এক_ফালি_সুখ🌼 |২৪| [বোনাস পর্ব] #তাসনিম_জাহান_মৌরিন

0
250

#এক_ফালি_সুখ🌼 |২৪| [বোনাস পর্ব]
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
বাথরুমে বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকবার মুখে পানির ঝাপটা দিলো মৌরিন। চুলে বেণি করা,তবে সামনের ছোট চুলগুলো ভিজে গেছে কিছুটা। খানিকক্ষণ ওভাবেই দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো মৌরিন, নিজেকে পুরোপুরি শান্ত রাখার প্রয়াস চালালো সে। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে ঘরে চলে এলো। বিছানার উপর ছড়ানো অনেকগুলো কাগজ। এখন পর্যন্ত আগন্তুক এর থেকে পাওয়া ছয়টি চিরকুট ই সেখানে রাখা আছে। তার পাশেই দুটো এ ফোর সাইজের কাগজ। মাঝ বরাবর কিছু লেখা। এগুলো শুটিং এর সময় লেখা হয়েছিলো, শুটিং এর প্রয়োজনে তূর্যকেই লিখতে হয়েছিল অল্পস্বল্প, আরো দুজন লিখেছিলেন সিন এর প্রয়োজনে। তার মধ্যে দুটো কাগজ স্ক্রিপ্ট এর সঙ্গে কোনোভাবে মৌরিন এর ব্যাগে চলে এসেছে।

কিছুক্ষন আগে,
আগামীকাল এর শুটিং এর স্ক্রিপ্ট বাড়িতেই নিয়ে এসেছিল মৌরিন,সবকিছু একে একে গুছিয়ে নেওয়ার সময় ব্যাগে থাকা চিরকুটগুলোর দিকে চোখ যায় তার। সবগুলোই একই জায়গায় রেখে দেওয়া, দ্বিতীয়বার পড়েনি মৌরিন। তবে ফেলে দেওয়া টাও হয়ে ওঠেনি। তবে ওগুলো ব্যাগে রাখার ইচ্ছে হলোনা, বের করলো ছিড়ে ফেলবে বলে। ঠিক তখনি স্ক্রিপ্টগুলোর মাঝে থাকা সেই দুটো কাগজ চোখে পরে মৌরিন এর। কিছু একটা খটকা লাগতেই সেটা হাতে তুলে নেয় সে, এরপর সেই আগন্তুক এর দেওয়া আজকের চিরকুটগুলোর মধ্যে একটা খুলে ধরে সে। দুটো কাগজ পাশাপাশি আনে মৌরিন,কয়েক সেকেন্ড পরখ করতেই নিশ্চিত হয়ে যায়, কাগজের উপরের হ্যান্ডরাইটিং এর সঙ্গে চিরকুট এর হ্যান্ডরাইটিং হুবহু মিলে যাচ্ছে। আর সেই হ্যান্ডরাইটিং আর কারোর নয়, ইলহাম আবসার তূর্যর।
নিজের গতানুগতিক ধারা থেকে বঞ্চিত হয়ে চমকালো মৌরিন। বিছানা থেকে সেই প্রথম দিনের চিরকুটটা এনে মিলালো, নাহ, এটার সঙ্গে মিল নেই। কাগজগুলো নামিয়ে ফেললো মৌরিন,বুঝতে পারলো তার জন্য স্থির থাকাটা কঠিন হয়ে পরছে।

মুখ মুছে পুনরায় বিছানায় গিয়ে বসে মৌরিন। হাতের লেখা না মেলার কারণটাও হয়তোবা বুঝতে পারলো। আগের দুদিন সময় নিয়ে অন্যরকম করে লিখেছিল। আজ সেটা হয়নি, আজ চিরকুটগুলো লেখা হয়েছে তাড়াহুড়োর মধ্যে, তাই নিজের আসল হাতের লেখাই প্রকাশ পেয়েছে সেখানে।

