#হিয়ার_মাঝে ৪৩.
#মেঘা_সুবাশ্রী ®️
অবাকের চরম শিখরে বন্ধুমহল। সবার মুখ অদ্ভুতভাবে হা’ হয়ে আছে। এটা আসলে সেই জিতু তো, যার অসংখ্য পাগলামির সাক্ষী তারা গত তিন’টা বছর ধরে। হুট করে জিমান চিন্ময় দু’জনে জিতুর সম্মুখে দাঁড়াল। জিমান জহুরি চোখ বুলালো জিতুর উপর। টিপ্পনী মেরে বলল,
‘এতগুলো সিঙ্গেল মানুষ সামনে দাঁড়িয়ে আছি। তুই এভাবে খোলাখুলি প্রেম করতে পারিস না জিতু। একটু তো সম্মান দেয় আমাদের।’
চিন্ময়ও এক ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠল,
‘কিছু রোমান্স রুমের জন্য না হয় বাঁচিয়ে রাখ। আমাদের সামনে এত রোমান্স করলে আমাদের মনটাও তো বউ বউ করবে। তোর দয়ামায়া না থাক, লজ্জা তো করতেই পারিস বন্ধুদের সামনে, তাই না!’
দু’জনেই ভেবেছিল জিতু ভীষণ লজ্জা পাবে। বউয়ের হাত ছেড়ে দিয়ে ক্ষানিকটা ইস্ততঃবোধ করবে। কিন্তু জিতু তাদের ভাবনায় পানি ঢেলে উল্টো টিপ্পনী মারল,
‘দলিল করা বউ আমার। তাই যেখানে খুশি সেখানে রোমান্স করব। কিন্তু কথা হচ্ছে তোদের না বউ রেডি করা আছে, তবু দু’জনেই আমার দু’শালীর সাথে লাইন মারছিস। আমি কি একবারও তোদের কিছু বলেছি, হু।’
দু’জনেই একপলক নীলাভ হৃদির দিকে তাকাল। একটা তো ল্যাদা বাচ্চা, অন্যেটা পিচ্চি। এদের সাথে লাইন মেরে শান্তি আছে। ফের দু’জনেই জিতুর দিকে তাকাল। জিমান কিড়মিড়িয়ে বলে উঠল,
‘এখন বিয়ের বয়স। তোর এই ল্যাদা বাচ্চা শালীর সাথে লাইন মেরে লাভ আছে? একযুগ অপেক্ষা করতে হবে বিয়ে করতে হলে। ততদিনে আমার যৌবনে ভাটা পড়বে। তাছাড়া আমার কর্ণেল বাপ তার ছেলের জন্য পরির মত বউ ঠিক করে রেখেছে। হুদাই খামোখা নিজের বউ থাকতে অন্যের ল্যাদা বউ পালার দরকার আছে আমার। যত্তসব আজগুবি কথা বলিস!’
চিন্ময়ও দাঁতে দাঁত চাপলো। হিসহিসিয়ে বলল,
‘বেয়ান সাহেবা বললে লাইন মারা হয়। শালা, সবাই’রে কি তোর মত ভাবিস না’কি? নুবাহ ভাবী সামনে আছে বলে বাকি’টা বললাম না। তবে সানলাইট হলে এখন বলত, হালা এক নম্বর কি কামিনা তুই।’
জিতু মাছি তাড়ানোর মত জবাব দিল।
‘যা সর দু’জনেই। যেখানে ছিলি, সেইখানেই যা। আমার বউ লজ্জা পাচ্ছে তোদের দেখে। তোরা আর কিছুক্ষণ থাকলে বউ আমার নির্ঘাত অক্কা পাবে এখন।’
এ বাক্যেই নুবাহ যেন আরও লজ্জা মিইয়ে গেল। সত্যিই হাসফাস লাগছে। হাত ছাড়ানোর দীর্ঘ চেষ্টা করছে সে। কিন্তু বদলোক উল্টো তার হাত ধরে রেখেছে। লজ্জানত দৃষ্টি তার নিচের দিকে। বিড়বিড় করে গালি ছুঁড়ল জিতুর উদ্দেশ্য। কিন্তু জিতু ভাবলেশহীন।
জিমান যেনো আকাশ থেকে পড়ল। মাত্র একদিনের ব্যবধানে এত পরিবর্তন হতে পারে কেউ। তবে মুখের আদল কঠিন হলেও মন তার উচ্ছ্বসিত। অবশেষে সেই দুষ্টু জিতুকে ফিরে পেয়েছে। যা’কে সে ভীষণ মিস করত। চিন্ময়ের দিকে ইশারা করে দু’জনেই সামনের দিকে পায়ের কদম বাড়াল। চিন্ময়ও বেশ উৎফুল্ল। কিন্তু দু’জনের কেউ প্রকাশ করল না। তবে চিন্ময় নিজমনে কুটিল চিন্তায় মগ্ন। আজ তো জিতুর খিল্লি উড়াবে সে। মনের মাঝে শয়তানি ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে তার। এবার জমবে মজা!
