#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২৫
তোঁষা’কে বমি করতে দেখেই চমকায় আরহাম। অস্থির হয়ে ওকে চেপে ধরে। মুহুর্তেই নিজের শরীর সহ বিছানা মেখেঝুকে ফেলে তোঁষা। একদিকে যেমন বমি করছে অন্যদিকে কান্না করছে। আরহাম কিছুটা বেকায়দায় পড়ে। তবুও তোঁষা’কে বুকে নিয়ে পুরোটা বমি করায়। বমি করার সময় তা আটকে রাখতে নেই বা মুখে চেপে রাখতে নেই। এই বমি আটকে রেখে ওয়াসরুমে যেতে যেতে কিছুদিন আগে এক বাচ্চা মা’রা গেলো।
তোঁষা’র বমি থেমে যেতেই ও আরহামে’র বুকের দিকে মুখ মুছলো। আরহাম নিজের দিকে তাকালো। আশ্চর্য একটা বারের মতো ওর নাক কুঁচকালো না। তোঁষা’র পিঠে এতক্ষণ বুলানো হাতটা এবার মাথায় বুলিয়ে বললো,
— আরো বমি করবি?
— উহু।
— আয়।
বলেই টেনেটুনে তোঁষা’কে কোলে তুললো। তোঁষা শরীর ছেড়ে আছে। আরহাম কোনমতে ওকে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে। পরপর পরণে থাকা কাপড়ে লেপ্টে যাওয়া সব পানি দিয়ে ধুয়ে এরপর তোঁষা’কে গোসল করতে সাহায্য করলো। নিজের গায়ে থাকা টিশার্ট’টা খুলে পাশে রেখে তোঁষা’কে নিয়ে বের হলো। তোঁষা’কে পাশে থাকা কাউচে বসিয়ে কিছুটা দৌড়ে ওর পোশাক বের করে আরহাম। তোঁষা’র সামনে দিতেই তোঁষা মুখ ঘুরিয়ে বললো,
— পড়ব না এখন।
— কেন?
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো আরহাম।
— ঘুমাব।
তোঁষা’র সরল জবাব। আরহাম জোর করেই তোঁষা’কে পড়াতে চাইলো। তোঁষা ও পরবে না। বাথরোবটা গায়ে জড়িয়েই বসা থেকে কাউচে শুয়ে পরলো ও। আরহাম হার মানলো তবে ওকে অবাক করে ওকে কাছে টানলো তোঁষা। হতবুদ্ধ হয়ে গেলো আরহাম। তোঁষা’কে পরিষ্কার করালেও আরহাম পরিষ্কার হতে পারে নি। তারমাধ্যে বিছানা নষ্ট হয়ে আছে। আরহাম বাঁধা দিতে চাইলেও পারছে না। তোঁষা ওকে আঁকড়ে ধরেছে। আরহাম অসহায়ত্ব বোধ করলো। তোঁষা’কে ফেরানোর সাধ্য ওর নেই। না কোনদিন ছিলো। এদিকে তোঁষা ও ছাড়ার নাম নিচ্ছে। আরহাম ফাঁকা ঢোক গিলে তপ্ত শ্বাস ফেলে নিজেকে সামলালো। অসহায় গলায় বললো,
— ত..তুঁষ এখন না।
— এখনই।
— প্রাণ আমার আমি নোংরা হয়ে আছি।
— কিছু হবে না।
— বুঝার চেষ্টা কর। সব পরিষ্কার করতে হবে।
— আগে আমি।
— হ্যাঁ আগে তুই। একটু সময় দে। আধ ঘন্টা লাগবে।
— উহু। আগে আমি।
তোঁষা থামলো না। আরহাম উশখুশ করতে লাগলো। এভাবে সম্ভব না। অলরেডি টকটক গন্ধে রুম ভরে যাচ্ছে। তোঁষা’র আঁকড়ে ধরা হাতটা ছাড়িয়ে দীর্ঘসময় ওকে চুম্বন করে আরহাম। এতে তোঁষা ছাড়লো তো না ই উল্টো আহ্লাদী হয়ে উঠলো। আরহাম পরলো বিপাকে। এবার জোর করেই তোঁষা’কে ছাড়ালো ও। উঠে বসতে নিলেই রেগে গেলো তোঁষা। আরহামে’র হাত খামচে ধরে তাকালো ওর পানে। জোরে জোরে শ্বাস টানতে টানতে বলতে লাগলো,
— ডেকেছি না আমি? কেন আসো না?
