স্রোতস্বিনী #মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা পর্ব ২১

0
300

#স্রোতস্বিনী
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
পর্ব ২১

স্রোতের পরীক্ষার চলছে।তার এখন অনেক ব্যস্ত সময় যাচ্ছে।জীবন বদলের পরীক্ষা, তারপরেই তো নামের পাশে ডাক্তার শব্দটা যোগ হবে।মানবসেবায় নিয়োজিত হবে সে।মায়ের স্বপ্ন,নিজের স্বপ্ন মেহরাদের স্বপ্ন পূরণ করবে সে।চট্টগ্রাম থেকে স্রোত দুইদিন পরেই ফিরে এসেছিলো।মেহরাদের ছুটির দরখাস্ত গ্রহন হয় নি বলে সে আসতে পারে নি।স্রোত একা একাই ফ্লাইটে ফিরেছিলো।
তাদের সম্পর্ক এখন পুরোপুরি ঠিক হয়ে গেছে।একজন আরেকজনকে চোখে হারায়।সারারাত ভিডিও কলে থাকে।বেশিরভাগ সময় এভাবেই ঘুমিয়ে পড়ে।যেনো দেশের দুই প্রান্তের দুই তৃষ্ণার্ত প্রেমিক-প্রেমিকা।হাস্যোজ্জ্বল স্রোতকে দেখে বোঝা যায় না সে কোনো একসময় এতো গম্ভীর, চুপচাপ ছিলো।এরজন্যই হয়তো কোনো এক মহাপুরুষ বলেছিলেন,দূরত্ব ভালোবাসা বাড়ায়।তবে এখন দুইজনই অনেক ব্যস্ত থাকায় দুই-তিন দিনে একবার কথা হয়।সারাদিন অপেক্ষার প্রহর কাটে,কখন ফোন আসবে।

পাহাড়ে দস্যুদের প্রভাব মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গিয়েছে।কোনোভাবেই নিস্তার পাওয়া যায় নি।তাই দস্যু দমনের জন্যই অভিযান চালানো হবে।একদম মূল থেকে উপড়ে ফেলার চিন্তা করা হয়েছে। দস্যুদের সাথে জ ঙ্গিদের যোগাযোগ আছে।গত কয়েকমাস যাবৎ পাহাড়ের বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর উপর তারা বিভিন্নরকমের হাম লা চালায়,বো মা বি স্ফোরন করে।রাতের আঁধারে পাহাড়ি বাসিন্দাদের উপর আক্র মন করে,বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের, বাচ্চাদের মেরে ফেলে।নারীদের উপর অব্যক্ত অত্যাচার করে,তুলে নিয়ে যায় তারপর কার্যসিদ্ধি করে মেরে ফেলে ।এতে করে প্রায় কয়েক শতাধিক মানুষ মারা যায়।এদের প্রতিকার করার জন্যই তিনটা দল অভিযান চালাবে,যার একটি দলের প্রধান মেজর মেহরাদ সাদাফ।