সানি রকি নিস্তব্ধতায় আচ্ছন্ন। নীলাভ হৃদি দুজনেই তাদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। সানিও কম কিসে? সেও হ্যাঁ বলে দিয়েছে। তার সাথে রকিও যোগ হয়েছে। কিন্তু মনের মাঝে কিঞ্চিৎ ভয় উদিয়মান। কি যে হবে তার!
…
সান্ধ্যকালীন মুহুর্ত। বেশ রমরমা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। খাবারের আয়োজন আর মানুষের ঢল দু’টোই উপচে পড়চে এখন। বন্ধুমহল বসেছে দু’তলার এক অভিজাত রেষ্টুরেন্টে। এখানে হরেক রকমের চিংড়ি ও কাঁকড়া পাওয়া যায়। চিংড়ি কাঁকড়া খাওয়া শেষে সবাই রেষ্টুরেন্ট থেকে বের হল। পাশে ফুচকা চটপটির দোকান। নীলাভের মনে দুষ্ট বুদ্ধির উদয় হয়েছে। সে হৃদিকে বলল আপু সেই চ্যালেঞ্জ পূরণ করার সময় এসেছে। সবাই ভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে মগ্ন হলেও নীলাভ হৃদি দু’জনেই নেমেছে ভিন্ন এক বিষয় নিয়ে। সানি রকি হৃদি আর নীলাভের মাঝে প্রতিযোগিতা হবে, কে সবচেয়ে বেশি ঝাল ফুচকা খেতে পারবে? সময় নির্ধারণ করল মাত্র দশ মিনিট। এর মাঝে চিন্ময় বলে উঠল, সেও অংশ গ্রহণ করবে। পাশে থাকা নীলাভ সে হৃদির দিকে ইশারা করল, চিন্ময়কে রাখা যাবে কি’না? হৃদিও ইশারায় হ্যাঁ বলল। সবাই নিজের প্রসঙ্গ রেখে তাদের কৌতুহলী দৃষ্টি দিল প্রতিযোগিতার উপর। ছোট্ট ইনশিয়া মায়ের পাশ থেকে ছুটে এল। নীলাভ হৃদির কাছে তার আকুতি মেলে ধরল। আধো আধো বুলিতে আওড়ালো,
‘আন্তি আমিও তিইব্বো। ফুত্তা আমিও তাই তো।’
ছোট্ট ইনশিয়ার কথায় সবার মাঝে হাসির রোল পড়ে গেল। জিমান তাকে এক প্লেট ফুচকা দিল। তবে দোকানদারকে অতি সন্তপর্ণে বলে দিল ঝাল না দিতে। এক প্লেট ফুচকা পেয়ে ইনশিয়া হেসে উঠল। সেও খেলবে। তাই খেলা শুরু হওয়ার অপেক্ষায় থাকল। এর মাঝে জিতু সবাইকে থামালো। আক্ষেপের সুর তুলল মুখে। পালটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল। সেও এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে। জিতুর কথা শুনে বাকি’রাও হৈ হৈ করে উঠল। বন্ধুমহলের সবাই অংশগ্রহণ করবে। নুবাহ ঈশিতা বাদ যাবে কেন আর? তারাও অংশগ্রহণ করবে।
সময় নির্ধারণ হল। প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে কম ফুচকা খেয়েছে মুবিন। বেচারা ছয়’টা খেয়েই কুপোকাত। তারপর সিমি মাত্র আট’টা। এরপর যথাক্রমে সানি রকি বারো’টা, নীলাভ লরিন এগারো’টা, হৃদি চৌদ্দ’টা, নুবাহ পনেরো’টা, ঈশিতা তেরো’টা, জুঁই নয়’টা। চিন্ময় জিমান জিতু তিনজনের সবচেয়ে বেশি। তিনজনেই সমানে বাইশ’টা খেয়ে প্রথম। এই তিনজনের খাওয়া দেখে নুবাহ হতবাক। ছেলে হয়েও এত ঝাল টক খেতে পারে। এদের না দেখলে সে কোনদিন জানতোই না। সবগুলো