আরহাম অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তুঁষটা ও এমন না। হাতের খামচিটা তীব্র হতেই “আহ” শব্দ করে আরহাম। তোঁষা’র গালে হাত দিয়ে বললো,
— একটু সময় দে।
— না।
— প্রাণ…..
— যাহ।
আরহাম বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো। তোঁষা’র আচরণ বুঝতে পারছে না ও৷ তোঁষা’কে ধরতে নিলেই ও ঝাড়া দিয়ে বললো,
— ধরবেন না।
বলেই উল্টো হয়ে শুয়ে পরলো। কি যে বিরবির করছে বুঝে না আরহাম। আপাতত সে ঘর গোছাতে ব্যাস্ত হলো। বিছানার চাদর থেকে নিয়ে বাকিসব ধুঁয়ে শুকাতে দেয় আরহাম। নতুন একটা বেড শিট বিছিয়ে স্যাভলন দিয়ে ফ্লোরটাও মুছলো যদিও এর দরকার ছিলো না তবে খুঁতখুঁত স্বভাবটা এখনও যায় নি ওর। একপলক তোঁষার পানে তাকাতেই দেখলো ও শুয়ে শুয়ে ফুঁসছে। এরমানে ঘুমায় নি? আরহাম তো ভাবলো হয়তো ঘুমিয়ে গিয়েছে। কিছু না বলে নিজের একটা শর্ট প্যান্ট নিয়ে গোসল করতে চলে গেল আরহাম। প্রায় বিশ মিনিট পর গোসল শেষ করে বের হয় আরহাম।
খালি বুকে বিন্দু বিন্দু তার পানির ছিটা। হাত দিয়ে চুলগুলো ঝাড়া দিয়ে তোঁষা’র পানে তাকালো। কাউচের বাইরে তোঁষা’র চুলগুলো। এগিয়ে এসে নিজের টাওয়াল দিয়ে ই তোঁষা’র চুলগুলো মুছে দিলো। তোঁষা কথা বললো না। আরহাম এবার ডাকলো,
— তুঁষ?
তোঁষা কথা বললো না। বলবে না সে কথা। কেন বলবে? রাগ হয়েছে তার। আরহাম বুঝে। অল্প হেসে ফ্লোরে বসে পা মুড়ে। তোঁষা’র পিঠে হাত রাখতেই তোঁষা মুখ তুলে তাকায়। আরহাম ব্যাস্ত হলো। হাত রাখলো ওর প্রাণে’র গালে। ব্যাস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— ব্যাথা হচ্ছে? খারাপ লাগছে তুঁষ? কথা বল। কেন কাঁদছিস?
— কথা নেই আপনার সাথে। ভালোবাসেন না আপনি আমাকে।
— কে বলেছে? তোকে না বলেছি এসব কথা না বলতে। আমার কাছে আয়।
বলেই কোলে তুলে বিছানায় নিলো তোঁষা’কে। যেই না আরহাম ওর কাছে এলো ওমনিই তোঁষা তাকে ফিরিয়ে দিলো। আরহাম অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— কি হয়েছে?
— ভালো লাগছে না। কিছু দাও তো আমাকে।
— ক..কি দিব?
— কিছু দাও। ভালো লাগছে না। মাথা কেমন করছে।
এবার ঘাবড়ে যায় আরহাম। তোঁষা ধীরে ধীরে উত্তেজিত হওয়ার আগেই আরহাম ইনজেকশন নিয়ে আসলো। তোঁষা নিজেই হাত বের করে দিয়ে বললো,
— তারাতাড়ি দিন। আমার ভালো লাগছে না। মাথা কেমন করছে।
আরহাম দ্রুত হাতে পুশ করলো। গুঙিয়ে কেঁদে যাচ্ছে তোঁষা তবে বেশিক্ষণ না। মিনিট দুই যেতেই তীব্র ব্যাথায় শব্দ করে কাঁদে তোঁষা। আরহাম বহু কষ্টে বুকে ঝাপ্টে ধরে লাভ হয় না। হাত পা দাপিয়ে মিনিট পাঁচ কাঁদলো তোঁষা। অতঃপর শান্ত। একদম ঠান্ডা। আরহামে’র বুকের মাঝে শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেলো আরহামে’র প্রাণ।
তোঁষা’র ব্যাথায় জর্জরিত মুখটাতে চুমু খায় আরহাম। গলায় মুখ গুজে শুয়ে পরে ওকে নিয়ে। অভিযোগ জানায় কানে কানে,
