#আমার_বাহুডোরে_আবদ্ধ_তুমি
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা
#পর্ব ১৭
রাত প্রায় শেষের প্রহরে এসে ঠেকেছে। আকাশে এখন আর চাঁদ নেই। ধরনী এখনও ঘুটঘুটে অ’ন্ধকারে ছেয়ে আছে। ভোরের আলো ফুটতে দেরি আছে যথেষ্ট।
সারারাত এপাশ ওপাশ করেও দু চোখের পাতা এক করতে পারেনি আদ্রিশ। বুকের বাঁ পাশটায় এখনও কেমন চি’ন’চি’ন ব্য’থা অনুভুত হচ্ছে তার। মেহরুনের পাশে বসে ওর জ’খ’ম হওয়া হাতটাকে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চু’মু খায় সে। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেহরুনের মলিন মুখটার দিকে কিছুক্ষণ। মেহরুন এখন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছিল আদ্রিশ।
ভাগ্যক্রমে তখন সাথে সাথে ছুটে এসেছিল নয়তো মেহরুনের অবস্থা আরও বেশি খা’রা’প হয়ে পড়ত। যতটুকু ব্লা’ড লস হয়েছিল তা রিকোভারি হয়ে যাবে। অতিরিক্ত র’ক্তের প্রয়োজন নেই কোনো। আদ্রিশ ভ’য় পেয়ে গিয়েছিল তখন, মেহরুনের ওমন অবস্থা দেখে। নিজেকে ধাতস্থ করতেও বেশ বেগ পেতে হয়েছিল তাকে। পরে নিজেকে স্থির করে মেহরুনের কাছে যায়। জ’খ’ম হওয়া হাতটাকে ভালোভাবে ব্যান্ডেজ করে দেয়। হাতের পালস চেক করে। পালস খুব ধীর গতিতে চলছিল বলে প্রথমে থমকে যায় সে। তারপর ইনজেকশনের মাধ্যমে কিছু মেডিসিন দেয়। এতে কাজও হয়। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আদ্রিশ।
যখন একটু একটু করে মেহরুনের জ্ঞান ফিরল তখন হাতের য’ন্ত্র’ণা’য় আ’র্ত’না’দ করে ওঠে। আদ্রিশ দ্রুত এগিয়ে মেহরুনকে উঠিয়ে জো’ড় করে ব্য’থানাশক ওষুধ খাইয়ে দেয়। শান্ত হলেও পা’গ’লা’মি থামে না তার। মেহরুনের অবস্থা ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা আদ্রিশ। হঠাৎ এমন কেন করছে মেয়েটা, ভেবে ভ্রু কুচকে ফেলে সে। মেহরুনকে শান্ত করতে তাই ঘুমের ইনজেকশন দেয়। মেয়েটার এখন ঘুমের বড্ড প্রয়োজন।
আ’শ’ঙ্কা’জ’ন’ক অবস্থা কাটতেই আদ্রিশ লাবিবা রহমান এবং মেহনত আকবরকে ধরে বেঁধে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে পাঠিয়ে দিয়েছিল। তারা মেয়েকে রেখে কিছুতেই যাবেন না, অবশেষে আদ্রিশের জোড়াজুড়িতে যেতে বাধ্য হলেন তারা।
মেয়ের চি’ন্তায় লাবিবা রহমানের প্রেসার বেড়েছে। এমনিতেও তিনি অ’সুস্থ ছিলেন। আবার মেয়ের জন্য আরও বেশি অ’সুস্থ হয়ে পড়ছেন। মাথার উপর ফ্যান চলছে, এসির পাওয়ার কমানো তাও তিনি ঘামছেন। শেষমেশ প্রেসারের ওষুধ খেয়ে কিছুটা স্বস্তি ফিরে পান তিনি।
