#এক_ফালি_সুখ🌼 |২৫|
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
মেসেঞ্জার থেকে বেড়িয়ে এলো মৌরিন,ঠিক সেই মুহূর্তেই কারেন্ট টাও চলে গেলো। হঠাৎ ঘর অন্ধকার হয়ে যাওয়াতেও দৃষ্টি স্থির রইলো মৌরিন এর, পুরো ঘরে কেবল ফোনের অতি সামান্য আলো। সেটুকুও বন্ধ করে দিলো মৌরিন। বাতাসে জানালার পর্দা উড়ছে, ফলে চাঁদের আলোয় ঘর আলোকিত হচ্ছে কিছুটা,যদিও তা খুবই অল্প।
জানালায় পিঠ ঠেকিয়ে দাড়ালো মৌরিন। চোখের সামনে অন্ধকার ব্যাতীত কিছুই দেখতে পারছে না,জীবনটাও তো এমনি। পুরোটাই অন্ধকার, আর এই অন্ধকার এর মাঝেই তাকে হাটতে হবে,পাড়ি দিতে হবে অনেকটা পথ। ভয় পায়না মৌরিন, নিজের উপর ভরসা রেখেই এই পথে হাটতে শুরু করেছে সে। তবে মানুষের মাঝে অলসতা নামক বস্তু আছেই,যেই অলসতা থেকে নিজেকে দূড়ে রেখেছে মৌরিন।
এই অন্ধকার চলার পথে কিছু মানুষ আসে ফোনের ফ্লাশ লাইট এর মতো এক ফালি রশ্মি নিয়ে, সেই আলো পেয়ে অলসতা ভর করে মানুষের মনে। নিজের কষ্ট লাঘব করার উদ্দেশ্যে সেই আলোর পথেই চলে যায় অনেকে। তবে ঐযে, সেটা ছিলো ফোনের ফ্ল্যাশ লাইটের মতোন। খুব দ্রুতই চার্জ শেষ হয়ে যাবে ফোনের, আলোও নিভে যাবে, পথটা আবারো আধারে ডুবে যাবে। তবে রাস্তা বাকি থাকবে আরো অনেকটা। আলোর সাহায্য পেয়ে তখন হয়তো আর অন্ধকার এ চলাটা সম্ভব হয়না, মুখ থুবড়ে পরতে হয় মাঝপথেই। ব্যার্থতা ভর করে সমগ্র জীবনে। সেই আলো ছিলো ক্ষণস্থায়ী তবে অন্ধকার এ জরাজীর্ণ পথটা চিরকালের জন্য স্থায়ী হয়ে যায় তখন। না সামনে যাওয়ার সুযোগ থাকে আর না পিছনে ফিরে আসার।
আপাতত তূর্যকে তেমন ফোনের ফ্লাশ লাইটের এক ফালি রশ্মির সঙ্গেই তুলনা করতে চাইলো মৌরিন। বরাবরেই নিজেকে বোঝাতে পছন্দ করে সে। অন্যের দেওয়া হাজারো জ্ঞান তার উপর কিঞ্চিৎ প্রভাব না ফেললেও নিজেকে নিজের বোঝানো কথা তার উপর প্রভাব ফেলে ব্যাপক। তাই এই অন্ধকারের নির্জনতার মাঝে আনমনেই নিজেকে কথাগুলো বোঝাচ্ছে মৌরিন। মারুফা তাকে অনেক ক্ষেত্রে নারিকেল এর সঙ্গে তুলনা করে, বাহিরের দিকটা শক্ত হলেও ভিতরটা ঠিকই নরম।
তবে মৌরিন তার বিরোধিতা করেছে বরাবরেই, তার মতে মারুফার ধারণা ভুল। মৌরিন জানে, সে বাহিরে থেকে যেমন ভিতর থেকেও তেমনি, তার কোনো দুই রূপ নেই। রূপ কেবল একটাই, হয়তো তার মাঝেও অনুভূতি,কষ্ট নামক বস্তুগুলো আছে। মানুষ হিসেবে,মেয়ে হিসেবে এগুলো থাকবেই, তবে নিজের অনুভূতি নিয়ন্ত্রন করতে পারাটাই বড় ব্যাপার। আর সেটা মৌরিন বরাবরেই করে এসেছে, ভবিষ্যৎ এও সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।
জীবনে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ভুলেরও মাশুল দিতে হয়। আর নিজের তুলনামূলক কঠিন জীবনে নতুন করে আর কোনো ভুল করতে চায়না মৌরিন। এমনিতেই নিজের অজান্তে কত ভুলই তো করে ফেলে মানুষ, সজ্ঞানে করা ভুলের পরিমাণ টা বাড়ানো থেকে নাহয় বিরত থাকুক।