— এমন কেন হচ্ছে প্রাণ? এমন তো হওয়ার কথা না। তুই আজ বমি কেন করলি? কষ্ট হচ্ছে অনেক? তোর আরহাম ভাই তোকে কষ্ট দিবে না। বিশ্বাস কর আর কষ্ট দিবে না। আর কিছুটা দিন। ধীরে ধীরে সবটা ভুলে যাবি তুই। শেখ বাড়ীর কাউকে মনে থাকবে না তোর। তুই জুড়ে আমি থাকব প্রাণ। শুধু আমি। তোর শরীরে যারা এত আঘাত দিয়েছে। কষ্ট দিয়েছে। ধোঁকা দিয়েছে। এদের সকল থেকে তোকে দূরে রাখব আমি। ভিসায় ঝামেলা হচ্ছে। ওটা মিটে গেলেই আমরা দেশ ছেড়ে দিব। সব ছেড়ে তুই আর আমি সংসার করব। আমি তোকে আমার সবটা দিয়ে ভালোবাসি প্রাণ। আমৃত্যু এই আরহাম তোকে ভালোবেসে যাবে। আমি পা*গল না। বিশ্বাস কর আমি পা*গল না৷ আম্মু বলেছে আমি আমি পা*গল না। অথচ দেখ আম্মু আর তুই বাদে সবাই পা*গল ভাবে আমাকে। আমি চিকিৎসা নিয়েছিলাম প্রাণ। তোর জন্য সবটা করেছি। কিন্তু তোকে যে কারো জন্য ছাড়তে পারব না। আমার আরো কিছু ট্রিটমেন্ট সেশন বাকি। তোকে নিয়ে গিয়ে বাকিগুলো করব। কিন্তু আমি আবারও বলছি আমি পা*গল না প্রাণ।
তুই শুধু আমাকে মনে রাখ। ধোঁকা দেয়া সকল মানুষদের ভুলে যা। আমি তোকে অনেক আদর করব। প্রচণ্ড ভালোবাসা দিব।
ঘুমন্ত তোঁষা’র কানে কানে সব বললো আরহাম অথচ আরহাম জানলোই না অনিশ্চিত তাদের ভবিষ্যতের কথা। কিছু না বলা সত্য। কিছু না জানা তিক্ততা।
______________
— স্যার!
কর্নেল তাহের হাসলেন তুষারকে দেখে। ইশারায় বসতে বললেই তুষার বসলো সটান হয়ে। যতক্ষণ না স্যার কিছু বলছে ততক্ষণ তুষার ও কিছু বলতে পারছে না। অবশেষে প্রস্তাব দিলো কর্নেল তাহের,
— ইউ নো তুষার সোজা কথা বলতে পছন্দ করি আমি।
— ইয়েস স্যার।
— আমি তোমাকে আজ অনেক বছর ধরে চিনি। তোমার স্বভাব চরিত্র আমার জানা। আমার মেয়ের জন্য তোমাকে চাইছি। আমি চাই তাকে তোমার হাতে তুলে দিতে।
এতটুকু বলেই থামলেন তিনি। মুখ চিকচিক করছে তার। তুষার কোনদিন তাকে ফেরাবে না এটা জানেন তিনি। তথ্য কিছু কাজে এইদিকে এসেছিলো। এসেই এমন কথা শুনে ওর মাথা ঘুরে উঠলো। এইজন্য ই কি তুষার তাকে পাত্তা দেয় না। যেখানে এতবড় ঘরের প্রস্তাব পেয়েছে সেখানে তথ্য’র মতো কাউকে কেন ই বা গ্রহণ করবে তুষার? কথাটা ভাবতেই গলা ধরে আসলো ওর। চোখটা ঝাপটালো বার কয়েক। কান্না করা এতটাও সহজ না তথ্য’র জন্য। খুব কমই কাঁদে সে। অথচ আজ তথ্য’র চোখে পানি। শক্ত স্বাভাবের তথ্য শুধু মাত্র এই তুষারের জন্য কি ই না করলো। কত বেহায়াপনা করলো। তুষার বুঝি এজন্যই তথ্য’কে কোনদিন দেখেও দেখে নি। বিয়ের কথা শুনেও কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় নি।
কোনমতে কান্না চেপে বেরিয়ে এলো তথ্য। এসেই টেবিল থেকে কাগজ তুলে রিজাইন লেটার লিখে ফেললো। কোনকিছু না ভেবে তা পাঠিয়ে দিলো দায়িত্বরত অফিসারের নিকট।
থাকবে না এখানে তথ্য। কিছুতেই না।
