়। তাকে কেউ পছন্দ করে না। সবাই শুধু গালি দেয়। সবাই বলে সে কেন মরে না? এমন অজস্র প্রশ্ন আনমনে বিড়বিড় করছে। দৃষ্টি তার আকাশ পানে। দু’চোখ জ্বলছে ভীষণ, কালরাতে সে ঘুমায়নি। ছেলের রুমে গিয়ে ছটপট করেছে। তার চিমু নেই? রাতে ফিরেনি? ছেলের শোকে কাতর ব্যাকুল জননী। তার দু’হাত কোল থেকে কিঞ্চিৎ উপরে উঠানো। সেই দু’হাতের আঙ্গুলি ঘন ঘন নড়ছে।

যখন খুব বেশি মন খারাপ হয়, তখন ছাদের কার্ণিশে এসে বসে থাকে। আকাশ পানে তাকিয়ে নিজের অজস্র অভিযোগ তুলে ধরে। কিন্তু তার বিড়বিড় করা কথা কেউ শুনে না। মানুষ তাকে দেখলেই বলে উঠে ‘পাগলি’। কিন্তু সে’তো পাগল নয়, এটা তো শরীরের সমস্যা। তার কি দোষ! কেউ বুঝে না এই কথা।

চিন্ময় বাড়ি প্রবেশ করে নিজের মা’কে খুঁজল। তার মামি, কুমুদ দু’জনেরই দরজা বন্ধ। হয়ত সুখনিদ্রায় আচ্ছন্ন তারা। সারা বাড়ি খুঁজেও তার মা’কে পেল না। কপালে চিন্তার ভাঁজ। শেষে ছাদের দিকে ছুটল। মন বলছে, হয়তো ছাদেই হবে তার মা’। পায়ের কদম বাড়িয়ে দ্রুতই ছাদে গিয়ে উপস্থিত হয়। কিন্তু মায়ের সম্মুখীন হতেই মুখশ্রী হতাশায় মূর্ছিত হল। অপরিষ্কার আর বেশ অগোছালো হয়ে বসে আছে। হাঁটু গেড়ে মায়ের সম্মুখে বসল সে। মায়ের দু’হাত আঁকড়ে ধরে জিজ্ঞেস করল,

‘কি হয়েছে মা’ তুমি এখানে একা একা বসে আছো কেন?’

সোনিয়া ছেলেকে দেখে হাওমাও করে কাঁদল। কথা বলতে গেলেই মুখ তার কিঞ্চিৎ বেঁকে যায়। আবার অস্পষ্ট জড়টাও কথার মাঝে। ডান হাত উপরে তুলে ফাঁকা আঙ্গুলি ঘন ঘন নাড়িয়ে বলে উঠল,

‘চিমু, কা,,কাল কেন আসো নি?’

চিন্ময় মা’কে জড়িয়ে ধরল। নরম স্বরে বলল, ‘মা, দুপুরে গোসল করো নি। ভাত খাও নাই।’

সোনিয়া নাক টানলেন। ডান হাত এখনও নড়ছে। মাথা দু’দিকে কিঞ্চিৎ নাড়িয়ে জবাবে না বলল। চিন্ময় যা বোঝার বুঝে নিয়েছে। আজ কেউ তার মা’কে গরম পানি করে দেয়নি। তাই মায়ের গোসলও হয়নি। দুপুরের খাবার দিয়েছিল নিজ হাতে খেতে। কিন্তু তার মা’ যে হাত দিয়ে ঠিক করে খাবার খেতে পারে না। দীর্ঘশ্বাসে ভারী হল বক্ষস্থল। চিন্ময়ের দু’চোখ ছলছল। একদিন সে বাড়িতে না থাকলে তার মা’ অভুক্ত, অগোছালো পড়ে থাকে ঘরের এককোণে। তার মা’কে দেখাশোনা করতে একটা মেয়ে রাখলে সে দু’দিন পর পালিয়ে যায়। এভাবে কত মেয়ে পালিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। আজকাল আর মেয়ে রাখা হয় না। অথচ কুমুদ সে চাইলে তার মায়ের দেখাশোনা করতে পারে। তার তো নিজের ফুফু হয়। হয়ত তার মামার ইচ্ছে পূরণ হলে ভবিষ্যতে তার শাশুড়ীও হবে। কিন্তু এই মেয়ে তার মায়ের কোন দায়িত্বই পালন করে না। চিন্ময় ফের দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।

