#হিয়ার_মাঝে ৪১.
#মেঘা_সুবাশ্রী ®️
সমুদ্রের তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা নগরী হালিশহরে নুবাহদের বাসা। বারো তলা বিশিষ্ট ভবনের নয় তলায় নুবাহদের ফ্ল্যাট। একই ভবনের দশ তলায় জিতুর ছোট খালা কবিতাও থাকেন। বারান্দায় দাঁড়ালে যতদুর চোখ যায় সমুদ্রের অপার সৌন্দর্য চোখে ভেসে আসে। মুহুর্তে সমুদ্র থেকে আসা হিমেল বাতাসে পুরো তনুমন সতেজ হয়ে যায়। তীরবর্তী ভীড় করা বড় বড় জাহাজগুলোও খালি চোখে দেখা যায় হরহামেশাই। জিতুর মন স্নিগ্ধতায় ভরে গেছে। শ্বশুর বাড়ি এসে মন’টা বেশ হালকা লাগছে। লোক আসলে ঠিকই বলে, ‘শ্বশুর বাড়ি মধুর হাঁড়ি।’
তবে সমুদ্র দেখে মন’টা আরও বেশি প্রানবন্ত ও ফুরফুরে হয়ে গেছে। এজন্য বোধহয় কবিরা বলেন,
‘রেলগাড়ীর মত ছুটন্ত জীবনে মাঝেমধ্যে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ কর। যান্ত্রিকময় জীবনের বিষন্নতায় মোড়ানো অবসাদ মুহূর্তে শীতলতায় পূর্ণ হবে। সবুজ প্রকৃতি ঘেরা পাহাড়ও ঘুরে দেখ মাঝে মাঝে। নিজেকে প্রাণবন্ত এক কিশোর মনে হবে। শৈশবের মতই উচ্ছ্বসিত হবে। তাই ছুটন্ত জীবনে নিজেকে বিশ্রাম দিয়ে একটু পরখ কর। ক্লান্তি হতাশা দূর হয়ে সতেজতা আসবে মন থেকে।’
দীর্ঘ চার ঘন্টার ভ্রমণ শেষে বন্ধুমহলসহ সবাই বেশ ক্লান্ত। দুপুর এক’টায় এসে পৌঁছায় বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। দীর্ঘ ভ্রমণে যেখানে সবাই হাঁপিয়ে উঠেছে, সেখানে হৃদি দিব্যি বকবক করে যাচ্ছে। কিছু সময়ের মাঝে চিন্ময়ের মায়ের সাথে তার বেশ গলায় গলায় ভাব জমে গেছে। সোনিয়াও মন খুলে কথা বলছে। দু’জনেই একসাথে কথা বলছে, আবার মাঝে মাঝে হেসে উঠছে। দৃশ্য’টা চিন্ময়ের বেশ নজর কাড়ল। কি দারুণ দৃশ্য! ঠিক কতদিন পর তার মা’ এভাবে হাসছে। একটা পিচ্চি মেয়ে তার মা’কে কত যত্ন করছে। অথচ কুমুদ সে তো এই মেয়ের থেকে গুণে গুণে তিন/চার বছরের বড় হবে। কিন্তু কিভাবে মানুষকে সম্মান দিতে হয় সে বোধটুকুও নেই। আর যত্ন সে তো অনেক দূর। তবে এত কিছুর মাঝেও নজরকাড়া সৌন্দর্য ছিল ভাত খাওয়ানোর সেই দৃশ্য। তার মা’ তাকে ছাড়া কারো হাতে খেতে পারে না। মামা বাড়িতে ফিরলে তখন তার মামা পরম যত্নে বোনকে খাইয়ে দিত। এছাড়া আর কারো উপর তার মা’ কখনো সন্তুষ্ট হয়নি। বাস্তবতা আসলে অন্যকিছু, যত্ন করতে পারলে একটা পিচ্চি মেয়েও মন জয় করতে পারে। হৃদি বোধহয় তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
দুপুরের খাবার শেষ হয়েছে প্রায় দু’ঘন্টা হতে চলল। সবাই বিশ্রাম নিতে মরিয়া। বন্ধুমহলের সবগুলোই কবিতার বাসায় চলে গিয়েছে। শুধু চিন্ময় মায়ের পাশে বসে আছে। সে বসে বসে হৃদি আর মায়ের খোশগল্প দেখছে।
