#গল্পঃ_আশার_হাত_বাড়ায়
#পর্বঃ_১৯
#লেখাঃ_ইশরাত_জাহান
—
🦋
মাত্র অফিসে এসে পৌঁছালো শ্রেয়া।আজ একটু দেরি হয়ে গেছে।প্রথমে ঘর ভর্তি পানি পরিষ্কার করে আসতে হয়েছে তারউপর রাস্তায় ভিড়।ফারাজ আসার অন্তত পাঁচ মিনিট আগে এসে সবকিছু গুছিয়ে রাখতে হবে তাকে।কিন্তু এখন যে সময় তাতে ফারাজ এসেছে আরো দশ মিনিট আগে।ঘড়ি দেখে তাড়াহুড়া করে লিফটের দিকে গেলো শ্রেয়া।লিফটের দিকে চোখ যেতেই শ্রেয়া যেনো আবারও ভয় পেলো।ফারাজ মাত্র লিফটে উঠেছে।এখন দেরি হওয়ার জন্য হয়তো এখান থেকেই বকা খেতে হবে। মনে মনে শ্রেয়া বলে ওঠে,”আজ পেট ভরে ভাত খাইনি কিন্তু স্যারের বকা খাবো।”
শ্রেয়া দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথাগুলো ভাবতে থাকে ঠিক তখন তার কানে ভেসে আসে ফারাজের কথা।নিজের হাতে থাকা ফোন টিপতে টিপতে ফারাজ বলে,”এভাবে দাড়িয়ে থাকলে দেরি হয়ে যাবে মিস শ্রেয়া।লিফটে এসে এভাবে সময় নষ্ট করে দাড়িয়ে থাকার কোনো মানে হয় না।দ্রুত কাজ করতে শিখুন।”
ফারাজের সব কথার মধ্যে একেকটা উক্তি থাকে।শ্রেয়া বুঝলো তাকে লিফটে উঠতে বলা হয়েছে।কিন্তু সরাসরি না উল্টোভাবে বুঝিয়ে।লিফটে ঢুকেই মনে মনে আওড়ায়,”এত না পেচিয়ে শুধু লিফটে উঠতে বললেই তো হয়।এভাবে পেচানোর মানে কি বুঝি না!”
ফারাজ লিফটের বাটন চেপে ধরে।সাথে সাথে দরজা বন্ধ হয়ে যায়।শ্রেয়া অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ায়। ফারাজের সাথে এভাবে বদ্ধ হয়ে থাকতে তার ইতস্তত লাগছে।ফারাজ নিজ মনে ফোন চালিয়ে যাচ্ছে।শ্রেয়া লিফটের চারপাশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে।যেনো লিফটা কত সুন্দর।আটতলা বিল্ডিং পার করে এবার লিফট যাবে নয় তলাতে।কিন্তু ঠিক তখনই হালকা ভূমিকম্প অনুভব করলো শ্রেয়া আর ফারাজ।ফারাজ এক হাত নিজের পকেটে রেখেছিলো আরেক হাত দিয়ে ফোন টিপছিলো।এভাবে কাপতে দেখে আশেপাশে ভালোভাবে তাকালো সে।শ্রেয়া তো ওখানেই ভয়তে জমে গেছে।চোখ বন্ধ করে দোয়া পড়া শুরু করেছে।হঠাৎ করেই লিফট থেমে গেলো।চোখ খুলে শ্রেয়া দেখলো লিফটের লাইট বন্ধ হয়ে গেছে।শুধু ফারাজের ফোনের আলোর জন্য লিফট আলোকিত আছে। ফারাজের দিকে মাথাটা ঘুরালো শ্রেয়া।বিড়বিড় করে এখনও বিপদের দোয়া পড়ছে।তাকিয়ে দেখলো ফারাজ ফোন টিপছে।কাপা কাপা মাথা নিয়ে আরেকটু উকি দিলো।দেখতে পেলো ফারাজ কারো নাম্বার খুঁজতে থাকে।কাঙ্ক্ষিত নাম্বার পেয়ে ফারাজ কল করে লিফট সম্পর্কে বলে দেয়।