সারাদিন নিজের দাপট দেখিয়ে সূর্য মামা পশ্চিমাকাশে অস্ত যাচ্ছে।পাখিরা তাদের নীড়ে ফিরছে।রক্তাক্ত আকাশ ঘরের ফেরার জন্য আহ্বান করছে।জানান দিচ্ছে ঘরে ফেরার সময় হয়েছে।স্রোত এই ভর সন্ধ্যায় ঘুমোচ্ছে।আগামীকাল তার পরীক্ষা নেই।গত কয়েকটা রাত সে ঘুমোনোর সুযোগই পায় নি।মেডিকেলের স্টুডেন্টদের কাছে এই রাত জাগা,দিনের পর দিন না ঘুমানো কোনো ব্যাপার না।মেডিকেল সাইন্স,পৃথিবীর কঠিন পড়াশোনার গুলোর মধ্যে যার অবস্থান উপরের দিকে।কথিত আছে,সারাজীবনই পড়াশোনা করা লাগে এই প্রফেশনে।তবে ভালোলাগার একটা বিষয় হচ্ছে এর মাধ্যমে মানবসেবা করা যায়।স্রোতের ঘুম ভাঙ্গে ফোনের কর্কশ ধ্বনিতে।মেহরাদ কল করেছে।স্রোত রিসিভ করে সালাম দেয়।সালাম বিনিময় শেষে মেহরাদ ক্লান্ত গলায় বললো,
“ঘুমাচ্ছিলে?”
“হুম,আপনার কন্ঠ এমন লাগছে কেনো?বেশি ব্যস্ত সময় যাচ্ছে?”
“তা বলা যায়।একটা মিশনে গেলে যে কতকিছু করা লাগে।ফোর্স রেডি করা, নীল নকশা করা,বাদ দাও।”
“হুম।”
“আজকে রাতে বের হবো।দোয়া করো।মাকে দেখে রেখো।মায়ের সাথে কথা হয়েছে।শুধু কান্নাকাটি করছে,সামলিও।”
“না গেলে হয় না?”
মেহরাদ হাসলো।বললো,
“আমার বউ তো ভীতু নয়।সে তো সাহসী,তেজস্বী।সে কিভাবে নিষেধ করছে?”
স্রোত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“হারানোর ভয় কাজ করে।এতো সুখ তো সহ্য হবে না কপালে।”
“পা গ লী মেয়ে।এভাবে বলতে নেই।দেশসেবায় আত্মনিয়োগ করেছি।ফিরে আসি কিভাবে?নিজের জীবনের চেয়েও দেশমাতা মূল্যবান,দেশের মাটি,মানুষ মূল্যবান।জা নোয়ারগুলো কত্ত কত্ত মানুষের জীবন নিয়ে খেলছে।ওরা অনেক ভয়ং কর।”
“হুম।সফল হয়ে ফিরে আসুন।অপেক্ষায় থাকবো।”

মেহরাদের ক্লান্ত চেহারায় তখন হাসি ফুটলো।কিছুক্ষণ নিরব থেকে ধরা গলায় আবার ডাকলো,
“স্রোত!”
“হুম”
“মন খারাপ করবে না।পরীক্ষা ভালোভাবে দিবে।আমি চাই না আমার প্রভাব,আমার অনুপস্থিতি তোমার স্বপ্নে,তোমার ক্যারিয়ারে বাঁধা হোক।”
“আচ্ছা!”
“শোনো!”
“বলুন!”
“আমি একটু স্বার্থপর হতে চাই স্রোত।আমি যদি না ফিরি তাহলে আমার হয়েই থেকো।পরকালে নাহয় একসাথে বাকি জীবন কাটাবো।আমার এই স্বার্থপরতা মেনে নিও স্রোত।ভালোবাসি।”

এক নিঃশ্বাসে ধরা গলায় করুণ স্বরে কথাগুলো বললো মেহরাদ।স্রোত কিছু বলতে যাবে তার আগেই কল কেটে গিয়েছে।স্রোত সাথে সাথে আবার চেষ্টা করলো কিন্তু এক মিষ্টি কন্ঠের রমনী বললো,
“আপনি যেই নম্বরে কল করেছেন তাতে এই মুহুর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন।”

স্রোত আর চেষ্টা করে নি।সে জানে লাভ হবে না।সে ওভাবেই থম মেরে বসে রইলো।তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।অনুভব করলো,গালের উপর দিয়ে তরল গড়িয়ে পড়ছে।

চলবে
[ছোট করে দেওয়ায় স্যরি।ঈদে কেমন ব্যস্ততায় যায়, তা আপনাদের অজানা নয়।আজকে বাসায় যাই নি।যেদিন যাবো ঐদিন দিতে পারবো না।]

সবাই পেজটি লাইক ফলো দিয়ে রাখুন 👉 Bindas Life

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here