দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা) #লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ_৩৬ 🍂

0
844

#দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা)
#লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৩৬
🍂
খান বাড়ির বিশাল ড্রয়িংরুমে দাঁড়িয়ে দাদীর পিছনে লুকিয়ে আছি আমি আঁচল ধরে,,, আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমার ভিলেন বর,,, চোখে মুখে তার রাগ স্পষ্ট,,,, আমাকে যেন চোখ দিয়ে ভস্ম করতে পারলেই শান্তি হবে তার এমন মনোভাব,,, আর দাদী সহ বাকি সবাই হতবাক, সাথে ভয় ভয় ভাব চোখে মুখে,,, কারণ দুই,,, এক আমি উনার সাথে কি করছি এ মূহুর্তে,,, দুই আমার উপর উনি রাগে আছেন কি কারণে সাথে আমার পরিণতি কি হবে,,, এটা নিয়ে সবাই চিন্তিত,, আয়ন ভাইয়া আর দাদাজান বাদে,,, উনার দুজন এ মূহুর্তে অফিসে অবস্থা করছেন,,, তাই সবাই রয়েছে ড্রয়িংরুমে জুড়ে কাজে লোক গুলোও একপাশে দাঁড়িয়ে আছে আর ভয় ভয় নজরে একবার আমাকে দেখছে তো অন্য বার উনাকে দেখে চলছে,,,,

.

পুরো ড্রয়িংরুমে জোরে শুধু নিরবতা আর নিস্তব্ধতা ছেড়ে গেছে,,, কারও মুখে কোনো কথা নেই,,, কারণ কিছুক্ষন আগে উনি আমাকে এখানে এনে এক প্রকার দাদীর সামনে ছুড়ে মারে,,, আমি তাল সামলাতে না পেরে নিতে পরে যায় ফ্লোরে উপুড় হয়ে যাতে করে দুহাতে কিছুটা ব্যাথা পায় আমি,,,, আমাকে এভাবে নিয়ে আসায় দাদী উত্তেজিত হয়ে দ্রুততার সাথে আমাকে টেনে নিজের বুকে চেপে ধরে দুহাতে,, আর সাথে সাথে বাকি সবাই ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হয়ে যায়,,, আর আমি হিচকি তুলে অনবরত কান্না করেই চলছি উনার ভয়ে আর বাঁকা চোখে উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম,,, আমার এমন কান্না দেখে উনি আরও রেগেমেগে তেড়ে আসে আমার দিকে মার জন্য, উনাকে তেড়ে আসতে দেখে আমি দাদীর বুক থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে পিছনে লুকিয়ে পরি,,,, আমাকে লুকাতে দেখে উনি থেমে যায় আর চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে,,,,

.

আমার এমন বিধস্ত অবস্থা দেখে, দাদী রেগে খানিকটা উচ্চ স্বরে চেচিয়ে উঠে বললো…..

.

—” এই তুই আমার সোনামার সাথে কি করেছিস হ্যা, ওর এমন অবস্থা কি করে হলো,,, আর সোনামা তো ওর বাসায় ছিল, তাহলে তুই ওকে বাসার থেকে ধরে আনলি কোন সাহসে,,,, তুই মেয়েটাকে শান্তি দিচ্ছিস না কেন,,, তুই ওর পিছু ছাড়ছিস না কেন হ্যা,,,,

.

দাদীর এমন কথায় বিরক্তি নিয়ে আমার থেকে চোখ সরিয়ে দাদীর দিকে তাকায় উনি (রিদ) পরে কিট বিট করতে করতে সোজা সাপটা ভাবেই বলে উঠে,,,,,

.

—” বউ আমার, আর তার থেকেই দুরে থাকতে হবে আমাকে,,, পারবো না আমি দুরে থাকতে,, দরকার হলে বউ নিয়ে সাথে ঘুরঘুর করব আমি,,, তবুও বউকে ছাড় দিব না আমি, একদমিই না,,,, আর এখন তো তোমার সোনামাকে তুলে নিয়েও আবার এনেছি,,, কিন্তুু আমার কথা না শুনলে পরের বার আর তুলে নিয়ে গিয়ে ভুলটা করবো না,, হয় জায়গায় শুট করে মারবো নয়তো একেবারে গিলে খেয়ে ফেলবো,, কারণ তোমার সোনামার মতো পেট আমারও আছে , একেবারে আমার পেটে পুড়ে রেখে দিব,,,, তাই সাবধান করো তোমার গুনধর নাতনীকে আমার অবাধ্য হতে,,, আমার অবাধ হলে জানে মেরে দিব সব কয়টাকে,,, তাও পিছু ছাড়ছি না,,,,

.

