এক_ফালি_সুখ🌼 |১৮| #তাসনিম_জাহান_মৌরিন

0
346

#এক_ফালি_সুখ🌼 |১৮|
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
যেকোনো পরিস্থিতি তে নিজেকে শান্ত রাখার বেশ ভালোই অভ্যাস রয়েছে মৌরিন এর। দু সেকেন্ড এর জন্য সেই চিরচেনা রূপ থেকে বেরিয়ে এলেও মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নেয় মৌরিন। অন্যদিকে মৌরিন এর থেকে প্রতিত্তর না পেয়ে রিমি আবারো বলে,
_”মৌ? শুনতে পাচ্ছিস তুই? নাহিদ ভাইয়া ভার্সিটি অবধি চলে এসেছিলো।”

মৌরিন চোখ বন্ধ করে কয়েকবার বড় বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,
_”তো? আসতেই পারে,নিজের শহরে ফিরেছে,যে কোনো জায়গায় যেতেই পারে।”

_”মৌরিন তুই বুঝতে পারছিস না,উনি তোর খোজ করতে এসেছিলো। আমি যতটা খেয়াল করেছি তাতে হয়তোবা এখনো কিছু জানতে পারেনি,তবে জানতে কতক্ষন?”

_”ওয়েট ওয়েট রিমি, তুই কি ভাবছিস আমি কারো থেকে পালাতে এখানে এসেছি? আমি ভয় পাই কাউকে?”

_”আমি সেটা বলতে চাইনি মৌ।”

_”তাহলে কি বলতে চাইছিস? একটা কথা ভালো করে জেনে রাখ, আমি কখনো কোথাও পালিয়ে যাইনি আর যাবোও না। আমি কেবল একটুখানি শান্তি চেয়েছি, আর তার জন্যই কাউকে আমার বর্তমান ঠিকানা জানাতে চাইনি আর চাচ্ছি ও না। তবে কেউ যদি জেনেও যায়, তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসেনা।”

_”মন থেকে বলছিস তো? নাহিদ ভাই তোর সামনে গিয়ে দাড়ালে ব্যাপারটা ভালো হবে?”

তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে মৌরিন বলে,
_”একজন রাস্তার লোক আমার সামনে এলো বা না এলো, তাতে আমার কি?”

_”মৌরি…!”

অবাক হয়ে বলে রিমি। মৌরিন জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। শরীরে জড়িয়ে রাখা ওড়নাটা একদিকে সরে যায়। চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষন শীতল বাতাস অনুভব করে মৌরিন। জানালায় পিঠ ঠেকিয়ে বলে ওঠে,
_”অবাক হওয়ার কি আছে? আমি তাকে রাস্তার লোকই মনে করি, এমনকি সে তার চেয়েও নিকৃষ্ট।”

_”সে তো নিজের ভুলটা বুঝতেও পারে মৌ।”

_”ভালো তো, ভুল বুঝতে পারা ভালো। তবে ভুল শুধরে নেওয়া সোজা নয়,এক্ষেত্রে সম্ভব ও নয়। আর না আমি তা চাই।”

_”তার জন্য বিন্দুমাত্র অনুভূতি ও কি তোর মধ্যে নেই মৌ?”

_”নাহ,নেই। ছিলোই না কখনো।”

_”তুই সিওর?”

_”হান্ড্রেড এন্ড টেন পার্সেন্ট, আর কিছু?”

চুপ করে রইলো রিমি। খানিক বাদে অসহায় কণ্ঠে বললো,
_”মৌ, কোনোভাবে কি ফিরে আসা যায়না?”

_”যায়না।”

_”কেন যায়না? আমি জানি তুই কারোর কথার ধার ধারিসনি কখনো, তাহলে কেন অন্যদের জন্য..”

