#রাত্রীপ্রিয়া
#পর্বঃ২
লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী
“তাকে পাওয়ার লোভ আমার রয়েই যাবে, বাবা। তাকে পেতে যদি আমার আরো কয়েক যুগ অপেক্ষা করতে হয়, তবুও আমি তাকে পাওয়ার দাবী ছাড়বো না।”
ছেলে’র কথা’র মাঝে লুকিয়ে ছিলো গাঢ় আকুলতা, একরাশ স্নিগ্ধ ভালোবাসা! যা উপলব্ধি করতে ভুল করেনি, বিচক্ষণ পুরুষ “সালাম চৌধুরী”।
এরপরই বোনের সাথে কথা বলে,সালাম চৌধুরী। ভাইয়ের প্রস্তবে অমত করেনি রাত্রীপ্রিয়া’র বাবা-মা। ছেলেটা তার মেয়ের থেকে বয়সে একটু বেশি বড় হলেও যোগ্য পুরুষ, সানাম চৌধুরী।
সুদর্শন, লেখাপড়া, ক্যারিয়ার, ব্যক্তিত্ব সহ সবদিক দিয়ে খুব কম বয়সেই নিজেকে যোগ্য করে তুলেছে। নিজেকে ফিট রেখেছেন, বয়স ত্রিশ বা ঊনত্রিশের কোঠায় হলেও বোঝার উপয়ান্তর নেই। মনে হচ্ছে, ২২/২৫ বছরের এক যুবক।
এমন একটা ছেলে মেয়ের জামাই হিসেবে কে না, চায়! সবথেকে বড় কথা, ছেলে-মেয়ে দু’জন দু’জনকে পছন্দ করে। এরপর আর কারো অমত থাকেই না।
দুই পরিবার মিলে এদের বিয়ের পাকাপোক্ত কথা বলে রাখে। শুধু মেয়েটা বড় হওয়ার অপেক্ষা করছিলো সবাই। কিন্তু, নিয়তির পরিকল্পনা ছিলো ভিন্ন। রাত্রীপ্রিয়া’র বয়স যখন সতেরো ঠিক তখনই মা মা’রা গেলো। সদ্য কলেজে পড়ুয়া রাত্রীপ্রিয়া একা হয়ে যায়। তার কোনো ভাইবোন নেই, দেখা শোনা’র জন্য কেউ নেই। বাবা “আনোয়ার” একজন ব্যাবসায়ী। সারাক্ষণ অফিস, কাজ এসব নিয়েই বাহিরে থাকতে হয় তাকে। অগত্যা সালাম চৌধুরী কিছুদিন আগেই ঘরোয়া ভাবে, নিজের একমাত্র ভাগিনী’কে তার একমাত্র পুত্রের বউ করে নিজের ঘরে নিয়ে আসলেন। সেদিন সানাম চৌধুরী’র জীবনে ছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে, সেরা প্রাপ্তি!
প্রিয় মানুষটাকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দে, কেঁদে ছিলো সে। প্রেয়সীর হাত ধরে প্রথম কথা ছিলো,
“সানাম চৌধুরী’র জীবন সঙ্গী হিসেবে কবুল পড়ার জন্য আপনাকে স্বাগত, প্রিয় বেগম সাহেবা! এই যে আপনার হাত ধরেছি, এই হাত মৃত্যু’র আগ অবধি ছাড়ছি না। আপনার কোলে মাথা রেখে’ই শেষ নিঃশ্বাস ছাড়ার দৃঢ় প্রত্যাশা কামনা করছি!”