______
আইডিটা আরো কিছুক্ষন পর অ্যাকটিভ করলো তূর্য, মৌরিন মেসেজ সিন করেছে সেটাও বুঝতে পারলো। পুনরায় ফোনটা লক করে নামিয়ে নিলো তূর্য, আইডিটা আর ডিঅ্যাকটিভেট করলোনা। মনে হয়না মৌরিন দ্বিতীয়বার তার এই আইডির খোজ করবে বলে। নিজে থেকেই অনেক কিছু ভেবে নিচ্ছে তূর্য, মনে হচ্ছে সে মৌরিনকে কতই না ভালো করে চেনে, অথচ তেমনটা একদমই নয়। মৌরিন এর সাথে তার কথাই হয়েছে হাতেগোনা কয়েকবার।
দোলনায় হেলান দিয়ে বসে মাথা পিছনের দিকে কিছুটা ঝুঁকিয়ে নিলো তূর্য। চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো সে, কি করছে সে এগুলো? নিজের জন্য সবসময় সেরাটা খোজা তূর্য কিনা অস্থির হচ্ছে মৌরিন নামক সাধারণ মেয়ের জন্য? অবশ্য কথাটা সঠিক নয়, মৌরিনকে সাধারণ বলাটাই ভুল। তবে তূর্য চেয়েছে রূপে,গুণে সবদিক থেকে উপরে থাকা মেয়েকে। যেখানে মৌরিন এর রূপের বর্ননা দেওয়ার মতোন কিছুই নেই, যদিও তার গুণের কথা বলাই যায়।
তবে কি সবটাই ব্যক্তিত্বের উপর নির্ভর করে? বরাবরেই নিজেকে নিয়ে গর্ব করা,অহংকারী তূর্য মুগ্ধ হয়েছে মৌরিনের ব্যক্তিত্বে? তাহলে আদতেও কি কখনো রূপের কাঙাল ছিলো তূর্য? তেমনটা হলে তো দিয়াকে রিজেক্ট করার কোনো কারণই ছিলো না।
প্রশ্নগুলো নিজেকে করলে এর কোনো উত্তর খুজে পায়না তূর্য। সবসময় মুখে বলা কথাটা কি আসলেই তার মনের কথা ছিলো? তার মন কি গায়ের রঙের উপর কখনো দূর্বল ছিলো? বর্তমান সময়ে প্রশ্নটার উত্তর খুজতে গেলে প্রথমেই ভিতর থেকে ‘না’ শব্দটাই কেবল বেরিয়ে আসছে।
হয়তো নিজেকেই ভুল চিনেছে তূর্য, যেই ভুলটা ভাঙলো মৌরিন এর মাধ্যমে। মনটা হয়তো তার ‘ইউনিক’ শব্দটাই খুজতো, যা পরিপূর্ণভাবে রয়েছে মৌরিন এর মধ্যে। সত্যিই কি মনটা তার আটকে গেলো শ্যামবর্নের, গুরুগম্ভীর, আত্মবিশ্বাসী, অসাধারন ব্যক্তিত্বের মৌরিনের উপর?
মাথার উপর কারো হাতের ছোঁয়া পেতে চোখ খুলে তাকায় তূর্য,নিজের সম্মুখে ইলমা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সোজা হয়ে বসে সে। ইলমা তার ঠিক পাশে বসে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে ছেলের দিকে। তূর্যের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন,
_”কি হয়েছে?”
_’হুম?”
পাশ ফিরে বলে তূর্য। ইলমা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে তার হাতের উপর হাত রেখে বলে,
_”এভাবে তো কখনো বসে থাকিসনা, তাই জিজ্ঞেস করছি, কি হয়েছে?”
স্মিত হাসে তূর্য, তার এই হাসি অন্যরকম। কয়েক সেকেন্ড বাদে কিছু না বলেই ইলমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে তূর্য। সরু কণ্ঠে বলে,
_”তুমি বুঝে যাও কি করে বলতো?”
ইলমা তূর্যের মাথায় হাত রেখে বলে,
_”বারে, মা হয়ে ছেলেকে বুঝতে পারবো না?”
