#আমার_বাহুডোরে_আবদ্ধ_তুমি
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা
#পর্ব ১৫ [সত্য উন্মোচন (৩)]
-‘ আমি তো শুধু তোমার কথা মতো একজনের স’র্ব’না’শ করে তার সব সম্পদ হা’তা’তে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি তো একজন খু’নি। আমার বাবার খু’নি। নিজের স্বামীকে খু’ন করতে বিন্দুমাত্রও যার হাত কাঁপেনি একটুও, তিনিই হলেন নাজিয়া সুলতানা।
জারার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে পড়ে সবাই। নাজিয়া সুলতানা মেয়ের কথা শুনে ঠা’টি’য়ে থা’প্প’ড় বসিয়ে দেন জারার গালে। গালে হাত রেখে জারা তাচ্ছিল্যের সুরে বলল
-‘ মে’রে লাভ নেই কোনো। মা’রতে মা’রতে যদি মে’রেও ফেল তবুও সত্যিটা না বলে আমি এখান থেকে এক পা-ও নড়ব না।
নাজিয়া সুলতানা থামাতে চাইলেন কিন্তু আদ্রিশের কারণে পারলেন না। তাই তিনি চুপ করে ক’ট’ম’ট করে তাকালেন মেয়ের দিকে। এই মেয়েটাই যে তার গলার কাঁটা হবে তা জানলে তিনি কিছুতেই মেয়েটাকে বাঁচতে দিতেন না। জন্মের সময়ে লবণ খাইয়ে মে’রে ফেলতেন।
জারা চোখে অশ্রু টলমল করছে। অশ্রু সিক্ত নয়নে বলতে লাগল
-‘ আমার বাবা একজন ছোট খাটো ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি যে অর্থ উপার্জন করতেন তাতে করে আমাদের কোনোরকম চলে যেত। তবে আমার মা ছিলেন খুবই লো’ভী এবং উচ্চ বিলাসী নারী। তাতে তার কিছুতেই মন উঠত না। দিন দিন তার আরও চাই, আরও চাই প্রবণতা বাড়তে থাকে। তার শান শওকতের পেছনেই সব টাকা খরচ হয়ে যেত। মাস শেষে দেখা যেত তার হাতে কোনো টাকা পয়সা নেই। এ নিয়ে তাদের মাঝে প্রতিনিয়ত অ’শা’ন্তি লেগেই থাকত। একসময় বাবার ব্যবসায় লোকসান হতে থাকে। আমার মা এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। তিনি নানাভাবে বাবাকে চা’প দিতে থাকেন। একদিন হুট করে ঘুমের মধ্যে আমার বাবা মা’রা গেলেন! তখন আমার বয়স ছয় কি সাত। বাবার ভালোবাসা কি তা বোঝার আগেই তিনি চিরদিনের জন্য চলে গেলেন!
এতটুকু বলে ডুকরে কেঁ’দে ওঠে জারা। নাজিয়া সুলতানা এতোক্ষণ চুপচাপ শুনলেও এবার আর চুপ করে রইলেন না। ক্রু’দ্ধ গলায় বললেন
-‘ তোর বাবার শ্বাস ক’ষ্টের সমস্যা ছিল। ঘুমের মধ্যে তিনি শ্বাসক’ষ্টে মা’রা যান।
বলেই আঁচলে মুখ গুজে কেঁ’দে ওঠেন তিনি।
জারা তাচ্ছিল্যের সুরে বলল
-‘ আর কতো মি’থ্যে বলবে মা। অনেক তো মি’থ্যে বললে। এমন করো না আর আল্লাহও সইবেন না আর।
নাজিয়া সুলতানা আর কিছু বলার পূর্বেই হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে চোখের পানি মুছে জারা আবার বলতে শুরু করল
