আমার_বাহুডোরে_আবদ্ধ_তুমি #নুসাইবা_জান্নাত_আরহা #পর্ব ১৮

0
355

#আমার_বাহুডোরে_আবদ্ধ_তুমি
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা
#পর্ব ১৮

-‘ ন’জ’র দিয়ে লাভ আর নেই শালাবাবু। রিশতার কিন্তু বয়ফ্রেন্ড আছে।

ঠোঁট চেপে হেসে আলভির উদ্দেশ্যে কথাটা বলল আদ্রিশ। আলভি চমকে তাকায়। এ মুহুর্তে যে আদ্রিশ তার সাথে মশকরা করছে তা সে ঢের বুঝতে পেরেছে।
আলভি মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে থাকে।

এদিকে রিশতা, অরনী দুজনেই অবাক হয়ে একবার আদ্রিশ তো আরেকবার আলভির দিকে তাকায়। রিশতা অবাক কন্ঠে আদ্রিশকে বলল

-‘ আমার আবার বয়ফ্রেন্ড হলো কবে, ভাইয়া? আর কে ন’জ’র দিয়েছে আমার উপর?

আদ্রিশ সূক্ষ্ম হেসে আলভির দিকে তাকায়। এক দফা হেসে বলল

-‘ সেইটা তো আমার শালাই ভালো বলতে পারবে। তার বোধ হয় শালা ডাকটা আর শুনতে ভালো লাগছে না। এজন্যই তো এখন শালা থেকে দুলাভাই হতে চাচ্ছে।

কথাটা বলেই আলভির দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দেয় আদ্রিশ।

আলভি ইতস্তত বোধ করে। আদ্রিশ এমনই সবসময় তাকে পঁচায়। মনে মনে সে আওড়াল, ‘সুযোগ পেলে তোমাকেও ক’লে ফেলব চাঁদ। মেহু শুধু সুস্থ হোক তারপর দেখাচ্ছি তোমায় মজা।’

প্রথমে বোধগম্য হয়নি রিশতার। পরে বুঝতে পেরে ল’জ্জা পায় কিছুটা। আলভি আর রিশতার চোখাচোখি হতেই রিশতা চোখ ফিরিয়ে নেয়। হঠাৎ অজানা কারণে একরাশ ল’জ্জারা এসে ঘিরে ধরেছে যেন তাকে। ল’জ্জায় সে মিহিয়ে যায়। এদিকে আলভি ল’জ্জা মাখা রমনীটির মুখশ্রীতে একধ্যানে চেয়ে থাকে।

পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায় মেহরুন। সকাল হয়েছে তো খানিক আগেই। এখন বেশ খানিকটা বেলা হয়েছে। মেহরুন উঠে বসতে নিলেই জ’খ’ম হওয়া হাতটাতে চা’প পড়ে। ফলে সে মৃদু স্বরে আ’র্ত’না’দ করে ওঠে। মেহরুনের আ’র্ত’না’দে সকলে চ’কি’ত তাকায় তার দিকে।

মেহরুনের গালে এক হাত রেখে আদ্রিশ উ’ত্তে’জি’ত কন্ঠে বলল

-‘ তুমি ঠিক আছো তো, মেহরুন? এখন কেমন বোধ করছো?

মেহরুন হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়ে যার অর্থ সে ঠিক আছে এখন। মেহরুনকে এখন সুস্থ দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আদ্রিশ। গত রাতে মেহরুনের জন্য ছ’ট’ফ’ট করেছে সে। ঠিক মতো ঘুমাতেও পারেনি। এখন যেন বেশ শান্তি পাচ্ছে সে। হঠাৎ আদ্রিশ মেহরুনের কপালে নিজের ঠোঁট ছুইয়ে ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়। উপস্থিত সবাই ফিক করে হেসে ফেলে আদ্রিশের এহেন কর্মকান্ডে। ওদের খুকখুক কাশিতে ভাবনার সুঁতোয় টান পড়ে আদ্রিশের। মেহরুন ল’জ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলে। হঠাৎ হাতের দিকে নজর পড়তেই আঁ’ত’কে ওঠে মেহরুন। মৃদু চি’ৎ’কা’র করে বলল

-‘ কি হয়েছে আমার হাতে?

