#আমার একটাই যে তুমি❤️
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
#পর্ব_১০
তার কথায় তাকিয়ে রইলাম আমি। আমি তার আপন মানুষ। কথাটি শুনে মনে আনন্দের রং লেগে গেল। ভাল লাগতে লাগলো!
ইউসুফ ভাইয়া আর আমার মাঝে কোনো কথা হলো না। চুপ চাপ খাইয়ে চলে গেলেন তিনি।পরেদিন সকালে ভার্সিটি যাবার জন্য বের হচ্ছিলাম তখনি ইউসুফ বাহির থেকে এসে হাজির পড়নে টাউজার আর স্লিভ হাতার গেঞ্জি। কানের ইয়ার ফোন পায়ে কেটস।ঘেমে একাকার।ঘামের জন্য ইউসুফ ভাইকে আরো সুন্দর লাগচ্ছে। ঘাম গুলো হাতে, বুকের লোম গুলো থেকে চুয়ে চুয়ে পরছে। ইসস্ কি দৃশ্য।চোক দুটো বেহায়ার মতো তার সেই বুকের দিক যাচ্ছে।কত বেশরম হয়েছি আমি ছিঃ। আমাকে দেখে ভ্রু কুচকালেন। কানের ইয়ার ফোন খুলতে খুলতে প্রশ্ন করলেন,,
–“কোথায় যাচ্ছিস??”
আমি মাথা নত করে বললাম,,
–” কলেজে!”
তিনি আমার সামনে এসে হাত দুটো আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে বললেন,,
–“মাথা নত করে আছিস কেন? আমার দিক তাকিয়ে বল! যাদের মনে চোর থাকে তারাই মাথা নিচু করে কথা বলে! ”
আমি সঙ্গে তাকালাম তার দিক। তিনি সোফায় বসলেন। জুতা খুলতে খুলতে বললেন,,
–” গুড! এবার রুমে যা!”
আমি সাথে সাথে বললাম,,
–” ভাইয়া আমার যেতে হবে। কলেজে পরিক্ষা আজ!”
ভাইয়া আমার দিক তাকালেন। শীতল তার চাহনী। তার চাহনী দেখে ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেল। মনে হচ্ছে হি ইট মি! আমি এক ঢোক গিলে ভিতরে চলে আসলাম।বুকে থু থু দিতে লাগলাম। এই লোকের খনে খনে বদলানো রূপ আছে মারাত্মক। দিনে এক রাতে আরেক।বহুরূপী মানুষ।কবে না আমার জান নিয়ে নেয়!রুমে এসে বসতে না বসতেই কাজের মেয়ে রূপালী এসে হাজির। এসেই হাপাতে হাপাতে বলল,,
–” আপামনি ভাইয়া ডাকেন! আর আপনার ফোন নিয়ে যাইতে কইছেন তার রুমে!”
রূপালীর কথায় চমকালাম। ফোন কেন নিতে বললেন? আর হঠাৎ ডাকছেন বা কেন?? এসব ভাবার মাঝেই তারা দিয়ে বলল রূপালী,,
–“আপামনি স্যার ৫ মিনিট সময় দিছে। না গেলে খবর আছে!”
আমি কি করবো বুঝতে পাড়ছি না। ফোন নেয়া প্রশ্নই আসে না। কত পারসোনাল জিনিস থাকে ফোনে! তা নেয়া যাবে না। তাই ফোনটা ওফ করে দিলাম। চার্জে বসিয়ে বললাম রূপালীকে,,
–“আমার ফোনে চার্জ নেই! কিভাবে নিবো? ”
–“আইছা তাইলে এমনেই চলেন!”
আমি যেতে লাগলাম পিছন থেকে রূপালী গায়েব। আমি দোয়া পড়তে পড়তে ভাইয়ার রুমের সামনে এসে নক করবো ঠিক তখনি ভিতর থেকে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো ইউসুফ,,
–” ভিতরে আয়!”
প্রতিবারের মতো আজও অবাক কেমনে বুঝে গেল যে আমি! আমি ভিতরে গেলাম। তিনি আমার সামনে সোফায় বসে পায়ের উপর পা তুলে!আমার দিকে তাকিয়ে আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলালেন তিনি। আড় চোখে সব দেখতে পেলাম আমি। আমি হাত মুচড়াচ্ছি। তিনি কনুইতে ভর দিয়ে তার মুখ হাতে রাখেলেন আর আঙ্গুল দিয়ে তার ঠোঁট বোলাতে লাগলেন।আমার অস্বস্তি লাগতে লাগলো। এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর নিরবতা ভেঙ্গে আমি জিগ্যেস করলাম কাঁপা কাঁপা কন্ঠে,,
–” ড….ডেকেছিলেন? ”
–“হুম!”
