#আমার_বাহুডোরে_আবদ্ধ_তুমি
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা
#পর্ব ১৬
‘খু’নের দায়ে এবং খু’ন করার অ’প’প্র’য়া’সে’র জন্য নাজিয়া সুলতানার যা’ব’জ্জী’ব’ন কা’রা’দ’ণ্ড হয়েছে। আর নাজিয়া সুলতানাকে এ ঘৃ’ণ্য কাজে সাহায্য করার জন্য জারার সাত বছরের কা’রা’দ’ণ্ড হয়েছে।’
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সবাই। অ’প’রা’ধী তার যোগ্য শা’স্তিটাই পেয়েছে। ‘লো’ভে পা’প আর পা’পে মৃ’ত্যু’ এ কথাটার সত্যতা যাচাই আজ হলো। লো’ভীদের প’ত’ন তো এমনই হওয়া উচিত। এ বাড়ির উপর থেকে দু’র্জ’ন’দের ছায়া সরলো তবে। অবশেষে যেন ঘরে শান্তি ফিরে এলো। সবাই মিলে গোল হয়ে বসে গল্প করছে এখন। বহুদিন পর খুশির আমেজ এসেছে যেন।
তবে এ শান্তি কি চিরস্থায়ী হতে চলেছে আদৌও!
আদ্রিশের কাঁধে হাত রেখে আলভি কণ্ঠ কিছুটা খাদে নামিয়ে বলল
-‘ তোকে ভুল ভাবার জন্য স’রি দোস্ত। মাফ করে দিস আমাকে।
আলভির কথা শুনে আদ্রিশ কপট রা’গ দেখিয়ে আলভির গালে হালকা করে থা’প্প’ড় মে’রে বলল
-‘ ফ্রেন্ডশিপে আবার কিসের স’রি রে? আর তুই তো সেখানে আমার শালা।
হেসে ফেলে আলভি। আদ্রিশের কাঁধ চাপড়ে বলল
-‘ আরে এতোকাল তো খেয়ালই করিনি। এই জন্যই বুঝি তুই আমাকে আগে থেকেই শালা বলে ডাকতিস?
আদ্রিশ ল’জ্জা পাওয়ার ভান করে হাত দিয়ে মেয়েদের মতো মুখ লুকানোর অভিনয় করে। আদ্রিশের এ কর্মকাণ্ড দেখে হেসে ফেলে সবাই। আলভি হাসতে হাসতে বলল
-‘ আমার বোনটাকে খুব ভালোবাসিস তাই না? সবসময় আগলে রাখিস কিন্তু ওকে। বোন আমার বড় আদরের ছিল।
আলভির কথার উত্তর দেয় না আদ্রিশ। মেহরুনের দিকে তাকায় সে। এই মেয়েটাকে সে কারণে অকারণে ভালোবাসে। কেন ভালোবাসে নিজেও জানে না। শুধু জানে কোনো এক পড়ন্ত বিকেলে এই মেয়েটাকে দেখে থমকে গিয়েছিল সে। ভালোবাসাটা হয়তো শুরু তখন থেকেই।
আদ্রিশকে আনমনা দেখে খুকখুক করে কেশে ওঠে আলভি। আদ্রিশ হকচকিয়ে ওঠে। আলভি বলল
-‘ আরে ব্যাটা কি এতো ভাবছিস?
আদ্রিশ এক হাতে মাথা চুলকে সুক্ষ্ম হাসল শুধু। তা দেখে বিনিময়ে আলভিও হাসে। আলভি এবার ফিসফিস করে সতর্ক কন্ঠে বলল
-‘ দোস্ত ঐ মেয়েটা কে বল তো?
আদ্রিশ সূক্ষ্ম নজরে তাকাল। আঙ্গুল তাক করে বলল
-‘ তুই কি রিশতার কথা বলছিস?
আলভি মাথা নেড়ে সায় জানায়। মনে মনে আওড়াও, ‘মেয়েটার নাম তবে রিশতা।’
আদ্রিশ আলভির দিকে এক নজরে তাকিয়ে কণ্ঠে বলল
-‘ রিশতা আমার খালাতো বোন হয়। হঠাৎ ওর ব্যপারে জানতে চাইছিস যে?
আলভি রিশতার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আনমনে বলল
-‘ মেয়েটা ভারী মিষ্টি দেখতে!
