এক_ফালি_সুখ🌼 |২৬| [বোনাস পর্ব] #তাসনিম_জাহান_মৌরিন

0
228

#এক_ফালি_সুখ🌼 |২৬| [বোনাস পর্ব]
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
বেশ কিছুক্ষন চিরকুট টার দিনে তাকিয়ে থেকে সেটা নিচে নামিয়ে নিলো তূর্য। মুখ খুলে নিঃশ্বাস ছাড়লো সে। আগে থেকেই আন্দাজ করছিল,হয়তো মৌরিন চিনতে পেরে গেছে ওকে, এই রিপ্লাই দেখে নিশ্চিত হয়ে গেলো। এর পর আর তূর্যের ও কিছু বলার রইলো না, আগে থেকেই মৌরিন তাকে ইনডিরেক্টলি রিজেক্ট করে দিলো।
ফোনটা বের করে অনেক বড় একটা মেসেজ টাইপ করলো তূর্য,তবে সেন্ড করতে পারলো না মৌরিন কে। আবারো বাঁধা দিলো সেই ইগো নামর বস্তু, ফোনটা পকেটে রাখলো তূর্য,সঙ্গে যত্ন করে রেখে দিলো সেই চিরকুট টাও।

_______
জ্যোতির পাশে একপ্রকার ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে হাটছে নির্ঝর। জ্যোতিও এখন চুপচাপ হয়ে গেছে, এতটা অবহেলা আর নিতে পারছেনা সে। অনেক ভেবে চিন্তে একটা মিথ্যে কথা বলেছিল ইটালি চলে যাওয়ার,তাতেও নির্ঝর এর মাঝে কোনো পরিবর্তন এলো না। এবার আসলেই কান্না পাচ্ছে জ্যোতির,তবে কাঁদা যাবে না। নির্ঝর এর সামনে একদমই না,তাই অতি কষ্টে কান্না আটকে রেখেছে সে।
চোখের সামনে পপকর্ন এর প্যাকেটটা দেখতে পেয়ে পাশে ফিরে তাকায় জ্যোতি,নির্ঝরই তার দিকে এগিয়ে দিয়েছে এটা। জ্যোতি নিলোনা,বরং কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে এগিয়ে গেলো। বেশিদূর যদিও এগোতে পারলোনা, নির্ঝর দৌড়ে এসে তার সামনে দাঁড়ালো। নদীর পাড়ের এই জায়গাটায় মাঝেমধ্যেই ঘুড়তে আসতো তারা,এবার অনেকদিন পর এলো। জায়গাটা বিশেষ করে জ্যোতির খুব পছন্দের।
জ্যোতি সেখানেই স্থির রইলো,তাকালো না নির্ঝর এর দিকে। নির্ঝর কিছুক্ষন গম্ভীর ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে হো হো করে হাসতে লাগলো। খানিকক্ষণ বাদে নিজের হাসি থামিয়ে জ্যোতির নাক টেনে দিয়ে বললো,
_”হায়রে বলদি, একটু মিথ্যে কথাটাও ঠিক করে বলতে শিখলি না?”

জ্যোতি জলে টইটুম্বুর চোখ নিয়ে নির্ঝর এর দিকে তাকাতেই নির্ঝর বলে ওঠে,
_”মাফ কর,এখন আবার কান্নাকাটি শুরু করিস না।”

জ্যোতি নাক টেনে বলে,
_”কেন কাঁদবো আমি? কান্নার কোনো কারণ আছে কি?”

_”সেটা তুই ভালো জানিস।”

কিছু বলেনা জ্যোতি,নির্ঝর এবার ঠোঁট চেপে হেসে বলে,
_”যে মেয়ে রাতে একা ঘুমোতেই পারেনা,সে কিনা যাবে ইটালি! এত বোকা মনে হয় আমাকে? তুই বলবি আর আমি বিশ্বাস করে নেবো?”

উত্তর দিলোনা জ্যোতি,নির্ঝর এর পাশ কাটিয়ে সামনে হাটতে লাগলো। নির্ঝর ও তার পিছন পিছন এসে বললো,
_”মিথ্যে বললি কেন আমাকে?”

জ্যোতি তখনও নিশ্চুপ। নির্ঝর আবারো তার সামনে এসে বলে,
_”না বললে আমি বুঝবো কি করে শুনি?”