শ্রেয়ার দম বন্ধ হয়ে আসার মত।লিফট বন্ধ তার উপর কারেন্ট নেই।একটু আগে যেভাবে লিফট কেপে উঠলো তাতেই শ্রেয়ার মাথা ঘুরছে।লিফটের মধ্যে আলাদা এক গন্ধ থাকে।যার ফলে সাধারণ মানুষ বেশিক্ষণ থাকলে সেও অসুস্থ হয়ে যাবে।ওড়না দিয়ে নাকে ধরে শ্রেয়া দেখলো ফারাজকে।একদম রোবটের মত দাঁড়িয়ে আছে।ফোনটা এখন আর টিপছে না।শুধু লাইট জ্বালিয়ে এক মনে তাকিয়ে আছে দরজার দিকে।মিনিট দশ বিশ হয়ে এলো কারো খোঁজ নেই। আর ফারাজ রোবট হয়ে আছে।এদিকে শ্রেয়ার গা গুলিয়ে এসেছে।নিচে বসে পড়ে সে।ফারাজ এবার শ্রেয়ার দিকে তাকালো।শ্রেয়ার মধ্যে ভীতু ভাব দেখে ফারাজ বলে,”আপনি কোনো বাচ্চা না মিস শ্রেয়া।নিজেকে স্ট্রং রাখতে শিখুন।বিপদে আপনাকে কেউ সাহায্য করতে আসবে না।আপনার নিজেকে সামলে চলতে হবে।সব পরিবেশের সাথে খাপ খেয়ে থাকতে হবে।এছাড়া বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে নিজেকে এগিয়ে রাখতে হবে।আপনার মাথায় রাখা উচিত লিফটে আপনি ছাড়াও আরও একজন আটকে আছে।তাই ক্ষতিকর কিছু হবে না। হলে এতক্ষণে সেভাবেই স্টেপ নিতাম আমি।কাজ চলছে বাইরে।একটু পর লিফট চালু হবে।”
শ্রেয়া একবার একটু ফারাজের দিকে তাকালো।দুই সেকেন্ড মত দেখে চোখ সরিয়ে নেয়।মনে মনে বলে,”আপনি মানেই তো একটা ভয়।তার উপর আছি দম আটকানো ছোট গন্ধ জায়গায়।গাড়িতে যেমন পেট্রোলের গন্ধ থাকে এমন বিদঘুটে।ভালোভাবে বললেই তো হয়।যে টেনশন করার কিছু নেই। তা না ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলে।”
কিছুক্ষণ পরই লিফটের লাইট জ্বলে ওঠে।লিফট আবারও চালু হয়।গন্ধটা এখনও আছে।ফারাজ বলে,”লিফটের কাজ চলছিলো তাই এমন গন্ধ।একটু সমস্যা গিয়েছিলো লিফটে।যাওয়ার সময় কিছু অফিস কলিগের নাম্বার নিয়ে যাবেন।একা একা এমন কিছু ফেস করলে ওদের কল করলেই হবে।”
ফারাজের কথা শুনে শ্রেয়া স্পষ্ট ভাবেই বলে,”ওকে স্যার।”
লিফট নাইন ফ্লোরে আসতেই দরজা খুলে গেলো।প্রথমে ফারাজ বের হয় তারপর শ্রেয়া।সবাই তাকিয়ে দেখছে সেদিকে।ফারাজকে দেখে সবাই দাড়িয়ে আছে।এনি দেখতে থাকে সোজা পথে আসা ফারাজ ও শ্রেয়াকে।আনমনে বলে ওঠে,”হ্যান্ডসাম এন্ড শেহনাজ আর লুকিং জাস্ট পারফেক্ট।”
পাশেই দাড়িয়ে ছিলো অর্পা।অর্পা মিমি অহি ও ফারাজের পুরো পরিবার এসেছে আজ।সেলিব্রেটি মিথিলা আসবে বলে সবাই এক্সাইটেড।এনির পাশে দাঁড়িয়ে থেকে অর্পা এমন কিছু শুনে কিছুক্ষণ ফারাজ ও শ্রেয়াকে দেখতে থাকে।তারপর সেও খুশি হয়ে বলে,”আমি তো এমন ভেবে দেখিনি।আসলেই তো এদের পারফেক্ট লাগছে।”