_________________
তোঁষা’কে আজ সকাল থেকে বেশ ফুরফুরা দেখালো। আরহাম তাতে সস্তি পেলো। ভোরে তোঁষা নিজে ধরা দিলো আরহাম’কে। সকল ক্লান্তি, চিন্তা অবসাদ যেন তাতেই কেটে গেলো। ক্ষুদ্র শ্বাস ফেলে আরহাম। আজ আসার সময় তোঁষা হাসিমুখে বিদায় জানিয়েছে তাকে। আরহাম অল্প চিন্তায় পরলেও তোঁষা যখন গলায় ঝুলে তাকে মিষ্টি আদর করলো তখন আরহাম চিন্তামুক্ত হয়ে বেরুলো।
আজ রাতে আরহামে’র জন্মদিন। দিন গুণে গুণে রাখার অভ্যাস তোঁষা’র। তার আরহাম ভাই এর জন্মদিন ও সে গুনেগুনে হিসেব রাখে। আরহাম যেতেই সোজা রান্না ঘরে ঢুকে ও। ফ্রিজ ঘেটেঘুটে ময়দা, ডিম বের করলো। কেক বানাতে পারে না ও। তবুও চাচি’কে যতটুকু দেখেছে তা মনে করেই কাজ আগালো তোঁষা। সকাল থেকে দুপুর অতঃপর বিকেল। আজ সারাটাদিন লাগিয়ে এসব করেছে তোঁষা। আরহাম সবটা ফোনে দেখলো। মনে জোয়ার এলো যেন ওর। তোঁষা’র ভালোবাসা নিখুঁত। তার থেকেই নিখুঁত খোদ তোঁষা।
আজ আরহামে’র ফিরতে লেট হলো কিছুটা। তোঁষা তখন সুন্দর করে একটা শাড়ী পরেছে। সেজেছে হালকা করে। লম্বা চুলগুলো ছেড়ে দিলো পিঠ জুড়ে। লাল রঙা ঠোঁটটা বেশ আকর্ষণীয় দেখালো। নিজেকে দেখে হাসলো তোঁষা। লজ্জা পেলো সামান্য। মিনমিন করে বললো,
— দেয়ার মতো গিফট তো নেই। আমিটাকেই আপনাকে দিয়ে দিব প্রাণ।
অতঃপর অপেক্ষা। তোঁষা আধঘন্টা যাবৎ অপেক্ষা করার পর চিন চিন ব্যাথা অনুভব করলো মাথায়।
গাড়িতেও একবার লাস্যময়ী তোঁষা’কে দেখেছে আরহাম। নিজেকে বহু কষ্টে সামাল দিয়ে ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলো ও।
তোঁষা’র মাথা ব্যাথা চিনচিন থেকে ধীরে ধীরে তীব্র হচ্ছে। তোঁষা দুই হাতে মাথা চেপে ধরলো। মুখে ব্যাথাকাতুর শব্দ করে ডেকে উঠলো মা, বাবাকে। চোখের সামনে সবই যেন ঝাপ্সা হয়ে আসছে ক্রমশ। আর সহ্য করতে পারে না তোঁষা। উঠে দৌড়ে যায় আলমারির ড্রয়ারের কাছে। টান দিতেই তা খুলে গেলো। হয়তো আরহাম আজ লক করতে ভুলে গিয়েছে।
তিন চারটা অ্যাম্পুল রাখা সেখানে। তোঁষা বড় সিরিঞ্জ নিলো একটা। মাথা ব্যাথায় জান যায় যায় অবস্থা। তিনটা অ্যাম্পুল হাতে তুলে তোঁষা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। ধপ করে আলমারি ঘেঁষে বসলো পরলো। শাড়ীর আঁচলটা অবলীলায় পরে গেলো। তোঁষা সহ্য করতে না পেরে এক সিরিঞ্জ লিকুইড স্যাম্পল নিজের হাতে পুশ করলো। ব্যাথা কমে নি ওর। পরপর আরেক সিরিঞ্জ ভরে জোরে গেঁথে দিলো বাহুতে। শরীর কাঁপছে ওর। ঠিক যেন কোন নেশাগ্রস্ত মানুষ নেশা পেলো। তীব্র বাসনায় দিশেহারা হলো ও।
তৃতীয়টাও বাদ গেলো না। তবে সেটা শরীরে গাঁথলেও অর্ধেকের বেশি পুশ করতে পারলো না তোঁষা। শরীর ছেড়ে দিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে রইলো ও।
আরহামে’র জন্য করা সাজটা নিমিষেই লেপ্টে গেলো। এদিকে তীব্র আকাঙ্খা আর হাত ভর্তি ফুল নিয়ে রুমে ঢুকলো আরহাম। হাসি মুখে ডেকে যাচ্ছে,
— তুঁষ? তুঁষ? কোথায় তুই প্রাণ?