চুপ করে রইলো তূর্য,কিছুক্ষন বাদে চোখ বন্ধ করেই বলে ওঠে,
_”নিজেকেই তো বুঝতে পারছিনা গো আম্মু।”
কয়েক সেকেন্ড বাদে তূর্য চোখ খুলে বলে,
_”আমি না তোমার কাছেই যেতাম।”
অবাক হয়ে যায় ইলমা, বিস্মিত কণ্ঠে বলে,
_”আমার কাছে? কেন?”
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ইলমাকে সবকিছু খুলে বলে তূর্য। কিছুক্ষন নিরবতা বজায় থাকে দুজনের মাঝে। ইলমা অবাক দৃষ্টিতে তূর্যের দিকে তাকিয়ে বলে,
_”মেয়েটাকে ভালোবাসিস তুই?”
_”হয়তো তাই।”
নির্দিধায় উত্তর দেয় তূর্য। ইলমা পুনরায় প্রশ্ন করেন,
_”এই কদিনেই ভালোবেসে ফেললি?”
_”নিজেই ভেবে দেখতো আম্মু, আমার মতো একটা ছেলে এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কাজ করছে। শুধুশুধুই আমি এমনটা করবো? এটা সম্ভব?”
ইলমা মুচকি হেসে বলেন,
_”ভালোবাসা তো খারাপ কিছু নয় তূর্য। তাহলে লুকিয়ে লুকিয়ে কেন? সরাসরি জানিয়ে দে মেয়েটাকে।”
_”ও বাকিদের মতো নয় আম্মু,সম্পূর্ন আলাদা। আর তাছাড়াও, আমার একটা প্রেস্টিজ আছে।”
_”এত প্রেস্টিজ নিয়ে তো ভালোবাসা যায়না তূর্য।”
_”আম্মু..”
করুন সুরে বলে তূর্য। ইলমা শান্ত কণ্ঠে বলেন,
_”ভুল কিছু বলিনি, এখন বাকিটা তোর হাতে। ভালোবাসা প্রকাশ করলে কারো প্রেস্টিজ চলে যায়না তূর্য।”
চোখ বন্ধ করে চুপ করে রইলো তূর্য। আপাতত ভাবনা থেকে বিরত থাকলো সে। ইলমা ভুল কিছু বলেনি, তবুও যেন কোথাও গিয়ে আটকে যাচ্ছে তূর্য। কি করা উচিৎ সেটাই বুঝতে পারছে না।
_____
চতুর্থ দিনের শুটিং শেষের দিকে। মৌরিন বেরিয়ে যাবে এক্ষুনি, ভার্সিটিতে কাজ আছে একটু। বরাবরের মতো ব্যাগটা তুলতেই তার নিচে চিরকুট পায় মৌরিন। হাতে নিলো সেটা,খুলেও দেখলো। তাতে লেখা আছে,
“জানিনা পড়বে কিনা, তবে মনে হচ্ছে পড়বে। আজ তোমার থেকে একটা রিপ্লাই চাইছি। এতকিছু বললাম তোমায়, তার বিপরীতে একটা রিপ্লাই? প্লিজ?”
তূর্য দূর থেকেই লক্ষ্য করলো মৌরিন ব্যাগ থেকে কলম বের করে কিছু লিখছে চিরকুট টাতে। পুনরায় সেটা আগের জায়গায় ভাজ করে রেখে চলে গেলো মৌরিন।
শুটিং শেষ হতেই তূর্য দ্রুত পা বাড়িয়ে হাতে নেয় চিরকুটটা। তার লেখার ঠিক নিচে ছোট একটা লাইন লেখা,
“তেলে আর জলে কখনো মিশ খায় না।”
#চলবে?
[গল্পের শুরুতে একটা কথা বলেছিলাম, তেলে আর জলে মিশ খায় কিনা? উত্তরে অনেকে অনেক কথা বলেছিল। আজ সেটার আসল উদ্দেশ্য বলেই দিলাম। আজ আবারো একই প্রশ্ন করছি, “তেলে জলে মিশ খায় কি?”