আদ্রিশ তীক্ষ্ণ চোখে দেখে কিছু একটা ভেবে গম্ভীর কণ্ঠে বলল
-‘ মুগ্ধ হয়ে আর লাভ নেই কোনো। ওর বয়ফ্রেণ্ড আছে।
আশাহত হয় আলভি। আ’হ’ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আদ্রিশের দিকে আলভি। আলভির চেহারাটা দেখার মতো! ওকে দেখে ঠোঁট চেপে হাসে আদ্রিশ।
হাসতে হাসতে মেহরুনের পাশে গিয়ে বসে পড়ল সে। মেহরুন কেমন জড় পদার্থের মতো তখন থেকেই ঠায় বসে আছে। মেহরুনের দিকে তাকিয়ে ওর হাতটা নিজের হাত মুঠোয় নিল আদ্রিশ। মেহরুন হাতটা ছাড়িয়ে নেয় আদ্রিশ হতে। আদ্রিশ অবাক হয়ে তাকায় মেহরুনের দিকে। কিছু বলতে যেয়েও বলল না। হঠাৎ মেহরুন দৌড়ে চলে যায় নিজ রুমে। আদ্রিশ এক পলক তাকায়। ওর পেছন পেছন যাওয়ার জন্য উদ্যত হতে গিয়েও কি মনে করে হলো না। পরক্ষণেই নিজ মনকে শান্তনা দেয় এই ভেবে, ‘মেয়েটার উপর দিয়ে যা ঝই ঝামেলা গেল। সাথে আপন মানুষদের বে’ই’মা’নি আরও কত কি। হয়ত এসব মেনে নিতে ক’ষ্ট হচ্ছে। থাক ও কিছুক্ষণ একা একা নিজের মতো করে থাকুক।’
মেহরুনকে কেমন যেন ঠিক লাগছে না অরনীর কাছে। ও যেন কেমন কেমন করছে! আদ্রিশ খেয়াল করেনি হয়তো বিষয়টা। অরনী প্রথমে আমলে না নিলেও পরে হঠাৎ মনে কামড় দিয়ে উঠল। দেরি না করে তাই মেহরুনের পেছন পেছন যায় অরনী।
অরনী যাওয়ার পূর্বেই রুমের মধ্যে ঢুকে ঠা’স করে দরজাটা আটকে দেয় সে।
বেশ কয়েকবার দরজায় নক করার পরও দরজার অপর প্রান্ত হতে কোনো সাড়াশব্দ মেলে না। চিন্তায় পড়ে যায় অরনী। ‘ঝোঁকের বশে মেয়েটা আবার কিছু করে বসল না তো?’ উপায় না পেয়ে তাই চি’ৎ’কা’র করে আদ্রিশকে ডাকল অরনী। আদ্রিশের কর্ণকুহরে চি’ৎ’কা’রে’র শব্দ ভেসে আসতেই সে এক দৌড়ে ছুটে যায়। ওর পেছন পেছন অন্যান্যরাও ছুটে যায়।
অরনীর কাছে এগিয়ে আসতে আসতে আদ্রিশ উত্তেজিত কন্ঠে বলল
-‘ কি হয়েছে আপু? চি’ৎ’কা’র করছিস কেন?
আদ্রিশকে দেখে অরনী ভ’য়া’র্ত কণ্ঠে বলল
-‘ ঘরের মধ্যে মেয়েটা দরজা আটকে পড়ে রয়েছে। এতোবার ডাকলাম কোনো সাড়াশব্দ নেই। ওর আচরণ আমার কাছে ঠিক লাগছে না। আবার কিছু করে বসল না তো মেহরুন?
