#আমার_বাহুডোরে_আবদ্ধ_তুমি
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা
#পর্ব ১৪ [সত্য উন্মোচন (২)]
-‘ সেদিন চুপ থেকে আমার অনেক বড় উপকার করেছেন আপনি। আমার দিকে কিন্তু ঠিকই আঙুল উঠেছিল। কোনো পা’প না করেও পা’পের বোঝা বইতে হয়েছে সেইসাথে ক’টু’ক্তি তো রয়েছেই।
তাচ্ছিল্যের সুরে উক্ত কথাটি বলে আদ্রিশের দিকে ছলছল নয়নে তাকায় মেহরুন।
আদ্রিশ অনুতপ্ত। মেহরুন সেদিন যতটা না কষ্ট পেয়েছে ঠিক ততটা কষ্ট সে নিজেও পেয়েছে। এমনটা ছাড়া তার হাতে আর কোনো উপায়ও ছিল না। অ’প’রা’ধী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
-‘ মি’থ্যা অ’প’বা’দ আর সত্যি সত্যি ক’ল’ঙ্কি’ত হওয়া কিন্তু এক জিনিস নয়। তোমার মি’থ্যা অ’প’বা’দটা তোমার পরিবার পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু তুমি যদি সত্যি সত্যিই ক’ল’ঙ্কি’ত হতে তাহলে পুরো এলাকা জেনে যাওয়া কোন ব্যাপারই ছিল না। তখন সম্মানটা আরও বেশি যেত।
মেহরুন তাচ্ছিল্য হেসে বলল
-‘ কাওকে থা’প’ড়া’লেও ল’জ্জা হয়না আবার কারো কারো ক্ষেত্রে হাত উঁচু করলেও তার আত্মসম্মানে লাগে।
আদ্রিশ মাথা নিচু করে ফেলে। মনে মনে সে ভাবে, ‘বড় ক্ষ’তি হওয়ার থেকে ছোট ক্ষ’তি হওয়াটাই শ্রেয়।’
আলভি গম্ভীর কণ্ঠে বলল
-‘ আমায় তো একবার বলতে পারতিস? তাহলে তো আর এমন কিছুই ঘটত না।
আদ্রিশ তাচ্ছিল্যের সুরে বলল
-‘ ফোন চেক করেছিস, কতোবার ফোন দিয়েছিলাম খেয়াল আছে?
আলভি মাথা নুইয়ে পড়ে। ফোনটা সেদিন সাইলেন্ট করা ছিল এজন্য সে বুঝতে পারেনি, পরে বাড়িতে এসে চেক করার সময়টাও হয়নি। এখন তার নিজেকেই ভীষণ অ’প’রা’ধী মনে হচ্ছে। সেদিন যদি অফিসের কাজে হুট করে বেরিয়ে না পড়ত তাহলে হয়তো মেহরুনের সাথে এমন ঘটনা ঘটত না।
আদ্রিশ হতাশ কন্ঠে বলল
-‘ তবে আঙ্কেল জানতেন সবটা। আমাদের বিয়ের রাতেই আড়ালে ডেকে আমি তাঁকে সব বলেছিলাম। তবে তিনি তখন আমায় বিশ্বাস করেননি।
মেহনত আকবর কিছুটা ইতস্ততবোধ করলেন। ওদের বিশ্বাস না করে সেদিন দু কথা বেশি শোনাতেও তিনি দুবার ভাবেননি। মেহরুনের দিকে করুণ চোখে তাকান। মেয়েটা এখনো কাঁদছে। আদ্রিশের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তিনি আদ্রিশের বলা সবগুলো কথার সাথে সহমত পোষণ করেন।
আদ্রিশ আবার বলতে লাগল
-‘ কাহিনী কিন্তু এখানেই শেষ নয়, এখনো বাকি আছে। জারার আরও একটা ঘৃ’ণ্য পরিকল্পনা ছিল। আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল জারা। তবে প্রথমে আমি তার পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করে বিশ্বাস অর্জন করলেও পরের পরিকল্পনায়, মেহরুনকে বিয়ে, করে জল ঢেলে দিয়েছিলাম। জারা আমার উপর মুলত ক্ষি’প্ত মেহরুনকে বিয়ের জন্য, তাই তো আর উপায় না পেয়ে আমার নামে মি’থ্যে রটিয়ে মেহরুন হতে আলাদা করতে চেয়েছে আমাকে।
