স্রোতস্বিনী #মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা পর্ব ১৫

0
320

#স্রোতস্বিনী
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
পর্ব ১৫

স্রোতের রুম থেকে বেরিয়ে মান্ধবী ড্রইং রুমের দিকে আসার সময়ই আচমকা কেউ টেনে রুমের ভেতরে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।আচমকা হিচকে টান পড়ায় মান্ধবী অবাক হলেও সামনের মানুষটিকে দেখে চোখে মুখে রাগ দেখা যায়। সে বেরিয়ে যেতে নিলেই রায়হান তার হাত ধরে ফেলে।মান্ধবী দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,
“সবাই বাইরের ঘরে আছে,এতো মানুষের সামনে আমাকে আবার হেনস্তা করবেন না।”
“একবছর আগের কথা ভুলে যাও মান্ধবী।আমি স্যরি ঐসবের জন্য।” করুণ স্বরে নতমুখে বলে রায়হান।
“আপনি এসব কেনো করছেন?”
“কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি মান্ধবী।পরে এটা বুঝেছি আমি।”
“কিন্তু আমি ভালোবাসি না।” তাচ্ছিল্যের সাথে বলে মান্ধবী।
“আমি ভালোবাসি,খুউউব বেশি, এটাই যথেষ্ট নয় কি?”
“একবছর আগে ঠিক এই কথাটাই আমি আপনাকে বলেছিলাম, কিন্তু আপনি অন্যজনের ছিলেন।” রাগান্বিত কন্ঠে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে মান্ধবী।
“আমি ঐ সময় বুঝতে পারি নি,আমি ঐসবের জন্য স্যরি।আমাকে আমার ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দাও।” প্রলম্বিত শ্বাস ফেলে অনুনয় করে বলে রায়হান।
“একজন ঠকানোয় আমার প্রতি এক বছর পরে ভালোবাসা উতলে পড়ছে?শুনে রাখুন,আপনার প্রতি আমার এক আকাশ পরিমাণ ঘৃণা ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই।”

“মান্ধবী!আমি জানি তুমি আমাকে এখনো আগের মতো ভালোবাসো।” কাতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে রায়হান।

মান্ধবী তার কথায় পাত্তা না দিয়ে পাশের ট্রি টেবিল থেকে একটা কাঁচের গ্লাস নিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে রায়হানকে ভাঙ্গা গ্লাসটার দিকে ইশারা করে বলে যে,
“এই যে ভাঙ্গা গ্লাসটা?এটাকে যেদিন জোড়া লাগিয়ে আগের মতো করে দিতে পারবেন ঐদিন আপনার স্যরি গ্রহণ করবো।নারী যেমন তার সর্বোচ্চটা দিয়ে ভালোবাসতে পারে তেমনি তার সর্বোচ্চটা দিয়ে ঘৃণাও করতে পারে।মাথায় রাখবেন।” শান্তভাবে বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায় মান্ধবী।

মান্ধবীর যাওয়ার পানে কাতর দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো রায়হান।
দূর থেকে এক জোড়া চোখ সবকিছুই অবলোকন করলো।

বিকেলের দিকে স্রোতের বাড়ির লোকজন চলে যেতে নিলে স্রোত মান্ধবীকে থেকে যেতে বলে।মান্ধবী থাকতে না চাইলেও যখন বনলতা বেগম বললেন,
“আজ মেহরাদ চলে যাবে।তুমি স্রোতের পাশে থাকলে ওর ভালো লাগবে।নতুন পরিবেশ,নতুন মানুষ তুমি থাকলে ওর অস্বস্তি কিছুটা কমবে।থেকে যাও।”
মান্ধবী জানে তার বোন অচেনা মানুষের ভীড়ে কেমন অস্বস্তিতে থাকে।বোনের কথা ভেবে অনিচ্ছা সত্ত্বেও থেকে যায় মান্ধবী।

স্রোত ঘরে এসে দেখে মেহরাদ ব্যাগ গোছাচ্ছে,তাকে এখনো খেয়াল করে নি।সে এসে পাশে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।মেহরাদ ব্যাগ গোছাতে গোছাতেই জিজ্ঞাসা করলো,
“কিছু বলবেন স্রোতস্বিনী?”
“আপনি কি করে বুঝলেন আমি এসেছি?” বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করে স্রোত।
মেহরাদ ব্যাগের চেইন টেনে দিয়ে স্রোতের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে হেঁসে বলে,
“আপনার ফ্লোরাল পারফিউমের স্মেলটা আমি চিনি।”
“ওহ! আপনি বের হবেন কখন?”
“সন্ধ্যায়।” খাটে হেলান দিয়ে বসে মলিন কন্ঠে বলে মেহরাদ। স্বল্পভাষী স্রোত আর মেহরাদকে ঘাটায় না।সে চলে যায় চেঞ্জ করতে,অনেক্ষণ যাবৎ এই ভারী আবরণে আছে সে।