_”কারোর জন্য নয়,নিজের জন্য।”

হাতের সাহায্যে জানালার গ্রিল ছুঁইয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় মৌরিন। শান্ত কণ্ঠে বলে,
_”আমায় কেউ দূর্বল করতে পারবেনা রিমি। তবে ঐ শহর আমায় দূর্বল করে দিচ্ছিল, ক্লান্তি অনুভব করছিলাম আমি, মনে হচ্ছিল নিজের জোর হারিয়ে ফেলছি। আমি পরিক্ষার মুখোমুখি হতে পছন্দ করি,কঠিন থেকে কঠিনতর পরিক্ষাও আমি দিতে প্রস্তুত। নিজের উপর বিশ্বাস আছে আমার, আমি চাইলে সব করতে পারি। তবে আমার চিন্তাধারা বদলে যাচ্ছিলো। ঐ কাঁটা বিছানো পথটা আমি চাইলেই পারি দিতে পারতাম,তবে আমি সেটা চাই নি। বলতে পারিস,এই ক্ষেত্রে একটু স্বার্থপরতা করলাম। নিজের জন্য,কঠিন এই পথটাকে ইষৎ সহজ করলাম নিজ দায়িত্বে। আমার চলার পথটা ফুলে সজ্জিত নয়, বিষাক্ত কাটার মাঝে সরু পথে হেটে যেতে হবে আমায়,আর তা নিজ বুদ্ধিতেই। নিজের বুদ্ধির প্রশংসা করি আমি, তবে যেই বস্তু আমার বুদ্ধি লোপ পাওয়ার কারণ হবে, তা আমার জীবন থেকেও বিতাড়িত হবে।”

দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো রিমি। মৌরিনের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়লো,
_”যদি তা কোনো ব্যক্তি হয়?”

ঠোঁট প্রশস্ত করে হাসে মৌরিন। প্রশ্নের উত্তরে বলে,
_”তা হবেনা। নিজেকে চিনি আমি, আব্বু ব্যাতিত কোনো ব্যক্তি আমায় আজ পর্যন্ত দুর্বল করতে পারেনি, পারবেও না।”

_”যদি পারে?”

_”যদির কথা আমি বলতেই চাইছিনা। যদি বলতে কোনো শব্দই আমি ভাবতে চাইনা।”

_”দোয়া করি মৌ। কোনো ব্যক্তি তোর দূর্বলতা হয়ে না আসুক, সে আসুক তোর শক্তি হয়ে,সাহস হয়ে,তোর ছায়া হয়ে।”

_”চাইছিনা ছায়া, অন্ধকারে কিন্তু সেই ছায়াও আমাদের কিঞ্চিত ভয় পাইয়ে দেয়।”

_”কথায় পারবো না তোর সঙ্গে।”

মৃদু হাসে মৌরিন। মায়ের পরে কাউকে নিজের বেস্টফ্রেন্ড হিসেবে দাবি করলে সেটা হবে রিমি। এই মেয়েকে না চাইতেও অনেক কিছু বলে ফেলে,আর রিমি ওর সবকথা শোনে। সে বলে, “তোর কথাগুলো অনেক মোটিভেশন দেয় আমায়, মোটিভেশনাল স্পিকার হয়ে যেতে পারিস কিন্তু।”
এখন রিমির সাথেসাথে রাতুলও মাঝেমধ্যে এই কথা বলে। দুদিন আগেই তো বলছিলো, “তুমি কিন্তু কথা দিয়েই মানুষের মনে দাগ কেটে দিতে পারবে মৌরিন।”

আরো কিছুক্ষন কথা বলে ফোন কাটে মৌরিন। জানালার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে বেশ ভালোই লাগছে। নিজের দু একজন শুভাকাঙ্ক্ষীদের কথা শুনে মাঝেমধ্যে হাসি পায় মৌরিন এর। কি এমন কথা বলে সে? খুব একটা ভেবেচিন্তে ও তো বলেনা কিছু, তবে একদম মুখে এলেই বলে দেয় এমনটাও নয়।
মৌরিন খেয়াল করে দেখলো তার অর্ধেক বেণি করে রাখা চুলগুলো এখন পুরোটাই খুলে গেছে। ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে আবারো নিজের বিনুনি করাতে মনোনিবেশ করে সে।

