#স্রোতস্বিনী
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
পর্ব ০৮
[বর্তমান]
স্রোত বাসায় ফিরে দেখে মামা-মামি,বাবা বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছে।পাশে তাদের বাড়ির পরিচারিকা সাহেলা বেগম আর মান্ধবীও আছে।স্রোতের উপস্থিতি টের পেয়ে উনারা এক পলক ওর দিকে তাকিয়ে আবার আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে যান।স্রোতের মামা তাকে আলোচনায় যোগ করতে বললে সে জানায়,তার এসব ভালো লাগে না আর ক্লান্ত লাগছে। তাই সে ফ্রেশ হতে রুমে চলে যায়।
একদম গোসল শেষে বের হয় স্রোত।মাথার চুল মুছতে মুছতে বারান্দায় চলে যায়।হঠাৎ তার চোখ যায় পাশের ভবনের ছাদে দু’টো শালিক পাখি একসাথে বসে আছে।স্রোতের কাছে ব্যাপারটা ভালো লাগে।তার মনে হলো পাখিগুলো গল্প করছে,সুখ-দুঃখের গল্প,জীবনের হিসেব-নিকেষ করতে ব্যস্ত তারা।হাতের টাওয়েলটা রেখে পাখিগুলোর দিকে মনোযোগী হয় সে।এই পাখিগুলোর জীবন কত সুন্দর,আকাশে ডানা মেলে উড়তে পারে,যেখানে ইচ্ছে সেখানে যেতে পারে,কেউ বাঁধা দেয় না,দল বেঁধে চলে, একে অপরের প্রতি পারস্পরিক সহমর্মিতা দেখায় যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে অ্যাল্ট্রুজম।এসব ভাবতে ভাবতেই স্রোত দেখলো একটা পাখি অপরটার দেহে ঠোঁট ছোঁয়াচ্ছে।স্রোত বুঝতে পারলো না ওরা কি একে অপরকে আদর করছে নাকি ঝগড়া করছে।আবার ভাবলো,ঝগড়া করলে তো দু’জনই একে অপরকে ঠোকর দিতো,কিন্তু এখানে তো একজনই ঠোঁট ছোঁয়াচ্ছে।আদর করছে বুঝতেই স্রোত আনমনেই হেঁসে উঠলো।নিরিবিলিতে দুজন জীবনসঙ্গি একে অপরের সাথে সময় কাটাচ্ছে,প্রেমিকপুরুষ মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, ইশশ কত মিষ্টি একটা মুহুর্ত!প্রেমিকপুরুষের কথা মাথায় আসতেই স্রোতের মস্তিষ্কে মেহরাদের চেহারা ভেসে উঠে।বিড়বিড়িয়ে আওড়ালো,
“মেহরাদ প্রেমিকপুরুষ?”
স্রোতের অচেতন মন মেহরাদকে প্রেমিকপুরুষরূপে ভাবতে চাইলেও গম্ভীর সত্তা কড়াভাবে নিষেধ জারি করলো,স্রোত বিয়ে করছিস এটাই অনেক,আর কিছু আশা করিস না,বেশি কিছু আশা করতে নেই,তোর মাকে দেখিস নি?
মায়ের কথা মনে আসতেই স্রোতের মনটা খারাপ হয়ে গেছে।মায়ের কত স্বপ্ন ছিলো তার বিয়ে নিয়ে।স্রোতের মনে পড়ে একবার কলেজে থাকতে সে তার মায়ের বিয়ের বেনারসী শাড়ি পড়েছিলো।তার মা তাকে দেখতেই হেঁসে কানের পেছনে নজর টিকা দিয়ে বলে উঠেন,
“মাশাআল্লাহ,আমার নজর না লাগুক। আমার মেয়েটাকে শুধু একটা বেনারসীতেই রাণীর মতো লাগছে না জানি বিয়ের দিন কোন অপ্সরা মাটিতে নেমে আসে।”
আনমনেই চোখের কোণ থেকে জল বেড়িয়ে আসে।কয়েকদিন পর তার বিয়ে অথচ তার মা আজ পৃথিবীতে নেই।
অন্যদিকে,মেহরাদ বাসায় যাওয়ার পর সোজা মায়ের রুমে গিয়ে শক্ত গলায় বলে,
“স্রোত রাজি হোক না বা না হোক বিয়েটা ঐদিনই হবে।”
বনলতা বেগম তখন বিছানায় বসে স্রোতকে দেওয়ার জন্য উনার গয়না,শাড়িগুলো দেখছিলেন।দৃষ্টি উঠিয়ে শোধালেন,
“স্রোত যে রাজি না তোকে কে বললো?”