আমি গ্রামে আছি,বাড়ির ভিতর নেটওয়ার্ক একদমই পাওয়া যায়না,বাহিরে এসে পোস্ট করছি গল্প। কমেন্ট এর রিপ্লাই দিতে পারবোনা হয়তো, তবে পড়বো অবশ্যই। তাই নিজেদের মতামত জানিয়ে যেও।
হ্যাপি রিডিং।]
মেসেঞ্জার থেকে বেড়িয়ে এলো মৌরিন,ঠিক সেই মুহূর্তেই কারেন্ট টাও চলে গেলো। হঠাৎ ঘর অন্ধকার হয়ে যাওয়াতেও দৃষ্টি স্থির রইলো মৌরিন এর, পুরো ঘরে কেবল ফোনের অতি সামান্য আলো। সেটুকুও বন্ধ করে দিলো মৌরিন। বাতাসে জানালার পর্দা উড়ছে, ফলে চাঁদের আলোয় ঘর আলোকিত হচ্ছে কিছুটা,যদিও তা খুবই অল্প।
জানালায় পিঠ ঠেকিয়ে দাড়ালো মৌরিন। চোখের সামনে অন্ধকার ব্যাতীত কিছুই দেখতে পারছে না,জীবনটাও তো এমনি। পুরোটাই অন্ধকার, আর এই অন্ধকার এর মাঝেই তাকে হাটতে হবে,পাড়ি দিতে হবে অনেকটা পথ। ভয় পায়না মৌরিন, নিজের উপর ভরসা রেখেই এই পথে হাটতে শুরু করেছে সে। তবে মানুষের মাঝে অলসতা নামক বস্তু আছেই,যেই অলসতা থেকে নিজেকে দূড়ে রেখেছে মৌরিন।
এই অন্ধকার চলার পথে কিছু মানুষ আসে ফোনের ফ্লাশ লাইট এর মতো এক ফালি রশ্মি নিয়ে, সেই আলো পেয়ে অলসতা ভর করে মানুষের মনে। নিজের কষ্ট লাঘব করার উদ্দেশ্যে সেই আলোর পথেই চলে যায় অনেকে। তবে ঐযে, সেটা ছিলো ফোনের ফ্ল্যাশ লাইটের মতোন। খুব দ্রুতই চার্জ শেষ হয়ে যাবে ফোনের, আলোও নিভে যাবে, পথটা আবারো আধারে ডুবে যাবে। তবে রাস্তা বাকি থাকবে আরো অনেকটা। আলোর সাহায্য পেয়ে তখন হয়তো আর অন্ধকার এ চলাটা সম্ভব হয়না, মুখ থুবড়ে পরতে হয় মাঝপথেই। ব্যার্থতা ভর করে সমগ্র জীবনে। সেই আলো ছিলো ক্ষণস্থায়ী তবে অন্ধকার এ জরাজীর্ণ পথটা চিরকালের জন্য স্থায়ী হয়ে যায় তখন। না সামনে যাওয়ার সুযোগ থাকে আর না পিছনে ফিরে আসার।
আপাতত তূর্যকে তেমন ফোনের ফ্লাশ লাইটের এক ফালি রশ্মির সঙ্গেই তুলনা করতে চাইলো মৌরিন। বরাবরেই নিজেকে বোঝাতে পছন্দ করে সে। অন্যের দেওয়া হাজারো জ্ঞান তার উপর কিঞ্চিৎ প্রভাব না ফেললেও নিজেকে নিজের বোঝানো কথা তার উপর প্রভাব ফেলে ব্যাপক। তাই এই অন্ধকারের নির্জনতার মাঝে আনমনেই নিজেকে কথাগুলো বোঝাচ্ছে মৌরিন। মারুফা তাকে অনেক ক্ষেত্রে নারিকেল এর সঙ্গে তুলনা করে, বাহিরের দিকটা শক্ত হলেও ভিতরটা ঠিকই নরম।
তবে মৌরিন তার বিরোধিতা করেছে বরাবরেই, তার মতে মারুফার ধারণা ভুল। মৌরিন জানে, সে বাহিরে থেকে যেমন ভিতর থেকেও তেমনি, তার কোনো দুই রূপ নেই। রূপ কেবল একটাই, হয়তো তার মাঝেও অনুভূতি,কষ্ট নামক বস্তুগুলো আছে। মানুষ হিসেবে,মেয়ে হিসেবে এগুলো থাকবেই, তবে নিজের অনুভূতি নিয়ন্ত্রন করতে পারাটাই বড় ব্যাপার। আর সেটা মৌরিন বরাবরেই করে এসেছে, ভবিষ্যৎ এও সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।
জীবনে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ভুলেরও মাশুল দিতে হয়। আর নিজের তুলনামূলক কঠিন জীবনে নতুন করে আর কোনো ভুল করতে চায়না মৌরিন। এমনিতেই নিজের অজান্তে কত ভুলই তো করে ফেলে মানুষ, সজ্ঞানে করা ভুলের পরিমাণ টা বাড়ানো থেকে নাহয় বিরত থাকুক।