নিজের মা’কে দু’হাত দিয়ে টেনে তুলে নিচে নিয়ে আসে। আগে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়। ভালো করে হাত-পা পরিষ্কার করে দেয়। আলমিরা থেকে একটা সালোয়ার কামিজ বের করে। বিছানায় রেখে মা’কে বলে,

‘তুমি এগুলো পরো মা’ আমি বাইরে আছি। তোমার জন্য খাবার এনেছি। খেতে এস।’

সোনিয়া খুশি হয়। তার তো খুব খিদে পেয়েছে। কিন্তু তাকে ঠিক করে খাইয়ে দেয় না কেউ। তার চিমু ছাড়া আর কেউ তাকে খাইয়ে দেয় না। কাঁপা দু’হাতে কোনোভাবে জামা পরে নেয়। বাইরে এসে দেখে ছেলে তার বক্স থেকে খাবার বের করছে। দু’চোখে খুশি উপচে পড়ছে। দু’হাত দিয়ে তালি দেয়। চিন্ময় আলগোছে চোখের জল মুছে। ছেলে’রা ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে রান্না খায়। কিন্তু তার যে মা’কে রান্না করে খাওয়াতে হয়। আজ তার মা’ সুস্থ হলে সেও হয়তো মায়ের হাতের রান্না খেত।

থালার মধ্যে সব বক্স থেকে একটু একটু খাবার নিয়ে নিল। গরম ভাতের সাথে গরুর কালো ভুনা, ডিম, মুরগীর রোষ্ট সবই আছে। নিজের হাতে মেখে মায়ের মুখে ধরল। সোনিয়া হা’ করে ছেলের হাত থেকে পরম আনন্দে নোকমা খাচ্ছে। চিন্ময় খাওয়াতে খাওয়াতে বলল,

‘মা, তোমার জিতুর কথা মনে আছে। জিতুর মা’ তোমার জন্য এই খাবার পাঠিয়েছে। তুমি তো যেতে পারো নি, তাই খাবার দিয়ে দিয়েছে।’

সোনিয়া অবাক হয়। মুখে খাবার চিবুচ্ছে। কিন্তু কিছুসময় থমকে থাকে। তার জন্য জিতুর মা’ খাবার পাঠিয়েছে। ডানহাত নাড়িয়ে ফের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। অস্পষ্ট, জড়ো কন্ঠে বলে উঠে,

‘ভালো, ভালো, খুউব ভালো রান্না হয়েছে।’

চিন্ময়ের অধরকোণে ঈষৎ হাসি। আজ তার মা’ সুস্থ হলে সেও বন্ধুদের জন্য খাবার নিয়ে যেতে পারত। সবাইকে আমন্ত্রণ করত তার বাড়িতে। সেদিন সেও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করত মায়ের মত।
_______

ঘড়ির কাটায় রাত এগারো’টা। নুবাহ রাতের খাবার খেয়েছে আরও দু’ঘন্টা আগেই। এত সময় ধরে সে নীলাভ নিভানদের সাথে আড্ডা দিয়েছে। তাদের মধ্যমণি ছিল ছোট্ট ইনশিয়া। তার আধো আধো বুলি শুনতে বেশ মজায় লাগে। কি পাকা পাকা কথা!
‘চাথীআম্মু, থু,,থুমি নাততে পারো। আমি নাততে পারি। দিখবা।’

তারপর মায়ের ফোন নিয়ে এসে একটা হিন্দি গান প্লে করল।

‘তেরি বাতো মে এছা উলজা জিয়া,
বেথে হি বেথে মে দিল খো দিয়া।’