জিতু বারান্দায় বসে আছে প্রায় ঘন্টা খানেক হতে চলল। তার বেশ ভালো লাগছে। একদম পাঁচ তারকা হোটেলের মত উপভোগ্য দৃশ্যর মত। ফ্রিতে সমুদ্রের সৌন্দর্য এবং একসাথে জামাই আদর, একে বলে রাজ কপাল। নুবাহ বাসায় এসে সবার আগে নিজের পরনের শাড়ি ছুঁড়ে ফেলেছে। মনে হচ্ছে কি এক ভারী পাথর পরে আছে। মানুষ কিভাবে পরে থাকে? তার তো দু’দিনেই দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম। তড়িঘড়ি ব্যাগ খুলে কালো-লাল মিশেলের লং কুর্তি পরেছে। নিজেকে বেশ হালকা লাগছে এখন। খাওয়া শেষ করে বিছানার এককোণে গুটিশুটি মেরে বসে আছে। দু’চোখ তন্দ্রাঘোরে বার বার মুদে যাচ্ছে। কিন্তু ঘুমোতেও পারছে না। জিতু বারান্দায়, যখন তখন রুমে প্রবেশ করবে। গত দু’দিন দু’জন দু’রুমে ছিল। কিন্তু আজ একই রুমে থাকতে হবে। সেই ভয়ে আৎকে উঠছে। বেশ কিছুসময় পার হল এভাবে ঝিম মেরে। শেষে না পেরে কম্বল গায়ে দিয়ে বিছানার এককোণে শুয়ে পড়ল।
ঘুম ভাঙলো তার বেশ কিছুসময় পর। সময় কতক্ষণ হল বুঝতে পারল না। বারান্দার দরজা বন্ধ। জানালার পর্দাও টানানো। পুরো রুম ঘুটঘুটে অন্ধকারে নিমজ্জিত। তার অবচেতন মন জিতুকে খুঁজল। লোকটা গেল কোথায়? তখন তো বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। হাওয়া হয়ে গেল নাকি? নীরবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। কিন্তু যখন নড়তে গেল সে ভূত দেখার মত চমকে উঠল। অবিশ্বাস্য নজরে তাকাল। জিতুর শক্তপোক্ত হাত তাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। লোকটা তাকে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে? ভাবতেই তার অস্থির লাগছে। আচমকাই শরীর হিমশীতল বরফের ন্যায় জমে গেল। বক্ষস্থল থেকে উচ্চশব্দে ঢিপঢিপ শব্দ ভেসে আসছে। এ লোক কি মহাধড়িবাজ! তার ঘুমের সুযোগ নিয়ে তাকে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। অথচ জেগে থাকলে কি ভাব দেখায়, যেন সে তাকে চেনেই না।
বিছানা ছেড়ে সে উঠতে চাইল। কিন্তু জিতু তাকে সাপের ন্যায় পেঁচিয়ে রেখেছে। হাতের বাঁধন এত দৃঢ়, ছাড়াতে পারল না। তার মন বলছে, এ জিতুর ডিম মোটেও ঘুমাচ্ছে না। ঘুমের ভান ধরে আছে। কিঞ্চিৎ ঘাড় ঘুরিয়ে চোখের সামনে হাত নাড়াল। কিন্তু চোখের পাতা নড়ল না, তার মানে ঘুমোচ্ছে। তাহলে এত দৃঢ় বাঁধন কিভাবে সম্ভব? ফের আরও একবার চেষ্টা করল। কোনো রকম জান বাঁচিয়ে বের হল। তার মস্তিষ্ক এটা বুঝতে পারল না। এ লোক ঘুমালো কখন? সে টেরই পেল না। কি সাংঘাতিক ব্যাপার!