প্রথম রজনী’তে শখের নারীটিকে বুকের মাঝে জড়িয়ে রেখেছিলো, ঘন্টার পর ঘন্টা।
এরপর থেকে তাকে আর চোখের আড়াল করেনি, সানাম চৌধুরী। পরম যত্ন, সীমাহীন ভালোবাসা দিয়ে বুকের মাঝে আগলে রাখছে তার মনোহরণী’কে।
__________
বর্তমান-
সকাল নয়টা। ঢাকা শহরে’র মেইন টাউনে দোতলা বিশিষ্ট ডুপ্লেক্স বাড়িটি হচ্ছে, “চৌধুরী বিলা”।
চৌধুরী পরিবার, যৌথ ফ্যামিলি। সালাম চৌধুরী ও রায়হান চৌধুরী দুই ভাই। সালাম চৌধুরী’র একমাএ ছেলে, সানাম চৌধুরী। দুই মেয়ে, পায়েল ও পরশ। এদের মধ্যে, সানম চৌধুরী বড় ছেলে।
ছোট ভাই রায়হান চৌধুরী’র এক ছেলে, এক মেয়ে।
এই তো এদের নিয়েই চৌধুরী পরিবার। দুই ভাই, নিজেদের বউ বাচ্চা নিয়ে সবাই এক সাথেই থাকছে।ভবিষ্যতেও থাকবে।
.
.
শ্বাশুড়ি ও চাচি শ্বাশুড়ি’র সাথে হাতে-হাতে সাহায্য করে সকালে’র নাস্তা রেডি করছে, রাত্রীপ্রিয়া। তার সাহেব এখনো ঘুমোচ্ছে।
কিছুক্ষণের মধ্যে, সালাম চৌধুরী, দুই মেয়ে পায়েল ও পরশ, রায়হান চৌধুরী, তার ছেলে সায়মন, মেয়ে তানহা সহ একে একে চৌধুরী পরিবারে’র সকলে ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত হলো। সকালের নাস্তা’টা তারা সবাই এক সাথে’ই খায়।
দুই বউ শ্বাশুড়ি মিলে এদের সবাইকে খাবার পরিচালনা করছে। এরিমধ্যে রাত্রী’র শ্বাশুড়ি “তানিয়া চৌধুরী ” পুত্র বধূকে বললো,
“তুমি ও ওদের সাথে খেতে বসো, বউমা। এতটুকু আমি একাই পারবো।”
রাত্রী ততক্ষণাৎ নিচু কণ্ঠে জবাব দিলো,
“উনি উঠলে আমরা একসাথে খাবো, মামনী। আমি এদিকটা দেখছি, আপনি আর ছোট মামনী খেতে বসুন।”
নেতা সাহেব গতরাতে বাড়িতে এসেছেন, এখনো সে খবর কেউ শুনেনি। রাত্রী কথা বুঝতে পেরে, সবাই অবাক হয়ে তার মুখে’র দিকে তাকালো।
এরিমধ্যে পাশ থেকে পায়েল বললো,
“তুই পা’গ’ল হয়েছিস, রাত্রী? ভাইয়া কি বাড়িতে আছে না-কি? ভুলে গেলি, ভাইয়া বাসায় নেই। সে আসবে কখন আর তুই এতক্ষণ না খেয়ে থাকবি। বস, বস,আমাদের সাথেই খেয়ে নে।”
বোনদের মধ্যে বয়সে সবার বড়, পায়েল। এবার অনার্স তৃতীয় বর্ষে’র ছাত্রী সে। সম্পর্কে এখন রাত্রী তার বড় ভাইয়ের বউ হলে-ও আগের কার নিয়মেই চলছে সব। হুট করে তো আর দীর্ঘদিনের অভ্যাস চেঞ্জ করা যায় না। পায়েলে’র কথা শুনে রাত্রীপ্রিয়া মৃদু কণ্ঠে শুধালো,
“বড় আপু! উনি গতকাল রাতেই ফিরেছে, এখন বাসাই আছেন। ঘুমোচ্ছে এখন, সানাম ভাই। গত রাতে ঘুম হয়নি তাই আর তাকে সকাল সকাল ডাকিনি। তোমরা সবাই খেয়ে নেও।”
যা শুনে চমকালো, সবাই। এরিমধ্যে দুঃখি দুঃখি মুখ করে তানহা বললো,
“বাহ্! কত প্রেম তাদের। আজ একটা জামাই নাই বলে, কারো জন্য এভাবে অপেক্ষা করতে পারছি না!”