______
আইডিটা আরো কিছুক্ষন পর অ্যাকটিভ করলো তূর্য, মৌরিন মেসেজ সিন করেছে সেটাও বুঝতে পারলো। পুনরায় ফোনটা লক করে নামিয়ে নিলো তূর্য, আইডিটা আর ডিঅ্যাকটিভেট করলোনা। মনে হয়না মৌরিন দ্বিতীয়বার তার এই আইডির খোজ করবে বলে। নিজে থেকেই অনেক কিছু ভেবে নিচ্ছে তূর্য, মনে হচ্ছে সে মৌরিনকে কতই না ভালো করে চেনে, অথচ তেমনটা একদমই নয়। মৌরিন এর সাথে তার কথাই হয়েছে হাতেগোনা কয়েকবার।
দোলনায় হেলান দিয়ে বসে মাথা পিছনের দিকে কিছুটা ঝুঁকিয়ে নিলো তূর্য। চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো সে, কি করছে সে এগুলো? নিজের জন্য সবসময় সেরাটা খোজা তূর্য কিনা অস্থির হচ্ছে মৌরিন নামক সাধারণ মেয়ের জন্য? অবশ্য কথাটা সঠিক নয়, মৌরিনকে সাধারণ বলাটাই ভুল। তবে তূর্য চেয়েছে রূপে,গুণে সবদিক থেকে উপরে থাকা মেয়েকে। যেখানে মৌরিন এর রূপের বর্ননা দেওয়ার মতোন কিছুই নেই, যদিও তার গুণের কথা বলাই যায়।
তবে কি সবটাই ব্যক্তিত্বের উপর নির্ভর করে? বরাবরেই নিজেকে নিয়ে গর্ব করা,অহংকারী তূর্য মুগ্ধ হয়েছে মৌরিনের ব্যক্তিত্বে? তাহলে আদতেও কি কখনো রূপের কাঙাল ছিলো তূর্য? তেমনটা হলে তো দিয়াকে রিজেক্ট করার কোনো কারণই ছিলো না।
প্রশ্নগুলো নিজেকে করলে এর কোনো উত্তর খুজে পায়না তূর্য। সবসময় মুখে বলা কথাটা কি আসলেই তার মনের কথা ছিলো? তার মন কি গায়ের রঙের উপর কখনো দূর্বল ছিলো? বর্তমান সময়ে প্রশ্নটার উত্তর খুজতে গেলে প্রথমেই ভিতর থেকে ‘না’ শব্দটাই কেবল বেরিয়ে আসছে।
হয়তো নিজেকেই ভুল চিনেছে তূর্য, যেই ভুলটা ভাঙলো মৌরিন এর মাধ্যমে। মনটা হয়তো তার ‘ইউনিক’ শব্দটাই খুজতো, যা পরিপূর্ণভাবে রয়েছে মৌরিন এর মধ্যে। সত্যিই কি মনটা তার আটকে গেলো শ্যামবর্নের, গুরুগম্ভীর, আত্মবিশ্বাসী, অসাধারন ব্যক্তিত্বের মৌরিনের উপর?
মাথার উপর কারো হাতের ছোঁয়া পেতে চোখ খুলে তাকায় তূর্য,নিজের সম্মুখে ইলমা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সোজা হয়ে বসে সে। ইলমা তার ঠিক পাশে বসে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে ছেলের দিকে। তূর্যের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন,
_”কি হয়েছে?”
_’হুম?”
পাশ ফিরে বলে তূর্য। ইলমা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে তার হাতের উপর হাত রেখে বলে,
_”এভাবে তো কখনো বসে থাকিসনা, তাই জিজ্ঞেস করছি, কি হয়েছে?”
স্মিত হাসে তূর্য, তার এই হাসি অন্যরকম। কয়েক সেকেন্ড বাদে কিছু না বলেই ইলমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে তূর্য। সরু কণ্ঠে বলে,
_”তুমি বুঝে যাও কি করে বলতো?”
ইলমা তূর্যের মাথায় হাত রেখে বলে,
_”বারে, মা হয়ে ছেলেকে বুঝতে পারবো না?”
