আমার_একটাই_যে_তুই❤️ #সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি #পর্ব_২১

0
269

#আমার_একটাই_যে_তুই❤️
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
#পর্ব_২১

পূর্ণিমা রাত!
চাঁদের আলো ঘরের ভিতর প্রবেশ করছে, সাথে স্ব স্ব বাতাসে দক্ষিণার পাশের জানালার পাতলা পর্দা উলোট পালোট হয়ে উড়চ্ছে! হারিকেনে জালানো টিমটিমে আলো জ্বল জ্বল করছে! আলোর আলোড়ন পড়চ্ছে পুরো ঘর জুড়ে! ইউসুফ ভাইয়া নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছি। চোখে তার মোহনীয় চাহনি।এই চাহনি যেন আমাকে হাজার কিছু বলে যাচ্ছে নিস্তব্ধে। আমি স্থীর দাঁড়িয়ে তার দিকে। নড়ার শক্তিটুকু যে নেই আমার!!তখনবুড়ি আমাকে ঠেলে ঠুলে ভিতরে ঢুকিয়ে দিতেই দেখি উল্টো পিঠ করে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছেন। স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম।কিন্তু তা বেশীক্ষনের জন্য স্থায়ী রইলো না। কারণ আমার ভিতরের আসার শব্দে তিনি কথা বলতে বলতে পিছে তাকালেন! আমাকে দেখে যেন স্তব্ধ হয়ে গেলেন। মুখে ওপার প্রানতে থাকা মানুষটিকে বললেন,,

–“কল ইউ লেটার! ”

সেই তখন থেকেই তিনি তাকিয়ে ছিলেন আমার দিকে! এবার ধীমি পায়ে এগিয়ে আসতেই আমি সরে যেতে নি তখনি চেচিয়ে বললেন,

–“ডোন্ট মুভ! বাবুইপাখি! বলছি না নড়বি না তুই!”

তার এভাবে চেঁচিয়ে উঠাতে ভয় পেয়ে গেলাম।নড়বার আর সাহস হলো না। তিনি ঠিক আমার বরাবর এসে দাঁড়ালেন! একদম কাছে! এতটা কাছে যে একে ওপরের শ্বাস প্রশ্বাস পড়চ্ছে একে অপরের উপরে! উনি আমার মুখে তার দু হাত রাখলেন। মুখে তার মৃদু হাসি! সেই হাসির রেশ আরো ঢেলে স্লো ভয়েসে বললেন,,

–” বাবুইপাখি! তোরে বউ বউ লাগচ্ছে!”

আমি লজ্জা পেয়ে মাথা নত করে ফেললাম। তিনি আমার মুখ আবার উঁচু করে হেসে বললেন,,

–” আমার বউ মনে হচ্ছে তোকে! ”

আমি “আমার বউ শুনতেই চকিতে তাকালাম তার দিক! আমি কি আঁদ ঠিক শুনচ্ছি! আচ্ছা তিনি কি আমাকে প্রপোজ করলেন! তাই বুঝতে চেষ্ট করছি তার মুখ মণ্ডল দেকে।তিনি হাসচ্ছেন মিটমিটিয়ে!হয়তো আমার ছোট মাথায় এলো মেলো প্রশ্নের আন্দাজ করতে পেরেছেন! তিনি এবার আমার আরো কাছে এসে আমার কঁপালে কঁপাল ঠেকিয়ে বললেন,,

–” ঠিক শুনেছিস বাবুইপাখি! তোকে আমার বউ বউ লাগচ্ছে! মাই বেটার হাফ!

আমি তার কথায় অবাক! এতটাই যে কি বলবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা। শুধু ভিতর থেকে ঠেলে ঠুলে কান্নার দমক আসচ্ছে! যা আটকে রাখতে পারেনি আমার নয়নমনি। বন্যা ভাসিয়ে দিলো সাথে সাথে।একি সত্যি শুনচ্ছি আমি! আমার একতরফা ভালবাসা সত্যি তার পূর্ণতা পেতে চলেছে! আমার যে খুশি লাগচ্ছে! এতটাই খুশি আমি! যে ইউসুফ ভাইকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলাম। ইউসুফ ভাইও হকচকিয়ে গিয়ে আমাকে সামলে সামলে বললেন,,

–” কি হয়েছে! বাবুইপাখি! কান্না করছিস কেন? কেন আমায়! আচ্ছা এখানে বস! এবার বল কি হয়েছে বল আমায়! কেন কাঁদচ্ছি বাবুইপাখি?”

ইউসুফ ভাইয়া আমাকে খাটের কোনে বসিয়ে আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে কথা গুলো বলতে লাগেন! আমি তো কান্না করে চলেছি! আমাকে থামতে না দেখে ধমকে উঠলেন তিনি! সাথে সাথে বন্ধ আমার! তিনি তখন আবার বললেন,,

–” বল এবার কানছো কেন?”

আমি কান্না থামিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,,

–” বাই এনি চান্স আপনি কি আমাকে প্রপোজ করেছেন!

