#স্রোতস্বিনী
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
পর্ব ১৩ (১৮+ এলার্ট)
বউ বাড়ির দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে,বধূবরণ হবে এখন।বনলতা বেগমের খুশি দেখে কে!উনার মুখে একটাই কথা,”আমার আরেক মেয়ে বাড়ি চলে এসেছে।”বধূবরণে যেসব নিয়ম কানুন আছে সব শেষ করে বনলতা বেগম স্রোতকে জড়িয়ে ধরে।তারপর স্রোতকে নিজে হাতে ধরে বাড়িতে প্রবেশ করান।উনি খুশিতে আত্মহারা। স্রোতকে বলেন,
“এখন আমার বাড়িটা পূর্ণ হলো।আমার আর আমার বাড়ির অপেক্ষার সমাপ্তি।
রাত দশটা।স্রোত মেহরাদের ঘরে বসে আছে।তাকে সবাই এখানে নিয়ে এসে বসিয়ে রেখেছিলো।একটু আগে বনলতা বেগম এসে সবাইকে ধমকে বাহিরে পাঠিয়ে দেন এই বলে যে,মেয়েটা এখন ফ্রেশ হবে তোরা ওকে ডিস্টার্ব করিস না ।সবাই বেড়িয়ে যাওয়ার পর স্রোতের অস্বস্তি কিছুটা কমে।সে ভালো করে মেহরাদের রুমটা পর্যবেক্ষণ করছে।এক পাশের দেয়ালে ইউনিফর্ম পড়া অনেক ছবি সাথে বাবা-মা,বোনের ছবি।দেয়ালের এই পাশটা যেনো ফটো গ্যালারি।রুম দেখে স্রোত এতটুকু বুঝেছে যে মেহরাদ অনেক শৌখিন আর গোছালো।এর মধ্যেই মেহরাদ রুমের দরজায় নক্ করে বলে,
” আসবো?”
“আপনার ঘর,আপনি অনুমতি চাচ্ছেন?”
“আগে আমার ছিলো,এখন আমাদের।তাই অনুমতি নিলাম।” রুমে প্রবেশ করতে করতে হেঁসে বলে মেহরাদ।মেহরাদ দেখে স্রোত এখনো সেই বধূ বেশেই আছেই।সে উদ্বিগ্ন হয়ে বলে উঠলো,
“আপনি এখনো ফ্রেশ হননি কেনো?অস্বস্তি হচ্ছে না এতো ভারী সাজ-পোশাকে?”
“আসলে সবাই এখানেই ছিলো,তাই।”
“যান ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে নিন।”
স্রোত ফ্রেশ হওয়ার জন্য নিজের ব্যাগ খুলতে যাবে তখনই মেহরাদ একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে অনুরোধ করে বলে,
“এটা পড়বেন এখন প্লিজ?”
স্রোত প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকালে মেহরাদ আবার বলে,
“খুলেই দেখুন”
স্রোত প্যাকেটটা নিয়ে খুলতে শুরু করে।প্যাকেটটা খুলে সে অবাক হয়ে যায়।এটা তো সেই সাদা শাড়ীটা যেইটা বিয়ের শাড়ী কেনার সময় ছিলো।স্রোত বুঝতে পারলো এটা কেনাই ছিলো ঐদিন মেহরাদের কাজ।সে মেহরাদের দিকে তাকালে মেহরাদ বলে,
“সাদা রঙটা আপনাকে অনেক মানায় স্রোতস্বিনী। শুভ্রতার আবরণে আপনি যেনো এক স্নিগ্ধতার রাজ্যের শুভ্র রাণী হয়ে যান।আমি আপনার শুভ্রতার ছায়া হয়ে থাকতে চাই।”
স্রোত চুপ করে রইলো।মেহরাদ বললো,
“আপনি ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে নিন,আমি আসছি।
বলে মেহরাদ চলে যায়।
স্রোত শাড়ীটার দিকে তাকিয়ে থাকে আর ভাবতে থাকে আসলেই সাদা রঙ তাকে এতোটা মানায়?
