আমার_বাহুডোরে_আবদ্ধ_তুমি #নুসাইবা_জান্নাত_আরহা #পর্ব ২২

0
320

#আমার_বাহুডোরে_আবদ্ধ_তুমি
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা
#পর্ব ২২

-‘ আজ রাতটা এখানে থেকে কাল সকালেই আমাদের বাড়িতে ফিরতে হবে, অরনী।

অরনীর কাঁধে হাত রেখে কথাটা বলল আরাভ। অরনী চমকায়। ও বাড়ি যাওয়ার কথা উঠলেই কেমন শিউরে ওঠে সে। আরাভ তাকে ভালোবেসে আপন করে নিয়েছে কিন্তু তার বাড়ির লোকেরা কি আদৌও তাকে আপন করে নিবে? এমন নানান প্রশ্ন প্রতিনিয়ত ঘুরপাক খায় অরনীর মস্তিষ্কে। আরাভের দৃষ্টি এখনো অরনীতে নিবদ্ধ। কিন্তু এ কথাটার পিঠে অরনী কোনো কথা না বলে চুপচাপ বসে রয়। আরাভ হয়তো বুঝেছে অরনীর অবস্থা। তাই সে আশস্ত করে বলল

-‘ ভয় নেই, আমি আছি তো। ঠিক একটা না একটা ব্যবস্থা নিশ্চয়ই হয়ে যাবে। আমার বউয়ের মিষ্টি চেহারা দেখলে পাষাণ হৃদয়ও গলে যাবে।

শেষোক্ত কথাটা বলে হাসল আরাভ। অরনীও মুচকি হেসে মাথা নুইয়ে বলল

-‘ তা-ই যেন হয়, আরাভ। কিন্তু শাশুড়ী মা কি এতো সহজে মানবেন? এমনিতেও আমরা পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম বলে তিনি আমার উপর রেগে আছেন।

-‘ মা এতোদিনের কথা মনে রাখবেন না। তিনি ঠিকই মেনে নিবেন সব।

-‘ কিন্তু সেদিন যে তিনি কড়া কথা শোনালেন…

-‘ চিন্তা নেই, মা একটু ওমনই। আমি বুঝিয়েছি, মা এখন আর রেগে নেই। বলেছে কাল সকাল সকাল আমরা না গেলে তিনি ভীষণ রাগ করবেন। বুঝলে বউ?

অরনী হাসে। তবে তার মনটা খারাপ হয়ে যায় আদ্রিশের কথা ভেবে। আদ্রিশকে ছাড়া, এই বাড়িটার মায়া ত্যাগ করে কিভাবে থাকবে সে? ভাইটাকে সে ভীষণ ভালোবাসে।

.

আলভি নিজের রুমে পায়চারী করছে। রিশতাকে আজ মনের কথাটা বলতে হবে। না বলতে পারলে কিছুতেই তার মনে শান্তি মিলছে না। রিশতার রুমের দিকে একবার যেতে গিয়েও কি মনে করে আর যাওয়া হলো না। আচ্ছা রিশতার রুমে যাওয়ার কি অধিকার আছে তার? কোন মুখে দাঁড়াবে তার সামনে। কোথায় একজন সরকারী চাকুরীজীবি আর কোথায় ডাক্তার। যদিও আলভির খুব শখ ছিল তার বউ ডাক্তার হবে। আলভি আর ভাবে না, অনেকটা দ্বিধা দ্বন্দ নিয়েই রিশতার রুমের পথে পা বাড়ায় আলভি।

কয়েকবার নক করার পর দরজা খোলে রিশতা। আলভিকে এসময়ে দেখে অবাক হয় রিশতা। তবুও মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল

-‘ আরে তুমি এখন? কিছু বলবে?

-‘ ‘মন চল নির্বাসনে যাই
তুমি আর আমি পালাই।’

আলভির এমন উদ্ভট কথা শুনে রিশতা হতবাক হয়ে যায়। আলভির কপালে হাতটা ঠেকিয়ে ব্যস্ত কণ্ঠে রিশতা বলল

-‘ শরীর খারাপ নাকি তোমার?

-‘ না একদম ঠিক আছি আমি।

-‘ তাহলে, এসব আবোল তাবোল বকছো কেন?

আলভি লম্বা একটা শ্বাস নেয়। তারপর চোখ বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে বলল

-‘ ‘ আমার ভীষণ ভাল্লাগে তোমায়
তাই তোমায় ভালোবাসি প্রিয়
বল সে কি মোর অপরাধ?’

কথাটা বলেই আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করে না আলভি। এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায় সে।
রিশতা হা হয়ে তাকিয়ে থাকে আলভির যাওয়ার পানে।

আদ্রিশ যাওয়ার পর পরই মেহরুন নিজের রুম থেকে বেরিয়ে করিডোরের পথ ধরে হাঁটছিল। এমন সময় আলভিকে রিশতাকে রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা আড়ালে দাঁড়ায় সে। আলভি চলে যেতেই এক ছুটে চলে আসে রিশতার কাছে মেহরুন।

মেহরুন হাসি মুখে রিশতাকে বলল

-‘ ভাইয়া তোমায় কি বলে এভাবে চলে গেল, ভাবি?