তবুও কিছু বলেনা জ্যোতি। নির্ঝর ও এবার কিছু না বলে ওকে টেনে বাইক এর কাছে নিয়ে বলে,
_”ওঠ..”

_”কেন?”

_”যাবো এক জায়গায়,তোর ইটালিয়ান জামাই খুজতে।”

হাসলো নির্ঝর। জ্যোতিও তার পিছনে উঠে বসলো। নির্ঝর হেলমেট বা পরেই স্টার্ট দিলো বাইক। পাঁচমিনিট এর মতো বাইক চললো, এসে থামলো অনেকটা নির্জন জায়গায়। আশেপাশে তেমন মানুষ নেই, বড় একটা গাছ আছে কেবল। তার পাশে খানিকটা বসার জায়গাও আছে। এখানে আগেও এসেছে তারা। জ্যোতি চুপচাপ নেমে গিয়ে বসলো সেখানে। নির্ঝর ও এসে তার পাশে বসলো। গালে হাত দিয়ে বললো,
_”মানে আজ কি চুপ থাকার শপথ করেই এসেছিস?”

নিচের দিকেই তাকিয়ে ছিলো জ্যোতি,তার গাল বেয়ে গড়িয়ে পরা অশ্রু দেখতে পেয়েই নির্ঝর তার মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,
_”শুভ কান্নাময় জন্মদিন।”

ভ্রু কুঁচকে তাকায় জ্যোতি,নির্ঝর হাসতে হাসতে বলে,
_”এবার তো কান্না থামা, করলাম তো উইশ। আর কি চাই?”

জ্যোতি উঠে দাঁড়িয়ে চোখ মুছে বলে,
_”তোমার কি মনে হয়? আমি উইশ পাওয়ার জন্য কাঁদছি? ”

_”তা নয়তো কি?”

চোখ মুছে আবারো বসে পরলো জ্যোতি,তবে তার অশ্রু যেন বাধ মানছে বা আর। নির্ঝর ওর দিকে এগিয়ে এসে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
_”একটা লাইন শোনার জন্য এতো কান্না?”

পাশ ফিরে তাকায় জ্যোতি,অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
_”কি লাইন?”

_”সেটা তো তুই বলবি।”

মুচকি হেসে বললো নির্ঝর,জ্যোতি বিরক্ত হয়ে বলে,
_”মজা করছো তাইনা? ভালো লাগছে না আমার। যাও তো তুমি, ঐ দিয়ার সাথে গিয়ে মজা করো।”

নির্ঝর বেশ উচ্চস্বরে হেসে বলে,
_”চাইলাম তো যেতে, কিন্তু যেতেই দিলোনা রে।”

_”হ্যা হ্যা, এইজন্যই এখন আমার উপর দরদ উতলে উঠছে বুঝি?”

_”এহেম এহেম, দরদ দেখাবো না বলছিস?”

_”জানিনা।”

_”মামনি যে তোর বিয়ে ঠিক করছে জানিস সেটা?”

নির্ঝর স্বাভাবিক ভাবেই বললো, জ্যোতি সামনের দিকে তাকিয়েই বললো,
_”ঐ ছেলেকে আমি বিয়ে করবো না।”

_”করবি না?”

_”নাহ”

_”সত্যি তো?”

_”একদম”

নির্ঝর আরো কিছুটা এগিয়ে আসে। জ্যোতির কাঁধে মাথা রেখে বলে,
_”তাহলে আর কি, তুলে নিয়ে যাই?”

উত্তর দিলোনা জ্যোতি, নির্ঝর একইভাবে বললো,
_”আম্মু আমার মাথাটা খারাপ করে ফেললো, বললো যে এই এক মেয়ে ব্যাতীত অন্য কাউকে বিয়ে করলে নাকি আমাকে বাসায় ঢুকতেই দেবে না। বউ ব্যাতীত বাড়ির দরজা আমার জন্য বন্ধ। বাধ্য হয়ে রাজি হলাম আরকি, আফটার অল, বাসার বিড়ালগুলো আমার ভীষণ পছন্দের। আর সেখানে তুই বলছিস কিনা বিয়ে করবি না?”

_”তুমি বাসায় ঢোকার জন্য আমাকে বিয়ে করবে?”

_”পাত্রী টা যে তুই,সেটা কে বললো?”