এনি ঘুরে দাড়ালো অর্পার দিকে।তারপর বলে,”শেহনাজ তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড।আই মাস্ট সে তোমাদের মধ্যে বন্ডিংটা অনেক সুন্দর।তুমি যেমন শেহনাজও তেমন হবে।”
“ও অনেক ভালো।একদম ইনোসেন্ট।আমাদের ফ্রেন্ডশিপে আর কেউ আসতেই পারেনি।কারণ আমরা একে অপরের জন্য বেস্ট ছিলাম।ছোটবেলা থেকেই ও আমাকে নিজের সাথে আগলে রেখেছে।আমাকে ওদের ফ্যামিলি মেম্বার এর মত ট্রিট করতো।”
“ওয়াও!আমাদের হ্যান্ডসাম আর শেহনাজ দুজনেই ইনোসেন্ট পারসন।সাথে ওদের লাইফটাও একই রকম।টক্সিক পার্টনারের জন্য এরা দুজনেই আজ ভিন্ন কিছু ফেস করছে।আই থিঙ্ক বাট নট শিওর হ্যান্ডসামের পাশে শেহনাজকে মানিয়েছে।”
অর্পা খুশি হয় খুব।কিছুটা এক্সাইটেডের সাথে বলে,”আমাদের শ্রেয়া অনেক ভালো ম্যাম। ও তো দেখতেও অনেক কিউট।এখন তো রোদে পুড়ে চামড়ার এই অবস্থা।যশোরে যখন ঘরকুনো হয়ে থাকতো তখন ওকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগত।ও তো আমাদের মত বাইরে তেমন বের হয়না।ছোট থেকেই ওকে দেখলে ভাবতাম কিভাবে ওর মতো উজ্জ্বল থাকবো সুন্দর হবো।পরে দেখি আমি তো বাইরে বাইরে বেশি ঘুরি।রোদে পুড়ে এই অবস্থা। রিমলি আর আমি একটু ঘুরে বেড়াতে বেশি পছন্দ করতাম।ও ঘরে বসে থাকতো।স্কুল কোচিং আর বাসা।এত সুন্দর একটা মেয়ের বিয়ের পর বাজার করা বাইরে থেকে এই আনা ওই আনা তারউপর নির্মম অত্যাচারে মেয়েটার মুখটা এমন হয়েছে।”
বলেই কষ্ট পায় অর্পা।তারপর ভাবে সে তো একটু বেশিই কথা বলছে।এনির দিকে তাকালে এনি হেসে দেয়।অর্পা মৃদু হেসে বলে,”আসলে আমি একটু বেশি কথা বলি।”
এনি আলতো হেসে বলে,”আই নো অর্পা।তুমি একজন ফ্রেন্ডলি পারসন।এটাই বেস্ট তোমার জন্য।মনের কথা চেপে না রেখে প্রকাশ করে দেও। আই লাইক ইট।”
শ্রেয়ার চোখ গেলো অর্পার দিকে।অর্পাকে দেখে শ্রেয়া অবাক হয়ে গেল।খুশি হয়ে তাকালো অর্পার দিকে।অর্পা নিজেও মৃদু হাসি দেখায়।ঠিক তখনই শ্রেয়ার কোলে দৌড়ে আসে মিমি।শ্রেয়ার ভাবনার বাইরে ছিলো।মিমিকে দেখেনি সে।তাইতো হঠাৎ করে মিমি আসাতে অবাক।শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরে মিমি বলে,”তুমি আর পাপা লিফটে আটকে গেছিলে শুনে আমি অনেক ভয় পেয়েছি।”
অর্পা এসে মিমিকে নিয়ে বলে,”সে কি কান্না মিমির।যেই শুনেছে তোরা লিফটে আটকে গেছিস।এখন একটু শান্ত হলো।”
ফারাজ চলে গেলো তার কেবিনে।শ্রেয়া মিমির মুখে হাত দিয়ে আদর করে বলে,”তুমি তাহলে এখানে আড্ডা দেও আমি ফাইল নিয়ে আসি।একটু পর মডেল আসবে।”