হিসহিস করছে। কিন্তু এরা তিনজনেই মুখে আইসক্রিম দিয়ে বসে আছে। ঠান্ডা খেলে ঝাল কমে যায়। এরা আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। এরকম ছোট থেকেই কত প্রতিযোগিতা তারা নিজেদের মধ্যে করেছে তার হিসেব নেই। আজ অনেকদিন পর আবার সেই অনূভুতি ফিরে পেল। হৃদি নীলাভ হা-হুতাশ করল দীর্ঘসময়। তারা এভাবে হেরে গেল। সানি রকিও তাদের মজা উড়ালো।
‘আহারে, বেয়ান সাহেবা হেরে গেলেন। দিল মে বহুত কষ্ট হচ্ছে আমার।’
হৃদি দাঁত কিড়মিড়িয়ে জবাব দিল। ‘তাও আমি আপনার থেকে বেশি খাইছি।’
সানি জবাবে বলল, ‘তারপরও তো হেরে গেলেন।’
হৃদি জবাবে হাসল। ক্ষীনস্বরে জবাব দিল, ‘হারলেও জামাইর কাছে হারছি, সমস্যা কোথায়?’
সানি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। জামাই! সেতো নুবাহর। এর তো দুলাভাই। ব্যগ্রকন্ঠে বলে উঠল, ‘আপনার জামাই মানে?’
হৃদি মুচকি হাসল। জবাব দিল রগড় গলায়, ‘আপ নাহি সামজো গি।'(আপনি বুঝবেন না)
‘অ্যা,,’
হৃদি ফোৎ করে নিশ্বাস ছাড়ল। ফের বলে উঠল, ‘আপনি এখনও ছোট মানুষ। এসব হিসেব বুঝবেন না।’
সানি হতভম্ব। মানে কি!
জিতু নুবাহকে আইসক্রিম দিল। কানের কাছে ক্ষীণস্বরে বলল, ‘খেয়ে নাও। ঝাল লাগবে না। শুধু পানি খেলে ঝাল আরও বেশি মাত্রায় লাগবে।’
নুবাহ ধীর গলায় বলে উঠল, ‘আপনি এত ঝাল কিভাবে খেলেন?’
জিতু কিঞ্চিৎ মুচকি হাসল। সেও নুবাহর মত ধীর গলায় জবাব দিল, ‘তোমার জামাইর হিডেন ট্যালেন্ট, বুঝলে। কিন্তু তুমি তো আমার মুখ ডুবাইলা। মাত্র পনেরো’টা ফুচকা খেলে।’
নুবাহ ভ্রুকুঞ্চন করল, চোয়ালদ্বয় শক্ত করে জবাব দিতে উদ্বত হতেই জিতু থামালো।
‘আরে এভাবে তাকাও কেন? আমি ভয় পাই না।’
নুবাহ হতভম্ব। এই লোকের কত রূপ দেখবে আর। আর কি লুকিয়ে আছে এর মাঝে? নিজের দৃষ্টি নত করল দ্রুতই। মহা ধড়িবাজ! তার সাথে সে কথা বলে পারবে না। বদলোক একটা।
চিন্ময় হৃদিকে ডাকল। কিছু একটা নিয়ে দীর্ঘ আলাপ করল তারা। তারপর হুট করেই গায়েব। জিতু আচমকা চোখ বুলালো আশেপাশে। নুবাহকে খুঁজে পেল না। ভাবল হয়তো আশেপাশে কোথাও আছে। কিছুসময় পর পর খুঁজল। কিন্তু নুবাহ হৃদি ঈশিতা এদের কাউকে দেখা গেল না। ছোট্ট ইনশিয়া তার সাথে বসে আছে। সে উঠতে চাইল। কিন্তু জিমান জোর করে আবার বসালো। জিতু এর হেতু বুঝল না। বাসায় যাবে না। ঘড়ির কাটায় রাত আট’টা পঁচিশ। কম সময় তো বাইরে ছিল না। কিন্তু জিমানের হেলদোল নেই। সে মনের সুখে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করছে। জিতুর হাত শক্ত করে আঁকড়ে রেখেছে। দীর্ঘসময় এভাবে অতিক্রম হল। শেষে না পেরে তিরিক্ষি মেজাজে বলে উঠল,
‘লম্বুর বাচ্চা, তোর মতলব কি বলতো? এভাবে হাত ধরে রেখেছিস কেন?’