ওর কথা শুনে, হেসে উঠলো সবাই। তান্মধ্যে সায়মন বোনের মাথায় টোকা দিয়ে বললো,
“যেখানে তোর বড়ভাই এই শীতেও বউ ছাড়া সিঙ্গেল বেডে ঘুমোচ্ছে , সেখানে তুই পুঁচকো মেয়ে জামাইর আশা করছিস? এই আশা বিলাসিতা মাএ!”
ছেলে’র কথা শুনে চোখ গরম করে তাকালো, রায়হান চৌধুরী। যা দেখে সায়মন আবারো দুষ্ট হেসে বলে উঠলো,
“ওভাবে তাকিয়ে লাভ নাই, রায়হান চৌধুরী। আপনি বিবাহিত পুরুষ হয়ে কি আর বুঝবেন, এই শীতে সিঙ্গেল’দের কষ্ট। একটা বউ থাকলে এতোদিনে দাদা ডাক শুনিয়ে দিতাম।”
ভাতিজা’র কথা শুনে সালাম চৌধুরী কেশে উঠলো। সায়ান, সায়মন দু’জনই প্রায় সমবয়সী। এই ছেলেটা তার ছেলের থেকেও নির্লজ্জ। মুখে কিছু আঁটকায় না। সায়মন একজন পুলিশ অফিসার। এদের বাপ-ছেলে’র মধ্যে বন্ধু’র মতো সম্পর্ক। ততক্ষণাৎ,রায়হান চৌধুরী পায়ের স্যা’ন্ডে’ল খুলে ছেলের দিকে তাক করে গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো,
“জাস্ট তোর মুখটা বন্ধ কর, বেয়াদব ছেলে! নয়তো জু’তো দিয়ে তোর মুখ বন্ধ করবো আমি। বিয়ে করতে চাস? শখ কত! তোর মতো ব’দ’মা’শ’কে, জেনে-শুনে মেয়ে দিবে কে?’
“হ্যাঁ’রে বুঝলে, পায়েল! আজকাল সত্যি কথা বললে অনেকেরই গায়ে লাগে! শুনো আব্বু, কেউ মেয়ে না দিলেও সমস্যা নেই আমার। তুমি আছো না, আমার মেয়ে পছন্দ হলেই আমরা বাপ-ছেলে গিয়ে মেয়ে তুলে আনবো।”
“সায়মন আমি তোর বাপ হই, বিয়াই না। তুই একটু মুখটা বন্ধ কর বাপ! এই নির্লজ্জ ছেলের কথা শুনে, কবে জানি হা’র্ট অ্যা’টা’ক হয়ে যায় আমার!
এরা বাপ-ছেলে তর্ক করছে। বাকিরা মুখ টিপে হাসছে। সানাম বেড রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে কেবলই বেড়িয়েছিল। দোতলার সিঁড়ি’র কাছাকাছি আসতেই এদের কথোপকথন শুনতে পেলো। ততক্ষণাৎ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে বললো,
“এই যে, আমিও এসে গেছি। মা, দ্রুত আমার খাবার রেডি করো। ভীষণ খিদে পেয়েছে।”
সবার দৃষ্টি পড়লো এবার, সানাম চৌধুরী’র মুখপানে।
তানিয়া চৌধুরী ছেলেকে দেখে মুখ গোমড়া করে বললো,
“তুই গতকাল আসছিস, সায়ু। অথচ আমার সাথে একটিবার দেখাও করলি না।”
সায়ান চৌধুরী ততক্ষণাৎ মা’কে আলতো জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে বললো,
“আসতে অনেক রাত হয়েছিল, আম্মু। তোমারা সবাই ঘুমাচ্ছিলে তাই আর ডাকিনি।”
এরিমধ্যে সায়মন মুখ বাঁকিয়ে বললো,
“আসছে, আমাদের নেতা সাহেব! তোকে ফোন করলাম, তুই গতকাল রাতেও বললি আমি সিলেট। এরমধ্যে বউয়ের টানে মধ্য রাতে বাসায় হাজির, শা’লা! আহারে! আমারও একটা বউ থাকলে রাত-বিরেতে আমিও তার টানে বাসায় চলে আসতাম। কিন্তু, আমার বাপ আমার কষ্টটা বুঝলোই না। প্রচুউর কষ্ট বুকে!”