-‘ আমার বাবার মৃ’ত্যুটা কিন্তু স্বাভাবিক ছিল না।একদিন আমার মায়ের মাথায় আসল এক ঘৃ’ণ্য পরিকল্পনা। পরিকল্পনাটা এমন, আমার বাবার যেহেতু তেমন সম্পদ নেই, প্রায় সব শেষের পথে। সেহেতু তাকে শুধু শুধু বাঁচিয়ে রেখে আর লাভ নেই। তাই তাকে সর্বপ্রথম মা’র’তে হবে। আর অন্যদিকে আমার চাচার অর্থ সম্পদ বেশি ছিল তা দেখে লো’ভ হয় মায়ের। বাবা যদি কোনো ভাবে মা’রা যায় তাহলে আমরা অ’স’হা’য় হয়ে পড়লে তো ঠিকই আমার চাচা আমাদের আশ্রয় দিবেন। তখন ঐ বাড়িতে গিয়ে ছ’লা কৌশলে তাদের সম্পদ হাতাতেও অসুবিধে হবে না। তাই যে ভাবা সেই কাজ, ঘুমের মধ্যে একদিন বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরো’ধ করে মে’রে ফেলেন আমার বাবাকে এই খু’নি মহিলা নাজিয়া সুলতানা। শুধু এখানেই শেষ নয়, খু’নের দায় এড়াতে তিনি সবাইকে বলে বেড়ান ঘুমের মধ্যে তিনি শ্বাসকষ্টে মা’রা গেছেন। তদন্ত করার ভ’য়ে তিনি ঐ দিনই তাকে দ্রুত দা’ফ’নের কাজটা সেরে ফেলেন।
এতটুকু বলে থামল জারা। তার চোখে এখনো অশ্রু টলমল করছে। উপস্থিত কারো মুখে কোনো কথা নেই। চারপাশ নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেছে যেন! মেহনত আকবরের চোখের কোণে অশ্রু চিকচিক করছে। তার ছোট ভাই বড় ভালো মানুষ ছিল! মেহনত আকবরকে কতো সম্মান করত! সবসময় খোঁজখবর নিত। সে মা’রা গেছে শুনে অনেক কেঁ’দেছিলেন তিনি। শেষবারের মতো নিজের ভাইয়ের ম’রা মুখটাও দেখা হয়নি তার। ব্যবসার কাজে তাকে বাইরে যেতে হয়েছিল সেদিন। তার ভাইকে যে ষ’ড়’য’ন্ত্র করে মে’রে ফেলা হয়েছিল তা তিনি ঘুনাক্ষরেও টের পাননি তিনি।
নিস্তব্ধতা কাটিয়ে আদ্রিশ বলে উঠল
-‘ তুমি কিভাবে বুঝলে যে তোমার মা তোমার বাবার খু’নি? নাকি নিজে বাঁচার জন্য মি’থ্যে গল্প সাজাচ্ছো?
নাজিয়া সুলতানা আদ্রিশের সাথে তাল মিলিয়ে ক’রু’ণ কন্ঠে বললেন
-‘ কি মেয়ে জন্ম দিলাম রে! এতো ক’ষ্ট করে লালন পালন করেছি কি খু’নি অ’প’বা’দ শোনার জন্য?
জারা হালকা হেসে বলল
-‘ মোটেও না আমি কোনো মি’থ্যে বলছি না। আর না কাওকে অ’প’বা’দ দিচ্ছি।
কথাটা বলেই সে তার ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে একজন মহিলা পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়। তার দিকে ফিরে বলল
-‘ নাজিয়া সুলতানা যে একজন খু’নি মহিলা, এখানে তার সব প্রমাণাদি রয়েছে।
মহিলা পুলিশটি ভিডিও অন করেন। যেখানে নাজিয়া সুলতানা নিজ মুখে স্বীকার করছেন তিনি তার স্বামীর খু’নি!