স্রোত একদম গোসল সেরে বের হয়।এখন একটু হালকা লাগছে।মেহরাদ রুমে নেই।স্রোতের কেমন জানি লাগছে একটু একটু ভয়ও করছে,নতুন ঘর,নতুন পরিবেশ। মেহরাদের সাথে সে আজকে এক রুমে থাকবে ভাবতেই অন্যরকম শিহরণ জাগছে।সে এসবে পাত্তা না দিয়ে বারান্দায় চলে যায়।তার পড়নে মেহরাদের দেওয়া সাদা শাড়ী।সদ্য গোসল করে আসা রমণীর ভেজা চুলগুলো পিঠের উপর কোমড় অব্ধি ছড়িয়ে দেওয়া।
আজকে পূর্ণিমা।পূর্ণিমা রাতে পৃথিবীর জলে-স্থলে নেমে আসে সুন্দরের দেবতা। মানুষের মনকে চন্দ্রগ্রস্ত করে দিয়ে এক মায়াময় মােহ রচনা করে রাতের চাঁদ। না আলাে না আঁধার – এমন এক রহস্যের মায়াজালে মানবমনকে বন্দি করতে পারে কেবল চাদনি রাত।
স্রোত চন্দ্রবিলাসে মত্ত।রুম থেকে টুকটাক আওয়াজ আসছে।মেহরাদ রুমে এসে বুঝলেও মাথায় ঘামায় না স্রোত।সে আকাশ দেখতে ব্যস্ত।হঠাৎ সে অনুভব করে তাকে দুটো হাত বন্দী করে ফেলছে।হাতে এক গুচ্ছ শুভ্র গোলাপ।স্রোত বুঝতে পারে এই ফুল আনতেই মেহরাদ তখন বেরিয়ে গেছিলো।মেহরাদের চুল থেকে পানির ফোঁটা স্রোতের ঘাড়ে পড়তেই স্রোত শিউরে উঠলো।মেহরাদ আদুরে স্বরে বলে উঠলো,
“আপনি আমাকে ছাড়াই চন্দ্রবিলাসে মত্ত হয়েছেন স্রোতস্বিনী? এটা কিন্তু অন্যায়,ঘোর অন্যায়।”
স্রোত তার স্ব-খোলসে আবদ্ধ।এবার মেহরাদ স্রোতকে ঘুরিয়ে নিজের সামনে দাড় করিয়ে ফুলগুলো দিয়ে বলে,
“আমার স্নিগ্ধতার রাজ্যের শুভ্র রাণী স্রোতস্বিনী, আপনাকে শুভ্র গোলাপগুচ্ছ ছাড়া অসম্পূর্ণ লাগছিলো।গোলাপগুচ্ছ গ্রহণ করে নিজেকে সম্পূর্ণ করুন।”
স্রোত ফুলগুলো গ্রহণ করে। সে মেহরাদকে যত দেখছে ততই মুগ্ধ হচ্ছে।সে আবার মেহরাদকে পিছ দিয়ে রেলিং এ হাত রেখে ফুল গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে।মেহরাদও তার পাশে দাড়ায়।তারা চুপ,সময় চুপ,প্রকৃতি চুপ।এভাবে অনেকটা সময় পার হয়।স্রোত নিরবতা ভেঙ্গে শান্ত স্বরে বলে,
আপনি যদি কখনো আমার সুখ নাও হতে পারেন,তবুও কখনো দুঃখ হবেন না।আমি গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপ সহ্য করতে পারলেও খরা সহ্য করতে পারবো না।”
মেহরাদ এতোক্ষণ স্রোতকেই দেখছিলো।সে স্রোতের দু’কাধের উপর নিজের হাত রেখে স্রোতকে নিজের দিকে ঘুরায়।স্রোত মেহরাদের চোখের দিকে তাকিয়ে।এভাবেই মেহরাদ বলে উঠে,
“আপনি আমার কাছে দখিনা বাতাসের মতো আসা এক উপহার বসন্তের,যে আমায় প্রশান্তি দেয়।তাকে আমি শীতের রিক্ততা দিই কি করে?
আপনি আমার কাছে রাতের আকাশের এক ফালি চাঁদ, যে আমায় আলোকিত করে।তাকে অমাবস্যা দেওয়ার সাদ্ধ কি আছে আমার?”
স্রোত অনিমেষ চেয়ে রইলো ঐ ধূসর বর্ণের চোখ গুলোর দিকে।এই চোখে কি আছে?সে না চাইতেও হারিয়ে যায় কেনো?কেনো সামলে রাখা যায় না নিজেকে?ধূসর বর্ণের চোখগুলোতে ধীরে ধীরে ঘোর লেগে যায়।মেহরাদ প্রথমে স্রোতের কপালে অধর ছোয়ায়,তারপর দু’চোখে।আবেশে স্রোত চোখ বন্ধ করে ফেলে,তার ঠোঁটগুলো কাঁপছে।এই প্রথম কোনো পুরুষের এতো কাছে সে।এই ছোঁয়ায় না আছে উন্মত্ততা, না আছে কামনা,শুধু আছে প্রমত্তময় ভালোবাসা।
মেহরাদ স্রোতের মুখটা নিজের দু’হাতে আগলে নিয়ে নে শা ক্ত কন্ঠে বলে,
“ওপেন ইউর আইস্ স্রোতস্বিনী।আই ওয়ানা সি মাইসেল্ফ ইন ইউর আইস্।আমি নিজেকে তোমার চোখে দেখতে চাই।আই হ্যাভ ডাইড এভ্রিডে ওয়েটিং ফর ইউ স্রোতস্বিনী। প্লিজ ওপেন ইউর আইস্”
স্রোত চোখ খুলে।সেই দৃষ্টিতে যেনো প্রমত্ততা,উন্মত্ততা, ভালোবাসা সবই আছে।উন্মত্ত দৃষ্টি, তিরতির করে কাঁপতে থাকা ঠোঁট মেহরাদের ঘোর লাগিয়ে দেয়।যতই হোক,সামনে প্রিয় নারী।মেহরাদ একটা ভুল করে ফেলে,সে স্রোতের অধরে অধর ডুবিয়ে দেয়।অনেক্ষণ পরে যখন বুঝতে পারে মারাত্নক এক ভুল করে ফেলেছে,সে ছিটকে দূরে সরে যায়। মাথা নত করে অপরাধী স্বরে বলে,
“স্যরি স্রোতস্বিনী, আই অ্যাম এক্সট্রেমলি স্যরি।আই হ্যাড নো ইনটেনশন।আই রিয়েলি কুড নট রিয়েলাইজ। আই শুড কন্ট্রোল মাই সেল্প,বাট আই কুড নট।আই অ্যাম রিয়েলি ভেরি ভে..”