মেহনত আকবর সারারাত পুরো রুম জুড়ে পায়চারী করেন। মেয়ের চি’ন্তায় তো তারও ঘুম আসছে না কিছুতেই। বুকের ব্য’থাটা বেড়েছে। ‘না এখন অ’সুস্থ হলে চলবে না। একসাথে সবাই মিলে অ’সুস্থ হয়ে পড়লে দেখবে কে!’ ভেবে তিনি বিছানায় শুয়ে পড়েন। শেষ রাতের দিকে তার চোখটা লেগে আসে।
আলভি, রিশতা, অরনী আদ্রিশের রুমেই ছিল এতোক্ষণ। কিছুক্ষণ আগে যে যার রুমে চলে যায়। ওরা চলে যেতেই মেহরুনের পাশে এসে শুয়ে পড়ে আদ্রিশ। কিন্তু চি’ন্তায় এপাশ ওপাশ করেও সারারাত আর চোখে ঘুম আসেনি তার। ‘মেহরুনের হঠাৎ এমন পা’গ’লা’মি’র কারণ কি? সবই তো ঠিক ছিল তাহলে? ও যদি সু’ই’সা’ই’ড করতেই চাইবে তাহলে আগেই করত, কাল কেন এমন করতে গেল? আচ্ছা খুব বেশি স্ট্রে’স থেকে আবার ট্র’মার দিকে চলে যায়নি তো ব্যপারটা?’ ভেবেই উঠে বসে আদ্রিশ। ঘামছে সে। এসির পাওয়ারটা কমিয়ে কপালের ঘামটুকু মুছে নেয়। সিদ্ধান্ত নেয় সকালে এ বিষয়ে রিশতার সাথে কথা বলবে সে।
হঠাৎ একটু চোখটা লেগে এসেছিল আদ্রিশের। এমন সময় দরজায় নক করে। ধরফরিয়ে উঠে দরজা খুলে দেয় সে। আদ্রিশের চোখ লাল দেখে অরনী অনুনয়ের সুরে বলল
-‘ ঘুমাচ্ছিলি, ডিস্টার্ব করার জন্য স’রি। মেহরুনের চি’ন্তায় কাল রাতে ঘুম হয়নি ঠিক মতো। তাই সকাল হতে হতেই ছুটে এসেছি।
আদ্রিশ হেসে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল
-‘ না না সমস্যা নেই। ঐ চোখটা একটু লেগে এসেছিল। এসেছিস ভালোই হয়েছে, আপু।
অরনী চি’ন্তিত সুরে বলল
-‘ কি অবস্থা এখন মেহরুনের?
ঘাড় ফিরিয়ে মেহরুনের দিকে এক পলক তাকিয়ে ছোট করে বলল
-‘ ঘুমাচ্ছে।
হঠাৎ কিছু একটা মনে হতেই আদ্রিশ বলে উঠল
-‘ আপু, রিশতাকে একবার আমার রুমে আসতে বলিস তো। ওর সাথে কিছু কথা আছে আমার। আর হ্যাঁ আলভিকেও আসতে বলিস।
অরনী মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে তৎক্ষনাৎ ওদের ডাকতে চলে যায়।
আদ্রিশের রুমে বসে আছে আলভি, রিশতা, অরনী। সবার মুখেই চি’ন্তার ছাপ। মেহরুনকে নিয়ে ওরা ভীষণ চিন্তিত।
রিশতা মেহরুনের এ পা’গ’লা’মি সম্পর্কে অবগত হয়েছে অরনীর কাছ থেকে। সে নিজেও দেখেছে মেহরুনকে ওমন উদ্ভট আচরণ করতে। তৎক্ষনাৎ মেহরুনের কিছু টেস্ট করা হয়।
ভ্রু কুচকে আলভির দিকে তাকিয়ে রিশতা প্রশ্ন করল
-‘ আপনার বোন কি এর আগেও এমন আচরণ করেছিল কখনো?
আলভি তৎক্ষনাৎ জবাব দিল
-‘ না, এর আগে এমন হয়নি কখনো।
আদ্রিশ প্রশ্ন করল
-‘ তাহলে মেহরুনের হঠাৎ এমন আচরণের কারণ কি?
