প্রিয়_প্রাণ #সাইয়্যারা_খান #পর্বঃ২৯

0
444

#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২৯

আলগোছে তোঁষা’র মাথাটা নিজের কাঁধ থেকে সরালো আরহাম। গাড়ির কাঁচে শেড থাকায় বাহির হতে কিছুই দেখা যাচ্ছে না ভেতরে অথচ ভেতর থেকে সবটা দেখছে আরহাম। শেখ বাড়ীর সদর দরজা খোলা। নামীদামী হওয়াতে অনেক মানুষের আনাগোনা। আরহাম গাড়িটা রেখেছে একদম সাইডে। তোঁষা’র মুখের মাস্ক’টা একটু ঠিক করে দিয়ে ওকে নিয়ে গাড়ি থেকে নামলো আরহাম। তোঁষা’র চোখমুখ স্বাভাবিক। রাতে শেষ হওয়ার পথে। আরহাম নিজের সাথে এক প্রকার যুদ্ধ করে তোঁষা’কে নিয়ে এসেছে এখানে। তোঁষা আরহামে’র হাত ধরে বললো,

— এখানে এলাম?

— হু।

— ভেতরে যাব?

— যাব।

তোঁষা কথা বললো না। মাথা ঝিমঝিম করছে তার। আরহাম ভাই এখানে কেন আনলো ওকে তা বুঝে উঠতে পারছে না। আরহাম ওর হাত ধরে বাড়ীতে প্রবেশ করলো। ওমনিই কান্নার শব্দ কানে এলো। কিছু একটা ধাক্কা খেলো তোঁষা’র বুকে। ওর মায়ের গলায় কান্না শুনা যাচ্ছে। তোঁষা চোখ বন্ধ করে মনে করার চেষ্টা করলো। হ্যাঁ। এটাই তো মায়ের গলার শব্দ। পরক্ষণেই মনে হচ্ছে না। এটা মায়ের গলা না। তোঁষা’র ঠিকঠাক মনে পরছে না। আরহামে’র বাহুটা শক্ত করে ধরে জিজ্ঞেস করলো,

— কে কাঁদে?

–ভেতরে চল।

আরেকটু সামনে এসে তোঁষা’কে ছেড়ে দিলো আরহাম। দেখার পালা তোঁষা আদৌ চিনতে পারছে কি না। হুটহাট ওর ভুলে যাওয়ার সমস্যা টা সাময়িক হয়। তোঁষা’কে এই মুহুর্তে কেউ খেয়াল করলো না।
মাঝখানে রাখা তুহিনের দেহটা। এই বয়সে মৃত্যুটা অতটাও অস্বাভাবিক না। তবে তুহিনের মৃত্যু’টা অস্বাভাবিক বটে। ভালো মানুষটা বাসায় ফিরেই স্ট্রোক করে বসলো। হাসপাতালে নিতে নিতে দুনিয়া ত্যাগ করে ফেললো। এতদিনের তার চিন্তা, মেয়ের শোক সবটার অবসান ঘটলো। স্বামী’র লা’শের খাট ধরে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে তোঁষা’র মা। পাশেই তুষা’র। মাথা নিচু করে সেও মায়ের পাশে বসা। এক হাতে মায়ের রুগ্ন দেহটাকে নিজের বুকে আগলে রেখেছে সে।
একে একে সবার দিকে নজর বুলালো তোঁষা। চাচা কাঁদছেন। চাচি ওর মায়ের পাশে বসা। একবার মনে হলো আরহাম ভাই দাঁড়িয়ে। কিন্তু না ওটা আদনান ভাই৷ তোঁষা আশেপাশের মানুষদের ও দেখে নিলো। অতঃপর তাকালো আরহামে’র দিকে। কোন ভাবান্তর ছাড়া তোঁষা’র ঐ চোখজোড়ায় কিছু একটা দেখলো আরহাম যা ওর বুকে আঘাত হানলো।
সেই নজরে টিকতে পারলো না আরহাম। সহসা দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিলো। তোঁষা অবুঝের ন্যায় বাবা’র খাটের পাশে বসলো হাঁটু মুড়ে। অল্প ঢোক গিলে হাত বাড়ালো বাবা’র দিকে। বন্ধ চোখে, মুখে হাত বুলালো অতি যত্নে। বাবার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে ডেকে উঠলো,

— বাবা?