সবাই অবাক নাজিয়া সুলতানার দিকে তাকায়। তিনি ভেবাচেকা খেয়ে যান। এসব কখন কিভাবে হলো! তিনি নিজেও বুঝতে পারছেন না।
জারা কুটিল হেসে বলল
-‘ কি নাজিয়া সুলতানা ভেবাচেকা খেয়ে গেলেন তো, ভাবছেন কি করে এসব হলো, তাই তো? মনে আছে একদিন আমি ভিডিও বানাচ্ছিলাম তখন আপনি আমার রুমে এসেছিলেন। আমাদের কথার এক পর্যায়ে আপনি এই কথাটা তুলেছিলেন। আমি তখন নিজের অজান্তেই ভিডিওটা অফ করতে ভুলে গিয়েছিলাম। আর যার ফলস্বরূপ সব রেকর্ড হয়েছিল। আর আমি সেইদিন থেকেই ঘৃ’ণা করি আপনাকে। এই ভিডিওটা পরে যখন দেখি তখন আর ডিলেট করিনি, রেখে দিয়েছিলাম যদি কখনো প্রয়োজন হয়। আর আজ দেখুন এটারই দরকার পড়ল।
কথাটা বলে হেসে ওঠে জারা। নাজিয়া সুলতানা রে’গে যান। জারার গলা চেপে ধরেন তিনি। আকস্মিক এমন হওয়াতে চোখ বড় বড় হয়ে যায় জারার। তার চোখ বেয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। এই মায়ের প্র’র’চ’না’তেই সে কতো খা’রা’প কাজ করেছিল আর আজ সেই মা-ই তাকে…
মহিলা পুলিশ এসে ধরে ফেলেন নাজিয়া সুলতানাকে। হ্যান্ড কাফ পড়িয়ে টেনে হি’চ’ড়ে নিয়ে যান তাকে। যাওয়ার সময় তিনি চি’ৎ’কা’র করে বললেন
-‘ ছাড়ব না, আমি কাওকে ছাড়ব না। তোদের শেষ আমি দেখেই ছাড়ব।
জারা তাচ্ছিল্য হেসে বলে উঠল
-‘ খু’নের দায় কিভাবে এড়াবে? আর শুধু তাই নয়, মেহরুন আপি আর আলভি ভাইয়াকেও খু’ন করতে চেয়েছিল ঐ মহিলা। আমি আলভি ভাইয়াকে নিজের ভাইয়ের মতো মনে করতাম তবে উনি সম্পত্তির লো’ভে আলভি ভাইয়ার সাথে আমাকে জড়িয়ে মি’থ্যে রটিয়ে বিয়ে দিতে চেয়েছিল। আর বিয়ের পর আলভি ভাইয়াকে খু’ন করে সব সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন।
স্তব্ধ হয়ে পড়েন উপস্থিত সবাই। মেহনত আকবর এবার বিষয়টা ধরতে পারেন। সেদিন রাতে তাহলে জারা এ কারণেই আলভির রুমের সামনে ঘুরঘুর করছিল। তার সন্দেহটাই ঠিক ছিল। আলভিরও আর বুঝতে বাকি রইল না। আলভি আর মেহরুন দুজনেই হতবাক হয়ে যায়। ছি কি ঘৃ’ণ্য মহিলা! অ’প’বা’দ দিয়েও ক্ষ্যা’ন্ত হয়নি মা’র’তেও চেয়েছিল। অথচ তাদেরই অ’ন্ধের মতো বিশ্বাস করেছিল ওরা!
আদ্রিশ রে’গে যায়। রা’গে গ’র্জে বলে উঠল
-‘ মেহরুনের নামে মি’থ্যে রটিয়ে ওকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করে ওকে খু’ন করতে চেয়েছিল বলেই আমি তখন ওমন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছিলাম। এখানে শুধু নাজিয়া সুলতানাই নয়, জারাও জ’ড়ি’ত। নিয়ে যান ওদের এখান থেকে।
জারাকে হ্যান্ড কাফ পরিয়ে নিয়ে যায়। জারা মলিন চোখে তাকায় সবার দিকে। ভু’ল তারও কম নয়। লো’ভ – হিং’সা মানুষকে ধ্বং’স করে দেয়। লো’ভ আর হিংসা’র বশবর্তী হয়ে সে অ’ন্ধ হয়ে গিয়েছিল। যখন ভু’ল ভেঙেছে তখন সব শেষ।
আদ্রিশের সামনে থেকে যাওয়ার সময় জারা ক’রুন কন্ঠে বলল
-‘ তবে আপনাকে আমি সত্যিই ভালোবাসতাম, আদ্রিশ ভাইয়া। কিন্তু আফসোস, আপনি বুঝেও বুঝলেন না।
জারার কথা শুনে চোয়াল শক্ত করে ফেলে আদ্রিশ। মুখ ফিরিয়ে নেয় সে।
জারা অশ্রু সিক্ত নয়নে তাকিয়ে থাকে আদ্রিশের দিকে। ওর যা বোঝার তা বোঝা হয়ে গেছে। পুলিশ নিয়ে যায় ওদের। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে আদ্রিশ।
আলভি আড়চোখে একবার রিশতার দিকে তাকায়। তাদের চোখাচোখি হতেই মুচকি হেসে চোখ ফিরিয়ে নেয় রিশতা। আলভি মনে মনে বলে, ‘মেয়েটা কে?’
এদিকে দৌড়ে রুমে চলে যায় মেহরুন। তা দেখে অরনীও মেহরুনের পেছন পেছন যায়। আদ্রিশ একপলক তাকায় সেদিক পানে। হঠাৎই চি’ৎ’কা’র ভেসে আসে। দৌড়ে যায় সবাই…
#চলবে ~