আর কিছু বলতে পারলো না মেহরাদ,স্রোত বলতে দিলো না।মেহরাদের অপরাধী চেহারা, মাথা নত করা যেনো স্রোত মানতে পারলো না,একদম না।সে মেহরাদের দিকে এগিয়ে যায়,মেহরাদের পায়ের উপর ভর দিয়ে মেহরাদকে চুপ করিয়ে দেয়।মেহরাদ প্রথমে অবাক হলেও,একপর্যায়ে স্রোতের বাধ্যতা স্বীকার করে।অনেক্ষণ পর স্রোত ছেড়ে দেয় মেহরাদকে।মেহরাদের দিকে পিঠ দিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। সে হাঁপাচ্ছে, বুকে হাত দিয়ে শ্বাস নিচ্ছে। মেহরাদ এগিয়ে গেলো স্রোতের দিকে,স্রোতের আঁচল গলিয়ে নিজের দু’হাতের বিচরণ চালাচ্ছে,স্রোতের ঘাড়ে থুতনি রেখে বলে,
“তুমি আজ শেষ,স্রোত।”
স্রোতকে কোলে তুলে নেয় মেহরাদ।রুমের ভেতরে নিয়ে যেতে যেতে বলে,
“সর্বগ্রাসী বিনাশীনি স্রোতস্বিনী, আমার বিনাশ তো কবেই করে ফেলেছো,এখন নিজের বিনাশের জন্য আমাকে প্রশ্রয় দিচ্ছো,পরে কিন্তু আমাকে দোষ দিও না।”
ফুলেগুলো অনাদরে,অবহেলায় বারান্দাতেই পড়ে রইলো।
স্রোত এক দৃষ্টিতে মেহরাদের পানে চেয়ে আছে।মেহরাদ তাকে বিছানায় শুইয়ে দিলো।তারপর আচমকা ঘর অন্ধকার হয়ে যায়।স্রোত অন্ধকার ভয় পায়।অনেক্ষণ মেহরাদের সাড়াশব্দ না পেয়ে স্রোত ভয় পেয়ে থেমে থেমে ডাকতে লাগলো,
“মেহরাদ…”
“আমি অন্ধকার ভয় পাই,মেহরাদ।”
সুনসান নিরবতায় ঘেরা অন্ধকার রুমটায় মেহরাদের টু শব্দটুকু আর পাওয়া গেলো না।স্রোত ভীত হয়ে বলতে লাগলো,
“হঠাৎ অন্ধকার হয়ে গেলো কেনো?আলো কোথায়?”
হঠাৎ নিজের পাশে কারো অস্তিত্ব টের পায় স্রোত।ঠান্ডা হাতে র স্পর্শে শিউরে উঠে সে।মানব স্রোতের পিঠ জুড়ে ছড়ানো চুলগুলোকে একপাশে করে ঘাড়ে,কাধে গরম নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে কানের কাছে গিয়ে মা দ ক তা মেশানো স্বরে বলে উঠে,
“এই যে আমি আলো।”
#চলবে…..
[আসসালামু আলাইকুম সবাইকে!লাস্ট লাইনটা প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী আপুর প্রিয় বেগম থেকে নেওয়া।লাইনটা ছিল, “এই তো আমি আলো”।আপুর পারমিশনও নিয়েছি।লাস্ট ২/৩ দিন যাবৎ অনেক ভেবেছি অনেক,,কিন্তু এই লাইন ছাড়া মিলছিলোই না।অন্যভাবেও লিখেছিলাম,যা গল্পের সাথে মানাচ্ছিলো না তাই পুরোটা কে টে আবার লিখেছি।সমালোচনায় জড়াতে চাই না।চাইনা বাস্তবের মতো আমার কল্পনাতেও বাঁধা পড়ুক,ধন্যবাদ।হ্যাপি রিডিং]