রাত্রীপ্রিয়া #সূচনা_পর্ব লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী

0
810

গভীর রাতে তল’লপে’টে কারো ঠোঁ’টে’র শীতল ছোঁয়া অনুভব করতেই ঘুম হালকা হয়ে যায় আমার। এরিমধ্যে হাত জোড়ার মালিক আরো একটু গভীর হলো। ধীরগতিতে আমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে ওষ্ঠে গভীর চুমু খেলো। এরপর মৃদু কণ্ঠে শুধালো,

“তোমাকে দেখার তৃষ্ণায় পু’ড়’ছে মন, ধুঁ’কে’ছে হৃদপিণ্ড! এতো দেখি তোমায়, তবুও মনে হয় দেখি না বহুকাল! ওহে্ মন বধূয়া! নিশি রজনী’তে অন্যের ঘুম কেড়ে নিয়ে তুমি সুখের নিদ্রায় আচ্ছন্ন! একবার চেয়ে দেখো মনোহরণী, তোমার ঠোঁ’টে’র পরশ পেতে এক যুবকের বুকে কতটা উথাল-পাতাল ঢেউ বইছে!”

কানে’র কাছে ফিসফিসিয়ে বলা কণ্ঠস্বর কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই পুরোপুরি নিদ্রাচ্ছন্ন ভাব কেটে যায় সপ্তদশী, রাএী প্রিয়া’র। ভয় পেয়ে ধড়ফড়িয়ে শোয়া থেকে উঠার চেষ্টা চালালো, মেয়েটা। এরিমধ্যে তাকে নিজের শক্ত বাহুবন্ধন আবদ্ধ করে নেয় এক যুবক।
চমকালো রাত্রী প্রিয়া! চিৎকার করার চেষ্টা চালালো, সে চেষ্টাও বিফলে গেলো। যুবকটি তড়িৎ গতিতে তার অধরে সাথে নিজের অধর ডুবিয়ে দিলো। পরিচিত পুরুষের ঘ্রাণ, তার আদুরে ছোঁয়া অনুভব করে কিছুটা শান্ত হলো, রাত্রী প্রিয়া। এরিমধ্যে পরিচিত কণ্ঠ স্বর শোনা গেলো। যুবকটি প্রেয়সীকে আশ্বাস দিয়ে বললো,

“ভয় পেয়ো না,জান! আমি..আমি তোমার নেতা সাহেব। চিৎকার করো না জান,কেউ শুনে ফেলবে। শান্ত হও, সোনা! একমিনিট! নড়ো না, জান! চুপটি করে মিশে যাও তৃ’ষ্ণা’র্ত বুকের মাঝে।”

বলতে বলতে হাতের বাঁধন আরো একটু শক্ত করলো, নেতা সানাম চৌধুরী।
চট করে মাথা তুলে তাকালো, রাএী। ড্রিম লাইটের আলোয় পরিচিত মুখটা একবার পর্যবেক্ষণ করে স্বঃস্তি পেলো। অপ্রত্যাশিত লোকটাকে এতো রাতে নিজের কাছাকাছি দেখে খানিকটা বিস্মিত কণ্ঠে শুধালো,

“সানাম ভাই! আপনি?”

“কি ব্যাপার, সুন্দরী? অন্য কাউকে আশা করছিলে বুঝি!”

“ছিঃ! একদম বাজে বকবেন না, সানাম ভাই!”

“সানাম চৌধুরী ব্যতিতো তার বেড রুমে এসে তার প্রাণ প্রিয় অর্ধাঙ্গিনী’কে স্পর্ষ করার মতো দুঃসাহস কি কারো আছে, বেগম সাহেবা?এটা আপনার বোঝা উচিৎ ছিলো!”