উনার এমন সব কথা আমার ভয় আরও একধাপ বেড়ে গেল,, ভয়ে সিটিয়ে রইলাম দাদীর পিছনে লুকিয়ে,,, কারণ সব কয়টাকে মেরে ফেলবেন মানে আমার ফ্যামিলির কথা বুঝিয়েছেন তা খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি আমি,,, তাই কষ্টে কান্না করই চলছি আমি,,, আমাকে ভয় পেতে দেখে দাদী একবার কোনা চোখে দেখে আবারও উনার দিকে তাকায়,,, পরে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বললো,,,,,,

.

—” মেরে দিবি মানে কি,,, তুই আমার সোনামাকে কেন বার বার আঘাত করছিস,, কি চাই তোর ওর কাছ থেকে,,, আর কেন বা ধরে আনলি মেয়ে এভাবে,,, কি অপরাধে শাস্তি দিচ্ছিস মেয়েটাকে,,,,

.

দাদীর এমন কথায় বিরক্তি ধাপ বাড়তেই থাকে উনার মাঝে,,, উনি বিরক্তি নিয়ে দাদীকে উদ্দেশ্য করে বললো…..

.

—” ওর থেকে আমার কিছু চাই না,,, আর না কিছু লাগবে তোমার সোনামা থেকে আমার,,, আমি শুধু এটাই চাই যে তোমার সোনামা এই বাড়িতে থাকবে ব্যাস,,,,

.

উনার কথায় দাদী আরও রেগেমেগে বললো,,,,,,

.

—” ওহ কেন তোর কথা শুনবে,,, ওহ কোথায় থাকবে না থাকবে সেটা আমরা বুঝবো তুই না,,,,৷ তুই শুধু ওর থেকে দুরে থাকবি ব্যাস,,,,

.

দাদীর কথায় উনি কোনো রকম ভনিতা ছাড়াই বলে উঠে,,,,

.

— ” দাদী আমাকে রাগীও না প্লিজ,,, আর আজকে পর থেকে তোমার সোনামা জন্য বাপের বাড়ি যাওয়া একেবারে জন্য বন্ধ, সারাজীবন ও বাপের বাড়ি যাওয়ার নাম মুখে নিতে পারবে না,,,, ওর মা – বাবা চোদ্দগুষ্টি এখানে এসে তোমার সোনামা কে দেখে যেতে পারবে কিন্তুু তোমার নাতনি ভুলেও বাড়ি বাইরে যেতে পারবে না,,,,, ইউথ আউট মাই পারমিশন,,,,

.

কথা গুলো বলেই কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে গটগট উপরে নিজের রুমে দিকে পা বাড়ায়,,, উনার এমন কাজে দাদী সহ বাকি সবাই বোকা বনে যায়,,, আর বুঝার চেষ্টা করছে যে কি এমন হয়েছে যাতে করে উনি এমন করছেন,,, আর উনি কিছু দূর এগুতে আবারও পিছন ফিরে আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে দাদীকে উদ্দেশ্য করে বললো,,,,,

.

—” দাদী উড়া উড়িটা আমার আর ভালো লাগছে না,,, তাই বারাবর বলে বুঝাবার ছেলে আমি না,, তোমার নাতনি যদি আবারও উড়ার চেষ্টা করে তো নেক্সটে যা হবে তার জন্য দায়ি থাকবে তোমার সোনামা নিজেই,,,, কারণ কাউকে মানতে দু’বার ভাববো না আমি…..

.

বলেই আবারও নিজের রুমে প্রস্তান করেন উনি,,, আর দাদী সহ বাকি সবাই উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে,,, আর উনার কথা গুলো বুঝার চেষ্টা করেন যে উনি কিসের উড়া উড়ি কথা বলে গেছেন,,,, সবাই উনার কথা মানে বুঝতে না পারলেও আমি ঠিক বুঝতে পারছি,,, উনি আমার বারবার পালানোটাকে মিন করে বলেছেন কথা গুলো,,,, আর উনি চাইলে সরাসরি দাদীকে সবকিছু বলতে পারতো যে আমি কি করেছি কিন্তুু উনি কিছুই বলেনি বরং আমাকে বাচিয়েন,,,, যদি দাদীকে সবকিছু বলে দিত তাহলে দাদীর অনেক বেশি কষ্ট পেত,,, হয়তো কষ্ট পেয়ে কথা বলা ছেড়ে দিত আমার সাথে,,, কিন্তুু উনি এমন কিছু করেনি,,, কিন্তুু কেন করেন নি,,, নিজেই তো আমাকে কষ্টে সাগরে ভাসাবে কিন্তুু অন্যের কাছ থেকে কষ্ট পাওয়াটা কি মঞ্জুর না উনার,,,, কিন্তুু কেন,,,???