আদ্রিশ তীক্ষ্ণ নজরে তাকায় মেহরুনের দিকে। রিশতা এগিয়ে এসে বলল

-‘ তোমার হাত কে’টে গিয়েছিল, ভাবি। তাই ভাইয়া ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে।

আদ্রিশ এক নজর তাকায় রিশতার দিকে। রিশতার মি’থ্যা বলার কারণ বুঝতে অসুবিধে হয় না আদ্রিশের। গত রাতের কথা মেহরুনকে এখনই বললে হয়তো হিতে বিপরীত হতে পারে এজন্য এখন না বলাটাই উত্তম। মাথায় এক হাত ঠেকিয়ে মনে করার চেষ্টা করে কিন্তু কিছু মনে আসছে না তার এ মুহুর্তে। গত রাতের কথা কেমন আবছা আবছা মনে আসছে, তবে পুরোপুরি নয়।

মেহরুনকে এমন করতে দেখে রিশতা ব্যস্ত কন্ঠে বলল

-‘ অনেক বেলা হয়ে গেছে ভাবি। খেয়ে নেবে চলো।

-‘ আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।

-‘ ইচ্ছা না করলেও খেতে হবে তোমায়। নইলে অসুস্থ হয়ে পড়বে তুমি।

শক্ত কন্ঠে বলে ওঠে আদ্রিশ। মেহরুন কোনো কথা বাড়ায় না আর। চুপচাপ বসে থাকে। ইতোমধ্যে অরনী খাবারের ব্যবস্থা করে ফেলেছে। অরনী নিজ হাতে মেহরুনকে খাইয়ে দেয়। তারপর রিশতার দেওয়া ওষুধগুলো খাইয়ে দেয়। মেহরুন চুপচাপ বাধ্য মেয়ের মতো খেয়ে নেয়। ওষুধ খাওয়ার সময়েও প্রশ্ন করে না কোনো। হঠাৎ মেহরুনের চোখটা ছলছল করে ওঠে। অরনী তা দেখে মেহরুনের চোখের পানি মুছে বলল

-‘ কাঁদছো কেন বোকা মেয়ে?

মেহরুন কোনো কথা না বলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অরনীকে। অরনী অপ্রস্তুত হয়ে যায়। হাত বুলিয়ে দেয় মেহরুনের পিঠে। অরনীকে ছেড়ে মেহরুন কান্না মিশ্রিত করুন কন্ঠে বলল

-‘ আমাকে তোমার আর ভাইয়ার মতো কেউ এতো ভালোবাসেনি, আপু।

মেহরুনের কথার ঘোর আপত্তি জানায় আদ্রিশ। কপট রাগ দেখিয়ে বলল

-‘ আমিও না?

মেহরুন হতে কোনো জবাব মেলে না।

অরনী হালকা হেসে মেহরুনের গাল টেনে বলল

-‘ শুধু আমি আর তোমার ভাই না, আমরা সবাই তোমায় ভীষণ ভালোবাসি, মেহরুন।

আলভি এসে মেহরুনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল

-‘ কাঁদিস না তো মেহু। আজ আমরা সবাই মিলে একসাথে ঘুরতে বের হবো বিকেলের দিকে।

আলভির প্রস্তাবে রাজি হয় সবাই।

বিকেলবেলায়…🌅

মেহরুন, আদ্রিশ, অরনী, রিশতা, আলভি সবাই মিলে রেডি হয়ে বিকেলের দিকে বেরিয়ে পড়েছে। উদ্দেশ্য ‘নদীর পাড়ে’ যাওয়া। গাড়ি ড্রাইভ করছে আদ্রিশ। আদ্রিশের পাশের সিটে মেহরুন না বসে আলভি বসায় কিছুটা মন ক্ষুন্ন হয় আদ্রিশের। পিছনের সিটে মেহরুন, অরনী, রিশতা বসেছে। জানালার পাশে মেহরুন বসেছে। পথে মৃদু মন্দ বাতাস বইছে। জানালার কাঁচ নামানো ছিল। মেহরুন মুখ বাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে দক্ষিণ হাওয়া অনুভব করছে। এতে যেন শরীর মন সতেজ হয়ে উঠছে। তার একরাশ মন খারাপ যেন মুহুর্তেই ভালো হয়ে যায়। ফুরফুরে বাতাসে যেন তার মনে সতেজতা ফিরে এসেছে আবারও।