ইনশিয়া দাঁড়িয়ে থেকে নিজের একহাত কপালের উপর রেখে তার আঙ্গুল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঐ গানের সাথে নাচতে লাগল। সবাই মিটমিট করে হেসে উঠল ইনশিয়ার এমন নাচ দেখে। আরও কত শত পাগলামি। সে চাথীআম্মুর সাথে বসে ভাত খাবে। তাকে আলাদা প্লেট দেওয়া হল। চুপিচুপি তাকে বলল, ‘চাথীআম্মু থুমি মাংত থাও।’ সে হ্যাঁ বলে মাথা নাড়াল। ইনশিয়া ফের বলে উঠল, ‘আমি থাই না। মাংত থেলে তো দাঁত কটমত করে।’ তার এত হাসি পেয়েছে তখন। লজ্জায় সবার সামনে হাসতেও পারছিল না। কিন্তু জিতুর ডিম তাকে আড়চোখে বার বার দেখছিল। ফের তাকে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি মাছ থাও?’ সে আবারও হ্যাঁ’ বলে মাথা নাড়াল। ইনশিয়া দু’ঠোঁট উল্টিয়ে বলে উঠল, ‘আমি থাই না। মাছে অনেক কাঁতা। আমি ডিম খাই। ডিমে তো কাঁতা নাই। ডিম মজা।’ সে মুচকি হাসল। পুরো পাকনা বুড়ি একটা।

তার পায়ের ব্যথাও সেরে গেছে এখন। জিতু আসলেই জাদু জানে। মুহুর্তে কেমন ভালো করে দিল। এরপরও এসে বার বার জিজ্ঞেস করেছে, ‘পা ব্যথা করছে তোমার?’ জবাবে ততবারই না’ বলেছে। আর তখনি চোখ রাঙিয়ে উঠে জিতু। শাসনের সুরে বলে উঠে,

‘আগের মত মিথ্যো বল না। পরে কিন্তু পস্তাতে হবে তোমাকে।’

সে হার মেনে বলেছে, ‘সত্যিই ব্যথা করছে না।’

তখনও জিতুর অবিশ্বাস্য দৃষ্টি তার উপর। সে জিতুকে বিশ্বাস করাতে সামান্য দৌঁড় দিয়েও দেখিয়েছে। তারপর খালি মেঝেতে লাফ দিয়েছে। আবার বিছানা থেকেও লাফ দিয়ে দেখিয়েছে। জিতু তখন মুখ বাঁকিয়ে চলে গেল। কিন্তু বিড়বিড় করে বলল,
‘পাগলি কোথাকার!’ বিড়বিড় করা কথা নুবাহর কানে ঠিকই পৌঁছাল। এভাবে কথায় কথায় বোকা নয়তো পাগলি বলে কেন? সে নিজেই তো একটা বোকা পাগল জিতুর ডিম একটা!

ভাবতেই অধরকোণে ঈষৎ হাসি ফুটে উঠল তার। দু’চোখ মুদিত। কমফোর্টার দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা। সহসাই দরজায় করাঘাতের শব্দ হল। এত রাতে কে আসবে তার রুমে। নীলাভ নিভান কিংবা হৃদি না’তো। কিন্তু এদের তো এই রুমে প্রবেশই নিষেধ। তাদের কড়াভাবে বলে দিয়েছে। যাতে তার রুমে না আসে। প্রবেশ করতে বারণ করার হেতুটা সে বুঝল না। তার রুমে প্রবেশ করলে কি হত? মাথায় হাজারও প্রশ্নের ঝুড়ি নিয়ে শেষে দরজা খুলল। কিন্তু যাকে দেখল একদম হা’ হয়ে আছে। এত রাতে এই লোক এখানে কেন?