–“ক..কেন!”
–” কাঁপছিস কেন তুই! আমাকে দেখে ভয় লাগচ্ছে? বাট হোয়াই? ”
তার কথায় আমার কাঁপনি কমলেনা বৈ বাড়লো। সাথে কঁপালে জমা হলো বিন্দু বিন্দু ঘাম! তিনি এবার উঠে আসলেন দ্রুত। তার এভাবে দ্রুত এগিয়ে আসাতে পিছিয়ে গেলাম আমি দু কদম। তিনি আরো এগিয়ে এলেন।আমি আবার পিছিয়ে গেলাম। ভয়ে কলিজার পানি শুকিয়ে কাঠ! তিনি আবার এগিয়ে এলেন! আমি পিছতে যাবো সাথে সাথে দমকে উঠলেন তিনি!
–” আর এক পিছুবি না! সোজা দাড়িয়ে থাক! নয়তো জালানা দিয়ে এক ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব তোকে!”
আমি সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেলাম। ভয়ে আমার জান পাখি যায় যায়! এ কি বিপদে পড়লাম আজ। উনি বা কেন করছে এমন!আচ্ছা উনি কি আমাকে মেরে ফেলার ফন্দি আটেনি তো??কিন্তু মারবে কেন? তার কোন বাড়া ভাতে ছাঁই দিছি আমি! আর আমি কেন ভয় পাচ্ছি আজ! তিনি কি কিছু বুঝে গেছেন??
তিনি আমার সামনে দাঁড়ালেন দুজনের মাঝে ২, ৩ ইঞ্চি ফাঁকা। তার প্রতিটা শ্বাস প্রশাসের শব্দ মুনতে আর অনুভব করতে পাড়চ্ছি!তখনি তিনি বললেন,,
–” ফোন কই তোর?”
আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললাম,,
–” চার্জ নেই! চার্জে দিছি!”
তিনি চুপ রইলেন কিছুক্ষণ! তার আবার বললেন,,
–” এদিক ওদিক কি দেখিস? আমি তোর সামনে নাকি? আমার দিকে তাকা!”
আমার এবার কেঁদে দেয়ার উপক্রম। এই লোক যে আমায় ধরে ফেলেছে বুঝতে বাকি নেই আমার! তিনি আমায় আবার ধমকে উঠলেন! সাথে সাথে তাকালাম তার দিক! তিনি আমার দিক ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে!তখনি তিনি আমার দিক তাকিয়ে ডাক দিলেন রূপালীকে! রূপালী হাজির সাথে সাথে। অামার দিক তাকিয়েই রূপালীকে বলল,,
–” তোর আপামনির ফোনটা নিয়ে আয় এখনি লেট করবি না! যাহ্!
রূপালী মাথা দুলিয়ে চলে গেল। আর এদিকে পিলে চমকে গেছে আমার। কি জানি হয় এসব ভাতে ভাবতেই ফোন নিয়ে এলো রূপালী। ইউসুফ ভাইয়া হাতে নিলেন। তারপর পাশ চাইলেন ফোনে। কিন্তু মুখে তালা দিয়ে বসে আমি।তখনি তিনি ধমকে বললেন,,
–” পাশ বল নয়তো ফোন পাবি না আর”!
আমি এবার সত্যি কেঁদে দিলাম। ভ্যা ভ্যা করে। আমার কান্না দেখে থতমত খেয়ে গেলেন তিনি! হয়তো ভাবেনি এমন কিছু করে বসবো আমি।সাথে সাথে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন আমার কান্না থামাতে। কিন্তু আমি তো আমি! ইচ্ছে করেই আরো জোরে কান্না করতে লাগলাম।আমার কান্নার বেগে বৃষ্টি বিলাসের সকল সদস্য হাজির। এসেই এক গাদা বকা দিয়ে দিলেন তাকে। সেই সুযোগে ফোন হাতিয়ে নিলাম আমি। আর ছুটে পালালাম রুমের দিক। আমার এমন কান্ডে যেন বাড়ির সবাই অবাক হয়ে থম মেরে গেলেন।আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে নিজের জান নিয়ে পালিয়েছি। এসেই এক গাদা শুকড়িয়া করলাম আল্লাহ তালার কাছে! এই যাত্রায় সত্যি বেঁচে গেছি?..!😍 মনে মনে এটাও দোয়া করলাম যেন হেদায়ত দেক এই সাইকো ছাগলকে!! আল্লাহ!!! তুমি মহান😘😘।
চলবে,