মায়ের কথা শুনে মেহরাদ বোকা বনে গেলো,
“মানে?”
“স্রোত তো বিয়েতে রাজি,কাল দুপুরেই জানিয়েছে।”
মায়ের কথা শুনে মেহরাদের চক্ষু চড়কগাছ।
“তবে তুৃৃমি যে কাল আমাকে জানালে স্রোত রাজি না?”
এবার বনলতা বেগম হেসে ফেললেন,বললেন,
“স্রোত নিষেধ করেছিলো বলতে,কিন্তু তোর যা দেবদাস হাল দেখলাম একদিনেই,তাই আর না বলে থাকতে পারতাম না।”
বনলতা বেগম এখনো হেসেই চলেছেন,ছেলে তার এতোদিনপ কাউকে মন দিয়েছে।”ধ্যাত মা” বলে চলে যায় মেহরাদ।
মেহরাদের খারাপ লাগছে,শুধু শুধুই স্রোতের সাথে রাগ দেখিয়েছে কাল।আজকে আবার স্রোতের ভয়ের কথা জানলো।অনুতপ্ত সে,তার মনে হলো স্রোতকে স্যরি বলা উচিত,সাথে সাথেই কল লাগালো স্রোতকে।ফোনের শব্দে স্রোতের ধ্যান ভাঙ্গে,রুমে গিয়ে ফোন নিয়ে দেখে “মেজর সাহেব” নামটা স্ক্রিনে ভাসছে।সে রিসিভ করতেই মেহরাদ করুণ কন্ঠে বলে উঠলো,
“স্যরি স্রোতস্বিনী। আমি জানতাম না আপনি মাকে নিষেধ করেছেন।আমি অনেকগুলো স্যরি।আপনি রাজি না শুনে আমার কোথায় যেনো খুব কষ্ট হচ্ছিলো, বুকটা চিনচিন ব্যাথা করছিলো।তাই রাগ কন্ট্রোল করতে পারি নি।আর কখনো এমন করবো না।প্লিজ ফরগিভ মি স্রোতস্বিনী, আই প্রমিস আই উইল নেভার ডু দিস।” এক নিঃশ্বাসে বলা শেষ করলো মেহরাদ।
স্রোত হাসলো,সে মোটেও কাল রাতে কষ্ট পায় নি।সে তো মেহরাদের কেমন অনুভূতি হয় তা জানার জন্যই এমন করেছিলো।সে জেনেছে,অনেক কিছু জেনেছে আর বুঝেছে।
স্রোতকে চুপ থাকতে দেখে মেহরাদ করুণ কন্ঠে আবার বলে,
“স্রোতস্বিনী আমি স্যরি তো।কথা বলুন না স্রোতস্বিনী।এই দেখুন আমি কানে ধরেছি আর কখনো এমন করবো না। প্লিজ আমাকে ভুল বুঝবেন না।আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনি।”
বাচ্চাদের মতো অনুনয় করতে দেখে স্রোত নিঃশব্দে হাসলো,
“আমি মোটেও কষ্ট পাই নি।আপনি এমন করবেন না।”
“সত্যি তো?”
“হ্যাঁ”
“তিন সত্যি?”