ইউসুফ ভাই তখন হো হো করে হেসে উঠে এসে ধপ করে আমার পাশে বসে বলতে লাগেন,,

–” না বাবুইপাখি। বাই এনি চান্স না আমি ডিরেক্টলি তোমাকে প্রপোজ করেছি । পাগলী আমার। বলে গাল টিপে দিয়ে আবার হেসে দিলেন!”

এবার লজ্জা জেকে বসেছিল শতভাগ। লজ্জায় গাল দুটি লাল হয়ে গেল আমার। ইউসুফ তখন হাসি থামিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন,,

–“তুমি কি জানো! বাবুইপাখি? আজ কতটা পাগল করে দিচ্ছো আমাকে! নিজেকে কন্ট্রোল করতে কষ্ট হচ্ছে যে!”

তার এমন কথায় কান গরম হয়ে গেল আমার। কি বলছেন তিনি এসব! বুকটা যে এখন দুরু দুরু করছে! আমি নার্ভাস হয়ে পড়ছি। যার ফলে হাত মুচড়াচ্ছি! আড় চোখে ইউসুফ ভাইকে দেখলাম।খুব কাছে তিনি আমার। নেশাকাতর চাহনীতে তাকিয়ে তিনি! আমি সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলাম।উনি আমার আরো কাছে এসে হাতের উপর হাত রেখে কানের মাঝে ফিস ফিস করে বললেন,,

–“বাবুইপাখি! এই অবাধ্য মন তোমাকে কাছে পেতে চাইছে! খুব কাছে! নিজের সাথে লেপ্টে নিতে চাইছে! আই নিড ইউ! আই নিড ইউ ডিপলি!”

বলে মুখ গুজে দিলেন আমার ঘাড়ে!এদিকে তার হঠাৎ এমন আক্রমণে শক্ড আমি! সারা শরীরে কারেন্ট খেল গেল যেন আমার। সাথে সাথে সরে আসতে নিতেই তিনি আমার হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে নিজের সাথে লেপ্টে নিলেন। আর গলায় মুখ গুজতেই আমার মুখ দিয়তেই “আহ্” করে আর্তনাদ করে উঠি। সঙ্গে সঙ্গে হন্তদন্ত হয়ে জিগ্যেস করে উঠলেন,,

–“কি হয়েছে বাবুইপাখি! এভাবে চিতকার করলে কেন? ব্যাথা পাইছো? দেখি কোথায়! একি গলায় এটা কিসের ক্ষত বাবুইপাখি! এতটা চোট কিভাবে পেলে!”

লাষ্ট কথা গুলো গম্ভীর শুনালো তার!কিন্তু তাকে কিভাবে বলি এটা কিসের চোট! তাহলেতো লিয়াকে না মেরেই ফেলেন!তাই শুকনো ঢোক গিলে হাসার চেষ্টা করে বললাম,,

–“তততখন পপপাহড় থেকে পপড়ে গেছিলাম না। ততখন ব্যথা পাইচ্ছি!”

ইউসুফ ভাই তখন তাকালেন আমার দিক পূর্ণ দৃষ্টিতে। শীতল সেই চাহনী! দেখেই শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেল আমার! তাই আবার সাফাই দিতে বললাম,,

–“স…সত্যি! সত্যি বলছি!”

–“মিথ্যা কেন বলছিস! এটি আজকের চোট না! ১/২ দিন আগের। সত্যি বল কারণ কাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তোর গলায় কোনো চোট ছিল না! ইনফ্যাক্ট ক্যাম্প ফায়ারের পরও ছিল না! কিন্তু সকাল থেকে তুই বন্ধ গলার ড্রেস পরে ঘুড়ে বেড়াচ্ছিস।এ জন্যই তো?? “চোখ মুখ শক্ত করে ঠান্ডা গলায় বললেন!”

–“ওহো হে! ভ…ভুলে গেছিলাম! স..ত্যি মাথা থেকে চলে গেছিলো! কাল ক্যাম্প ফায়ার পর ঘুমাতে যাওয়ার সময় টয়লেটে পড়ে গেছিলাম!” আমতা আমতা করে বললাম।

ইউসুফ ভাইয়া তখন আপনি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ধমকে বললেন,,

–“আবার মিথ্যে বলছিস তুই! দেখেই বুঝা যাচ্ছে কেও তোর গলায় ধরালো কিছু দিয়ে চট দিয়েছে! আর আমাকে মিথ্যা বলছিস??”

আমি এবার চুপ রইলাম! তাতে যেন তার রাগ বাড়লো। আমাকে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল,,

–” কি হলো! মুখে তালা দিছিস তুই! নাকি বোবা হয়ে গেছিস কথা বল বেদ্দপ মেয়ে!”