#চলবে……
গরম চায়ের কপটা হাতে নিয়ে ছুটছে তাঁরা। চাঁদের নিশ্চিত ঘুম ছুটছে। উঠে তাঁরাকে সামনে না পেলে তুলকালাম বাঁধবে জনাব। তারাতাড়ি ছুটতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পরতে নিলেই আগলে নিলো চাঁদনী বেগম। তাঁরা ঢোক গিললো। সারাক্ষণই ভয়ে ভয়ে থাকে এই মেয়ে। কারণ যে বুঝে না যে চাঁদনী বেগম তা নয়। যত আতঙ্ক তাঁরার চাঁদকে ঘিরে। চাঁদনী বেগম দীর্ঘ শ্বাস টেনে নিলেন।
-“এত কিসের ভয় তোর? চাঁদ কিছু বললে আমাকে বলবি?”
তাঁরা মলিন হাসলো। এমন শাশুড়ী আজকাল কে ই বা পায়? শশুর বাড়ী একপ্রকার বিলাসিতা করে চলে তাঁরা। শুধু চাঁদ নামক স্বামী’টা জ্বালিয়ে মারছে ওকে। সারাদিন ভয়ে টটস্থ থাকে তাঁরা। যদিও চাঁদ সহজে রাগে না বিয়ের পর তবুও এতবছরের ভয়তো আর একমাসে কমবে না। কাঁপটা হাতে নিয়ে রুমের সামনে যেতেই থামলো তাঁরা। ভেরানো দরজা’টাতে চোরের মতো মাথা ডুকিয়ে তড়িঘড়ি করে আবার তা সরিয়ে নিলো। চাঁদ রুমের কোথাও নেই মানে এখনও গোসল করছে সে। ঝটপট ভেবে নিলো তাঁরা, রুমে ডুকেই চায়ের কাপটা রেখে কেটে পরবে। যেই ভাবা ঐ কাজ। কিন্তু কপাল কি তাঁরা’র এত ভালো? যেই না কাঁপটা রেখে বের হবে ওমনি ঠান্ডা চওড়া একটা পুরুষ দেহ ওকে আগলে নিলো। ছোট্ট তাঁরা’র স্থান হলো সেই বুকে। একদম লেগে গেল। হীম হলো তার দেহ পিঞ্জর। একদম চুপ করে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো। তখনই কানের পেছনে পেলো ভেঁজা ঠোঁটের স্পর্শ। মোচরে সরে যেতে চেয়েও পারলো না। এত শক্ত বন্ধনী এত সহজে কিভাবে ভাঙবে? বিগত এক মাস ধরে এমন স্পর্শের সাথে পরিচিত ও তবুও কেন জানি এখনও মানিয়ে উঠতে পারে নি। হঠাৎ শাড়ীর আঁচলটা সরাতেই তাঁরা শক্ত করে চাঁদের হাতটা চেপে ধরলো। মুহুর্তেই চাঁদের মুখের ভঙ্গি পালটালো। এমন রোম্যান্টিক মুহুর্তে এমন ডিসটার্ব তার মোটেও পছন্দ হলো না। সজোরে কাঁমড়ে দিলো তাঁরা’র ঘাড়ে। মুখ দিয়ে ব্যাথাকাতুর শব্দ তুলে সরে গেল। চাঁদ ও ছেড়ে দিয়েছে ওকে। তাঁরা মাথা নিচু করে ঘাড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে কেঁদে যাচ্ছে ফুঁপিয়ে। ভীষণ ব্যাথা পেয়েছে সে। চাঁদ বিরক্ত হলো। এই মেয়ে এক ফোঁটা ও রোম্যান্টিক না। লাভ বাইট দিলে কেউ এভাবে কাঁদে? এর আগেও তাঁরা’র এমন আচরণে চাঁদ বিরক্ত হয়েছে। ভেবেছে সময়ে’র সাথে সাথে ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু না তাঁরা ঠিক হচ্ছে না। এক মাস হলো বিয়ের। আর কত সময় দিবে চাঁদ? প্রথম রাত থেকেই নিয়মিত ভালোবাসা দিয়ে আসছে সে তবুও তাঁরা’র কোন হেলদুল নেই। কেমন অনুভূতিহীন ভাবে পড়ে থাকে। এভাবে কি আর রোম্যান্স হয়?
ই-বুক “অমৃতাংশু নক্ষত্র” এর অংশ বিশেষ। পাওয়া যাচ্ছে বইটই অ্যাপে। লিংক কমেন্টে।