আদ্রিশের দৃষ্টি বারবার লুকিং মিররের উপর পড়ছে। জানালার বাইরে মুখ বাড়িয়ে বাতাস অনুভব করা সেই তরুণীর মায়াবি মুখশ্রী নজর কেড়েছে আদ্রিশের। ভাবের আভাস মাত্র যার তিরতির করে কেঁপে ওঠে ওষ্ঠাধর। যার ডগর চক্ষু দ্বয়ে ডুবে যেতে মন চায় বারেবার, যার ঘন কালো নেত্রপল্লবের ঝাপটানিতে থমকে যায় পুরো পৃথিবী, যার শীতল সরু চাহনিতে হৃদ কম্পন বেড়ে যায়। সেই তরুনী আর কেউ নয়, সে মেহরুন। আদ্রিশের মনে সর্বক্ষণ যার বিচরণ, সেই ‘প্রিয় মেহুরানী’!

আদ্রিশকে বারবার লুকিং মিররে তাকাতে দেখে আলভি ঠোঁট টিপে হাসে। হাস্য রসাত্মক ভাবে বলল

-‘ লুকিং মিররে বারবার না তাকিয়ে সামনে তাকাও ভাই, এতে নিজেও বাঁচবি আমরাও বাঁচব।

আদ্রিশ ফিরে তাকায় আলভির দিকে। ভ্রু নাচিয়ে বলল

-‘ তুইও লুকিং মিররে যে রমনীটিকে চেয়ে চেয়ে দেখছিস এটাও কিন্তু ঠিক নয়। পরনারীর দিকে না চেয়ে নিজের নজরের হেফাজত কর, শালা।

আলভি চুপসে যায়। ভেবেছিল সুযোগ পেলেই আদ্রিশকে হেনস্তা করবে কিন্তু তা আর হলো কই। সবই তার কপাল। ‘এমন এক কপাল নিয়ে জন্মালো, যে মেয়েরেই পছন্দ হয়, তারই হঠাৎ বিয়ে হয়ে যায় নয়তো কোথ থেকে বয়ফ্রেন্ড উড়ে আসে।’ এসব ভেবে কপাল চাপড়ায় আলভি। তা দেখে সুক্ষ্ম হাসে আদ্রিশ।

‘নদীর পাড়ে’ এসে গাড়ি থামায় আদ্রিশ। জায়গাটা বেশ মনোমুগ্ধকর। নদীর ধারে দাঁড়াতেই কোথ থেকে বাতাস ছুটে এসে শরীর, মন শীতল উভয়ই করে দিয়ে যায়। মেহরুনের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। জায়গাটা বেশ মনে ধরে তার। মেহরুনকে এতোদিন পর হাসতে দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় আদ্রিশের। মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে মেহরুনের দিকে। ‘একজনমে কি ‘মেহুরানী’কে দেখে তৃষ্ণা মিটবে তার?’ মেহরুনকে এভাবে দেখে তার মুখে লেগে থাকা হাসির রেখা প্রশস্ত হয়।

আলভি আর রিশতা প্রথমে কথা বলতে সংকোচবোধ করলেও তাদের মধ্যে এখন বেশ ভাব জমে উঠেছে। যেন কতকালের পরিচিত তারা!

অরনী এক কোণে দাঁড়িয়ে সব কাপলদের দেখছে। তার মনের কোণে সুক্ষ্ম ব্যথা অনুভুত হয়। চোখের কোণে ভিড় জমায় অশ্রুকণারা। তার মনের কোণের সুক্ষ্ম অনুভুতিরা নাড়া দেয়। এ মুহুর্তে ভীষণভাবে অনুভুত হয় নিজের মনের মানুষটিকে। কিন্তু আফসোস সে থেকেও নেই। ঠিক আকাশের ঝিলমিলি তারার মতো, যাকে দেখা যায় তবে ছোঁয়ার সাধ্য নেই।

হঠাৎ একজোড়া হাত এসে পেছন থেকে কোমড় জড়িয়ে ধরে অরনীর। চমকে ওঠে সে। মুখ ফুটে কোনো আওয়াজ বের হওয়ার পূর্বেই আগন্তুকটি এক হাতে মুখ চেপে ধরে অরনীর। আগন্তুকটির স্পর্শে জমে বরফ হয়ে যায় সে…

#চলবে ~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here