সবকিছু গুছিয়ে রেখে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো মৌরিন। বর্তমানেও সে অনুভূতি শূন্য। আগন্তুক কে চেনার চেষ্টা করলেও হয়তো তূর্যের নাম কখনো তার মাথাতেই আসতো না। বেশ খানিকক্ষণ ভাবার পর এমন চিরকুট দেওয়ার একটা কারণ আবিষ্কার করলো মৌরিন। তূর্য তাকে সহ্য করতে পারেনা, কথাটা শতভাগ সত্যি। বারবার অপমান করতে চাইলেও তাতে সক্ষম হয়নি তূর্য। তাই হয়তো রাগের কারণে এমন প্ল্যান করেছে সে। অনুভূতি খুব খারাপ একটা জিনিস, আর কিছু অনুভূতি মানুষকে কষ্টই দিয়ে যায়। তূর্য হয়তো তেমনটাই চেয়েছে।
এমনটা ভেবে থাকলে সে এখনো মৌরিনকে চিনতেই পারেনি। বাকিদের মতো নরম মনের মেয়ে নয় সে, তাকে ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া অতটা সহজ নয়।
আর ভাবতে চাইলো না মৌরিন, এমনিতেই বেশি ভেবে ফেলছে। এত ভাবনা ভালো নয়, একটা বিষয় নিয়ে ভাবতে চাইলে তা নিয়ে আরো অধিক ভাবনা আপনাআপনি চলে আসে মাথায়। এ’ই হয়তো মস্তিষ্কের নিয়ম।

_______
চতুর্থ দিন এর শুটিং এ প্রায় সবাই ই এসেছে। দিয়া, তূর্য, আবরাজ সকলেই আছে। মৌরিন ও নিজের মতোই কাজ করছে, চিরকুটদাতাকে ধরে ফেলার পরও তার মাঝে কোনো ভাবান্তর নেই। এমনিতেও তূর্যের সঙ্গে খুব একটা কথা বলার প্রয়োজন হয়না, কারোর সঙ্গেই কথা বলতে হয়না সেভাবে। তাই সে অন্যদিনের মতোই রইলো, তূর্য বুঝতেও পারলো না সে ধরা পরে গেছে।

একটা অবাক করা ব্যাপার লক্ষ্য করলো সকলে, দিয়া আজ তূর্যের আশেপাশে ঘুরছে না, অন্যদিনের মতো তার গা ঘেঁষার চেষ্টা করছে না। কারণটা আবরাজ না জানলেও তূর্য বেশ ভালো করেই জানে। গতকাল দিয়ার উপর বিরক্ত হয়ে বেশ ভালোই ধমক দিয়েছিল তাকে, সেটা কারো নজরে আসেনি। দিয়াও তার জন্যই মনের কষ্টে আজ অভিমান প্রদর্শন করছে, সে হয়তো ভাবছে তূর্য তাকে মানাতে আসবে। তবে তেমনটা হলোনা, বরং তূর্য শান্তমনে চিরকুট লিখলো সকলের নজর এড়িয়ে।

সবাই আজ নতুন একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। আগামী মাসেই বেশ বড়সড় একটা অ্যাওয়ার্ড শো আছে। সেখানে ছোট পর্দার বেস্ট অ্যাকটর হওয়ার দৌড় এ আবরাজ এবং তূর্য দুজনেই রয়েছে। তাদের সঙ্গে আরো একজন রয়েছে, তবে সকলেই জানে, হয় তূর্য নাহয় আবরাজ। এদের মধ্যেই একজন অ্যাওয়ার্ড পাবে। ফাইনাল নোমিনেশন প্রকাশ পেলো গতকাল,তাই আজ এ নিয়ে কথা হচ্ছে বেশি। আবরাজ আর তূর্য এসব কথার মাঝে এমনভাবে তাকাচ্ছে একে অপরের দিকে যেন এখনি অন্যজনের থেকে অ্যাওয়ার্ড ছিনিয়ে নেবে। এ যেন এক যুদ্ধক্ষেত্র,কে বিজয়ী হয় সেটাই জানার অপেক্ষা।

আগের দিনের মতোই মৌরিন এর ব্যাগ এর নিচে চিরকুট রেখে দেওয়া হলো, তূর্য শুটিং এ থাকলেও লুকিয়ে নজর রাখলো তার উপর। মৌরিন এলো কিছুক্ষন পর, চিরকুট এর দিকে তার চোখ পরলো আরো কিছুক্ষন পরে। ব্যাগ সরিয়ে সেটা হাতে নিলো ঠিকই,দু সেকেন্ড তাকিয়েও রইলো। তবে খুললো না চিরকুট টা,রেখে দিলো আগের জায়গায়। নিজে চুপচাও চেয়ারে বসে ফোন স্ক্রোল করলো কিছুক্ষন, এরপর উঠে অন্যদিকে চলে গেলো।