আমি ভয়ে কেঁদে দিলাম হু হু করে। তাতে তিনি তেতে উঠলেন আরো বেশী! আমার গাল টিপে ধরে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,,

–” মুখ খুলচ্ছিস না কেন? হুম! কেন রাগাচ্ছিস আমায়! সত্যি বল! নয়তো তোকে এখন সেই জঙ্গলে ফেলে চলে আসবো! আমি জানতে চাইছি কুহু! তে এমন করেছে!কে আমার বউয়ের গায়ে হাত দিচ্ছে! টেল মি ডেম ইট!” লাষ্ট কথাটা খুব জোড়েই বলল।

যাতে আমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো!আমি ভয়ে মুখ তখনো না খুলতে দেখে ইউসুফ ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,,

–” বুঝতে পেড়েছি! কার এত বড় স্পর্ধা! যে আমার বাবুইপাখিকে টার্চ করেছে! ওর এমন হাল করবো! যে নিজকে চিন্তেই ভয় পাবে ও! আর তুই! একদম ামার সামনে আসবি না। একদম না।”

বলে রুমে থাকা অ্যাটাচ ব্যালকনিতে চলে গেলেন। এদিকে খাটে দপ করে বসে কান্না করতে লাগলাম আমি! এ জন্যই তো বলি নি কাউকে! কিন্তু আমার যে খেয়ালী ছিল না এটির কথা নয়তো লুকতে পারতাম। আমি চাই না আর ঝামেলা হোক। আমার জন্য উনাদের ফ্যামিলিতে আর ঝামেলা হোক! কিন্তু না চাইতে তাই হলো! যেটা ভয় পেয়ে ছিলাম আমি!

______________________________________________

কিছুক্ষন আগে বুড়ি এসে খাবার দিয়ে গেলেন। ইউসুফ ভাই তখনো ব্যালকনিতে! ডাকবো কি ডাকবো না সাহস পাচ্ছি না। কিন্তু তার নির্ঘাত খুদা পাইছে! আমার তো পেটে ইদুর দৌঁড়াচ্ছে। কি করি? এসব দিধা দন্ড ভুলে এক রাশ সাহস জুগিয়ে গেলাম তার কাছে। তিনি পা দুটো টেবিলে মেলে চোখে উপর এক হাত দিয়ে চেয়ারে হেলে বসে আছেন! আমি ভয়ে ভয় ডাক দিলাম,,

–“ভাইয়া! ইউসুফ ভাইয়া! শুনচ্ছেন?”

তিনি সাথে সাথে চোখ মেলে তাকালেন। তার চোখ দেখে চমকে উঠলাম। রক্তের মতো লাল হয়ে আছে। ভয় লাগচ্ছে খুব তাও মিনমিন করে বললাম,,

–“বুড়ি খাবার দিয়ে গেছে! আসুন খাবেন!”

তিনি অাবার চোখ দুটে বুজে বললেন,,

–“খাবো না!”

আমি একটু সাহস পেলাম। তাই বললাম,,

–” কেন খাবেন না চলুন খাবেন!”

এবার আর ইউসুফ ভাইয়ার কোনো নাড়া পাওয়া গেল না!চুপ সে! আমি সাহস করে এবার হাত ধরে টান দিতেই তিনি খেঁকিয়ে উঠলেন,,

–” বলছি না খাবো না! কথা কানে যায় না তোর! যা ভাগ এখান থেকে!”

এবার রাগ উঠলো আমার! কি করছি আমি রাগ কেন দেখচ্ছে হুদাই আমার উপর! হোয়াই! আমার কি রাগ নেই! হুম আমি কম কিসে! আমিও নাছড় বান্দা তাকে তাই ধুম করে তার কোলে বসে পড়লাম আমি! তা দেখে তিনি অবাক হয়ে বললেন,,

–“তোর সাহস তো কম না! তুই আমার অনুমিত ছাড়া কোলে বসিস! উঠ! জলদি উঠ!”

–“উঠবো না!”

–“উঠ”

–“বললাম না উঠবো না! কি করবেন করুন! হুহ্ ভয় পাই না আপনাকে!”

উনি দুষ্ট হেসে বললেন,,

–” সত্যি ভয় পাস না!”

আমি বুঝতে পেরেও ভাবলেশহীন বললাম,,

–” মোটেও না!”

তখনি তিনি আমার কোমর চেপে তার কাছে নিতেই হুরমুর করে উঠে দাঁড়লাম। তখনি ইউসুফ ভাই হাসতে হাসতে বললেন,,

–“তুই না ভয় পাস না! উঠে গেলি কেন তাহলে! আয় কাছে আয়!”

বলে এগুতে লাগলেন আমার দিক মুখ দুষ্ট হাসি নিয়ে! আর আমি পিছাতে লাগলাম।আর ঠিক তখনি…!

চলবে,

ভুল ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠনমূলক মন্তব্যের আশা করছি! আর হে দেড়ি হচ্ছে বলে অনেকে অনেক কথা বলেন আমাকে! আমি ক্লিয়ার করি একটা বিষয় আজকে! আমার আম্মু অসুস্থ থাকে বেশীর ভাগ! আর ঘরের বড় মেয়ে আমি! তাই সমস্ত কাজ বাসার করতে হয়! যার জন্য সময় পাই না মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়ে পড়ি খুব। তাই দিতে পারি না। আশা করি আমার প্রবলেম টা বুঝবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here