“ওকে।”(মিষ্টি হেসে মিমি বলে)
শ্রেয়া চলে যায় তার কেবিনে।ফারাজ আজকের জন্য যে ফাইল তাকে কাছে রাখতে দিয়েছিলো ওগুলো দেখতে থাকে।ডিজাইনগুলো আবারও দেখে নেয় শ্রেয়া।সাথে খরচের হিসাবটাও করতে থাকে। একটু পর ডিজাইন ও কাপড়ের সাথে ভিন্ন কি কি খরচ হবে এগুলো পাই টু পাই বুঝিয়ে দিবে ফারাজকে।
*********
এই নিয়ে সাত আটটা বাড়ি ঘুরে দেখেছে রিমলি।সৃষ্টি বেগম এতক্ষণ ছিলো রিমলির সাথে।ওনার কোমরের ব্যাথা বেড়েছে।এখন আবার দুপুরের রান্নাও বাকি।তাই তিনি বাসায় যেয়ে রান্না করবেন।রিমলি একাই এখন বাকি বাড়িগুলো দেখবে।সৃষ্টি বেগম বলেছিলেন,”তোকে একা দেখতে হবে না বাড়ি।কি না কি হয়।”
রিমলি আশ্বস্ত দিয়ে বলে,”কিছু হবে না মা।শুক্রবার ছাড়া আপু সময় পায় না।আমাদেরকে এভাবেই দেখতে হবে। আর আমরা তো একই পাড়ায় আছি।সমস্যা নেই আমার।আমি পারবো বাসা দেখতে।”
রিমলির জোরাজোরিতে সৃষ্টি বেগম চলে যান একা।ড্রাইভার আংকেলের বউয়ের থেকে এড্রেস নিয়েছে বাড়িগুলোর।এমনিতেও বাড়ির সামনে টু লেট দেখে বোঝা যায় এই বাসা এখন ভাড়া দেওয়া হবে।টু লেটের নিচে বাড়িওয়ালার নাম্বার দেখে রিমলি কল করে তাকে।এভাবে কিছু বাড়ি দেখে।একটা বাড়ির সামনে এসে থমকে যায় রিমলি।বাড়ির সামনের পরিবেশ নিরিবিলি।ফাঁকা একটা মাঠ আর পাশেই ছোট টিনের ঘর।দেখে বোঝা যাচ্ছে এটা পুরোনো চায়ের দোকান।এখন বন্ধ হয়েছে।বাড়িটি একবার দেখে আবার সামনের পরিবেশ একবার দেখে।কিছুটা গ্রাম্য লাগছে।মনোমুগ্ধকর পরিবেশ রিমলির মন ছুঁয়ে নিলো।বিশেষ করে সৃষ্টি বেগমের জন্য।তিনি খোলামেলা পরিবেশ পছন্দ করেন।কিছুক্ষণ খুশি থাকলেও শেষে কিছু একটা ভেবে মুখটা মলিন হয়ে যায়।এসব বাড়ি তো হাজার দশের উপরে নিবে।এতক্ষণ যেগুলো দেখছিলো ওগুলো তাই সর্বনিম্ন আট হাজার বলেছিলো।শ্রেয়াকে ম্যাসেজ দিয়ে বলে,”আপু একটা সুন্দর মনোরম পরিবেশ পেয়েছি।যেখানে থেকে আমরা কিছুটা স্বস্তি পাবো।বাড়িটি তিনতলা বিল্ডিংয়ের।সামনে ফাঁকা মাঠ।কিছু গাছপালা আছে।দেখতে সুন্দর।এটা কি দেখবো?”
শ্রেয়া তার মত ব্যাস্ত।এখন রিপ্লাই আসা সম্ভব না।তাই রিমলি একটু ফেসবুক নোটিফিকেশন দেখছে।শিহাব আইডি থেকে ম্যাসেজ,”জানেন লেখিকা আমিও না গল্পের হিরোদের মত এক হিরোইনের প্রেমে পড়েছি।কিন্তু বেচারি আমার দিকে তাকালো না।আচ্ছা আমার মনে হয় সেও গল্পের মতো করে আমাকে প্রথমে দেখবে না পাত্তা দিবে না।আমাকেই হিরো হতে হবে তাই না?”