অবাক হলো তূর্য, তবে রাগ হলোনা তার। রাগটাও যেন আজকাল তার সঙ্গ দিচ্ছেনা, তার থেকে যথাসম্ভব দূরেই থাকছে। অস্থির হলো তূর্য, আবারো লিখলো চিরকুট, একটা নয় দুটো চিরকুট একসঙ্গে লিখলো। এবার তা ব্যাগের ভিতরেই রাখলো কারোর সাহায্যে। এরপর শুটিং এ ব্যাস্ত থাকায় আর মৌরিন এর দিকে নজর রাখতে পারেনি, সম্ভব হয়নি।

______
বাড়িতে এসে মৌরিন সেই দুটো চিরকুট পেলো ঠিকই,তবে পড়লোনা। নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখছে সে। বলা তো যায়না, যতই কঠিন মনের হোক না কেন সর্বোপরি সে একজন মেয়ে। এটা এক চিরন্তন সত্য। প্রকাশ করতে না চাইলেও তার মাঝেও অনুভূতি নামক বস্তু রয়েছে, কোনোভাবে তাকে নিজের নিয়ন্ত্রনহীন হতে দিতে চায়না মৌরিন। আরো তূর্যের মতো অহংকারী ব্যক্তির জন্য কখনোই না। তাই সে চিরকুটগুলো পড়ছেই না।

রাত প্রায় বারোটা বাজে, কিছু কাজ শেষ করে সবে ফোনটা হাতে নিলো সে। মেসেঞ্জার এ ঢুকতেই দেখলো মেসেজ রিকুয়েস্ট এর সংখ্যা একটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তা চেক করলো মৌরিন, একটা আইডি থেকে মেসেজ এসেছে ঠিকই, তবে আইডি টা বর্তমানে ডিঅ্যাক্টিভেট, নামটাও দেখতে পেলোনা মৌরিন। তবে মেসেজ টা চেক করলো। বেশ বড় একটা মেসেজ, বাংলিশ এ লেখা সেটা। মেসেজটা পড়তে লাগলো মৌরিন,

_”পরের দুটো চিরকুট ও পড়োনি তাইনা? জানিনা আমি, তবে মনে হলো। একটা যেহেতু পড়োনি, এরপর যাই দেই না কেনো পড়বেনা তুমি। এভাবেই কি নিজের বিরক্তির প্রকাশ করছো মৌরিন? আমি ভেবে রেখেছিলাম, তুমি বিন্দুমাত্র বিরক্ত হলে চিরকুট দেওয়া বন্ধ করে দেবো আমি। অথচ আমি কত সস্তা হয়ে যাচ্ছি! ভেবেও সেই কাজ করতে পারছিনা। রাগ ও করতে পারছিনা তোমার উপর, কষ্ট পাচ্ছি কিনা তাও জানিনা। ধরতে পেরেছো, আমি কে? জেনে গেলে অখুশি হবোনা, তবে আমার সামনে তা প্রকাশ করোনা ভুলেও। ইগো তে লাগবে আমার, ঐ একটা ক্ষেত্রে আমি একদমই অন্যরকম। তোমাকে ঠিক কি বলতে চাইছি, সেটাও বুঝতে পারছি না। আচ্ছা, আমার কি মায়ের সাথে কথা বলা উচিৎ? তোমার মতে তো,মায়ের কাছে সবকিছুর সাজেশন পাওয়া যায়। তাহলে তাই করি নাহয়, তবুও যদি একটু স্থির হতে পারি।
যদি না পড়ে থাকো তবে পড়োনা চিরকুটগুলো, ফিরিয়ে দেওয়া জিনিস আমি দুবার দিতে পছন্দ করিনা।
এতকিছু যে বলি আমি, তোমার ইচ্ছে করেনা প্রতিত্তর করতে? এতই অনুভূতিহীন? তবে তুমি কোনো উত্তর দিওনা,তাই চাই। একপাক্ষিক ভাবেই আমি কথা বলি, কেমন?”

#চলবে?

[যাক,গল্প পোস্ট করতে সফল আমি। আগন্তুক কে বেশিদিন লুকিয়ে রাখার ইচ্ছে ছিলোনা আমার, তাই প্রকাশ করেই দিলাম। কমেন্ট এর রিপ্লাই হয়তো দিতে পারবোনা আজ, তবে কাল দেওয়ার চেষ্টা করবো। নিজেদের মতামত জানিয়ে যেও।
হ্যাপি রিডিং।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here