বলতে বলতে বুকে হাত চেপে ধরলো, সায়মন। সায়ান চৌধুরী ভাইয়ের পাশের চেয়ারটায় বসলো। এরপর ভাইয়ের পিঠে হালকা থা’প্প’ড় দিয়ে বললো,
“বাহ্! তোদের যন্ত্রণায় তো দেখছি আজকাল বউয়ের কাছেও আসা যাবে না। বিয়ে করছি কি আর, একা একা রাত কাটানোর জন্য! আমি ভাই বউ পাগল মানুষ। বউ ছাড়া ঘুম আসে না, রাতে। তাই মধ্যরাতেই চলে এসেছি।”
মামা-মামীদের সামনে বসে স্বামী’র বেফাঁস কথা শুনে লজ্জায় নিজের রুমে চলে গেলো, রাত্রীপ্রিয়া।
দুই নির্লজ্জ এক জায়গায় হয়েছে। সালাম চৌধুরী ও রায়হান চৌধুরী দুই ভাইও নিজেদের অর্ধ খাওয়া প্লেট রেখে উঠে দাঁড়ালো। আজকাল ছেলে-মেয়েরা বড় বেপরোয়া! এরা গুরুজন মানে না। উনারা দুই ভাই আর ছেলে-মেয়েদের মাঝে থাকলো না, নিজেদের অফিসে চলে গেলো।
তানিয়া চৌধুরী ও সায়মনে’র মা “রোকসানা চৌধুরী” ও ওখান থেকে রান্না ঘরে চলে গেলো।
এরা সবাই মজা করলেও আজ একদম চুপচাপ ম”ন’ম’রা হয়ে বসে আছে, পরশ।যা দেখে সানাম চৌধুরী বোনের গালে হাত ছুঁয়ে আদুরে কণ্ঠে শুধালো,
“তোর কি হয়েছে, পরশ? আমাদের পাকনা বুড়ি’টা আজ এতো চুপ কেনো?”
পরশ সূক্ষ্ম ভাবে কিছু একটা এড়িয়ে গেলো। মলিন মুখে হাসি টেনে বললো, “আমার কিছু হয়নি, ভাই। তোমরা কথা বলো, আমি শুনছি।”
বিচক্ষণ সায়ান চৌধুরী’র বুঝলো, তার পিচ্চিটা কিছু একটা লুকাচ্ছে। তার বোনেরা তার বড় আদরে’র। ছোট বোনকে,সবার মাঝে আর প্রশ্ন করলো না সে। একাকী সময়ে জেনে নিবে, ভাবলো। অপর দিকে বউ না খেয়ে, রুমে বসে আছে।
পরমুহূর্তে, সায়ান চৌধুরী নিজের প্লেটে’র খাবার নিয়ে উঠে বউয়ের পিছু নিলো। যেতে যেতে দুষ্ট হেসে বললো,
“ইশশশ! বউটা আমার লজ্জা পাইছে গো! ও বউ! বউ গো! আমার মতো নিরীহ বাচ্চা একটা ছেলে’কে এই দু’ষ্ট সায়মইন্নার মাঝে একা রাইখা চইলা গেলা, বউ! বউ গো, তোমার জামাই’রে ও একা পাইয়া, টিজ করছে। বউ আমারে বাঁচাও!”
চলবে…..
[সবাই পেজে রেসপন্স করবেন। এই পর্বে রাত ১১ টার মধ্যে ১০০০ রিয়েক্ট করে দিলে, রাতে আরো এক পর্ব পাবেন। আর হ্যাঁ,আমার লেখা #তোমাকে_চাই_নিরবধি পড়ছেন তো আপনারা? যারা পড়েননি, পড়তে পারেন। আশা করছি, ওটাও আপনাদের ভালো লাগবে।
রেসপন্স করবেন সবাই ❤️
পেইজঃ Bindas Life ফলো করতে পারেন ।।