দু’দিন আগে অফিসিয়াল কাজে ঢাকা থেকে সিলেট গিয়েছিল নবনির্বাচিত মন্ত্রী, সানাম চৌধুরী। তার আরো একদিন পরে আসার কথা ছিলো। রাত এখন দুইটা কি তিনটা! গভীর রজনীতে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে স্বামীকে নিজ কক্ষে দেখে যতো বিস্ময় রাত্রী’র! ততক্ষণাৎ নিজেকে ধাতস্ত করে স্বামীর গলা জড়িয়ে ধরে বললো,

“দুঃখিত, নেতা সাহেব! ঘুমের মধ্যেে হঠাৎ করে এহেন স্পর্ষ পেয়ে হকচকিয়ে গিয়েছিলাম! আপনার তো আজকে আসার কথা ছিলো না, এতো রাতে কোথা থেকে আসলেন? আপনি আসবেন, আমাকে জানালেন না কেনো?”

সানাম চৌধুরী প্রিয়তমা স্ত্রী’র গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,

“হঠাৎ বউয়ের কথা মনে পড়ছিলো, প্রেম প্রেম পাচ্ছিলো খুউব। তাই আর থাকতে পারলাম না, বেগম সাহেবা! পৃথিবীতে আপনিই একমাত্র নারী, যাকে দেখার তৃষ্ণা ইহজন্মে সানাম চৌধুরী’র রয়েই যাবে। যদি সম্ভব হয়, পরপারেও আমি আপনার পিছু নিবো মনোহরণী!
আপনাকে ছাড়া একা থাকাটা আজকাল ভীষণ দায় হয়ে গিয়েছে! আপনি জাদু জানেন, বেগম সাহেবা! নয়তো, গুরুগম্ভীর, র’গ’চ’টা সানাম চৌধুরী একজন রমণীর টানে এতো রাতে ছুটে আসতো না। বলুন তো, বেগম সাহেবা! কোন কবিরাজে’র থেকে এই ভয়ংকর কালো জাদু করেছেন আমায়?”

“উঁহু! আমি মোটেও আপনাকে কালো জাদু করিনি, নেতা সাহেব! ভালোবাসা দিয়ে জয় করে নিয়েছি, আপনাকে! মায়া দিয়ে মায়ার জাদুতে বেঁ’ধে নিয়েছি মনো গহ্বরে। ওখানে অন্য নারী’র প্রবেশ নিষিদ্ধ! আপনার হৃদ মাজারে শুধুমাত্র আমার রাজত্ব চলবে, ওখানে একমাত্র আপনার রাত্রীপ্রিয়া’র বিচরণ। এই বাঁধন ছিন্ন করা’র ক্ষমতা আপনার নেই, নেতা সাহেব।”

সানাম চৌধুরী নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো, প্রিয় অর্ধাঙ্গিনী’কে। তার কপালে চুমু খেয়ে বললো,

“আপনার বাঁধন আরো গাঢ় হোক, প্রাণবন্ত হোক মনোহরণী! আপনার দেহের সাথে আমার দেহ , মনের সাথে মন আষ্ঠেপৃষ্ঠে মিশে যাক। এই বাঁধন ছি’ন্ন হওয়ার আগেই আমার মৃ’ত্যু হয়ে যাক!”

প্রিয় পুরুষে মুখে মৃ’ত্যু শব্দটি শুনে কেঁপে উঠলো, সপ্তদশী’র বুক। কেননা শখের পুরুষের ক্ষেএে বাঙালি নারী ভীষণ দুর্বল। তার কিছু হওয়াতো দূর, তার মুখে সামান্য মৃ’ত্যু শব্দটা শুনলেও হৃদপিণ্ড তাড়াক করে উঠে।
পরমুহূর্তে রাত্রীপ্রিয়া স্বামী’র থেকে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে শক্ত কণ্ঠে বললো,

“একদম বাজে কথা বলবেন না, সানাম ভাই। অনেক জার্নি করে এসেছেন, যান গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি আপনার জন্য খাবার গরম করে নিয়ে আসছি।”

সানাম চৌধুরী তক্ষণাৎ প্রেয়সীর হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে দিয়ে বললো,

“তোমার কি মনে হয়, মনোহরণী? সানাম চৌধুরী তোমার কাছে এতো রাতে খাবার খেতে এসেছে?এখন ভাত নয় অন্য কিছু খাবো আমি!”