সন্ধ্যাবেলা!একটা সুন্দর দিনের সমাপ্তি জানিয়ে ঘুটঘুটে অন্ধকারের আহৃবান করে।দিনের আলোর মন খারাপের ফলই যেনো সন্ধ্যাবেলা।বিকেলের মন তখন থাকে বিষন্ন।মেহরাদ বেরিয়ে যাবে,ড্রাইভার নিচে অপেক্ষা করছে।যতদিন মেহরাদ বাড়িতে থাকে ততদিন ওর ড্রাইভারের ছুটি থাকে।ঐ সময়ের পরে মেহরাদ-স্রোতের মধ্যে তেমন আর কথা হয়নি।মেহরাদ রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় স্রোতের কাঁধে দু’হাত রেখে বলে,
“আসি।নিজের খেয়াল রাখবেন, আম্মুর খেয়াল রাখবেন।আর ভালোভাবে পরীক্ষা দিবেন।আমি যেনো আবার এসে শুনতে পাই আমার বউ একজন ডক্টর।আর আমাকে একটু একটু মিস্ করবেন,ঠিক আছে?”
শেষের কথায় স্রোত হেঁসে ফেলে।চোখের পলক ফেলে মেহরাদকে আশ্বাস দেয়,ভরসা দেয়।মেহরাদ স্রোতকে ছেড়ে যেই রুমের বাহিরে পা দিবে তখনই স্রোত পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে মেহরাদকে,মাথা রাখে ওর পিঠে।সে জানে না এমন কেনো করলো,তবে তার ইচ্ছে হলো।আর সে সবসময়ই তার ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেয়।মেহরাদ থেমে গেলো,চেহারায় বিস্ময়ের সাথে প্রশান্তির ছাপ স্পষ্ট। অধর প্রসারিত করে ঘুরে দাঁড়িয়ে স্রোতের কপালে চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,
“যাওয়ার সময় এতো টান দেখাবেন না স্রোতস্বিনী। আমার যেতে কষ্ট হবে,খুউউব।ফোনে তো যোগাযোগ হবেই আমাদের।বুঝেছেন স্রোতস্বিনী,প্রেম তে করতে পারলাম না,এবার নাহয় বিয়ের পরেই প্রেম করবো,লং ডিস্টেন্স রিলেশনশিপ হবে আমাদের।চুটিয়ে প্রেম করবো,যেখানে প্রতিদিন নিয়ম করে দেখা না হলেও ভরসা,বিশ্বাস, ভালোবাসা থাকবে।”
স্রোত এই লোকের মতগতি বুঝে উঠতে পারে না।এখনই মন খারাপ তো এখনই মজা করছে।স্রোত কটমট করে তাকালে মেহরাদ শব্দ করে হেঁসে ফেলে।তারপর স্রোতকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।বসার ঘরে সবাই অপেক্ষা করছে।

সবাই মেহরাদকে গাড়ি অব্ধি এগিয়ে দিতে গেলো।গাড়িতে উঠার সময় মেহরাদ বনলতা বেগমকে মজা করে চোখ ছোটো ছোটো করে জিজ্ঞাসা করলো,
“মা তুমি এবার কাঁদছো না কেনো?অন্যসময় তো কেঁদে কেটে ভাসিয়ে দাও।”
“তোকে আর প্রয়োজন নেই বুঝলি।এবার আমার আরেক মেয়ে আমার সাথে আছে।” স্রোতকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললেন বনলতা বেগম। স্রোত স্মিত হাসলো।মেহরাদ অবাক হওয়ার ভান করে স্রোতকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“আপনি কি জাদুটোনা জানেন স্রোতস্বিনী?”
উপস্থিত সবাই মেহরাদের এই প্রশ্নে অবাক হয়ে তাকায়।স্রোত বিস্ময় নিয়ে শোধায়,
“জ্বি?”
“এই যে আমার মা এখন আমাকে ভুলে আপনার কথা বলছে।কি করেছেন বলুন তো আপনি?”দুষ্টামি করে বলে মেহরাদ।
উপস্থিত সবাই কথার মানে বুঝতে পেরে একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেঁসে ফেলে।স্রোতের অভিব্যক্তি দেখার মতোন।বনলতা বেগম মেকি রাগ দেখিয়ে মেহরাদের কাঁধে চাপড় মেরে বলেন,
” শয় তান একটা।সবসময় শুধু ফাজলামি।বের হ এখন।”

মেহরাদ হাসছে।গাড়ি চলতে শুরু করলো নিজ গতি বজায় রেখে।মেহরাদ গাড়ির সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুঝে রইলো।তার মাথায় এখন অনেক চিন্তা।সবাই বাড়ির ভেতরে চলে গেলেও স্রোত দাঁড়িয়ে রইলো।যতক্ষণ না গাড়িটা অদৃশ্য হচ্ছে ততক্ষণ গাড়ির দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে রইলো।

#চলবে…

সবাই ফলো দিয়ে রাখুন 👉 Bindas Life

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here