আমার_একটাই_যে_তুই❤️ #সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি #পর্ব_১২

0
301

#আমার_একটাই_যে_তুই❤️
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
#পর্ব_১২

ছাঁদের কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছি। রাতের আকাশে ঘন কালো মেঘ জমেছে। যেমনটি আমার মনে জমেছে। কি হতো! আমার একটা পরিবার থাকলে? মা-বাবা, ভাই-বোন নিয়ে পরিপূর্ণ একটি পরিবার! যেখানে আমার নিজ স্বাধীনতা আর মতামতের প্রকাশ করতে পাড়তাম বিনা দ্বিধায়! আমারো হে/না বলার সুযোগ থাকতো! খুব কষ্ট হয়! খুব! অার এই কষ্টটা এক মাত্র তারাই উপলব্ধি করতে পারে, যাদের পরিবার নেই!খুব জোরে আকাশ থেকে বর্ষণ শুরু হল। সেই বর্ষণে আমার চোখে জল মুছে নিতে লাগলো।আমার হাত দুটো মেলে দিলাম। আকাশের দিকে মুখ উঁচু করে যেন চোখে জল আর বৃষ্টির জল গুলো মিশে যায়। আর ভাবতে লাগি তখনের কথা…!

নানু মার ঘরে সামনে আসতেই যা শুনলাম…….

–” আমি চাইনা কুহু ইউসুফের আছে পাশে থাকুক মা! আপনি জানেন কুহুকে আমি মেয়ে ভাবি আর তাই ভাবতে চাই। এর বেশী কিছু ভাবতে পারবো না।”

ছোট মামী অর্থাৎ ইউসুফ ভাইয়ার আম্মুর গম্ভীর কন্ঠ শোনা গেল নানু মার ঘর থেকে!বুঝতে বাকি নেই কি হবে পরের স্টেপ! আমি দরজার সামনে এসে নানু মাকে বললাম,,

–“আসবো নানু মা?”

আমার কন্ঠ শুনে ছোট মামি চুপ করে নড়েচড়ে বসলেন। নানু মা তখন শর্তা দিয়ে সুপারি কাটতে কাটতে বললেন,,
–“আয়! ”

আমি ভিতরে ঢুকলাম। আড় চোখে ছোট মামিকে দেখে নিলাম। যে এই মুহূর্তে আমাকে দেখে বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠেছে মুখে। চোখ মুখ কুচকে চেয়ে আমার দিক। আমি এক পলক তাকিয়ে মাথা নত করে দাড়ালাম।তখনি নানুমা কোনো ভণিতা ছাড়াই কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলেন,,

–” সাজেক যাবি না তুই! যে যতই বলুক তোর মুখ থেকে যেন হে না বের হয়! ইউসুফ বললেও না।বুঝেছিস?”

ইউসুফ ভাইয়ার কথা বলতেই চকিতে তাকালাম নানুমার দিক। তিনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে, আমি সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ফেললাম।আর ভাবচ্ছিলাম মনে মনে। কতটা আশা নিয়ে ছিলাম সাজেক যাবো বলে। আমার স্বপ্ন ছিল। নানু মার এভাবে না করাতে বুক চিড়ে যাচ্ছে। চোখের কোনো জল এসে জমে গেছে। অনেক কষ্টে আঁটকে রাখলাম।আর মুখ ফুঁটে বলতে ইচ্ছে করছিল,,

–“কেন নানু মা! আমি যাবো। আমি তোমার নাতনী না? প্লীজ যেতে দাও। একটি বার মেঘের রাজ্য ভ্রমণ করার কি কোনো অধিকার আমার নেই??”

কিন্তু মুখ ফুঁটে বলতে পারলাম না। শুধু মাথা নাড়িয়ে বললাম,,,,

–” জি বুঝতে পেরেছি ”

তখনি তিনি তীক্ষ্ণ কন্ঠে ধমকে বললেন,,

–“আর ইউসুফের সাথে কি এত তোর? ডলাডলি কিসের এতো? তোর আশিক না। ভাই হয়!ব্রাহ্মণ হয়ে চাঁদে হাত দেওয়ার চিন্তাভাবনা বাদ দে। তোর পরীক্ষা এবার শেষ হতেই তোকে বিয়ে দিয়ে বিদেয় করবো। যতসব ঝামেলা। কাজ ছাড়া রুম থেকে বের হবি না খবরদার। তাহলে তোর খাওয়া পড়া বন্ধ করে দিব।নিজেকে প্রস্টিটিউটের খাতায় তুলে দিচ্ছিস। এবার তোর ব্যবস্থা করতেই হবে!”

নানু মার মুখে এমন বিষাক্ত কথা শুন্তে হবে ভাবিনী কখনো। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছি আমি। চোখের বাদ এবার ভেঙ্গে গেল। টপ টপ করে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো আমার চোখ থেকে।লাষ্ট পর্যন্ত কিনা আমাকে এক প্রস্টিটিউটের সাথে মিলালো। আমি আর পাড়লাম না কেঁদেই দিলাম। কিন্তু সামনের দুটো বসে থাকা জীবন্ত মানুষদের কোনো হেলদোল হলো না তারা ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে রইল। নানু মা ধমকেই বলল,,

–” ন্যাকামি করবি না। রুমে যা। যা বলছি মনে রাখবি!যা এখন!”