দরজা খুলে হাঁফাতে লাগল। আচমকা চোখ পড়ল ড্রয়িং রুমে। হৃদি চিন্ময় সোনিয়া আন্টি আর তার মায়ের মাঝে চলছে লুডু খেলার তুমুল লড়াই। কে কাকে হারাবে সেই নিয়ে টান টান উত্তেজনা। তার মা’ আর সোনিয়া আন্টি পার্টনার, অন্যদিকে হৃদি আর চিন্ময় পার্টনার। তাদের খেলা দেখে ভালোই লাগল। তারও ইচ্ছে করছে খেলতে। কিন্তু তার পার্টনার কে হবে, ঐ জিতুর ডিম? অধরকোণে সূক্ষ্ম হাসির রেখা ভেসে উঠল। এখন তো ঘুমাচ্ছে, তাকে একটু মজা দেখানো যায়। শত হলেও তার একমাত্র জামাই। নিজমনে কুটিল হাসল। খুব সাবধানে পা ফেলল রুমের মাঝে। জিতুর চোখে ফের একবার হাত নাড়াল। না, মহাশয় খুব আরামে ঘুমাচ্ছে। সে তার মহান কার্যসিদ্ধি করল আলতো হাতে। তারপর ধীরে ধীরে বেরিয়ে এল রুম থেকে। নিজের কাজ শেষে মুখ চেপে ধরল। মনে পড়তেই তার হাসি উপচে পড়ছে। কি যে মজা হবে আজ!
কিছু সময়ের মাঝে বন্ধুমহলের সবাই হাজির। পুরো ঘর বন্ধুমহলের আগমনে মুখরিত। জিমান এসে জিতুকে খুঁজল। তারা এখন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যাবে। এই সময়’টা সৈকতে ঘোরার সবচেয়ে সেরা মুহুর্ত। নুবাহকে ডাকল,
‘ভাবী, জিতুকে ডাক দিন তো। আমরা এখন বের হব। সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে।’
বন্ধুমহলের কেউ ভাবী ডাকলে লজ্জায় সে আড়ষ্ট হয়ে যায়। অস্বস্তিতে ভোগে দীর্ঘসময়। স্বাভাবিক হতে তো কিছু সময় অবশ্যই লাগবে। সে আমতা আমতা করল,
‘রুমেই আছে, ঘুমাচ্ছে।’
জিমান বেশি কিছু না ভেবে নুবাহকে বলল ঠিক আছে আমিই ডেকে নিচ্ছি। সে নুবাহর রুমে প্রবেশ করল। ঘুটঘুটে অন্ধকার রুম দেখে সুইসবোর্ডে চাপ দিল। বিছানায় কম্বলের নিচে জবুথবু হয়ে ঘুমাচ্ছে জিতু। জিমান গিয়ে কম্বল সরিয়ে চেঁচিয়ে উঠল,
‘ঐ নয়া জামাই উঠ, পড়ে পড়ে আর কত ঘুমাবি।’
জিতু নড়েচড়ে উঠল। চোখদু’টো টেনেটুনে কোনো রকম খুলল। চোখের সামনে জিমানকে দেখে কিঞ্চিৎ ভড়কালো। সে’তো বউকে জড়িয়ে ঘুমিয়েছিল। কম্বল হাতড়ে দেখল তার বউ উধাও। নিজমনে বিড়বিড় করল, বেয়াদব বউ, তাকে রেখে পালিয়েছে। জিমানকে দেখে তন্দ্রাঘোরে উঠে বসল। মুখে এখনও তার হাই আসছে বার বার। কিন্তু সে দেখল জিমান তার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হাই তুলতে তুলতে জিজ্ঞেস করল,
‘কি হয়ছে, এভাবে হা’ হয়ে কি দেখস? জীবনে প্রথম দেখলি না’কি?’