মেহরুনের মুখে ‘ভাবি’ ডাকটা শুনে বিষম খায় রিশতা। কাশতে কাশতে তার অবস্থা যায়যায়। রিশতাকে ধরে বিছানায় বসায় মেহরুন। গ্লাসে পানি ঢেলে গ্লাসটা এগিয়ে দেয় রিশতার কাছে। পানির গ্লাসটা নিয়ে এক নিঃশ্বাসে ঢকঢক করে পানি খেয়ে গলাটা ভিজিয়ে নেয় রিশতা। মেহরুন রিশতার পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলল

-‘ এখন কেমন বোধ করছো, ভাবি?

রিশতা কিছু বলে না তবে বিস্মিত নয়নে চেয়ে থাকে মেহরুনের দিকে। আলভির সাথে সাথে কি এই মেয়েটাও পাগল হয়ে গেল নাকি? ভেবে পায় না রিশতা। রিশতাকে এমন বোকা বোকা চাহনিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঠোঁট চেপে হাসে মেহরুন। ঠাট্টা করে বলল

-‘ এভাবে তাকিয়ে আছো কেন, ভাবিইইই?

রিশতা এবার গম্ভীর কণ্ঠে বলল

-‘ তুমি আমায় ভাবি কেন ডাকছো, মেহরুন ভাবি?

-‘ আমি তোমার আর ভাইয়ার কথা শুনেছি। আমার ভাই ভালোবাসে তোমায়। আর আমারও বেশ মনে ধরেছে তোমাকে। আমার ভাবি হিসেবে তুমিই পারফেক্ট। বুঝলে, ভাবিজি?

রিশতা কোনো জবাব দেয় না, চুপচাপ বসে থাকে। রিশতাকে চুপ থাকতে দেখে মেহরুন কণ্ঠ কিছুটা খাদে নামিয়ে বলল

-‘ আমার ভাইকে ভালোবাসো না তুমি?

মেহরুনের দিকে চকিত তাকায় রিশতা। কি বলবে সে ভেবে পায় না এ মুহুর্তে। রিশতাকে বার কয়েক পরোখ করে নেয় মেহরুন। গম্ভীর কণ্ঠে বলল

-‘ তুমি নির্দ্বিধায় আমায় বলতো পারো। আমি কিছু মনে করবো না। আমার ভাই বলে তাকে যে ভালোবাসতেই হবে এমন কোনো কথা নেই।

মেহরুনের দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে সায় জানায় রিশতা। রিশতার বলতে দেরি কিন্তু মেহরুনের ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে চিৎকার করতে দেরি হয় না। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রিশতাকে মেহরুন। উচ্ছ্বাসের সাথে মেহরুন বলল

-‘ আই লাভ ইউ, ভাবিইইই😘

রিশতা হেসে ফেলে মেহরুনের এহেন কর্মকান্ডে। মেহরুনের গাল টেনে দিয়ে রিশতা বলল

-‘ তোমার শরীর কি এখন আগের থেকে ঠিক আছে, মেহরুন ভাবী?

মেহরুন লাজুক হেসে বলল

-‘ তোমার আদ্রিশ ভাইয়া থাকলে কি আর শরীর ঠিক না থেকে পারে?

রিশতা ভ্রু নাচিয়ে বাঁকা হেসে বলল

-‘ কেন ভাইয়া কি আজকাল একটু বেশিই আদর যত্ন করছে নাকি বউয়ের?

মেহরুন লজ্জায় দুহাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে নেয়। রিশতায় হাতে আলতো হাতে থাপ্পড় মেরে গম্ভীর কণ্ঠে বলল

-‘ তোমার ভাইয়ের মতো তুমিও ঠোঁটকাটা স্বভাবের হয়েছো। আসলেই ডাক্তাররা কখনোই ভালো হয়না। সব একেকটা ফাজিলের হাড্ডি হয়!

ঠোঁট চেপে হেসে রিশতা সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল

-‘ কেন ভাইয়া তোমার সাথে ফাজিলের মতো কি করেছে ভাবি? তোমার এক্সপেরিয়েন্সটা শেয়ার করো প্লীজ। যাতে ভবিষ্যতে আমিও কাজে লাগাতে পারি।

মেহরুন এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় রিশতার দিকে। ভ্রু নাচিয়ে বলল

-‘ আমার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে কি তুমি আমার ভাইয়ের উপর এপ্লাই করতে চাচ্ছো, ভাবি?

রিশতা এবার লজ্জায় পড়ে যায়। লাজুক হেসে বলল

-‘ আদ্রিশ ভাইয়ার সাথে থাকতে থাকতে তুমিও কিন্তু ফাজিল হয়ে যাচ্ছো, ভাবি।

দুজনেই হেসে ফেলে। ওদের হাসির শব্দ শুনে রুমে প্রবেশ করতে করতে অরনী কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল

-‘ কি গো, তোমরা আমাকে রেখে এতো হাসছো কেন? মিস করে গেলাম তো মনে হয় অনেককিছু?