শিহাবের এসব অহরহ ম্যাসেজ তাও অন্য মেয়েকে নিয়ে দেখে হেসে দিলো রিমলি।এই ম্যাসেজ কাল এসেছে।অতিরিক্ত ঝড় বৃষ্টির কারণে নেট সমস্যা ছিলো।তাই ম্যাসেজগুলো আজ দেখলো।রিমলির হাসির মাঝেই ওর ফোনে আবারও ম্যাসেজ আসে,”ওর হাসিটা না অনেক মায়াবী।আমি এখনও দেখতে পাচ্ছি।একদম পিচ্ছি একটা মেয়ে।এই হবে পনেরো ষোলো বছর বয়স। শ্যাম বর্ণের মেয়ের চোখের পাতা গাঢ় কালো পাপড়ি মোটা মোটা ভ্রু আর.. আর বেশীদুর না যাই। আপাতত মুগ্ধকর বিষয়গুলো বললাম।পিচ্ছি মেয়েটিকে সূর্য বিলাস করতে দেখে যেনো আরো বেশি মনোমুগ্ধকর লাগছে।”
রিমলি এবার একটু অবাক হলো সাথে করে বিরক্ত।সে নিজেই তো ষোলো বছর বয়সী এক যুবতী।তাহলে তো সেও পিচ্ছি।এদিকে শিহাব কিনা তাকে আপনি বলে সম্বোধন করে ।রিমলিকে কখনও দেখেনি বলে কি বয়স বেশি মানতে হবে?ঠিক তখনই শ্রেয়ার ম্যাসেজ আসে। ফাইল চেক করে শ্রেয়া ফোন হাতে নিয়ে ওর আলাদা নোট প্যাডে কিছু ডিটেইলস রেখে দেয়।রিমলির ম্যাসেজ দেখে রিপ্লাই করে,”এমন বাসা দেখবি যেটাতে মা অনেক কমফোর্ট ফিল করবে।মায়ের শরীর এমনি দুর্বল।প্রাকৃতিক বাতাসের দরকার।”
“কিন্তু আপু ভাড়া অনেক হতে পারে।আগে যেগুলো মোটামুটি পছন্দ ছিলো ওগুলোই তাই হাজার এগারো বারো বলেছিলো।”
“ভাড়ার টাকা নিয়ে চিন্তা করবি না।তোর বোন এখন বড় এমাউন্টের চাকরি করে।তাই এখন সে তার মা আর বোনকে প্রানভরে সেবা যত্ন করবে।এই টাকা এই সবকিছু নিয়ে বসে থেকে লাভ কি?যদি আমি মেয়ে হয়ে আমার আমকে স্বাচ্ছন্দ্যে না রাখতে পারি।আমার বোন মা আর আমি এখন থেকে আনন্দে থাকবো।যতদিন ভাগ্যে আছে এভাবে চলব।অন্তত মাকে তো একটু সুখে রাখতে পারব।”
“আচ্ছা আপু তাহলে আমি বাড়িওয়ালাকে কল দিয়ে দেখি।”
“আচ্ছা বোন সাবধানে।”
রিমলি কল করে বাড়িওয়ালার নাম্বারে।উপর থেকে রিমলিকে দেখছিলো শিহাব।কিন্তু ওর একটা কথাও শুনতে পায়নি।হঠাৎ ল্যান্ড লাইনে কল আসে তার।শিহাব ওদিকে পাত্তা না দিয়ে দেখতে থাকে রিমলিকে।প্রথম কল কেটে যায়।রিমলি ঘেমে একাকার।এই গরমের মধ্যে চোখদুটো পিটপিট করতে থাকে ।শ্যামলা মুখে লালের আভাস হয়ে আছে।কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে।মায়া হলো শিহাবের।বিরক্ত হয়ে রিমলি আবারও কল দেয় শিহাবকে।মাথার তালু গরম হয়ে গেছে।এদিকে তার ফোন ধরার কেউ নেই।ঘরের ফোন বাজার সাথে রিমলির কল দেওয়া মিলে গেছে দেখে শিহাব দৌড়ে গেলো ফোন রিসিভ করতে।শিহাব রিসিভ করতেই রিমলি বলে ওঠে,”আসসলামু আলাইকুম আংকেল।”
ভেবাচেকা খেলো শিহাব।এটা কনফার্ম যে ফোনের ওপাশে সালাম দেওয়া ব্যাক্তি রিমলি।কিন্তু তাই বলে আংকেল!এই সম্বোধন মেনে নিতে পারল না শিহাব।যার জন্য একজন লেখিকাকে তার প্রতি হওয়া মনের ভাব প্রকাশ করে সে এখন আংকেল বলছে।এটা মানা যায় না।শিহাব উপন্যাস প্রেমী।ঘরে তার নিজস্ব লাইব্রেরি আছে।ফেসবুকে কিছু কিছু লেখক/লেখিকাকে ফলো দিয়ে রাখে।যার গল্প মন ছুঁয়ে যায় তাকে প্রশংসা করে শিহাব।তাই তো লেখিকা ফারজানা ইয়াসমিন ওরফে রিমলিকে দেখে ফলো দিয়েছে।ফারজানা ইয়াসমিনের গল্পগুলো কিছুটা মন ছুঁয়ে নেওয়ার মতো তাই।শিহাব তাকে সিনিয়র কিছুই ভাবে।আসলে শিহাব অতি পার্সোনাল বিষয় ঘাটাঘাটি করে না।লেখার ধরণে মেচিউরিটি প্রকাশ পায়।বিশেষত স্ট্রং ক্যারেক্টার এমনটাই প্রকাশ করে।তাই তো ফারজানা ইয়াসমিন ওরফে রিমলির কাছেই সে তার মনের কথাগুলো বলে দেয়।মনের দুঃখে এখন ফোন কানে দাড়িয়ে আছে শিহাব।যার জন্য সুন্দরী মেয়েরা লাইন লাগিয়ে রাখে সে অবিবাহিত থেকে এক যুবতী কন্যার মুখে আংকেল শুনলো।রিমলি এতক্ষণ হেলো হেলো করে কোনো রেসপন্স না পেয়ে এবার কর্কশ কণ্ঠে বলে,”এই যে আংকেল আপনি কি কানে শুনেন না?সেই পাঁচ মিনিট যাবত আপনাকে তিনবার সালাম দিয়েছি আর বিশবারের উপরে হেলো বলে যাচ্ছি।আর কত?”