কিশোরী মেয়েটা অবুঝের মতো পাল্টা প্রশ্ন করলো,

“আশ্চর্য! এমন করছেন কেনো, সানাম ভাই? এতো রাতে ভাত ছাড়া কিছু নেই। কি খাবেন আপনি?”

“আই নিড, বউয়ের চুমু! আদর – সোহাগ!”

স্বামীর বেফাঁস কথায় কান গরম হয়ে গেলো, মেয়েটার। লজ্জা পেয়ে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে কণ্ঠে কৃত্রিম রাগ মিশিয়ে বললো,

“দেখি ছাড়ুন আমায়। দিনদিন আপনি দারুণ অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন, সানাম ভাই! মুখে কিছু আঁটকায় না।”

“বউয়ের কাছে সব পুরুষই অসভ্য হয়, সুন্দরী! অ’স’ভ্য না হলে, ইহজন্মে আর বাবা ডাক শুনতে পারবো না। এই জান, চলো না ঘরে নতুন অতিথি আনার ব্যাবস্হা করি।”

এতক্ষণ শুধু লজ্জা লাগলেও এবার লজ্জার বাপ-মা চৌদ্দ গোষ্ঠী এসে ভিড় জমিয়েছে, সপ্তদশী মেয়েটার মাঝে। লজ্জায় রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ছে ফর্সা মায়াবী মুখখানায়। মানুষটা দারুণ অ’স’ভ্য! তাকে ক্ষণে ক্ষণে লজ্জা দিতে উস্তাদ!
মেয়েটার লজ্জা রাঙা মুখ-খানায় যেন তাকে আরো আকর্ষণীয় লাগছে। বউয়ের এই রুপে বেসামাল হয়ে পড়লো, সানাম চৌধুরী। সে দেরী করলো না একমুহূর্তও। নিজের সাথে আগলো নিলো, তার মনোহরণী’কে। কোমড় সমান খোলা রেশমী চুলে মুখ ডুবালো। অতঃপর কানে কাছে মুখ নিয়ে নেশালো কণ্ঠে ফিসফিস করে শুধালো,

“লাজুকলতা তোমার লাজুকতা কাটাতে হবে তো, জান! না হয়, আমাদের বাচ্চারা আমাদের মাঝে আসবো কি করে। এতোদিনে বউয়ের লজ্জাই যদি না ভাঙতে পারি, তাহলে আমি কিসের পুরুষ! কিসের আবার জনগণের নেতা!

কান চেপে ধরেলো, রাত্রীপ্রিয়া! বাঁকা হাসলো, সানাম চৌধুরী। মেয়েটা’কে লজ্জা দিতে তার দারুণ লাগে! প্রেয়সীর এই রুপ সে বেশ এনজয় করে।
উপায়ন্তর না পেয়ে স্বামী’র চওড়া বক্ষে মুখ লুকালো, রাত্রী। লোমশযুক্ত বুকখানায় হাত দিয়ে মৃদু কি’ল দিয়ে বললো,

“প্লিজ চুপ করুন, আপনি! আমার অস্বস্তি লাগছে।”

থেমে গেলো, সানাম চৌধুরী। মনোহরণী’কে বুকের মাঝে আগলে নিয়ে তার শরীরের ঘ্রাণে নিজেকে রাঙালো। আবদার স্বরুপ বললো,

“জাস্ট পাঁচটা মিনিট এভাবে থাকো, জান। নড়ে না, জান! এরপরই আমি ঘুমবো। ভীষণ টায়ার্ড লাগছে শরীর। তোমাকে ছাড়া অচেনা বেডে, অচেনা জায়গায় এই দু’দিন একদমই ঘুম হয়নি।”