জিতু চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। প্যান্টের দু’পকেটে দু’হাত ঢুকিয়ে রাখা। দৃষ্টি নত তার। ভেজানো নরম গলায় বলে উঠল,

‘এত রাতে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। আসলে আমার বন্ধুরা তোমার জন্য কিছু গ্রিফট দিয়েছে। যাওয়ার সময় বার বার বলেছে ঐ গ্রিফট তোমাকেসহ খোলার জন্য। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম তোমাকে বলতে। ওরা আবার কল দিয়ে জিজ্ঞেস করল, গ্রিফট খুলেছি কি’না? তুমি কি একবার আমার রুমে আসবে গ্রিফটগুলো খুলে দেখতে।’

নুবাহ ভাবনাহীন। জবাব কি দিবে তাই বুঝল না। হুট করে এপাশ ওপাশ করে হ্যাঁ’ বলে মাথা নাড়াল। নিজের দরজা লক করে ধীর কদমে জিতুর পিছু নিল। দু’জনেই সোফায় বসল। মাঝখানে বিশাল দূরত্ব তাদের। জিতু প্রথমেই জিমানের বক্স খোলার জন্য হাতে নিল। সে কাঁচি দিয়ে র‍্যাপিং পেপার কেটে নিল। তারপর বক্স খোলার জন্য নুবাহকে দিল। নুবাহ বক্স খুলে গোলাপি রঙের একটা প্যাকেট বের করল। সে বুঝল না এটা কি? একটা মেয়ের মুখে স্টবেরী দেয়া। নিচে লিখা আছে স্টবেরী টেন প্যাকেট। মাত্রই খুলতে নিল দেখার জন্য। জিতু অমনি ছোঁ মেরে তার হাত থেকে প্যাকেট নিয়ে নিল। নুবাহ অবাক হল। ভেতরে কি আছে সেটাই তো দেখল না। জিতু আমতা আমতা করল,
‘এটা না হয় পরে দেখ, আরেকটা খুলো। জিতু নিজমনে বিড়বিড় করল, ‘লম্বুর বাচ্চা এগুলো তোর গ্রিফট। তোরে আমি কালকে খাইছি, দাঁড়া।’

নুবাহ কিঞ্চিৎ অবাক হল। ফের আরেকটা বক্স নিল। নাম চিন্ময়। বক্সটা ভীষণ ভারী। খুলে ভেতরে যা দেখল দু’জনেই অবাক। টাইলস দিয়ে ওজন করে রেখেছে। এরপর ছোট্ট একটা বক্স পেল ভেতরে। সেটা খুলল নুবাহ। জিতু নিজমনে দোয়া পড়ছে কি যে আছে ভেতরে কে জানে? নুবাহ প্যাকেট খুলে একটা বাচ্চাদের ঝুনঝুনি পেল, সাথে চিরকুট।

‘এক ব্যাটালিয়ন বাচ্চার বাপ হওয়ার জন্য অগ্রীম অভিনন্দন, দোস্ত। এই ঝুনঝুনি তোর ব্যাটালিয়ন বাচ্চাদের জন্য।’

নুবাহ চিঠি পড়ে থ’। কত শয়তান এই চিন্ময়। জিতু নিজমনে হাসল। হিরোর বাচ্চা পরিবর্তন হল না আর। এর পরের বক্স মুবিনের। লেডিস আর জেন্টস দু’টো পারফিউম ভেতরে। রকির’টা খুলল তারপর। ভেতরে এক প্যাকেট তেঁতুলের আচার। নুবাহ লজ্জায় হাসফাস করছে। কি গ্রিফট এগুলো। শয়তান কতগুলা।

জিতু সানির’টা রেখে দিল সবার শেষে খোলার জন্য। এই ছেলে ভেতরে কি রাখছে কে জানে। তার নিজেরও লজ্জা লাগছে। জুঁইয়ের’টা খুলল তারপর। ভেতরে একটা সবুজ রঙের টাঙ্গাইল শাড়ি। এতক্ষণ পর স্বাভাবিক একটা গ্রিফট পেল তারা। নুবাহকে জিজ্ঞেস করল, ‘পছন্দ হয়েছে।’ নুবাহ কিঞ্চিৎ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ’ বলল। লরিনের’টা খুলল এরপর। ভেতরে কয়েক রকমের চকলেট পেল। যাক এবারও স্বস্তি পেল জিতু নুবাহ। পরের’টা সিমির। বক্স খুলতেই একটা নাইট ড্রেস পেল। নুবাহ খুলে হাতে নিতেই হতভম্ব। তারপর সোফার একপাশে রেখে দিল। নিজমনে অসংখ্যা গালি ছুঁড়ল এই বন্ধুমহলকে। জিতু নুবাহর রিঅ্যাকশন দেখছে। মেয়েটা লজ্জায় আড়ষ্ট। লজ্জা পেলে মেয়েটাকে বেশ মিষ্টি লাগে। অপলক দৃষ্টি নুবাহতে নিবদ্ধ হল তখন। কেমন ইন্দ্রজাল জানে মেয়ে’টা। শুধু দেখতেই ইচ্ছে করে তার। কেন এত স্নিগ্ধতায় পূর্ণ এই মায়াবী মুখ। যার ভাবনায় দিন কাটে তার। হারিয়ে যায় অতল গহ্বরে।