শিহাব কণ্ঠ মোটা করে বলে,”ওয়া আলাইকুমুস সালাম।আমি তোমার আংকেল না।”
“লিসেন আংকেল না দাদু এটা পরে দেখা যাবে।আমি বাড়ি ভাড়ার জন্য এসেছিলাম।কিন্তু আপনারা তো কোনো রেসপন্স করেন না।থাক আপনাদের মত আধ পাগলের বাসা না নেওয়াই ভালো।এই গরমে মানুষদের অপেক্ষা করায়।নিলাম না এই বাসা ভাড়া।”
রিমলির মুখে বাসা ভাড়ার কথা শুনে মুখে হাসি ফুটে উঠলো শিহাবের।মনে মনে বলে,”পাখি নিজে থেকেই ধরা দিলো।হুররে!”
রিমলি কল কাটতে যাবে ওমনি শিহাব বলে,”এই না না।আমি আসছি।তোমাকে ঘর দেখাই। আশা করি ভালো লাগবে।এক মিনিট।”
বলেই দ্রুত একটি ভালো টি-শার্ট পরে ছাতা হাতে নিয়ে চলে যায়।পিছনে গেটের শব্দ পেয়ে ঘুরে তাকালো রিমলি। ছাতা হাতে সাদা লুংগি পরা ও গায়ে টি শার্ট জড়ানো শিহাবকে দেখে অবাক।শিহাবকে দেখে চিনতে পারল।সেদিন বাজারে দেখা তাদের।শহরের ছেলেরাও লুংগি পরে।এটা দেখে অবাক রিমলি।ওদের দূরবর্তী কিছু আত্মীয় শহরে থাকে।লুংগি নিয়ে এমন ভাব করে যেনো লুংগি বাংলাদেশে কেউ কোনোদিন দেখেইনি। রিমলির নিরবতা দেখে শিহাব কিছুটা আন্দাজ করলো।আসলে এভাবে লুংগি পরা শহরে কম দেখা যায়।আজকাল বাঙালি পুরুষের এই ঐতিহ্য আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।শিহাব ভদ্রতার হাসি দিয়ে বলে,”আসলে বাঙালি স্মার্ট পুরুষ নিজের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারে না।কিন্তু আমি নিজেকে বাঙালি ভাবি।এই গরমে লুংগির থেকে বেস্ট কিছু হয় না।লুংগিতেই শান্তি।”
কোমড়ে হাত দিয়ে রিমলি বলে,”আপনার এই লুংগির রচনা শেষ হলে ঘর দেখতে পারি কি?আপনার থেকে রচনা শুনতে আসিনি।ঘর দেখতে এসেছি।”
“ঘরের সাথে হবু বরকেও দেখতে পারো।”(বিড়বিড় করে)
রিমলি ভ্রু উচু করে বলে,”কিছু বললেন?”
“না।আসো ঘর দেখাই।”
“আপনার বাসায় কেউ নেই?”
“মা বাবা সবাই আছে।বাবা তার অফিসে মা নানু বাসায়।আমি আজ ছুটিতে।তবে তোমাকে ঘর দেখানোর সময় আমাদের মালি আন্টি থাকবে।”
বলেই শিহাব ইশারা দিয়ে দেখায় মালিকে।উনি সুতির শাড়ি পরে মাথায় আচল দিয়ে ধরে আছেন।হাতে বাগান পরিচর্যার জিনিসপত্র।মালিকে দেখে স্বস্তি পেয়ে রিমলি ভিতরে আসে।
চলবে…?
#আশার_হাত_বাড়ায়