________
ছয়দিনের শেষে কাঙ্ক্ষিত নাটকের শুটিং এর সমাপ্তি ঘটলো। টানা শুটিং চলেছে ছয়দিন,ফলে সকলেই ক্লান্ত। এমনকি তন্নির একসঙ্গে দুটো নাটকের শুটিং এর কাজ চালাতে হয়েছে, যথেষ্ট পরিশ্রমী মেয়ে না হলে এতটা ধকল নিয়ে হয়তো অসুস্থই হয়ে পরতো।
রাতুলও নিজেকে সুস্থ মনে করে আর শুটিং সেটে এসেছে। শেষদিনের শুটিং, না এলে নিজের কাছেই খারাপ লাগবে। তাছাড়া হাতের ব্যাথাটাও এখন খুব একটা গাঢ় নয়। তবুও তন্নি এখন অবধি দশ বারোবার জিজ্ঞেস করেছে এসে। শুটিং এর চেয়ে রাতুল এর প্রতিই যেন তার মনোযোগ বেশি। সবশেষে শুটিং শেষ করে সকলে একত্রিত হয়ে গোল হয়ে বসে আছে। রুবেল,রাতুল,তন্নি,তূর্য,মৌরিন সহ আরো চার পাঁচজন উপস্থিত আছে সেখানে। মৌরিনকে তন্নিই নিজের পাশে এনে বসিয়েছে। মৌরিনকে খুব ভালোলাগে তার, খুব চুপচাপ তবে নার্ভাস নয়। অনেকেই প্রথম প্রথম সেটে এলে অস্থির হয়ে যায়,তবে মৌরিন এর ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। তাকে আজ অবধি এতটুকুও নার্ভাস হতে দেখেনি তন্নি,আর এই বিষয়টাই তার বেশি পছন্দের,আত্মবিশ্বাসে ভরপুর মৌরিনকে তাই বেশ পছন্দ হয়েছে তন্নির।

রাতুল ফোনে কথা বলা শেষ করে বলে,
_”আম্মা অনেক জেদ করছে, মনে হয় এবার সিলেট যেতেই হবে কদিনের জন্য।”

তন্নি উৎসাহিত হয়ে বলে,
_”ভালো তো, আমিও অনেকদিন কোথাও ঘুড়তে যাচ্ছিনা। আর সিলেট তো গিয়েছি সেই দু বছর আগে। আরেকবার যাওয়া উচিৎ।”
তন্নি তূর্যকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,
_”এই তূর্য,চলনা সবাই মিলে সিলেট যাই টুরে। নির্ঝর কেও সাথে নিয়ে যাবো।”

নির্ঝর এর কথা শুনে রাতুল বললো,
_”বেচারা নাকি জ্বরে পরেছে। তাহলে ওর সঙ্গে তো দিয়াকেও নিয়ে যাওয়া যায়।”

তূর্য চোখ বড়বড় করে বলে,
_”মাফ চাই ভাই, আমার ঢাকা শহরই যথেষ্ট সুন্দর। আর কোথাও যেতে হবেনা।”

রুবেল ও এবার মজার ছলে বলে,
_”ভাবা যায়! তূর্যও কিনা এখন দিয়াকে ভয় পাচ্ছে!”

সবাই একসঙ্গে হাসতে লাগলো,যা দেখে বিরক্ত হলো তূর্য। রাতুল হাসি থামিয়ে মৌরিন এর উদ্দেশ্যে বললো,
_”ভালো কথা মৌরিন, রিমিও তোমার কথা বলছিল অনেকবার। একবার গিয়ে কিন্তু ঘুরে আসতে পারো, আম্মুও খুশি হবে,আর রিমি তো লাফাবে।”

মৌরিন স্মিত হেসে বলে,
_”ইচ্ছে নেই ভাইয়া।”

তন্নি মৌরিন এর দিকে তাকিয়ে বলে,
_”কেন গো? কি সুন্দর শহর! তোমার মন খারাপ হয়না বুঝি?”

মৌরিন হাসির মাত্রা বাড়িয়ে বললো,
_”হয়না তো।”

তূর্য দৃষ্টি স্থাপন করলো মৌরিন এর দিকে। গতকাল নিজেকে অনেক বুঝিয়েছে, মৌরিন এর ব্যপারে আর ভাববে না ঠিক করেছে। তবুও কয়েক ঘণ্টার ব্যাবধানে আবারো সৃষ্টি হচ্ছে সেই কৌতূহল। যার মাত্রা ক্রমশ বেড়েই চলেছে,কমার কোনো নামই নিচ্ছে না।

#চলবে?

[মৌরিন চরিত্রটা আমার কাছে খুব মূল্যবান, কতটা সুন্দর করে তার চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারছি জানিনা। তোমরা জানিয়ে যেও কেমন?
হ্যাপি রিডিং।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here