আদ্রিশ চমকায়। দরজার কাছে গিয়ে বেশ কয়েকবার ডাকে। কিন্তু ফলাফল আগের মতোই। আদ্রিশ ঘামছে প্রচন্ড। বুকের মধ্যে যেন কেউ হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে। ‘তবে মেহরুনের কিছু হয় নি তো! না না কিসব ভাবছে। সে থাকতে তার মেহরুনের কিছু হবে না।’ বারবার মনে মনে বলতে থাকে, ‘মেহরুনের যেন কিছু না হয়।’ মস্তিস্কের নিউরন সেলগুলোর কাজ করা যেন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে উঠছে তার। সাত পাঁচ না ভেবে তাই দরজা ভাঙার সিদ্ধান্ত নিল সে।
দরজা ভাঙতেই মেহরুনকে অচেতন অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে। রুমের আসবাবপত্র অগোছালো হয় আছে। পাশেই ধারালো ছু’রি পড়ে আছে মেঝেতে। মেহরুনের হাত থেকে অ’ন’র্গল র’ক্ত গরিয়ে পড়ছে। হাতটা খুব বা’জে ভাবে জ’খ’ম হয়েছে। এসব দেখে হতভম্ব হয়ে যায় আদ্রিশ। এ মুহুর্তে তার মাথায় কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে আদ্রিশের। ওদিকে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না কেন জানি। পা চলছে না তার। যেন পা দুটো মাটিতেই আটকে গেছে। তবুও বহু কষ্টে শক্তি সঞ্চয় করে অসার হয়ে যাওয়া টলমলে পা দুটোকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে ব্যর্থ হয় সে। মেয়েটাকে সে বড্ড ভালোবাসে। তার কিছু হয়ে গেলে নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবে না আদ্রিশ। মেহরুনকে এমন অবস্থায় দেখবে তা কেউ কখনো কল্পনাও করেনি। হতবিহ্বল হয়ে পড়ে সবাই! আলভি এক দৌড়ে ছুটে যায় বোনের কাছে। মেহরুনকে মেঝে থেকে উঠিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয় আলভি।
আদ্রিশের হাত পা কেমন অসার হয়ে আসছে। তার মাথা টলছে। পুরো দুনিয়া যেন থমকে গেছে তার! মেহরুনের এমন করার আগে কি একবারও আদ্রিশের কথা মনে পড়ল না? এই মেহরুনের জন্যই কতো কি করেছিল আদ্রিশ। আর শেষমেশ মেহরুন কি করে বসল? মেহরুনের কাছে তার জীবনকে এতোটাই ঠুনকো মনে হলো যে এমন করার আগে দুবার ভাবল না! এসব ভেবে চোখে অশ্রু টলমল করছে আদ্রিশের। আশ্চর্য সে কাঁদছে!
এসব দেখে মেহনত আকবর স্তব্ধ হয়ে যান। ধপ করে তিনি মেঝেতে বসে পড়েন।
লাবিবা রহমান মেয়ের পাশে বসে অনবরত কাঁদছেন। ধা’ক্কা দেন বেশ কয়েকবার। কিন্তু মেহরুনের কোনো সাড়াশব্দ নেই। কথা বলছে না কোনো। কেমন নিশ্চুপ নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে মেয়েটা! বুকটা ধুকপুক করছে তার। মায়ের সামনে সন্তানের এমন দশা! এটা কোনো মায়ের পক্ষে মেনে নেওয়া যে কঠিন। চি’ৎ’কা’র করে কেঁদে ওঠেন তিনি। তার বাঁধ ভাঙা কা’ন্নায় যেন পাখির ডানা ঝাপটানিও থেমে গেছে! উজার হয়েছে শতশত পক্ষিকুলের বুক!
বিলাপ করে তিনি বলেন
-‘ ও আল্লাহ! কি এমন পা’প করছিলাম জীবনে যে আমার এমন একটা দিন দেখতে হলো?
অরনীর চোখে অশ্রু টলমল করছে। কেন সে এই সময় ওকে একা ছাড়ল। কেন ওর সাথে সাথে থাকল না। ওর সাথে থাকলে তো আর এমন কিছু ঘটত না। এসব ভেবেই অরনী নিজেকেই দো’ষা’রো’প করে চলেছে বারংবার।
কোনোমতে টলমল পায়ে হেঁটে মেহরুনের পাশে বসে আদ্রিশ। নিষ্পাপ মায়াবী মেয়েটার মুখ পানে তাকায়। মুখটা কেমন ফ্যাকাসে ফ্যাকাসে লাগছে। ‘মেয়েটা এমন কেন করল হঠাৎ?’ ভেবে পায় না আদ্রিশ। বেশ অনেক খানিক ব্লাড লস হয়েছে মেহরুনের। বেড সাইড টেবিলের পাশে থাকা ফার্স্ট এইড বক্সটা নেয় সে। মেহরুনের যে হাতটা জ’খ’ম হয়েছে সে হাতটা কাঁপা হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়। হাতের পালস চেক করতেই থমকে যায় সে…
#চলবে ~
আপনারা কেউ ঠিকমতো রেসপন্স করছেন না তাই মেরে দিলাম মেহরুনকে 🔪🧛♀️