রিশতা আদ্রিশের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল
-‘ অতিরিক্ত স্ট্রে’স, আপন মানুষদের দ্বারা প্রাপ্ত মানসিক আ’ঘা’ত, মি’থ্যা অ’প’বা’দে’র কারণে সকলের অ’বিশ্বাসের কারণ হয়ে ওঠা, ক’টুক্তি, সর্বশেষ আদ্রিশ ভাইয়াকে নিয়ে জারার কাছ থেকে উ’ল্টাপাল্টা কথা শোনা এসব মেহরুন ভাবি কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। প্রতিনিয়ত সে নিজেকে সবকিছুর জন্য দা’য়ী করতে থাকে। আর নানা ধরনের অ’যাচিত চি’ন্তা করতে থাকে এ নিয়ে। ফলে সে এক পর্যায়ে ট্র’মার মধ্যে চলে যায়। যাকে ‘পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার’ বা সংক্ষেপে ‘পিটিএসডি’ বলে। যে কারণে মেহরুন ভাবির আচরণ অ’স্বা’ভা’বি’ক হয়ে পড়ে। আর এতে আ’ক্রা’ন্ত রোগীরা একা থাকতে চায়। অনেক সময় এই একা থাকার কারণেই তারা নিজের অজান্তেই নিজের বি’প’দ ডেকে আনে। যেটা কাল মেহরুন ভাবী করেছিল। ছু’রি দিয়ে তার হাত জ’খ’ম করতেও সে দুবার ভাবেনি। ভাগ্য সহায় ছিল বলে তেমন গু’রু’ত’র কিছু হয়নি মেহরুন ভাবির।
এতোটুকু বলে থামল রিশতা। আদ্রিশ ঠিক এমন কিছুই আন্দাজ করেছিল তবে সিওর ছিল না।
আলভি ভ্রু কুচকে বলল
-‘ কালকেই তো সব প্রমাণ হয়ে গেল। অ’প’রা’ধী’রা’ও তার যোগ্য শা’স্তি পেল। যার সবটাই মেহরুনের সামনে ঘটেছে। এতোদিন মেহরুনের কিছু হলো না, তাহলে কাল হঠাৎ এমন হলো কেন?
-‘ মানসিক ভাবে আ’ঘা’ত প্রাপ্ত হওয়ার সাথে সাথেই কেউ ট্র’মায় চলে যায় না। সারাক্ষণ ঐ এক জিনিস নিয়ে ভাবতে থাকা আর নানান স্ট্রে’সের কারণে কিছুদিন পর আস্তে আস্তে ট্র’মায় চলে যায় মানুষ। আর যেহেতু ভাবি ছোটবেলা থেকেই অনেক আদরের ছিল সেহেতু তার পক্ষে এতো বড় মানসিক চাপ নেওয়াটা কষ্ট সাধ্য ছিল। এজন্যই তিনি ট্রমায় চলে যান
অরনী এবার বলল
-‘ এজন্যই কাল মেহরুন কেমন অ’স্বা’ভা’বি’ক আচরণ করছিল। আমি ওকে কাল সারাক্ষণই পর্যবেক্ষণ করেছিলাম। লাবিবা আন্টি ওকে জড়িয়ে ধরে হাওমাও করে কান্না কাটি করলেও ওর মাঝে কোনো হেলদোল ছিল না। ও কেমন জড়ো সড়ো হয়ে বসেছিল। যেন কোনো অনুভূতি শূন্য মানবী!
আলভি চিন্তিত সুরে বলল
-‘ এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি তবে?
-‘ আমি আছি তো। আমি থাকতে মেহরুন ভাবির কিছু হবে না। ইনশাআল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবে, ভাবি।
হঠাৎ উ’ত্তে’জি’ত কন্ঠে রিশতার উদ্দেশ্যে আলভি বলল
-‘ আপনি এসব বুঝলেন কিভাবে? আর আপনি কিভাবে সুস্থ করবেন মেহুকে?
রিশতা হেসে বেশ গর্ব করে বলল
-‘ কারণ আমি একজন সাইক্রেটিস।
আলভি বিস্ময় নিয়ে তাকায় রিশতার দিকে। ‘বলে কি, মেয়েটা সাইক্রেটিস? নাহ্ তার স্টাটাসের সাথে রিশতার স্টাটাস যায় না। কোথায় রিশতা আর কোথায় সে। ওহ্ রিশতার তো আবার বয়ফ্রেন্ডও আছে।’ এসব ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আলভি। কাঁদো কাঁদো মুখ করে বসে থাকে সে।
আলভির অবস্থা বুঝতে পারে আদ্রিশ। ঠোঁট চেপে হেসে মশকরা করে বলল
-‘ ন’জ’র দিয়ে লাভ নেই শালাবাবু। রিশতার কিন্তু বয়ফ্রেন্ড আছে।
#চলবে ~
গতকাল একটু মশকরা করেছিলাম, মেহরুনকে মে’রে দিয়েছি বলে। ওমা সবাই সেটা সত্যি ভেবে নিয়ে আমাকে ঝাড়তে দুবার ভাবল না। আপনারা এতো বেরসিক যে মশকরাও বোঝেন না 😒
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
রেসপন্স করিয়েন একটু দিনদিন তো অলস হয়ে পড়ছেন😒