যেই ছোট্ট একটা ডাকের বিনিময়ে তুহিন তিনবার উত্তর করতো আজ সেই কাঙ্খিত বাবা ডাকের বিনিময়ে কোন জবাব এলো না। তুহিন শুনলো না সেই অতি মায়াময় ডাকটা তার অতি সখের শেষ বয়সে জীবনে আসা মেয়ে থেকে। যাকে প্রায় বছর খানিক সময় ধরে খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত হয়ে তুহিন দুনিয়া ত্যাগ করলো সেই পুতুল আজ তার সন্নিকটে। অতি কাছে। সে ডাকছে তার বাবা’কে অথচ তুহিন কি না অপারগ। সে শুনতেই পেলো না তার পুতুলের ডাক। যেই পুতুল গতকাল তাকে খনিকের জন্য চিনতে পারলো না সেই পুতুল আজ কত সুন্দর হেটে এলো বাবা’র নিকট। ভালোবাসার কাছে হেরে গেলো স্বার্থপর এই বাবা’র ভালোবাসা। তুহিন স্বার্থপরের মতো সবটা করলো। তার প্রথম স্বার্থ ছিলো তোঁষা। তার পুতুল’কে সে এতটাই ভালোবাসতো যে আরহামে’র সামান্যতম দোষটা মানতে পারলো না। নিজের পুতুলের মধ্যেই সে নিজের ভালো থাকা খুঁজে নিয়েছিলো অথচ ভুলেই বসেছিলো তার পুতুল ভালো থাকতো আরহামে’র কাছে। আজও শুধু মাত্র সে তার পুতুলের নজরে অচেনার শোক সইতে না পেরে দুনিয়া ত্যাগ করলো। সত্যি ই কি তবে তুহিন স্বার্থপর?

তুষার খেয়াল করলো তোঁষা’কে। বোরকা পড়া, মুখ ঢাকা থাকলেও তুষারে’র তার পুতুলকে চিনতে বিলম্ব হয় নি। বাবা পুতুলের কাছে গিয়েছিলো এটা জেনেছে তুষার। শেষ সময়ে বাবা তাকে ভাঙা গলায় জানিয়েছিলো, পুতুল তাকে চিনে নি। কেন, কিভাবে এসবের উত্তর জানা নেই তুষারের। মা’কে বুকের মধ্যে নিয়ে তোঁষা’র মাথায় হাত রাখলো তুষার। তোঁষা তাকালো ভাইয়ের দিকে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েই রইলো। তুষারের বুকটা মোচড় উঠলো। তার পুতুলটা এমন অনুভূতিহীন ভাবে তাকিয়ে আছে কেন?
তুষার ডাকলো,

— পুতুল?

— বাবা কথা বলে না কেন? আমার সাথে রেগে?

হঠাৎ তোঁষা’র গলা শুনতেই কয়েক জড়ো চোখ তাকালো ওর পানে। ওর মা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো পাশে বসা তোঁষা’কে দেখে। আচমকা এক থাপ্পড় পরলো ওর গালে। পরপর দুই তিনটা আরো পরলো। চিৎকার করে ওর মা বলতে লাগলো,

— তুই মে’রেছিস! তুই মে’রেছিস আমার স্বামী’কে। তোর কোনদিন ভালো হবে না তোঁষা। আমি আমার আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম। যেভাবে আমার সব সুখ তুই ধ্বংস করলি সেভাবেই তোর সুখ ধ্বংস হবে। যেই সুখের জন্য এতগুলো প্রাণ আজ প্রাণহীন তোর সেই সুখ অচিরেই ধ্বংস হবে। এক সদ্য বিধবা নারীর অভিশাপ তোকে তোঁষা। আমার অভিশাপে ধ্বংস হবি তুই।

উপস্থিত সকলে হায় হায় করে উঠলো। এ কেমন অভিশাপ? কোন মা এভাবে অভিশাপ দেয়? পাশ থেকে চাচি মুখ চেপে ধরলো ওর মায়ের। আরহাম তোঁষা’র গালে থাপ্পড় পড়তেই এসে তোঁষা’কে নিজের কাছে নিয়েছে। তোঁষা কোনরূপ বাক্য উচ্চারণ করলো না। তুষার বোনকে আরহাম থেকে ছাড়িয়ে নিজের বুকে নিলো৷ কপালে চুমু খেয়ে গালে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,

— সোনা আমার। পুতুল, ব্যাথা পেয়েছিস? মা ইচ্ছে করে এসব করে নি। ভাইয়ের জান, তাকা আমার দিকে। তোর এই অবস্থা কেন? কথা বল পুতুল। তাকা আমার দিকে।

তোঁষা তাকালো তবে কথা বললো না৷ কথা বলার শক্তি পেলো না ও। ভাইয়ের বুকে মিশে রইলো কিছুক্ষণ। এরপর নিজেই সরে এসে বাবা’র গালে হাত বুলালো। উঠে দাঁড়িয়ে সোজা আরহামে’র কাছে এসে বাহু জড়িয়ে ধরে মিনমিন করে বললো,

— বাসায় চলো প্রাণ।

তোঁষা’র অস্বাভাবিক আচরণে ভয় পেলো আরহাম। এই সময় এতটা শান্ত কেন ওর তুঁষ? কোনমতে আরহাম বললো,

— আজ থাকি প্রাণ আমরা……

— উহু। চলো বাসায় যাব।

কথাটা বলেই আরহামে’র বুকে মুখ লুকালো।

#চলবে…..

[পর্ব ছোট বলে দুঃখীত। আর খুশির খবর হচ্ছে আগামী কাল সকাল দশটা পাঁচ মিনিট এ পাবেন “চিনি”। শুধু মাত্র বইটই অ্যাপে। রোদ আদ্রিয়ান আসছে সম্পূর্ণ নতুন ভাবে।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here