.

.

.

🍁
ড্রয়িংরুমে পড়তে বসে আছি আমি,,, আর আমাকে পড়ানো দ্বায়িত্ব পরেছেন আয়ন ভাইয়া ওপর,,,, কারণ সামনেই আমার পরীক্ষা তাই আয়ন ভাইয়া নিজ দায়িত্বে দাদীর থেকে আমার পড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন উনি,,,, কিন্তুু আমার কি আর পড়ায় মনোযোগ বসে নাকি,,, তাই সে কখন থেকে আয়ন ভাইয়া আমাকে পড়ানো চেষ্টা করছে আর আমি শুধু মিনমিন করছি পড়ার ভাব ধরে আছি আর বইয়ের ওপর একটা হাত ছড়িয়ে অন্য হাতে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছি,,, আমার এমন উদাসীন মনোভাব দেখে আয়ন ভাইয়া হালকা বিরক্তি নিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,,,,

.

—” কি ব্যাপার এমন করছো কেন,,, ঠিক মতো পড়ছো না কেন সামনে না তোমার এক্সজাম তাহলে,,,, আর তুমি এত পড়া চুরি করছো কেন হুমমম,,,,,

.

আয়ন ভাইয়া কথা শুনে খুব রাগ হলো আমার,,, আমি কখনো কারও উপর রাগ করিনা এটা আমার হেবিটে নেই,,, কেউ কোনো কিছু বললে আমি চুপচাপ শুনে থাকি শুধু সবকিছু,,, তারপরও এ মূহুর্তে আমার প্রচন্ড রাগ উঠছে আয়ন ভাইয়া ওপর,,, কারণ চুরকে কি বারবার চুর বলে ঘষিত করতে হবে নাকি আজব,,,, আমার পড়া পরতে ভালো লাগে না,,, তাই তো আমি পড়া গুলো চুরি করি এতেও ঘোর আপত্তি উনার আজব পাবলিক সবাই,,,, আমিতো রোজ একটু একটু পড়ায় তো চুরি করি, বেশি তো আর করছি না তাই না,,,, তাই বলে এমন সরাসরি চুরি বলার কি আছে আমাকে,,,, এমন সরাসরি চুরি বলায় আহত হলাম আমি,,, তাই আমি আমার আহত মনটা নিয়েই খানিকটা ঝাঁজালো কন্ঠে আয়ন ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠি….

.

—-” এম আই ছেঁচড়া আয়ন ভাইয়া,,,,??? ( দুহাত বইয়ের ওপর ছড়িয়ে রেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে )

.

আমার এমন কথায় আয়ন ভাইয়া বোকা বনে গেল মূহুর্তেই,,, পরে গোল গোল চোখে আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বিনিত সুরে বললো,,,,,

.

—” তুমি ছেচড়া হতে যাবে কেন,,,, আর তোম….

.

বাকি কথা গুলো আয়ন ভাইয়াকে বলতে না দিয়ে আমি নিজের মতো করে কপাট রাগ দেখিয়ে বলে উঠি….

.

—” ছেঁচড়াই আমি,,,, তুমি তো আমাকে বললে পড়া চুরের মাধ্যমে,,, যাও এটা বলার সাথে সাথে আমার পড়ার মুড সুইমিং করবে,,, তাই আজ থেকে আগামী তিন দিন আমি আর কোনো পড়া পড়বো না ব্যাস,,,, এই নিয়ে আমি কোনো কথা শুনতে চাই না হুহহহ,,,৷

.

কথা গুলো বলেই একটা প্রকার নিজের রুমে দিকে ছুটে পালাতে চাইছিলাম আমি,,, কিন্তুু সেই সুযোগ আর পাওয়া হলো না আমার,,, তার আগে আয়ন ভাইয়া আমার হাত শক্ত ভাবে চেপে ধরে নিজের কাছে এনে বসায়,,,,

চলনে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here