“মেজর মেহরাদ সাদাফকে রিজেক্ট করার কারণ কি?” শান্তস্বরে জিজ্ঞাসা করে সরু চোখে সামনের দিকে চেয়ে উত্তরের অপেক্ষা করতে লাগলো মেহরাদ।
“আপনাকে রিজেক্ট করার কোনো কারণ নেই।আমি বিয়ে করতে চাই না”। নিজেকে ধাতস্থ করে নিচে তাকিয়ে উত্তর দিলো স্রোত। সামনে বসে থাকা ব্যক্তির ঐ ধূসর বর্ণের চোখগুলায় কিছু আছে।যতবারই তাকানোর সাহস করে,খেই হারিয়ে ফেলে স্রোত।
” কেনো চান না?হোয়াটস্ রং উইদ ইউ?একোরডিং টু অল ইনফরমেশন, ইউ আর নট ইন অ্যানি রিলেশনশিপ। দ্যান হুয়াই?” রাগান্বিত স্বরে বললো মেহরাদ।
“আমার বিয়েতে ভয় কাজ করে।ইউ ক্যান সে, আই হ্যাভ অ্যা ফোবিয়া, গ্যামোফোবিয়া।” বলে সামনের দিকে তাকালো স্রোত।কিন্ত বিধিবাম,ঐ চোখদুটি কড়া চোখে তার দিকে চেয়ে আছে। সাথে সাথে নজর ঘুরিয়ে ফেললেও স্রোত বুঝলো তার কথা শুনে সামনের ব্যক্তি অনেকটাই অবাক হয়েছে।
“হোয়াট??হ্যাভ ইউ গোন ম্যাড?একজন মেডিকেল স্টুডেন্টের বিয়েতে ফোবিয়া?লাইক সিরিয়াসলি? অবাক কন্ঠে বললো মেহরাদ।
” সরাসরি বলি।”স্রোত এবার সাহস জুগিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে টেবিলের নিচ থেকে নিজের হাত বের করে টেবিলের উপর রেখে সুন্দর করে বসলো।বলতে শুরু করলো,
“আমি খুব কাছ থেকে সংসারের অশান্তিগুলো দেখেছি।খুব ছোট ছোট টপিক নিয়ে ঝামেলা বাঁধতে দেখেছি।ইচ অ্যান্ড এভ্রি টপিক নিয়ে ঝগড়া হতে দেখেছি।আমার বাবার চোখে কখনো আমার মায়ের প্রতি সম্মান দেখি নি,শ্রদ্ধা দেখি নি।আমার মায়ের জন্ম যেনো সংসারে কাজ করার জন্যই হয়েছিলো।আমার মাকে কখনো আমি সুখী হতে দেখি নি।
আমি বিয়েকে ভয় পাই।খুব ভয় পাই।”
এতো হাসিখুশী একটা মেয়ের মধ্যে যে এতো কষ্ট লুকিয়ে ছিলো,কে জানতো?মেহরাদ অনেকটাই অবাক হয়েছে।এতোদিন অনেক চেষ্টা করেছে স্রোতের সাথে সামনাসামনি বসে কথা বলার।কিন্তু স্রোত গুরুত্ব দেয় নি।তাছাড়া স্রোত মেডিকেলের ফিফথ ইয়ারের স্টুডেন্ট। ২ মাস পর তার ফাইনাল প্রফেশনাল এক্সাম। তাই খুবই প্রেসার যাচ্ছিলো।আজকে ছুটির দিন ছিলো। তাছাড়া গতকাল রাতে মেহরাদের মা ফোন করে জোর করায় সে রাজি হয়েছে।তাই আজকে একটা রেস্টুরেন্টে এসেছে মেহরাদ আর স্রোতস্বিনী।
“আচ্ছা, তাহলে আজকে উঠি।” মেহরাদকে চুপ থাকতে দেখে স্রোত চলে যাওয়ার কথা বললো।
“বিয়েটা ৮ দিন পরই হচ্ছে। আমার ছুটি আর ১০ দিনের।মায়ের অসুস্থতার জন্য এইবার জরুরি ছুটি নিয়ে এসেছি।জানি না আবার ছুটি কবে পাই। মাথায় রাখবেন কথাটা।”
স্রোত চলে যাওয়ার জন্য চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়েছিলো।মেহরাদের এই কথা শুনে করুণ চোখে তাকালো স্রোত।
“আপনার ভয় কাটানোর জন্যে হলেও আপনাকে চাই স্রোতস্বিনী।আপনার ভুল ভাঙ্গানোর জন্যে হলেও আপনাকে আমার চাই ।”গাঢ় কন্ঠে বললো মেহরাদ। তারপর সে বিল পে করতে উঠে গেলো।যেতে যেতে বললো,
“আসুন আপনাকে নামিয়ে দেই।”
স্রোত যেনো এই কথা শুনলোই না।সে তো আটকে আছে মেহরাদের ঐ কথাগুলোয়।কি যেনো ছিলো ঐ গাঢ় কন্ঠে।
মেহরাদ দূর থেকে দেখে স্রোত ঐ জায়গাটাতেই এক ধ্যানে দাঁড়িয়ে আছে।মজা করে স্রোতের সামনে তুড়ি বাজাতেই স্রোত চমকে উঠলো।কি হয়েছে বুঝতেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো স্রোত।বাঁকা হেসে মেহরাদ বললো,
“এতো তাড়াতাড়ি আমার প্রেমে পড়ে গেলেন, স্রোতস্বিনী।আমার তো সুবিধাই হলো।
” আমি স্রোত,সবকিছু ভাসিয়ে দেই,কিন্তু নিজে এতো সহজে ভাসি না।” কড়া স্বরে বলে রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে গেলো স্রোত।
মেহরাদ হাসলো আর বেড়িয়ে যেতে যেতে ভাবতে লাগলো,”মেজর মেহরাদ সাদাফের উড বি তেজস্বী না হলে কি মানাতো”।
গাড়ি চলছে আপন গতিতে তার নিজস্ব গন্তব্যে।মেহরাদ ড্রাইভ করছে, তার পাশে বসে স্রোত বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে,যেনো কিছু ভাবছে।সে গাড়িতে উঠতে চায়নি,মেহরাদই জোর করে উঠিয়েছে।স্রোত যখন উঠতে চাচ্ছিলো না,একপর্যায়ে মেহরাদ বলে বসলো,
“পাব্লিক প্লেসে আপনাকে কোলে নিতে বাধ্য করবেন না আমায়,স্রোতস্বিনী। ”
স্রোত অবাক হয়ে তাকালো মেহরাদের দিকে।মেহরাদ বাঁকা হেসে বললো,
“আপনাকে কোলে নিতে আমার কোনো সমস্যা নেই।আমি তো এক পায়ে দাড়ানো কোলে নিতে।এখন আপনার ইচ্ছে।”
স্রোত ভাবছে এই লোক দুষ্টুমিও করতে পারে।
মেহরাদ আবার বললো,
“আসুন স্রোতস্বিনী কোলে নেই।”
রাগান্বিত চোখে মেহরাদের দিকে তাকিয়ে গাড়িতে উঠলো স্রোত।মনে মনে সে মেহরাদের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতে ভুললো না।মেহরাদ যেনো উচ্চস্বরে হাসতে গিয়েও হাসলো না।
#স্রোতস্বিনী
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
#১ম_পর্ব