অরনীকে দেখে ওরা আরও এক দফা হাসল। মেহরুন অরনীর এক হাত টেনে নিজের পাশে বসিয়ে হাসতে হাসতে বলল

-‘ এখন তো কতোকিছুই মিস করবে, দুলাভাই এসে পড়েছে না?

অরনী মেহরুনের কান মুলে দিয়ে কপাট রাগ দেখিয়ে বলল

-‘ বড্ড ফাজিল হয়ে গেছো কিন্তু তুমি। বড় ননদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না মেয়ে?

হেসে ফেলে মেহরুন। রিশতা পাশ দিয়ে ঠাট্টা করে বলল

-‘ আমাদের আদ্রিশ ভাইয়ের সাথে থাকতে থাকতে ফাজিল হয়ে গেছে মেহরুন ভাবি।

অরনী হেসে বলল

-‘ তা মেহরুন নিজের বরকে ছেড়ে তুমি রিশতার রুমে কেন? তোমার তো উচিত আদ্রিশের সাথে একেবারে চিপকে থাকা।

মেহরুন লাজুক হেসে বলল

-‘ তোমার ভাইয়ের ইমার্জেন্সি কল আসায় হসপিটালে রোগী দেখতে গেছে, আপু। একা একা বোর হচ্ছিলাম তাই এখানে এলাম।

-‘ ইশ, বেচারা ডাক্তার হয়েও বিপদে আছে। যখন তখন ডাক পড়ে যায়। তার উপর আবার আমাদের মেহরুন পাত্তা দেয় না আদ্রিশকে। হায় বেচারা।

রিশতা এবার বলল

-‘ তাই নাকি ভাবি? এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছেনা। এজন্যই আমার ভাইটা সারাক্ষণ মনমরা হয়ে থাকে।

মেহরুন এবার প্রসঙ্গ পাল্টাতে অরনীর উদ্দেশ্যে বলল

-‘ রিশতাকে আমার ভাবি বানালে কেমন হয়, আপু?

অরনী এবার ফিরে তাকায় রিশতার দিকে। বলে উঠল

-‘ মানে আমাদের আলভির বউ হবে রিশতা😱

মাথা নেড়ে সায় জানায় মেহরুন। এদিকে রিশতা লজ্জায় দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে। রিশতাকে দেখে হেসে দেয় অরনী, মেহরুন। অরনী এবার উচ্ছ্বাসের সাথে বলল

-‘ তাহলে তো খুবই ভালো হয়। আজ থেকে তাহলে আমরা তিনজনই তিনজনের ননদ ভাবি হয়ে গেলাম যে। এই দূরে বসে আছিস কেন, বুকে আয় আমার।

রিশতা, মেহরুন দুজনই জড়িয়ে ধরে অরনীকে। অরনীও পরম যত্নে আলতো হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

সবেমাত্র বাড়ি এসে পৌঁছেছে আদ্রিশ। ফ্রেশ হয়ে গায়ে একটা ধূসর রঙের টিশার্ট জড়িয়ে নেয়। রুমের মাঝে কোথাও মেহরুনকে দেখতে না পেয়ে ভ্রু কুচকে ফেলে সে। ধুপধাপ পা ফেলে মেহরুনের খোঁজে বের হয় আদ্রিশ। রিশতার রুমের পাশে আসতেই ওদের হাসির শব্দ শুনে রুমে প্রবেশ করে আদ্রিশ।

-‘ তুমি এখানে, মেহরুন। আর তোমায় পুরো বাড়ি খুঁজে এসেছি। এখন এসো, ঘুমাবো আমি।

আদ্রিশের কণ্ঠস্বর পেতেই পিছনে ফিরে তাকায় মেহরুন।

অরনী ঠাট্টা করে বলল

-‘ যাও এখন নিজের বরের কাছে যাও। অনেক তো আড্ডা দিলে, এখন সেবাযত্ন করো গিয়ে।

অরনীর কথায় আদ্রিশও সায় জানায়। কিন্তু মেহরুন দ্বিমত পোষণ করে। তা দেখে রেগে যায় আদ্রিশ। মেহরুনের কাছে এগিয়ে ধুপ করে কোলে তুলে নেয় মেহরুনকে। মেহরুন ছটফট করে, কিন্তু আদ্রিশ তাতে পাত্তা না দিয়ে তাকে নিজের রুমে নিয়ে যায়।

এদিকে অরনী আর রিশতা হেসেই চলেছে। তাদের হাসি থামছেই না যেন। অরনী হেসে বলল

-‘ আদ্রিশ হতে আজ আর নিস্তার নেই মেহরুনের।

#চলবে ~

তিনজুটিকে কেমন লাগছে আপনাদের?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here