চুপ করে রইলো তূর্য,কিছুক্ষন বাদে চোখ বন্ধ করেই বলে ওঠে,
_”নিজেকেই তো বুঝতে পারছিনা গো আম্মু।”
কয়েক সেকেন্ড বাদে তূর্য চোখ খুলে বলে,
_”আমি না তোমার কাছেই যেতাম।”
অবাক হয়ে যায় ইলমা, বিস্মিত কণ্ঠে বলে,
_”আমার কাছে? কেন?”
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ইলমাকে সবকিছু খুলে বলে তূর্য। কিছুক্ষন নিরবতা বজায় থাকে দুজনের মাঝে। ইলমা অবাক দৃষ্টিতে তূর্যের দিকে তাকিয়ে বলে,
_”মেয়েটাকে ভালোবাসিস তুই?”
_”হয়তো তাই।”
নির্দিধায় উত্তর দেয় তূর্য। ইলমা পুনরায় প্রশ্ন করেন,
_”এই কদিনেই ভালোবেসে ফেললি?”
_”নিজেই ভেবে দেখতো আম্মু, আমার মতো একটা ছেলে এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কাজ করছে। শুধুশুধুই আমি এমনটা করবো? এটা সম্ভব?”
ইলমা মুচকি হেসে বলেন,
_”ভালোবাসা তো খারাপ কিছু নয় তূর্য। তাহলে লুকিয়ে লুকিয়ে কেন? সরাসরি জানিয়ে দে মেয়েটাকে।”
_”ও বাকিদের মতো নয় আম্মু,সম্পূর্ন আলাদা। আর তাছাড়াও, আমার একটা প্রেস্টিজ আছে।”
_”এত প্রেস্টিজ নিয়ে তো ভালোবাসা যায়না তূর্য।”
_”আম্মু..”
করুন সুরে বলে তূর্য। ইলমা শান্ত কণ্ঠে বলেন,
_”ভুল কিছু বলিনি, এখন বাকিটা তোর হাতে। ভালোবাসা প্রকাশ করলে কারো প্রেস্টিজ চলে যায়না তূর্য।”
চোখ বন্ধ করে চুপ করে রইলো তূর্য। আপাতত ভাবনা থেকে বিরত থাকলো সে। ইলমা ভুল কিছু বলেনি, তবুও যেন কোথাও গিয়ে আটকে যাচ্ছে তূর্য। কি করা উচিৎ সেটাই বুঝতে পারছে না।
_____
চতুর্থ দিনের শুটিং শেষের দিকে। মৌরিন বেরিয়ে যাবে এক্ষুনি, ভার্সিটিতে কাজ আছে একটু। বরাবরের মতো ব্যাগটা তুলতেই তার নিচে চিরকুট পায় মৌরিন। হাতে নিলো সেটা,খুলেও দেখলো। তাতে লেখা আছে,
“জানিনা পড়বে কিনা, তবে মনে হচ্ছে পড়বে। আজ তোমার থেকে একটা রিপ্লাই চাইছি। এতকিছু বললাম তোমায়, তার বিপরীতে একটা রিপ্লাই? প্লিজ?”
তূর্য দূর থেকেই লক্ষ্য করলো মৌরিন ব্যাগ থেকে কলম বের করে কিছু লিখছে চিরকুট টাতে। পুনরায় সেটা আগের জায়গায় ভাজ করে রেখে চলে গেলো মৌরিন।
শুটিং শেষ হতেই তূর্য দ্রুত পা বাড়িয়ে হাতে নেয় চিরকুটটা। তার লেখার ঠিক নিচে ছোট একটা লাইন লেখা,
“তেলে আর জলে কখনো মিশ খায় না।”
#চলবে?
[গল্পের শুরুতে একটা কথা বলেছিলাম, তেলে আর জলে মিশ খায় কিনা? উত্তরে অনেকে অনেক কথা বলেছিল। আজ সেটার আসল উদ্দেশ্য বলেই দিলাম। আজ আবারো একই প্রশ্ন করছি, “তেলে জলে মিশ খায় কি?”
আমি গ্রামে আছি,বাড়ির ভিতর নেটওয়ার্ক একদমই পাওয়া যায়না,বাহিরে এসে পোস্ট করছি গল্প। কমেন্ট এর রিপ্লাই দিতে পারবোনা হয়তো, তবে পড়বো অবশ্যই। তাই নিজেদের মতামত জানিয়ে যেও।
হ্যাপি রিডিং।]