জিমান কিঞ্চিৎ হাসল। টিপ্পনী মেরে বলল,
‘বিশ্বাস কর, তোর এত সুন্দর ঘুমন্ত চেহারা আজ প্রথমবার দর্শন করলাম। আসলে লোকই ঠিকই বলে, বউয়ের পরশে পুরুষের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে যায়। তোরও একই অবস্থা। কি সুন্দর যে লাগছে তোকে, এককথায় অসাধারণ! দাঁড়া, তোর কয়’টা ছবি তুলি আগে। তোর জন্মদিনে স্মৃতি হিসেবে উইশ করা যাবে।’
জিমান হাসি চেপে কোনোভাবে রুম থেকে বের হল। বন্ধুমহলের বাকিদের ডাকতে গেল। এই সবাই এদিকে আয়, জিতুর অতি সুন্দর ঘুমন্ত মুখখানা দেখতে জলদি আয়। বাকি’রা অবাক হল। কিন্তু নুবাহ আৎকে উঠল। হায় হায়! সে তো শুধু জিতুকে ভড়কে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন সবাই জিতুকে নিয়ে মজা উড়ালে সে যদি রেগে যায়, তাহলে কি হবে তার? ভয়ে কেঁপে উঠল। নিজেকেই নিজেই গালি ছুঁড়ল। কি দরকার ছিল ওর মুখে এত লিপষ্টিক মাখানোর। অস্থিরতায় দাঁত দিয়ে নখ খুঁটতে লাগল।
জিতু ভারী শরীরটাকে নিয়ে বিছানা থেকে নামল। ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত নিল মাত্রই। বন্ধুমহলের সবাই হুড়মুড় করে তার সামনে এসে দাঁড়াল। সবাই তার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে। এর হেতু সে বুঝল না। ভ্রুদ্বয় কুঁচকে বলল,
‘সবগুলা এভাবে পেঁচার মত তাকাই আছস ক্যান?’
হঠাৎই বন্ধুমহলের সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। জিতু চোয়াল শক্ত করল।
‘এরকম হাসার কারণ’টা কি? আজব!’
সানি রগড় গলায় বলল,
‘আবে হালা, তোর মুখ’টা আয়নায় দেখছস? আগে জানতাম মানুষ লিপষ্টিক ঠোঁটে লাগায়। আর তুই তো পুরো লিপষ্টিক মুখে মেখে রাখসছ, নাকি কিছু পেটেও দিছস।’
জিতু দ্রুতই ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়াল। তার প্রতিবিম্ব দৃষ্টিগোচর হতেই বিস্ময়ে দু’চোখ কোটর থেকে বের হওয়ার উপক্রম। দু’গালে বড় বড় দু’টো বৃত্ত, ঠোঁটে আর দু’চোখের পাতায়ও লিপষ্টিক দিয়ে আলপনা এঁকে দেয়া। দিন দিন বউ তার দুষ্টু হয়ে যাচ্ছে। এবার তো তাকেও একটু আকটু দুষ্টুমি করতে হবে। দু’গালে হাত রেখে সানির জবাবে বলল,
‘আমার বউয়ের লিপষ্টিক, দরকার হলে মুখে মাখবো, নয়তো খাব। তোদের এত হিংসে হচ্ছে কেন? সবগুলো জড়ো হয়ে কি ফন্দি আঁটলি বলতো?’
বন্ধুমহল হা’ হয়ে আছে। চিন্ময় গালি ছুঁড়ল,
‘শালা হারা’মি, কবুল বলার আগেও বিয়ে করবি না বলে চেঁচাইলি, আর এখন আমার বউ! এত জলদি পরিবর্তন?’