মেহরুনের কাছে এবার পরিষ্কার হলো বিষয়টা।ফারজানার বিয়ের রাতে আদ্রিশ তাকে জারার কথা বলেছিল। মেহরুনের সন্দেহ হলেও সে কখনো কল্পনাও করতে পারেনি, তার সাথে জারা এমন কিছু করতে পারে। মেহরুন তো তাকে বড় বোনের মতো আগলে রাখতে চেয়েছিল অথচ সে…। ঘৃ’ণার দৃষ্টিতে তাকায় জারার দিকে।
আলভি বিস্ময় চাহনিতে তাকিয়ে থাকে। জারাকে সে কখনোই আলাদা মনে করেনি, নিজের বোনের মতোই মনে করত। মেহরুন, জারা দুজনেই ছিল তার কাছে সমান। আর নাজিয়া সুলতানাকে তো সে তার দ্বিতীয় মা ভাবত। অথচ তারা এই প্রতিদান দিল। ঘৃ’ণায় মুখ ফিরিয়ে নেয় সে। আলভি সবটা না জেনে শুধু শুধুই আদ্রিশকে ভুল ভেবে ছিল। আদ্রিশের কাঁধে হাত রাখে আলভি। আদ্রিশ বিনিময়ে শুধু হাসল।
জারা যখন দেখল সব পথ বন্ধ তখন চি’ৎ’কা’র করে বলল
-‘ আদ্রিশ ভাইয়া, যা বলছে সব মি’থ্যে। নিজের দো’ষ ঢাকতে তিনি ইনিয়ে বিনিয়ে মি’থ্যে বলছেন আমার নামে।
আদ্রিশ বাঁকা হাসল। তাচ্ছিল্যের সুরে বলল
-‘ অ’প’রা’ধী ধরা পড়লে কি কখনো কেউ বলে সে অ’প’রা’ধী?
জারা আবারও বলল
-‘ আমি কিছুই জানি না। উনি আমার নামে মি’থ্যা বলছেন।
-‘ আমি জানতাম তুমি এমন কিছুই বলবে এই জন্যই তো সব প্রমাণ একসাথে যোগাড় হয়ে হাতে পাওয়া অবধি অপেক্ষা করলাম।
আদ্রিশ সেই দুজন আগন্তুককে ইশারায় ডাকল। আদ্রিশের ইশারা পেতেই তারা হাজির হয়। সেই দুজনের ভিতর একজন হলো রফিক যে হলো আদ্রিশের এসিস্ট্যান্ট। আরেকজন হলো রিশতা। আদ্রিশের হাতে পেনড্রাইভটা ধরিয়ে দেয় রফিক। পেনড্রাইভটা নেড়ে চেড়ে দেখতে দেখতে মনে মনে বলল, ‘ এবারই তো জমবে আসল খেল।’
ল্যাপটপে পেনড্রাইভ দিয়ে ওপেন করে। ভিডিও অন হয়। এটা আদ্রিশের চেম্বারের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নেওয়া ভিডিও ক্লিপ, যেদিন জারা তার চেম্বারে প্রথম গিয়েছিল।
জারা চি’ৎ’কা’র করে বলল
-‘ না না, এটা আমি হতেই পারি না। আমি তো আদ্রিশ ভাইয়ার চেম্বার কোথায় তা-ই তো জানি না।
আদ্রিশ ক্রুর হেসে বলল
-‘ ওয়েট আরও আছে। ধৈর্য ধরুন মিস ঝারা বেগুন।
শেষোক্ত কথাটা বেশ ব্য’ঙ্গা’ত্ম’ক’ভাবেই বলল আদ্রিশ।
এরপর আরেকটা ভিডিও অন করে, এটা হলো যেদিন বিকেলবেলা আদ্রিশকে কু’ প্রস্তাব দিয়েছিল তার ভিডিও। যেখানে জারাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে এবং তার প্রত্যেকটা কথা আর স্বীকারোক্তি ভালো ভাবে শোনা যাচ্ছে। এই ভিডিওটা সেদিন লুকিয়ে করেছিল রফিক।
আর কারো বুঝতে বাকি রইল না যে আদ্রিশ যা যা বলেছে সব সত্যি বলেছে।
লাবিবা রহমান ক্ষি’প্ত বা’ঘি’নী’র ন্যায় ছুটে এসে জারাকে এ’লো’পা’তা’ড়ি থা’প’ড়া’ন। গালটা শক্ত করে চেপে ধরে দাঁত কিড়মিড় করে বললেন
-‘ দুধ কলা দিয়ে কা’ল সা’প পুষেছি আমি এতোদিন। তোর সাহস হলো কি করে, আমাদের খেয়ে আমাদের পরে আমাদের পেছনেই ছু’রি ঘোরানো? আমার নিষ্পাপ মেয়েটাকে মি’থ্যা অ’প’বা’দ দিতে তোর ল’জ্জা করল না, হা’রা’ম’জা’দি? কি কমতি রেখেছিলাম তোর? দূ’ষ্চ’রি’ত্রা মেয়ে কোথাকার।