রাত্রী প্রিয়া শান্ত হলো। নিজেও অনুভব করছে সুন্দর মুহুর্তটাকে। আবেশে চোখ বন্ধ করলো, সানাম চৌধুরী। কোনো কামুকতা ছাড়াই হুটহাট প্রিয় মানুষ’কে জড়িয়ে ধরার মধ্যে রয়েছে আলাদা প্রশান্তি! মিনিট দশেক পাড় হলো সেভাবেই। অতঃপর মনোহরণীর কোলে আলগোছে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো ছেলেটা। রাত্রী প্রিয়া পরম যত্নে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো তার।
মিনিট দশেকের মাঝে বউকে বুকের মাঝে চেপে সুখের নিদ্রায় আচ্ছন্ন হলো, সমান চৌধুরী।
_______

স্মৃতিচারণ–

এই নারীটি তার বড় আদরের, বহু শখের। সানাম চৌধুরী’র বড় ফুপির একমাত্র মেয়ে, রাত্রীপ্রিয়া! সেবার যুবক বয়সে ফুপির বাড়িতে গিয়ে বাড়ন্ত কিশোরী’র মাঝে চোখ আটকে গিয়েছিলো তার। পুরো যুবক বয়সটা তার কেটেছে, পড়ালেখা আর রাজনীতি নিয়ে। ওসব প্রেম, ভালোবাসা তার জীবনে আসেনি। আসেনি বলতে ভুল হবে, সানাম চৌধুরী সেসবে জড়াননি। বহু নারীর কাঙ্ক্ষিত পুরুষ, সানাম চৌধুরী। বহু নারী’র মাঝ থেকে তার দৃষ্টি জোড়া মুগ্ধতা খুঁজে পেলো এক, মায়াবিনী কিশোরীর মাঝে।
সেই যে দৃষ্টিতে আঁটকে গেলো মেয়েটার উপর, এরপর আর নজর নড়বড়ে হয়নি।
তখন রাত্রী ছিলো সবে চোদ্দ কি পনেরো বছরের কিশোরী। আর তার বয়স ছিলো উনত্রিশ। নিজেদের বয়সের বিশাল ফারাক উপলব্ধি করে নিজের বিভাগের কাছে হে’রে গিয়েছে, সানাম চৌধুরী।
নিজের ভালোবাসা, আসক্তি, অনুভূতি’কে দমিয়ে রেখেছে বহুদিন। এটা তার কাছে ছিলো বড়ই লজ্জা জনক পরিস্থিতি! এরপর থেকে সব সময় এড়িয়ে চলতো, মেয়েটাকে। হঠাৎ করে তার প্রণয়েরও মাহেন্দ্রক্ষণ আসলো। যখন তার ছোট বোন “পায়েল” এসে বললো, রাত্রী তাকে মনেমনে পছন্দ করে।
সেদিন সানাম চৌধুরী ভুলে গেলো নিজেদের বয়সের ব্যাবধান। বাবা’র কাছে আবদার করেছিলো,

“ছোট ফুপির মেয়েটাকে আমার লাগবে,বাবা।”

সবটা শুনে বাবা “সালাম চৌধুরী” আশ্বাস দিয়ে ছেলেকে বললো,

“মেয়েটার বয়স অল্প। এই মুহূর্তে কিছু করা সম্ভব নয়। তুমি যদি তার বিয়ে’র উপযুক্ত বয়স হওয়া অবধি অপেক্ষা করতে পারো, তবেই বিষটা নিয়ে ভাববো আমরা।”

সানাম চৌধুরী চমৎকার এক হাসি দিয়ে বাবা’কে বললো,

“তাকে পাওয়ার লোভ আমার রয়েই যাবে, বাবা। তাকে পেতে যদি আমার আরো কয়েক যুগ অপেক্ষা করতে হয়, তবুও আমি তাকে পাওয়ার দাবী ছাড়বো না।”

চলবে…….

#রাত্রীপ্রিয়া

#সূচনা_পর্ব

লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী

[প্রিয় পাঠক! রানিং গল্পের পাশাপাশি নতুন গল্প নিয়ে আসলাম আপনাদের জন্য। দু’টোই চলবে, ইনশাআল্লাহ! সবাই পেজে রেসপন্স করবেন। রাত্রীপ্রিয়া কেমন লাগছে আপনাদের? ]

পেইজঃ Bindas Life ✅ ফলো করতে পারেন ❤️ ।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here