স্রোত এবার জোরেই হেসে ফেললো,
“হ্যাঁ হ্যাঁ তিন সত্যি।আপনি পারেনও বটে।ওহ হো আমার হাসি থামতেই চাচ্ছে না।”
মেহরাদ এবার নিশ্চিন্ত হলো।বললো,
“আপনি হাসছেন স্রোতস্বিনী?আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো যখন থেকে বুঝেছি আমি ভুল করেছি।আমি আপনার দুর্বলতায় আঘাত করেছি ভাবতেই আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো।”
“আপনি জেনে বুঝে কিছু করেন নি।আজকে জেনেছেন আমার দুর্বলতা কোথায়,হোপ মাথায় রাখবেন।”
“অব কোর্স,আই উইল।বুক থেকে যেনো পাথর নেমে গেলো স্রোতস্বিনী।”
স্রোত চুপ করে রইলো।মেহরাদ আবার বললো,
” আপনি খুব খারাপ স্রোতস্বিনী।”
“কি করেছি?”
“আমাকে ভয় দেখিয়ে মেরে ফেলছিলেন তো।”
“কিসের ভয়?”
“আপনাকে হারানোর।”
কথাটা যেনো স্রোতের বুকের মধ্যিখানটায় লাগলো।তবুও বললো,
“পেয়েছিলেন কবে যে হারাবেন?”
“না পেয়ে হারানোর যন্ত্রণা ভয়ংকর স্রোতস্বিনী, খুব ভয়ংকর।”
“আমাকে না পেলে কি হতো?”
“হয়তো তেমন কিছু হতো না,আবার হয়তো অনেক বেশি কিছু হয়ে যেতো।”
“কি হতো?”
“নিজের শেষ,নিজের ধ্বংস কেইবা দেখতে চায় বলুন।”
“আপনি শেষ হয়ে যেতেন?”
“সম্পূর্ণভাবে।”
“বিশ্বাস করার মতো না।”
“কিন্তু আমার নিজের উপর নিজের বিশ্বাস সর্বোচ্চ।”
স্রোত থমকালো,কথা ঘুরাতে চাইলো,
“কি করছেন?”
“ভয় পেয়ে গেলেন?
” ভয় পাবো কেনো?”
“কথা ঘুরালেন যে?”
“এমনি।কি করছেন?”
“আপনাকে শুনছি।”
তারপর দু’জনই চুপ,একে অপরের নিঃশ্বাস ধ্বনি শুনছে।খানিকটা সময় পার হয়ে গেলেও কেউ কিছু বলছে না।মেহরাদ নিরবতা ভেঙ্গে ফেললো,দুষ্টুমি করে বললো,
“আপনি কি জাদু টোনা জানেন স্রোতোস্বিনী?”
হঠাৎ এমন কথায় স্রোত অবাক না হয়ে পারলো না।ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো,
“কেনো?”
” এই যে এখন আপনার প্রশ্বাস-নিঃশ্বাসের আওয়াজও আমার কাছে ভাল্লাগছে,শ্রুতিমধুর লাগছে।অ্যাজ লাইক,
কি যাদু করেছো বলোনা
ঘরে আর থাকা যে হলনা.