নুবাহ হাসফাস করছে উঠার জন্য। জিতুর মুহুর্তে মনে পড়ল সানির বক্সের কথা। বক্স বিশাল বড়। দ্রুত সে বক্স হাতে নিল। কিন্তু বক্স খুলতে খুলতে জিতুর অবস্থা খারাপ। একটার ভেতর একটা, এভাবে প্রায় পাঁচটা বক্স বের করেছে। তাও শেষ হয়নি। এভাবে প্রায় আটটা বক্স খোলা শেষে ছোট্ট একটা মিনি বক্স পেল। নুবাহকে খুলতে দিল। বক্স খুলেই নুবাহ চিৎকার দিয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ল। জিতু নুবাহকে শক্ত করে ধরল। জিজ্ঞেস করল,
‘কি হয়েছে?’
নুবাহ কম্পিত গলায় বলল, ‘ভেতরে তেলাপোকা।’

জিতু বক্সের দিকে তাকাল। তেলাপোকাগুলো তখন বের হল প্যাকেট থেকে। তবে অনেকটাই আধমরা, শক্তি নেই উড়ার। সানলাইট নির্ঘাত এগুলো ধরতে বেশ কসরত করেছে। ধরতে গিয়ে আধমরাই করে ফেলেছে। নুবাহর বমি পেল। হাতের মধ্যে তেলাপোকার গন্ধ লেগে আছে। জিতু তাকে দ্রুত বেসিনে নিয়ে আসল। নুবাহর পিঠে আলতো করে হাত বুলালো। বমির ভাব আসলেও বমি হল না তার। হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে কয়েকবার হাত ধুয়ে নিল। জিতু নিজের তোয়ালে দিল মুখ মোছার জন্য। নুবাহও মুখ মুছে নিল নির্দ্বিধায়। পরক্ষণেই মনে পড়ল জিতুর তোয়ালেতে মুখ মুচ্ছে সে। ফের লজ্জা জেঁকে বসল তার তনুমনে। নুবাহ দ্রুতই বের হতে চাইল জিতুর রুম থেকে। তাই বলে উঠল,
‘এখন আমি যাই। অনেক রাত হয়ে গেছে।’

জিতুর মলিন মুখ। মুখে জবাব দিল না। শুধু কিঞ্চিৎ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল। নুবাহ দ্রুতই প্রস্থান করল। জিতুর দু’চোখ ছলছল। চাইলেই তো তারা একসাথে থাকতে পারে। কিন্তু দূরত্বের বিশাল দেয়াল তাদের মাঝে? নুবাহ নিজের রুমে প্রবেশ করতেই জিতুর একটা কথা মনে পড়ল। সেও পিছু পিছু ছুটল নুবাহর। কিন্তু ততক্ষণে নুবাহ দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। বলতে গিয়েও সেই কথা বলা হয়নি তাকে। তার বক্স’টা কি খুলেনি। গলায় তার দেওয়া সেই পেন্ডুলামও পরেনি। তবে কি মেয়েটার পছন্দ হয়নি। বক্সের নিচে রাখা তার চিরকুট কি পড়েনি। বক্স খুললেই তো তার ইচ্ছের কথা জানতে পারত। যেটা বক্সের ভেতর রেখে দিয়েছে সযত্নে। তবে কি তার অপেক্ষার প্রহর আরও বাড়বে?

চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here