ছোট ছোট চোখে নির্ঝর এর দিকে তাকায়,নির্ঝর ও ভ্রু নাচিয়ে তাকালো তার দিকে। কান্না বন্ধ হলো জ্যোতির। অন্যদিকে চোখ সরিয়ে মুচকি হাসলো সে। ধীর কণ্ঠে উত্তর দিলো,
_”আমি ছাড়া কেউ তোমাকে বিয়ে করবে না।”

_______
_”রুবেল ভাই,আই নিড সাম টাইম”

কথাটা বলেই চেয়ারে গিয়ে বসে পরলো তূর্য। আবরাজ আর তার শুট চলছে একইসাথে। তবে তূর্য ডায়লগ ডেলিভারি তে বারবার আটকে যাচ্ছে।
রুবেল অবাক হলো, তবে সময় দিলো তূর্যকে। আবরাজ ছোটছোট চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলে,
_”অ্যাওয়ার্ড এর টেনশন এ ডায়লগ ও ভুলে যাচ্ছিস, সিরিয়াসলি!”

প্রতিত্তর করলোনা তূর্য,সে দুহাতে মাথা চেপে ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। মৌরিন রয়েছে একটু পাশেই, তবে তার মাঝে কোনো পরিবর্তন নেই। সে নিজের মতোই রয়েছে।
কিছুক্ষন বাদে আবরাজ এগিয়ে এলো তূর্যের দিকে। একটা চেয়ার টেনে বসলো তার পাশে। গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
_”প্রেমে ব্যার্থ হয়ে অ্যাকটিং ভুলে গেলো তূর্য! দারুণ নিউজ।”

কপাল কুঁচকে নেয় তূর্য, আবরাজ তাকে বেশ কয়েকবার চিরকুট রাখতে দেখে নিয়েছিল। মুখে কিছু না বললেও সবটাই বুঝতে পেরেছে সে।
তূর্য এবারো কিছু বললোনা আবরাজকে। আবরাজ এবার সবাইকে অবাক করে তূর্যের কাধে হাত রেখে খানিকটা বন্ধুসুলভ কণ্ঠে বলে,
_”ঢং করিস না তো, এমন ছ্যাকা কতো খেলাম জীবনে।”

_”ছাড়ো তো ভাই।”

_”বেশি হচ্ছে তূর্য, ছ্যাকা খেয়ে বাঁকা হয়ে গেলে জীবনে প্রেমে সফল হতে পারবিনা। চিল ব্রো, মেয়েরা প্রথমবার এমনিতেও রিজেক্ট করে, একটু ঘুড়তে হয় বুঝলি? শুরুতেই হার মেনে নিলে তো চলবে না।”

তূর্যের সামনে এসে দাঁড়ায় আবরাজ। তার এক কাঁধে চাপড় মেরে অন্যহাত এগিয়ে দিয়ে বলে,
_”চল ওঠ,বড়দের কথা শুনতে হয়।”

তূর্য তাকালো আবরাজ এর দিকে। সামান্য হেসে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সে। এরপর সেই হাত ধরেই উঠে দাঁড়ালো সে।
অন্যদিকে তাদের একসঙ্গে দেখে চোখ কপালে উঠে যায় সবার। আবরাজ তাদের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
_”আরে এভাবে দেখার কি আছে? আমার একব্যাচ জুনিয়র তূর্য,একসাথে স্কুল এ পড়লাম। বড় হলাম একসঙ্গে। শত্রুতা একদিকে থাকতেই পারে, ভাই তো অন্যদিকে নাকি?”

হাসে তূর্যও,মৌরিন এর দিকে একনজর তাকায়। বাকি শুটিং শেষ করে সেই আইডি থেকেই মেসেজ করে মৌরিন এর আইডিতে,
_”শুনেছি রাসায়নিক মাধ্যমে নাকি তেল আর জলেও মিশ খাওয়ানো যায়। এক্ষেত্রে যদি সেই মাধ্যমটা হয় আমার ভালোবাসা, তাহলে কি খুব খারাপ হবে?”

#চলবে?

[শেষের কথাটা কতটা যৌক্তিক জানিনা। এটা কেবল গল্পের স্বার্থে কাল্পনিকভাবেই লিখেছি। বাস্তবের সাথে না মেলানোর অনুরোধ রইলো।
হ্যাপি রিডিং।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here