ঘৃ’ণা’য় মুখ থেকে থু’থুর দলা নিচে ফেলেন তিনি। মেহরুনের কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠেন। মেহরুন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না চুপচাপ বসে থাকে। মেহরুনের পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে অরনী। এতোক্ষণ যাবত সে চুপচাপ বসে সবকিছু দেখেছে।
এবার জারা যখন প্রমাণ সহ একেবারেই ফেঁ’সে গেছে আর কোনো বাঁচার পথ রইল না। তখন চি’ৎ’কা’র করে ওঠে। গরগড় করে বলল
-‘ হ্যাঁ হ্যাঁ, আমিই সব করেছি। কিন্তু আমাকে দিয়ে করানো হয়েছে আর এর পেছনে ছিল নাজিয়া সুলতানা, আমারই জন্মদাত্রী মা। তিনিই তো সব কিছুর মূলে। তার জন্যই আমি এমন করতে বাধ্য হয়েছি। তার লোভে পড়ে আমি অ’ন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আমার কোনো দো’ষ নেই। সব দো’ষ ঐ নাজিয়া সুলতানার।
নাজিয়া সুলতানা চমকে গেলেন। তার নাম যে এভাবে সবার সামনে চলে আসবে তা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। জারার চুলের মুঠি ধরে টেনে উঠিয়ে ঠা’স ঠা’স করে চার পাঁচটা থা’প্প’ড় বসিয়ে দিলেন ওর গালে। দাঁতে দাঁত পিষে কটমট করে মিনমিনিয়ে বললেন
-‘ মু’খ’ পু’রী, আমার নাম কেন বলতে গেলি? নিজে ক’লে পড়েছো তাই আমাকে ফাঁ’সা’তে চাইছো। দাড়াও দেখাচ্ছি মজা।
ধা’ক্কা দিয়ে ফেলে দেন তিনি জারাকে। টেবিলের কার্নিশে লেগে তার কপাল কে’টে যায়। ফলে ফি’ন’কি দিয়ে র’ক্ত ঝরে। কপালে হাত দিয়ে অ’বি’শ্বা’স্য’ চাহনিতে দেখে তার মাকে। তার মা কতটা নি’কৃ’ষ্ট! মেয়ে বি’প’দে পড়েছে দেখে সে না বাঁচিয়ে উল্টে তাকে দো’ষা’রো’প করে নিজের দো’ষ ঢাকতে চাইছেন! জারা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ।
হঠাৎ পুলিশ চলে আসে। রিশতাই পুলিশে খবর দিয়েছে। জারা এবং নাজিয়া সুলতানার নামে মা’ন’হা’নি’র মা’ম’লা’ দেওয়া হয়েছে এবং সেইসাথে সকল এভিডেন্সও দেওয়া হয়েছে তাদের বি’রু’দ্ধে’। পুলিশ দেখে আঁ’ত’কে ওঠে জারা, নাজিয়া সুলতানা দুজনেই।
জারা হঠাৎ হেসে ওঠে। তার হাসি দেখে আদ্রিশ বাদে অবাক হয় সবাই। মহিলা পুলিশ জারার দিকে এগিয়ে আসতেই, জারা কুটিল হেসে বলল
-‘ আমাকে নিতে এসেছেন তাই তো? ওয়েট আমার সাথে আরো একজনকে নিয়ে যাবেন। অ’ন্যা’য় তো আমি একা করিনি সাথে আমার মা-ও জড়িত। তিনি তো আমার থেকেও আরও বড় অ’প’রা’ধী।
নাজিয়া সুলতানা জারার বাহু শ’ক্ত করে চেপে ধরে কন্ঠ কিছুটা খাদে নামিয়ে বললেন
-‘ নিজে যাচ্ছিস যা না। আমায় কেন টানছিস?
জারা শব্দ করে হেসে উঠে বলল
-‘ আমি তো শুধু তোমার কথা মতো একজনের স’র্ব’না’শ করে তার সব সম্পদ হা’তা’তে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি তো একজন খু’নি। আমার বাবার খু’নি!নিজের স্বামীকে খু’ন করতেও হাত কাঁপেনি তোমার!
জারার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে পড়ে সবাই…
#চলবে ~