আমি আর দাঁড়ালাম না ছুটে চলে আসলাম। কিন্তু আসার আগে শুন্তে পেলাম নানুর কন্ঠ ছোট মামীকে বলছেন,,

–” আমি না হয় আমার নাতিনকে সামলে নিব! কিন্তু তোমার ছেলে ইউসুফকে আঁটকাতে পাড়বে তো….!!”

এরপর আর কিছু কানে এলো না আমার। এক দৌড়ে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে বসে রইলাম সারাদিন। কেউ এলোও না আর রুমে।আমি বালিশে মুখ গুঁজে কেঁদেছি, খুব কেঁদেছি! আজ আমার পরিবার থাকলে কি এসব শুন্তে হতো? সত্যি বড্ড ভুল করে ফেলেছি! খুব বড় ভুল! ভুলেই গেছিলাম আমি কে? কি আমার পরিচয়! সব আজ মনে করিয়ে দিলেন তারা। আমিতো বোঝা সবার কাছে যার মূল্য একটুখানি টুকরা কাগজের মত।কিন্তু মনটা যে বেহায়া হয়ে গেছে! ঘুরে ফিরে ইউসুফ ভাইয়ার কাছে ফিরে যায়।

হঠাৎ বাজ পড়তেই ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলাম আমি। বৃষ্টির বেগ বেড়েছে খুব!সাথে প্রবল বেগে ছুঁটেছে আমার কান্না। আজ থেকে মিটে গেছে ইউসুফ ভাইকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা। সে যে চাঁদ আর আমি সামান্য মানুষ। যাকে ছোঁয়ার কথা ভাবাও পাপ আমার জন্য। মহাপাপ।এসব ভাবার মাঝেই নীচের ব্যালকনি থেকে ভেসে আসলো একটি পরিচিত কণ্ঠের গানের দুটি লাইন। যা শুনে ফুঁপিয়ে উঠলাম আমি।বুকের মাঝে অসহ্যকর যন্ত্রনা শুরু হল। ভালবাসার মানুষকে হারাবার ব্যাথা।

—“এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকেনাতো মন
কাছে যাবো কবে পাবো ওগো তোমার নিমন্ত্রণ”

___________________

পরেদিন সকালে দরজা আটকিয়ে বসে আমি! সকলেই রেডি বের হবে এখন!ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা যাবেন। তারপর যাবেন খাগড়াছড়ি তারপর সাজেক।নিচ থেকে হৈ চৈ আওয়াজ আসচ্ছে! মনটা কেমন আনচান আনচান করছে বাহিরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু নানু মার বারণ বাহিরে যাও। তাই দরজা আটকে বসে আছি! এর মাঝে নুশরা, বুশরা, তিথি ডেকে গেছে আমাকে। আমি টু শব্দ করিনি! মুখে দু হাত চেপে বসে রইলাম।এখন আবার দরজার কড়া নাড়চ্ছে কেউ! খুব জোরে কিন্তু কে বুঝতে পারচ্ছি না। আমি দু হাঠুতে মুখ গুঁজে বসে রইলাম। তখনি ধাম করে শব্দ হলো। শব্দের বেগ এতো ছিল যে অন্তর আত্না কেঁপে উঠলো। আমি সামনে তাকাতেই বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলাম। ইউসুফ ভাই দাঁড়িয়ে। চোখ মুখ লাল করে। তার পিছনেই দাঁড়িয়ে আছে নানু মা আর ছোট মামী।ইউসুফ ভাইয়া এসে আমার হাত চেঁপে ধরলেন খুব শক্ত করে আর বললেন,,

–“চল”

আমি তার এভাবে ধরায় ব্যথায় কুকিয়ে উঠলাম আর বলতে লাগলাম,,

–” কই নিয়ে যান ভাইয়া! ছাড়েন? আমি যাবো না? আমার পরীক্ষা সামনে। প্লিজ হাত ছাড়েন ব্যথা পাচ্ছি! তেন বুঝতেসেন না?”

এক নাগারে বলে যাচ্ছি পিছন থেকে নানু মা আর মামি বলে যাচ্ছে,,

–” ও যেতে চাইছে না জোর কেন করছিস? ছাড় ওরে!”

ইউসুফ ভাই তখন দাঁতে দাঁত চেঁপে বললেন,,

–” ও যাবে না? ওর বাপ যাবে! ওর চৌদ্দগুষ্টি যাবে। ”

তার কথায় সবাই বিস্মিত।মামি বার কয়কে বুঝাতে এসে ব্যর্থ। কিন্তু কে শোনে কার কথা তিনি আমাকে টেনে হিছড়ে নিয়েই যাচ্ছেন। শুনচ্ছেন না কিছু…!এবার আমি কেঁদে দিলাম।আর সাথে সাথে তিনি রাম ধমক মারলেন আমাকে। উপস্থিত সবাই তখন স্তব্ধ। নানু মা, মামি সহ আমিও চুপ। তিনি আমায় ঠেলে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন। তিনিও গাড়িতে উঠে তিথিকে শুধু বললেন,,

–” পাঁচ মিনিটে এর কাপড়-চোপড় নিয়ে গাড়িতে উঠবি। ”

তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলেন। আমি তখন কাঁদ কাঁদ মুখে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম মামি এখনও বিস্মিত। আর নানু মার ঠোঁটে বাঁকা হাসি! যা বোঝার ক্ষমতা আমার নেই।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here