‘তোদের কথা শেষ হইলে সবগুলো বাইর হ, আমার বউরে ডেকে দেয়। তার সাথে আমার গোপন আলাপ আছে। যা জলদি গিয়ে বল।’
চিন্ময় ফের বিড়বিড় করল, ‘শালা গিরগিটিও তোর থেকে ভালো আছে।’
নুবাহ দরজার পাশেই দাঁড়ানো ছিল এতক্ষন। বন্ধুমহলের কথোপকথন সবই শুনল। ভয়ে শুকনো ঢোক গিলল। পালাতে হবে দ্রুতই। কোথায় যাবে এখন? সে ছুটল কিচেন রুমের দিকে। আজ জিতু তাকে কাঁচা চিবিয়ে খাবে। এই কান ধরছে, জীবনেও আর এমন মজা করবে না। এবারের মত মাফ চাই।
সারা ঘর তন্নতন্ন করে নুবাহকে খুঁজছে জিমান চিন্ময়। বাকিরাও ইচ্ছাকৃত হাঁক ছাড়ছে,
‘নুবাহ ভাবী কোথায় আপনি? বেরিয়ে আসুন, আপনার মহান স্বামী আপনাকে ডাকছে।’
এদিকে নুবাহ লজ্জায় তলিয়ে যাচ্ছে। এ বন্ধুমহল তাকে জ্বালিয়ে মারছে। রুবি নুবাহকে কিচেনে প্রবেশ করতে দেখেছে। সে মুচকি হাসল। মেয়েটার চঞ্চলতা আবার ফিরে এসেছে। এই যে অগোচরে স্বামীকে লিপষ্টিক দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে। এইগুলো তার চঞ্চলতার চিহ্ন। স্বামীকে মেনে নেওয়ারও আলামত। সে কিচেনে গিয়ে বারান্দায় উঁকি দিল। নুবাহ ঘাপটি মেরে বসে আছে সেখানে। সে গলা খাঁকারি দিয়ে তাকে ডাকল,
‘নুবাহ, যা’তো জামাই বাবাজী কি যেন খুঁজচ্ছে বোধহয়, পাচ্ছে না। তুই গিয়ে বের করে দেয়।’
নুবাহ চমকে উঠল খালার কথায়। হায় হায়! শেষে তার খালামনি তাকে ধরিয়ে দিল। ওদিক থেকে চিন্ময়ের জোরালো ডাক শোনা গেল,
‘নুবাহ ভাবী, আপনি কিচেনে কি করেন? আপনাকে জিতু ডাকছে।’
নুবাহ হতাশার সুর তুলল মুখে। তার খালামনি মীরজাফরি করল তার সাথে। ত্রস্ত পায়ে রুমে প্রবেশ করল। রুম পুরাই অন্ধকারচ্ছন্ন। হাতড়ে হাতড়ে কোনোভাবে বাতি জ্বালালো। তাকাতেই জিতুর অগ্নিদৃষ্টি চোখে পড়ল। দু’হাত বগলদাবা করে দাঁড়িয়ে আছে। নাক ফুলে লাল হয়ে গেছে। দৃষ্টি দেখেই সে বাকশূন্য। জিতু দৃঢ় গলায় ডাকল,
‘সামনে এস।’
নুবাহ আরও দু’কদম সামনে এসে দাঁড়াল। জিতু ফের বলে উঠল,
‘প্রথমে কোন অংশ থেকে শুরু করেছিলে?
প্রশ্ন না বুঝে নুবাহ কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল, ‘মানে?’
জিতুর এত হাসি পেল। বউ তার মাথা নিচু করে মেঝেতে দৃষ্টি রেখে দাঁড়িয়ে আছে। বাম পা’ ঈষৎ কাঁপছে আর ডান পায়ের আঙুল দিয়ে মেঝে খুঁচিয়ে যাচ্ছে। বউয়ের ভয়ার্ত মুখ দেখে নিজেকে বেশ কষ্টে সংযত করল। ফের বলে উঠল,
‘আগে গালে না ঠোঁটে, না’কি চোখে লিপষ্টিক মেখেছো? সেটাই জিজ্ঞেস করছি।’
নুবাহ ফের কাঁপা গলায় জবাব দিল, ‘আগে বাম গালে তারপর ডান গালে। এরপর ঠোঁট, শেষে চোখে।’
নুবাহর কথা শেষ হওয়া মাত্রই জিতুর দু’হাত তার মাথার দু’পাশে রাখল। নুবাহ তড়িৎ চোখ বন্ধ করল। হুট করে এমন’টা হওয়ায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। এটা কি ছিল! এখনো ধোঁয়াশা মনে হচ্ছে। মুখে মাখানো শেষে জিতু নুবাহর কাঁধে হাত রেখে আয়নার সামনে দাঁড় করালো। এক ভ্রু উঁচিয়ে নুবাহকে বলে উঠল,
‘এবার দেখ, দু’জনকে সেইম সেইম লাগছে। একই আলপনা দু’জনের মুখে। পার্থক্য শুধু তুমি হাত দিয়ে করেছো, আর আমি মুখ দিয়ে। দারুণ না! আমার তো বেশ লেগেছে।’
চলবে,,,,,