বুঝিনি কখন আমি হয়েছি তোমার
আজ দেখি তুমি ছাড়া নেই কিছু আর।”
স্রোত বলে উঠলো,
“পা গল লোক।”
“আপনার জন্যই।”
সাথে সাথে কল কেটে দিলো স্রোত,এই লোকটা তাকেপা গল করে দিলো।মেহরাদ হাসছে,কি ভয়টাই না পাইয়ে দিয়েছিলো মেয়েটা।মেয়েটা চুপচাপ থাকলেও ভেতরে ভেতরে ঠিকই শয় তানি।
পৃথিবীতে সূর্য তখন অস্তায়মান।এই সময়টায় কর্মব্যস্ত মানুষরা ঘরে ফেরে,নীড়ে ফেরে পাখিরাও।এই সময়টা হচ্ছে সন্ধ্যা।সন্ধ্যার সাথে যেন পাখিদের নিবিড় সখ্য। সন্ধ্যারাত্রি পাখিদের কানে কানে বলে দেয়, নীড়ে ফেরার সময় হলাে। বিদায়ী সূর্যের স্বর্ণরেখার পরশ ডানায় মেখে পাখিরা ফিরে চলে নীড়ে। প্রকৃতিতে নেমে আসে ছায়া সুনিবিড় প্রশান্তি। ধরণীকে এক অপূর্ব, অস্পষ্ট মায়ায় আচ্ছন্ন করে সন্ধ্যা নেমে আসে আকাশ-বাতাসজুড়ে। সন্ধ্যা শান্তিময়ী, নীরব,গম্ভীর। নিঃশব্দে সে ধরার আঁচল ভরিয়ে দেয় পরম মমতায়।কবি জীবনানন্দ দাশের ভাষায়-
“‘দিনের ক্লান্তির শেষে শিশিরের শব্দের মতাে সন্ধ্যা নামে”
তাই সন্ধ্যাকে মনে হয় খানিকটা বিষন্ন । এ বিষণ্ণতার গভীরে মানবমনও যেন বিষন্ন হয়ে পড়ে।তেমনি মেহরাদের মনকেও বিষন্নতারা ঘিরে ধরেছে।সে বুঝে উঠতে পারছে না কি করা উচিত।নামাজ শেষ হওয়ার পরপরই তার অফিস থেকে কল আসে।তার ছুটি পাঁচদিন কমানো হয়েছে,পাঁচ দিনের মাথায় তাকে উপস্থিত থাকতে হবে।সে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলেও কিছু হয় নি।মায়ের অসুস্থতার জন্য জরুরি অবস্থায় পঁচিশদিনের ছুটি নিয়েছিলো সে,পনেরোদিন তো শেষ।সে ভেবেছিলো,
বিয়ের দু’দিন পর চলে যাবে,এখন যে ছুটি পাঁচদিন কমে গেলো?আট দিন পর বিয়ে হওয়ার কথা।তাহলে কি বিয়ে হবে না?
#চলবে…..
[আসসালামু আলাইকুম সবাইকে। কেমন আছেন সবাই?
গত পর্বের শেষের অংশের পরের অংশটা হচ্ছে গল্পের শুরু অর্থাৎ ১ম পর্ব।এতদিন অতীত চলছিলো। অতীত মার্ক করা আছে।আপনারা যারা মন দিয়ে পড়েছেন,তারা বুঝেছেন হয়তো।ধন্যবাদ🧡আপনারা বোনাস পার্ট চাচ্ছিলেন তাই ছোট করে দিয়েছি।ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন,ধরিয়ে দিবেন]
পর্ব ১০
https://m.facebook.com/groups/2794654214007538/permalink/2929651440507814/?mibextid=Nif5oz
পর্ব ৯
https://m.facebook.com/groups/2794654214007538/permalink/2929063010566657/?mibextid=Nif5oz
পর্ব ৮
https://m.facebook.com/groups/2794654214007538/permalink/2928447507294874/?mibextid=Nif5oz
পর্ব ৭
https://m.facebook.com/groups/2794654214007538/permalink/2928237030649255/?mibextid=Nif5oz
পর্ব ৬
https://m.facebook.com/groups/2794654214007538/permalink/2927393364066955/?mibextid=Nif5oz
পর্ব ৫
https://m.facebook.com/groups/2794654214007538/permalink/2926608987478726/?mibextid=Nif5oz
পর্ব ৪
https://m.facebook.com/groups/2794654214007538/permalink/2925928897546735/?mibextid=Nif5oz
পর্ব ৩
https://m.facebook.com/groups/2794654214007538/permalink/2925756014230690/?mibextid=Nif5oz
পর্ব ২
https://m.facebook.com/groups/2794654214007538/permalink/2925365577603067/?mibextid=Nif5oz
পর্ব ১
https://m.facebook.com/groups/2794654214007538/permalink/2925296520943306/?mibextid=Nif5oz
সবাই জয়েন করুন গ্ৰুপে আর ফলো দিয়ে রাখুন যাতে পর্ব মিস না হয় 👉 Bindas Life