জিমান জবাব দিল দ্রুতই।
‘আমার না হওয়া নিষ্পাপ বাচ্চাগুলোকে কেন গালি দিচ্ছিস? ওরা কি করেছে? করলে তাদের বাপ করেছে। গালি দেওয়ার হলে তার বাপকে গালি দেয়। তার চৌদ্দগুষ্টিকে দেয়, তাও আমার নিষ্পাপ বাচ্চাকে দিবি না দয়া করে।
জিতু জহুরি চোখ বুলালো। এক ভ্র উঁচিয়ে ধরল, ‘কাহিনী কি বল তো?’
জিমান অতিষ্ঠ হয়ে উঠল জিতুর এমন তির্যক মন্তব্যই। হাত ছেড়ে দিল সে। ফের বলে উঠল,
‘এবার দূরে গিয়ে মর, হাত ছেড়ে দিছি।’
জিতু কিঞ্চিৎ অবাক হল। ফের কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও নিশ্চুপ বসে পড়ল। সবাইকে ডাকল গাড়িতে উঠার জন্য। কিন্তু নুবাহ ঈশিতা দু’জনকে পাওয়া গেল না। চিন্ময়ও নেই। ফের মনে সন্দেহের অবকাশ হল। জিজ্ঞেস করতেই জুঁই বলে উঠল,
‘নুবাহ আর ঈশিভাবী কিছু কেনাকাটা করবে তাই শপিং এ গিয়েছে। সেখান থেকে সোজা বাসায় চলে যাবে।’
জিতুর ভীষণ রাগ হল। বউ তার শপিং করবে। তাকে বললেই হত। সেও যেত। কিন্তু তাই বলে তাকে না বলেই চলে গেছে। এটা মহা অন্যায় করেছে তার সাথে। এর শাস্তিও সে দেবে। চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসল সবার সাথে। বিশ মিনিটের মাঝে বাসায় এসে পৌঁছালো। জিতু বেশ অবাক হল। সবাই সামনে উপস্থিত হলেও নুবাহকে দেখা গেল না। তার রাগ যেনও থরথর করে বাড়ল। স্বামী হিসেবে ন্যূনতম সম্মান পাওয়ার যোগ্য না সে। কিন্তু নুবাহ তাও করল না। সোজা রুমে প্রবেশ করল। সেখানেও নুবাহকে পাওয়া গেল না। মনটাই বিষিয়ে গেল মুহুর্তে। ফ্রেশ হয়ে বসতেই রাতের খাবার খেতে ডাকা হল। সে যেতে চাইল না। কিন্তু রুবি এসে ডেকে নিয়ে গেল। চারপাশে ফের নজর বুলালো। কিন্তু নুবাহকে এবারও নজরে পড়ল না। হঠাৎই তার বউ কোথায় উধাও হয়ে গেল। নিজের চেপে রাখা রাগ সংযত করে রুবিকে বলে উঠল,
‘খালামনি নুবাহ কোথায়? সে খাবে না।’
রুবি জবাবে বলল, ‘বাবা ও তো খেয়ে ফেলেছে তুমি আসার আগেই।’
মুহুর্তে মুখশ্রীতে অমানিশার ঘোর অন্ধকার নামল। হৃদকাননে চাপা কষ্ট অনুভব হল ভীষণ। স্বামী হিসেবে না হোক অন্তত মানুষ হিসেবে কি তার প্রতি মায়া জন্ম নেয় নি। এতটা অবহেলা? নিরবে দীর্ঘশ্বাস বেরুলো বক্ষস্থল থেকে। এঁটো হাতে ভাতের থালায় নড়াচড়া করছে। কিন্তু লজ্জায় উঠতেও পারছে না। এ খাবার তার গলা দিয়ে নামবে না। জয়তুন এসে মাথা হাত বুলালো। ঠাট্টারচ্ছলে বলে উঠল,
‘বউ’রে ছাড়া খাইতে ভালা লাগে না।’
জিতু হকচকিয়ে গেল। তার দিকে বন্ধুমহলের দৃষ্টি পড়ল। জয়তুন বিবির জবাবে সে কিঞ্চিৎ মাথা নাড়ালো না’ বলে। কিন্তু তার মন তো সত্যিই নুবাহকে খুঁজে যাচ্ছে। সেই দু’ঘণ্টা ধরেই দেখেনি। কোথায় তাও জানে না। বুকটা ভীষণ চটপট করছে একপলক বউকে দেখতে। কোথায় লুকালো মেয়ে’টা? তার মুখশ্রীর এমন হাল দেখে রুকাইয়া বলে উঠল,
‘নুবাহ’রে তোমার ছোট খালা ডাকছিল। হেরপর তো আর বাসায় ফিরে নাই। তোমার খালা বলছে তোমারেও যাইতে।’
জিতু যেনো প্রাণ ফিরে পেল দীর্ঘসময় পর। নুবাহ সত্যি তার ছোট খালার বাসায়। তড়িঘড়ি নিজের খাবার শেষ করে খালার বাসার দিকে পায়ের কদম বাড়াল। লিফটের সামনে আসতেই দেখল এখানে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হবে তাকে। তাই সিঁড়ি দিয়ে দ্রুতই ছুটল। তার ছোট খালার বাসায় এসে দেখল সব কেমন সুনসান নীরবতায় আচ্ছন্ন। মন তার সন্দেহপ্রবণ হল। তাই কবিতাকে জিজ্ঞেস করল,
‘খালামনি নুবাহ তোমার বাসায় আসেনি।’
কবিতা অকপটে বলে উঠল।
‘না, সে’তো আমার বাসায় আসেনি।’
জিতু হতবাক। তার বউ কোথায়? সে লুকিয়ে আছে না’কি কেউ লুকিয়ে রেখেছে। ফের দ্রুতই নিচে নামল। নুবাহদের বাসায় আসল। কিন্তু এখানে চিত্র আরও ভিন্ন। তার হাড়বজ্জাত বন্ধুগুলো কেউ সামনে নেই। রুবি দরজা খুলল। সে হাঁপিয়ে গেছে। ইস্ততঃবোধ করছিল বেশ। রুবিকে বলে উঠল,
‘খালামনি, নুবাহ কোথায়? সে’তো আমার খালামনির বাসায় যায় নি।’
রুবি তড়িৎ জবাব দিল, ‘নুবাহ তো তার রুমেই আছে।’
জিতু যেন আকাশ থেকে পড়ল। এ কেমন মজা করছে তার সাথে। তার হাড়বজ্জাত বন্ধুগুলোও নাই। মুহুর্তে সব কোথায় উধাও হয়ে গেল। মস্তিষ্ক যেন অচল ভাবনাহীন। সে দ্রুতই নুবাহর রুমে প্রবেশ করল। ঘুটঘুটে অন্ধকার রুম। সুইচবোর্ডে বার বার চাপ দিল। কিন্তু রুমের বাতি জ্বললো না। তার কাছে সবকিছুই অদ্ভুত লাগছে। এসবের পেছনে তার হাড়বজ্জাত বন্ধুগুলোই আছে। সে নিশ্চিত তার বউটাকে এরাই গায়েব করে দিয়েছে। কিন্তু কোথায় লুকিয়েছে? সে বার কয়েক ডাকল, নুবাহ। কিন্তু কোনো ফিরতি জবাব এল না। মেজাজ চটে গেল। তিরিক্ষি মেজাজে বলে উঠল,
‘নুবাহ, জবাব দিচ্ছো না কেন? সামনে পেলে আজকে কঠিন শাস্তি দেব। আমাকে এভাবে হয়রানি করার জন্য।’
তাও জবাব এল না। সে নিজের পকেটে হাত দিল। আরে তার মোবাইল কোথায় গেল? রাগে গজগজ করতে করতে লাগল। হাতড়ে হাতড়ে বিছানায় এসে পড়ল। এবার হাতের নাগালে কোন এক নারী অবয়বের ছোঁয়া পেল। সে হাত ধরে বলে উঠল,
‘নুবাহ।’
অপর পাশ থেকে জবাব আসার আগেই রুমের বাতি জ্বলে উঠল। জিতু যা দেখল, তার চক্ষু চড়কগাছ। মুহুর্তে মুখশ্রী লজ্জা আর অস্বস্তিতে রূপান্তর হল। হায় হায়! সর্বনাশ!
চলবে,,,,
কাল আসবে ধামাকা। আগামীকাল গল্প পাবেন ইনশা’আল্লাহ।